দ্য ইকোনমিস্টের প্রতিবেদন
বৈশ্বিক অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে আর্কটিক অঞ্চল
নরওয়ের উত্তর উপকূল। ছবি: এএফপি (ফাইল)
আর্কটিক অঞ্চলের তীর এখন আগের চেয়ে অনেক বেশি ব্যস্ত। ট্যাংকার, পণ্যবাহী জাহাজ, গবেষণা জাহাজ, বার্জ, ক্রুজ শিপ এমনকি ব্যক্তিগত ইয়টও সেখানে নিয়মিত চলাচল করছে। ২০২৬ সালের বসন্তে বরফ গলতে শুরু করলে এই চলাচল আরও বাড়বে। বরফ কমে যাওয়ায় আর্কটিক অঞ্চল আর আগের মতো দূরবর্তী বা ভয়ঙ্কর মনে হচ্ছে না।
সাধারণ মানচিত্রে আর্কটিক অঞ্চলকে ছোট ও প্রান্তিক মনে হলেও, পৃথিবীকে উত্তর মেরুর দিক থেকে দেখলে বোঝা যায় কেন এই অঞ্চল এত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে। এই মহাসাগর ইউরেশিয়া ও আমেরিকা মহাদেশের তীর ঘেঁষে আছে এবং আটলান্টিক ও প্রশান্ত মহাসাগরকে যুক্ত করে। এখানে প্রচুর তেল, গ্যাস, খনিজ এবং মাছের মজুত রয়েছে। একই সঙ্গে এটি এমন নতুন ছোট শিপিং রুটের সুযোগ দিচ্ছে যা বর্তমানে সুয়েজ ও পানামা খালের ওপর নির্ভরশীল—যেখানে সংঘাত ও খরার কারণে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে জাহাজ চলাচল ব্যাহত হয়েছে।
আর্কটিক কত দ্রুত উন্মুক্ত হবে, তা নির্ভর করবে জলবায়ু পরিবর্তন, অর্থনৈতিক হিসাব এবং সবচেয়ে বেশি ভূ-রাজনীতির ওপর।২০২৫ সালের সেপ্টেম্বরে আর্কটিক বরফের আয়তন ১৯৮০ সালের তুলনায় ৩৯ শতাংশ কম ছিল। বরফ কমলে জাহাজ চলাচল সহজ হয়।
চীন, রাশিয়া, আমেরিকা ও পশ্চিম ইউরোপের দেশগুলোর মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতা এবং বিশ্বের অন্যান্য অঞ্চলের পরিস্থিতি আর্কটিকের ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করবে। ইউক্রেন যুদ্ধ শেষ হলে এবং ২০২৬ সালে রাশিয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা শিথিল হলে পশ্চিমা বিনিয়োগ আবার রাশিয়ার আর্কটিক এলাকায় ফিরতে পারে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ভবিষ্যৎ আর্কটিক সহযোগিতা নিয়ে আলোচনা করেছেন। তবে যুদ্ধ দীর্ঘ হলে বা আমেরিকা আরও চাপ বাড়ালে রাশিয়ার আর্কটিক তেল-গ্যাস রপ্তানি বাধাগ্রস্ত হবে, আর সেই ঘাটতি পূরণে আলাস্কায় অনুসন্ধান বাড়তে পারে।
শিপিংয়ের ক্ষেত্রে, যদি হুথি বিদ্রোহীদের হামলার কারণে লোহিত সাগর হয়ে সুয়েজ রুট ঝুঁকিপূর্ণ থাকে, তাহলে রাশিয়ার উত্তর উপকূল বরাবর উত্তর সাগর রুট ব্যবহারের আগ্রহ বাড়বে। বর্তমানে এটি মূলত রাশিয়ার তেল-গ্যাস চীনে পাঠাতে ব্যবহৃত হয়। এ বছর শরতে চীনের পরিচালিত একটি কন্টেইনার জাহাজ এই রুটে চীন থেকে ব্রিটেনে গেছে, যা তারা নিয়মিত কার্গো সার্ভিসের সূচনা হিসেবে দেখছে। দক্ষিণ কোরিয়াও ২০২৬ সালে রুটটি পরীক্ষা করবে। তবে লোহিত সাগরের পরিস্থিতি শান্ত হলে এই রুটের প্রতি আকর্ষণ কমে যাবে।
বরফ কমলেও আর্কটিকে ব্যবসা করা কঠিন। প্রকল্পগুলো দাম, প্রযুক্তি ও সরকারি সহায়তার ওপর নির্ভরশীল। আলাস্কার উত্তরাঞ্চল থেকে ৮০০ মাইল দীর্ঘ ট্রান্স-আলাস্কা পাইপলাইন ধরে তেল পরিবহনের ব্যয় অত্যন্ত বেশি হওয়ায় ট্রাম্প প্রশাসনের তেল রপ্তানি দ্বিগুণ করার পরিকল্পনা বাস্তবসম্মত বলে মনে হচ্ছে না। আরও অবাস্তব হলো এশিয়ায় গ্যাস রপ্তানির জন্য প্রস্তাবিত নতুন গ্যাস পাইপলাইন—যার কাজ ২০২৬ সালে শুরু করার দাবি করা হচ্ছে।
চীন যখন বিরল ধাতু রপ্তানিতে সীমাবদ্ধতা আরোপ করেছে, তখন আর্কটিক অঞ্চলের খনিজভাণ্ডার আরও আকর্ষণীয় হয়ে উঠছে।
২০২৬ সালে পশ্চিম আলাস্কার নোম বন্দরের সম্প্রসারণ কাজও শুরু হবে, যা বেরিং প্রণালীর কাছে গভীর পানির নোঙর সুবিধা দেবে। বর্তমানে নিকটতম গভীর পানির বন্দরটি ৮০০ মাইল দূরের ডাচ হারবারে। নোমে বন্দরের সুবিধা বাড়লে কাছাকাছি গ্রাফাইট ওয়ান খনির (যেখানে ব্যাটারির জন্য ব্যবহৃত গ্রাফাইট উৎপাদনের পরিকল্পনা আছে) প্রকল্পও এগোতে পারে।
দীর্ঘদিন আর্কটিক ছিল একটি স্নো গ্লোব—দূর থেকে দেখা এক রহস্যময় অঞ্চল। কিন্তু এখন এটি ক্রমে বৈশ্বিকভাবে সংযুক্ত একটি জগতে পরিণত হচ্ছে। আগামী বছর এ পরিবর্তন আরও স্পষ্ট হবে।
সূত্র: দ্য ইকোনমিস্ট
এমএসএম
সর্বশেষ - আন্তর্জাতিক
- ১ যুদ্ধবিরতির মধ্যেই ইসরায়েলে ৩৪ বিলিয়ন ডলারের সামরিক বাজেট ঘোষণা
- ২ ভারত-রাশিয়ার বন্ধুত্ব ‘সময়ের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ’: মোদী
- ৩ রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগে রুশ বিজ্ঞানীর ২১ বছর কারাদণ্ড
- ৪ পর্যটন মৌসুমে ভয়াবহ বন্যা, চ্যালেঞ্জের মুখে শ্রীলঙ্কার অর্থনীতি
- ৫ রাশিয়ায় বিদেশি অ্যাপ ব্যবহারে কড়াকড়ি, বন্ধ স্ন্যাপচ্যাট ও ফেসটাইম