ভিডিও EN
  1. Home/
  2. আন্তর্জাতিক

‘আব্রাহাম অ্যাকর্ড’

এবার ইসরায়েলের সঙ্গে হাত মেলাচ্ছে কাজাখস্তান, তবে অনড় সৌদি

আন্তর্জাতিক ডেস্ক | প্রকাশিত: ০৩:২৪ পিএম, ০৭ নভেম্বর ২০২৫

ইসরায়েলের সঙ্গে সুসম্পর্ক প্রতিষ্ঠা করতে আনুষ্ঠানিকভাবে ‘আব্রাহাম অ্যাকর্ড’ এ যোগ দিতে যাচ্ছে মধ্য এশিয়ার মুসলিম প্রধান দেশ কাজাখস্তান। বৃহস্পতিবার (৬ নভেম্বর) বিশ্বের বৃহত্তম স্থলবেষ্টিত দেশটির সরকার এই ঘোষণা দিয়েছে। এর আগে নতুন একটি দেশ আব্রাহাম চুক্তিতে যোগ দেবে বলে দিনের শুরুতে পূর্বাভাস দিয়েছিলেন মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক মার্কিন দূত স্টিভ উইটকফ।

কাজাখ সরকারের দেওয়া এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, আব্রাহাম অ্যাকর্ডে তাদের যোগদান কাজাখস্তানের পররাষ্ট্রনীতির স্বাভাবিক ও যৌক্তিক সম্প্রসারণ যা সংলাপ, পারস্পরিক শ্রদ্ধা ও আঞ্চলিক স্থিতিশীলতার ভিত্তিতে দাঁড়িয়ে আছে।

৭০ শতাংশ মুসলিম জনগণের দেশ কাজাখস্তান ১৯৯২ সালে সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙ্গে স্বাধীনতার পাবার পরপরই ইসরায়েলের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন করেছিল। এরপর ২০১৬ সালে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনঞ্জামিন নেতানিয়াহু কাজাখস্তান সফর করেন। ওই সফরে দুই দেশের মধ্যে বিভিন্ন দ্বিপাক্ষিক চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়।

এছাড়াও সম্প্রতি ট্রাম্পের সঙ্গে কাজাখ প্রেসিডেন্ট কাসিম-জোমার্ত তোকায়েভের বৈঠক হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে কাজাখস্তানের সম্পর্ক আরও জোরদার করতে এ বৈঠকে দুই দেশের গুরুত্বপূর্ণ খনিজ সম্পদ নিয়ে সহযোগিতা চুক্তি সই হয়েছে।

‘আব্রাহাম অ্যাকর্ড’ কী?

ইহুদি, খ্রিষ্টান ও মুসলিম- এই তিন ধর্মেরই আদি পুরুষ হিসেবে সম্মানিত ইব্রাহিম (আঃ) এর নামে এই চুক্তির নামকরণ করা হয়। নামটির মাধ্যমে ধর্মীয় ঐক্য ও শান্তির প্রতীক তুলে ধরা হয়েছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রথম মেয়াদে ক্ষমতায় আসার পর ইসরায়েলে্র সঙ্গে আরব দেশগুলোর সুসম্পর্ক স্থাপন করতে আব্রাহাম অ্যাকর্ড উত্থাপন করেন। মূলত ইসরায়েল-ফিলিস্তিন সংকট সমাধানের জন্য এ চুক্তির মধ্যস্থতা করেছিলেন। ২০২০ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর ইসরায়েল, সংযুক্ত আরব আমিরাত (ইউএই) এবং বাহরাইন প্রথম এ চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। এরপর ২০২০ সালের ডিসেম্বরে মরোক্ক এবং ২০২১ সালের জানুয়ারিতে সুদান এই চুক্তিতে স্বাক্ষর করে।

আব্রাহাম চুক্তির মূল বিষয়

মূলত ইসরায়েলকে কেন্দ্র করে মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি, স্বাভাবিক কূটনৈতিক সম্পর্ক ও অর্থনৈতিক সহযোগিতা প্রতিষ্ঠা করতে আব্রাহাম চুক্তির মূল বিষয়গুলো গৃহীত হয়েছে।

১. ইসরায়েলের সঙ্গে আরব দেশগুলো কূটনৈতিক সম্পর্ক স্বাভাবিককরণ এবং এক দেশ অন্য দেশে দূতাবাস ও কনস্যুলেট খোলা, রাষ্ট্রদূত নিয়োগ করা।

২. ইসরায়েল ও স্বাক্ষরকারী দেশগুলোর মধ্যে ব্যবসা-বাণিজ্য, বিনিয়োগ ও প্রযুক্তি সহযোগিতা বৃদ্ধি করা এবং পর্যটন, কৃষি, জ্বালানি, স্বাস্থ্য, ও প্রযুক্তি খাতে পারস্পরিক সহযোগিতা জোরদার।

৩. পরিবহন ও ভ্রমণ সুবিধার জন্য দেশগুলোর মধ্যে সরাসরি ফ্লাইট চালু করা। নাগরিকদের জন্য ভিসা সহজীকরণ এবং পর্যটন সম্প্রসারণের উদ্যোগ নেওয়া হয়।

৪.মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি প্রতিষ্ঠা ও নিরাপত্তা জোরদার করতে ইরান ও উগ্রপন্থার প্রভাব কমানো। যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় নিরাপত্তা সহযোগিতা, গোয়েন্দা তথ্য বিনিময় এবং সামরিক সহযোগিতা বৃদ্ধি পায়।

৬.গত শতাব্দীতে ৪ টি আরব ইসরায়েল যুদ্ধের পর ফিলিস্তিন ইস্যুতে অনেক আরব দেশ আগে ঘোষণা দিয়েছিল যে, ফিলিস্তিনের স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার আগে তারা ইসরায়েলকে স্বীকৃতি দেবে না।কিন্তু আব্রাহাম চুক্তির মাধ্যমে সেই অবস্থান পরিবর্তিত হয়, যা ফিলিস্তিনপন্থী দেশগুলোর মধ্যে বিতর্ক সৃষ্টি করে।

ইসরায়েলের চুক্তিভঙ্গ

আব্রাহাম চুক্তিতে স্বাক্ষরকারী দেশগুলোর মধ্যে প্রথম চুক্তি ভঙ্গ করেছে দখলদার ইসরায়েলি সরকার। ইরানের সঙ্গে যুদ্ধ জড়িয়ে ২০২৫ সালের ১০ সেপ্টেম্বর একসঙ্গে ৬ টি আরব দেশে হামলা চালায় ইসরায়েল। ৭২ ঘন্টায় কাতার, ফিলিস্তিন, সিরিয়া, লেবানন, তিউনেশিয়া ও ইয়েমেনে বিমান হামলা চালালে ৬ জন নিহত হয়।

আব্রাহাম চুক্তি নিয়ে সৌদি আরবের অবস্থান

মধ্যপ্রাচ্যে কথিত শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য সৌদি আরবও আব্রাহাম চুক্তিতে যোগ দেবে বলে সম্প্রতি একাধিকবার আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। কিন্তু সৌদি সরকার এখনো বলছে তারা ২০০২ সালের আরব শান্তি উদ্যোগের বিকল্প কোনো সিদ্ধান্ত নেবে না। এ শান্তি প্রস্তাবে দেশটি স্পষ্ট করে জানিয়েছে, একমাত্র স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার শর্তে ইসরায়েলকে স্বীকৃতি দেবে সৌদি আরব।

কেএম
সূত্র :আল-জাজিরা/দ্য গার্ডিয়ান