পাকিস্তান-সৌদির প্রতিরক্ষা চুক্তি নিয়ে যা বলছেন বিশ্লেষকরা
ছবি: শাহবাজ শরিফের এক্স অ্যাকাউন্ট থেকে নেওয়া।
পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফের সৌদি আরব সফরের সময় একটি ঐতিহাসিক প্রতিরক্ষা চুক্তি সই হয়েছে। দুই দেশের মধ্যে গত কয়েক দশকে প্রতিরক্ষা সম্পর্কের ক্ষেত্রে এটিকে সবচেয়ে বড় অগ্রগতি হিসেবে দেখা হচ্ছে।
ইসলামাবাদ ও রিয়াদ এক যৌথ বিবৃতিতে জানিয়েছে, এই চুক্তি উভয় দেশের নিরাপত্তা জোরদার ও আঞ্চলিক শান্তি রক্ষায় পারস্পরিক অঙ্গীকারের প্রতিফলন।
এতে বলা হয়, এই চুক্তি দুই দেশের প্রতিরক্ষা সহযোগিতা আরও বিকশিত করবে এবং যে কোনো আগ্রাসনের বিরুদ্ধে যৌথ প্রতিরোধ শক্তি গড়ে তুলবে।
আরও পড়ুন:
পাকিস্তান-সৌদি আরব প্রতিরক্ষা চুক্তিতে দুশ্চিন্তায় ভারত, কী বলছে মোদী সরকার?
সৌদি সফর শেষে লন্ডন যাচ্ছেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী
সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো চুক্তিতে স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে, যে কোনো একটি দেশের বিরুদ্ধে আগ্রাসন হলে, তা উভয়ের বিরুদ্ধে আগ্রাসন হিসেবে বিবেচিত হবে।
চুক্তিটি এমন এক সময় হলো যখন ইসরায়েল কাতারে হামলা চালিয়েছে, যা মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে নিরাপত্তা উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। এ ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে মুসলিম দেশগুলো বিকল্প নিরাপত্তা অংশীদারের সন্ধান করছে।
পাকিস্তানের সাবেক রাষ্ট্রদূত মলীহা লোধি একে গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক হিসেবে আখ্যা দিয়ে বলেন, এই চুক্তির মাধ্যমে পাকিস্তান এখন শুধু সৌদি আরব নয়, বরং সমগ্র মধ্যপ্রাচ্যের জন্য একটি নিরাপত্তা সরবরাহকারী রাষ্ট্রে পরিণত হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের নিরাপত্তা গ্যারান্টার হিসেবে ভূমিকা বর্তমানে প্রশ্নবিদ্ধ। এই পরিস্থিতিতে সৌদি আরবের মতো দেশগুলো এখন অন্যত্র দৃষ্টি দিচ্ছে।
মলীহা লোধির মতে, পাকিস্তান যদি এমনভাবে প্রতিরক্ষা সম্পর্ক জোরদার করে, তাহলে ভারতের উদ্বিগ্ন হওয়াটা স্বাভাবিক। তবে ভারতের প্রতিক্রিয়া কী হবে, তা এখনই বলা কঠিন।
দক্ষিণ এশিয়া বিশ্লেষক মাইকেল কুগেলম্যান বলেন, চুক্তিটি ভারতের হামলা ঠেকাতে যথেষ্ট নয়। কিন্তু পাকিস্তানের পাশে এখন চীন, তুরস্ক এবং সৌদি আরব—তিনটি শক্তিধর দেশ রয়েছে।
পাকিস্তানের সাবেক সিনেটর মুশাহিদ হুসেইন এটিকে গত ৫০ বছরে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সামরিক ও কূটনৈতিক উদ্যোগ বলে অভিহিত করেন।
তিনি বলেন, এই চুক্তি শুধু দুটি মুসলিম দেশের মধ্যেই প্রথম প্রতিরক্ষা চুক্তি নয়, বরং এটি ইসরায়েলের জন্যও একটি কৌশলগত প্রতিবন্ধক।
তিনি দাবি করেন, পাকিস্তান এর মধ্য দিয়ে প্রমাণ করেছে যে, তারা শুধু নিজেদের নয়, আরব বন্ধুদের সুরক্ষাও নিশ্চিত করতে সক্ষম।
সাবেক কূটনীতিক হুসেইন হাক্কানী চুক্তির ‘স্ট্র্যাটেজিক’ শব্দটি নিয়ে বলেন,
এটি সম্ভবত পারমাণবিক ও ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষাকেও অন্তর্ভুক্ত করে।
তিনি আরও বলেন, এই চুক্তির ফলে পাকিস্তান হয়তো সৌদি অর্থে যুক্তরাষ্ট্র থেকে অস্ত্র ক্রয় করতে পারবে, যেমনটা ১৯৭০-এর দশকে দেখা গিয়েছিল।
বিশ্লেষক উজাইর ইউনুস বলেন, এই চুক্তি পাকিস্তানের ভূমিকাকে আরব উপদ্বীপে ‘নেট সিকিউরিটি প্রোভাইডার’ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে।
সাংবাদিক ইফতিখার ফিরদৌস একে বলেন, চুক্তিটি প্রতীকীভাবে শক্তিশালী এবং কৌশলগতভাবে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এটি সৌদি আরবের জন্য অনিশ্চয়তার বিরুদ্ধে একটি হেজ এবং স্বাধীন অবস্থান নেওয়ার ইঙ্গিত।
তিনি আরও বলেন, চুক্তিটি পারমাণবিক নিশ্চয়তা না দিলেও, পাকিস্তানের পরমাণু ক্ষমতা সৌদি আরবের জন্য একটি ‘ডি ফ্যাক্টো নিউক্লিয়ার আমব্রেলা’ তৈরি করেছে।
সূত্র: ডন
এমএসএম
সর্বশেষ - আন্তর্জাতিক
- ১ যুক্তরাষ্ট্রের চাপ তোয়াক্কা না করেই রাশিয়ার সঙ্গে ভারতের একাধিক চুক্তি
- ২ চীনের নির্যাতন থেকে বাচঁতে ভারতে ৩ ভাই, জেল খাটছে ১২ বছর
- ৩ সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে রাশিয়াকে একসঙ্গে কাজ করার আহ্বান মোদীর
- ৪ আফ্রিকার উপকূলে খাদ্য সংকট, ৬০ হাজার পেঙ্গুইনের মৃত্যু
- ৫ যুদ্ধবিরতির মধ্যেই ইসরায়েলে ৩৪ বিলিয়ন ডলারের সামরিক বাজেট ঘোষণা