বাস্তববাদী ইশতেহার, ভিন্নধর্মী প্রচারণা
যেভাবে ভোটারদের মন জয় করলেন জোহরান মামদানি
ভোটারদের মন জয় করেছেন জোহরান মামদানি/ ফাইল ছবি: ফেসবুক@জোহরান মামদানি
বাস্তববাদী ইশতেহার ও ভিন্নধর্মী প্রচারণা দিয়ে ভোটারদের মন জয় করেছেন নিউইয়র্ক সিটির মেয়র প্রার্থী জোহরান মামদানি। তার ফলও পেয়েছেন হাতেনাতে। নিউইয়র্কের প্রথম মুসলিম ও দক্ষিণ এশীয় বংশোদ্ভূত মেয়র নির্বাচিত হয়ে ইতিহাসের পাতায় নাম লিখিয়েছেন তিনি।
মাত্র এক বছর আগেও যে মানুষটিকে যুক্তরাষ্ট্রের খুব বেশি মানুষ চিনতেন না, এখন মামদানিই বিশ্বজুড়ে সংবাদমাধ্যমের খবরের শিরোনাম। তার অবিশ্বাস্য উত্থান ঠেকাতে সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পও, কিন্তু তাতেও কাজ হয়নি। জনতার রায়েই নিউইয়র্কের শাসনভার এখন মামদানির হাতে।
কিন্তু তিনি কীভাবে করলেন এই অসাধ্য সাধন? কীভাবে জয় করলেন ভোটারদের মন?
বিশ্লেষকদের মতে, ৩৪ বছর বয়সী মামদানির এই জয় শুধু রাজনৈতিক সাফল্য নয়, বরং মার্কিন রাজনীতিতে এক প্রজন্মগত পরিবর্তনের ইঙ্গিত। নির্বাচনে তার প্রচারণা ছিল বাস্তবধর্মী, বিশ্বাসযোগ্য ও সাধারণ মানুষের জীবনের সঙ্গে যুক্ত। সোশ্যাল মিডিয়ার ভাইরাল কনটেন্ট, শক্তিশালী মাঠপর্যায়ের প্রচার, আর নানা সম্প্রদায়ের মানুষের সঙ্গে সরাসরি সম্পর্ক—সব মিলিয়ে লাখ লাখ ভোটার তার দিকে আকৃষ্ট হয়েছে।
বাস্তববাদী ইশতেহার
মামদানি তার নির্বাচনী ইশতেহারকে নাগরিক জীবনের ব্যয় ও সুবিধার সঙ্গে সরাসরি সংযুক্ত করেছেন। তিনি প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন:
- ভাড়া স্থগিত করা এবং সাশ্রয়ী আবাসন নির্মাণ,
- শহরের সবার জন্য সহজলভ্য ও কম খরচে বাস সেবা চালু করা,
- প্রি‑স্কুল এবং শিশুপরিচর্যা সেবাকে সবার জন্য ন্যূনতম স্তরের বিনামূল্য করা,
- ধনী ও বড় কোম্পানির ওপর কর বাড়িয়ে শহরের বাজেট বাড়ানো।
এই বাস্তবসম্মত এবং সরল বার্তাই ভোটারদের কাছে বোধগম্য ও বিশ্বাসযোগ্য হয়েছে।
সোশ্যাল মিডিয়ার জাদু: ‘বন্ধুসুলভ’ রাজনীতি
মামদানির সবচেয়ে বড় শক্তি ছিল সোশ্যাল মিডিয়া, বিশেষ করে টিকটক। এখানেই তিনি হয়ে উঠেছেন ‘ইন্টারনেটের প্রিয় মেয়র’। ইংরেজির পাশাপাশি বাংলা, হিন্দি ও স্প্যানিশ ভাষায় নিয়মিত পোস্ট করেছেন, যেখানে তিনি কথা বলেছেন বাড়িভাড়া কমানো, ফ্রি বাস সার্ভিস, আর সবার জন্য শিশু পরিচর্যা সেবা চালুর মতো বাস্তব সমস্যা নিয়ে।
এই পোস্টগুলোতে দেখা গেছে তাকে খুব স্বাভাবিকভাবে—কখনো সাবওয়েতে খেতে খেতে, কখনো ম্যানহাটনের রাস্তায় হাঁটতে হাঁটতে, আবার কখনো কনি আইল্যান্ডে পানিতে ঝাঁপ দিতে। এই সহজ, অনাড়ম্বর লাইফস্টাইল তার প্রতি অনেক তরুণ ভোটারকে আকৃষ্ট করেছে।
একটি বিতর্কে অ্যান্ড্রু কুয়োমোর কেলেঙ্কারি নিয়ে মামদানির মন্তব্য ভাইরাল হয়, যা এক কোটিরও বেশি মানুষ দেখেছেন। এতে বহু তরুণ টিকটক ব্যবহারকারী তার সমর্থনে প্রচারণায় যোগ দেন।
মাঠের প্রচারণা: ডোর-টু-ডোর সংলাপ
ডিজিটালের পাশাপাশি মামদানির মাঠের প্রচারণাও ছিল ব্যতিক্রমী। তিনি এক সপ্তাহান্তে একা পুরো ম্যানহাটন হেঁটে ঘুরেছেন। সেই ভিডিও অনলাইনে লাখ লাখ মানুষ দেখেছে। এতে ভোটারদের কাছে তিনি ‘সহজে পৌঁছানো যায়’ এমন রাজনীতিক হিসেবে পরিচিত হন।
তার দল ও স্বেচ্ছাসেবকেরা ১০ লাখেরও বেশি বাড়িতে কড়া নেড়েছেন। তারা এমন এলাকাতেও গেছেন, যেখানে আগে ট্রাম্পপন্থিরা শক্ত অবস্থানে ছিল। মামদানি নিজে মসজিদে গিয়ে মুসলিম ভোটারদের সঙ্গে কথা বলেছেন এবং ভোট নিবন্ধন অভিযানে অংশ নিয়েছেন। এর ফলে কুইন্স ও ব্রঙ্ক্সে নতুন ভোটারের সংখ্যা অনেক বেড়েছে।
বৈচিত্র্যময় সমর্থন: সবার জন্য এক বার্তা
পলিটিকোর মতে, মামদানির জয় সম্ভব হয়েছে দুটি কারণে—নিজের সমর্থকদের সক্রিয় করা এবং নতুন ভোটারদের সঙ্গে যোগাযোগ বাড়ানো।
তিনি ব্রুকলিন ও কুইন্সের শিক্ষিত ও আর্থিকভাবে স্বচ্ছ শ্বেতাঙ্গ ভোটারদের ভোট দিতে উৎসাহিত করতে পেরেছেন। একই সঙ্গে, এশীয় এবং মুসলিম ভোটারদের কাছে পৌঁছেছেন।
হিস্পানিক ভোটারদের জন্য স্প্যানিশ ভাষায় বিজ্ঞাপন চালিয়েছেন এবং প্রায় দুই হাজার স্প্যানিশভাষী স্বেচ্ছাসেবক মাঠে কাজ করেছেন। এতে জ্যাকসন হাইটস ও সানসেট পার্কে তার সমর্থন আরও শক্ত হয়েছে। এমনকি কুয়োমোর প্রভাবশালী ঘাঁটি সাউথইস্ট কুইন্স ও সেন্ট্রাল ব্রুকলিনের মধ্যবিত্ত কৃষ্ণাঙ্গ ভোটারদের মধ্যেও তিনি প্রতিদ্বন্দ্বিতা গড়ে তুলতে পেরেছেন।
ভিন্ন পথেই সাফল্য
মামদানির জয় দেখিয়ে দিলো যে, বাস্তববাদী চিন্তাভাবনা নিয়ে তৃণমূল পর্যায়ে কাজ করলে প্রচলিত রাজনৈতিক ধারা বদলানো যায়। তার কৌশল বিশ্বজুড়ে তরুণ রাজনীতিবিদদের জন্য এক অনন্য শিক্ষামূলক পাঠ হয়ে থাকবে। ভবিষ্যতে তিনি কতটুকু পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে পারবেন তা নির্ভর করবে রাজনৈতিক পরিবেশ, বাজেট বাস্তবতা ও আইনগত বাধার সঙ্গে তার ক্ষমতা ব্যবহারের ওপর।
কেএএ/
টাইমলাইন
- ০৭:২১ পিএম, ১১ নভেম্বর ২০২৫ মামদানির জয়ের ‘মাস্টারমাইন্ড’ বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত জারা রহিম
- ১২:১০ পিএম, ০৬ নভেম্বর ২০২৫ বাংলা স্লোগানে বিজয় উদযাপন মামদানির
- ১০:৪৫ এএম, ০৬ নভেম্বর ২০২৫ মামদানি মেয়র হওয়ায় সার্বভৌমত্ব হারিয়েছি: ট্রাম্প
- ০৯:৪০ এএম, ০৬ নভেম্বর ২০২৫ বিভাজন-পক্ষপাতের রাজনীতি আর চলবে না: বিজয় ভাষণে মামদানি
- ০৯:১৫ পিএম, ০৫ নভেম্বর ২০২৫ যেভাবে ভোটারদের মন জয় করলেন জোহরান মামদানি
- ০৭:১২ পিএম, ০৫ নভেম্বর ২০২৫ মামদানিকে ঠেকাতে ট্রাম্পের সব চেষ্টাই ব্যর্থ
- ০৬:০৬ পিএম, ০৫ নভেম্বর ২০২৫ সপরিবারে হত্যার হুমকি পেয়েছিলেন মামদানি
- ০৫:১৮ পিএম, ০৫ নভেম্বর ২০২৫ পরাজয় মেনে নিয়ে মামদানিকে অভিনন্দন জানালেন কুয়োমো
- ০৫:০৩ পিএম, ০৫ নভেম্বর ২০২৫ নিউইয়র্কে মামদানির জয়: রিপাবলিকানদের কাজে ফিরতে বললেন ট্রাম্প
- ০৪:৩৮ পিএম, ০৫ নভেম্বর ২০২৫ মুসলিম-অভিবাসীদের জন্য লড়ার অঙ্গীকার মামদানির
- ০৪:৩৬ পিএম, ০৫ নভেম্বর ২০২৫ মামদানি ‘হামাসের সমর্থক’, ইহুদিদের ইসরায়েলে চলে যাওয়ার আহ্বান
- ০৪:১২ পিএম, ০৫ নভেম্বর ২০২৫ নিউইয়র্কের মেয়র নির্বাচনে ট্রাম্পের দলের ভরাডুবি, ভোট মাত্র ৭ শতাংশ
- ০৩:৪৬ পিএম, ০৫ নভেম্বর ২০২৫ ভোটের সংখ্যায় ৬০ বছরের রেকর্ড ভাঙলেন মামদানি
- ১২:২৮ পিএম, ০৫ নভেম্বর ২০২৫ মামদানিকে অভিনন্দন জানালেন লন্ডনের মেয়র সাদিক খান
- ১১:০৪ এএম, ০৫ নভেম্বর ২০২৫ যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে ডেমোক্র্যাটদের জয়জয়কার, চ্যালেঞ্জের মুখে ট্রাম্প
- ১০:০১ এএম, ০৫ নভেম্বর ২০২৫ উগান্ডা থেকে নিউইয়র্কের মেয়র, কে এই জোহরান মামদানি?
- ০৯:১৪ এএম, ০৫ নভেম্বর ২০২৫ মামদানির জয়, প্রথম মুসলিম মেয়র পেলো নিউইয়র্ক
- ০৮:২৯ এএম, ০৫ নভেম্বর ২০২৫ মামদানির জয়ের পূর্বাভাস
- ০৮:১৫ এএম, ০৫ নভেম্বর ২০২৫ নিউইয়র্ক সিটি মেয়র নির্বাচন: ভোটগ্রহণ শেষ, শুরু হয়েছে গণনা
- ০৯:৪৮ পিএম, ০৪ নভেম্বর ২০২৫ আমরা ইতিহাস গড়ার দ্বারপ্রান্তে আছি: মামদানি
- ০৮:০৮ পিএম, ০৪ নভেম্বর ২০২৫ নিউইয়র্কে মেয়র নির্বাচনে শুরু হয়েছে ভোটগ্রহণ