ভিডিও EN
  1. Home/
  2. আন্তর্জাতিক

ডোনাল্ড ট্রাম্পের আইনি হুমকির মুখে বিবিসি: কী হবে এরপর?

আন্তর্জাতিক ডেস্ক | প্রকাশিত: ০১:০৪ পিএম, ১৬ নভেম্বর ২০২৫

বিবিসির ক্ষমা প্রার্থনার পর অনেকেই ভেবেছিলেন, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প হয়তো মামলার হুমকি থেকে সরে আসবেন। কিন্তু বাস্তবে হয়েছে উল্টোটা। ট্রাম্প জানিয়েছে, তিনি বিবিসির বিরুদ্ধে যে মামলা করবেন, সেখানে ক্ষতিপূরণ চাওয়া অর্থের পরিমাণ হতে পারে ৫ বিলিয়ন বা ৫০০ কোটি ডলার।

মহাপরিচালক ও বার্তা প্রধানের পদত্যাগের পর বিবিসির চেয়ারম্যান সামির শাহ এক সাক্ষাৎকারে ট্রাম্পকে এমন একজন ব্যক্তি হিসেবে উল্লেখ করেন, যিনি আইনের আশ্রয় নিতে ভালোবাসেন। যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের বিরুদ্ধে ট্রাম্প যত মামলা করেছেন, তাতে এমন বর্ণনা বিরল নয়।

জি বি নিউজে দেওয়া ট্রাম্পের সাক্ষাৎকারে স্পষ্ট, বিবিসির ‘বিভ্রান্তিকর সম্পাদনা’ তাকে গভীরভাবে আহত করেছে। তিনি যে অঙ্কে বিবিসির বিরুদ্ধে মামলা করবেন বলে জানান, সেটিও বাড়িয়েছেন। শুক্রবার (১৪ নভেম্বর) এয়ার ফোর্স ওয়ানে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, ক্ষতিপূরণের অঙ্ক হবে ‘এক থেকে পাঁচ বিলিয়ন ডলারের’ মধ্যে।

গত বছর যুক্তরাজ্যের লাইসেন্স ফি থেকে বিবিসির মোট আয় ছিল ৩.৮ বিলিয়ন বা ৩৮০ কোটি ডলার, যা ট্রাম্পের দাবির সঙ্গে তুলনা করলে ঝুঁকিটাই স্পষ্ট। শুক্রবার ট্রাম্প অভিযোগ করেন, আমার বলা শব্দ তারা পরিবর্তন করে দিয়েছে। তিনি জানতে চান, প্যানোরামা কেন দুটি আলাদা ক্লিপ এক করে সম্পূর্ণ ভিন্ন অর্থ দাঁড় করাল?

বিবিসি এই সম্পাদনাকে ‘অনিচ্ছাকৃত ভুল’ বলে দাবি করলেও ট্রাম্প তা মানছেন না। নভেম্বরে প্যানোরামার সেই তথ্যচিত্রে ভুল সম্পাদনা নিয়ে সমালোচনার মুখে পদত্যাগ করেন মহাপরিচালক টিম ডেভি এবং বার্তা প্রধান ডেবোরাহ টারনেস, যা বিবিসির ইতিহাসে একটি বড় ঘটনা।

বিশ্বব্যাপী প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতি আস্থা কমে যাওয়ার সময়ে বিবিসিকে নিরপেক্ষতার প্রতীক হিসেবে দেখা গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু এখন প্রতিষ্ঠানটি ঠিক উল্টো অভিযোগের মুখে। ফলে বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষমতাধর ব্যক্তিদের একজনের সঙ্গে ব্যয়বহুল ও প্রকাশ্য দ্বন্দ্বে জড়াতে হচ্ছে।

কোন পথে যেতে পারে এই লড়াই

ট্রাম্প মামলা করার কথা বলার পর থেকেই পরিষ্কার যে বিবিসি ক্ষতিপূরণ দিতে রাজি নয়। তাদের যুক্তি, ভুল হলেও প্যানোরামার তথ্যচিত্রে ট্রাম্পের বাস্তবিক ক্ষতি হয়নি। তিনি আবারও প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছেন ও তথ্যচিত্রটি যুক্তরাষ্ট্রের কোনো চ্যানেলে প্রচারিত হয়নি, তাহলে ক্ষতি হলো কী?

বিবিসির ভেতরে-বাইরে অনেকেই একমত যে ট্রাম্পের সঙ্গে বিরোধ মেটাতে লাইসেন্স ফি’র অর্থ ব্যবহার করা যাবে না। বিবিসির এক সাবেক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা বলেন, তারা সঠিক সিদ্ধান্তই নিয়েছে। তবে তিনি সতর্ক করে বলেন, ট্রাম্প মামলা করলে বিবিসিকে ফ্লোরিডার সেরা আইনজীবীদের নিয়োগ দিতে হবে।

কারণ মামলা এড়াতে সমঝোতার পথ নেওয়াই দীর্ঘমেয়াদে কম ব্যয় হতে পারে। কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে, বিবিসিকে দীর্ঘ একটি আইনি লড়াইয়ে নামতে হতে পারে। এমন সময়ে, যখন প্রতিষ্ঠানটির পুরো মনোযোগ থাকা উচিত ২০২৮ সাল থেকে কার্যকর হতে যাওয়া নতুন চার্টার নিয়ে যুক্তরাজ্য সরকারের সঙ্গে আলোচনায়।

এই গুরুত্বপূর্ণ কাজের নেতৃত্ব দেওয়ার কথা ছিল টিম ডেভির, যিনি ইতোমধ্যেই পদত্যাগ করেছেন। এখন বিবিসির শীর্ষ নেতৃত্বকে লড়তে হচ্ছে ট্রাম্পের সঙ্গে, যার আইনি খরচই হতে পারে ব্যাপক।

অনেকেই মনে করছেন, তথ্যচিত্রের ভুল দ্রুত সংশোধন করা হলে হয়তো এ পরিস্থিতি এড়ানো যেত। তবে এখন প্রশ্ন, বিবিসি কি যুক্তরাজ্য সরকারকে কূটনৈতিক পথে হস্তক্ষেপে উদ্বুদ্ধ করবে? প্রধানমন্ত্রী কিয়ের স্টারমারের ফোন কি ট্রাম্পের মনোভাব বদলাতে পারবে? তবে স্টারমার এই বিতর্কে জড়াতে চাইবেন কি না, সেটিও অনিশ্চিত।

এদিকে, যুক্তরাজ্যের সংস্কৃতি মন্ত্রী লিসা ন্যান্ডি বিবিসির পক্ষে দাঁড়িয়ে বলেছেন, বিবিসি নিউজ দেশের জন্য ‘অন্ধকার সময়ে পাহাড়চূড়ায় জ্বলা আলো’, যা মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করে।

অন্যদিকে ট্রাম্প আবারও বিবিসিকে ‘ভুয়া সংবাদের চেয়েও খারাপ’ বলে আক্রমণ করেছেন ও সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ তুলেছেন। সব মিলিয়ে, উভয় পক্ষের লড়াই আরও তীব্রই হচ্ছে।

সূত্র: বিবিসি

এসএএইচ