ভিডিও EN
  1. Home/
  2. আন্তর্জাতিক

বসনিয়া-হার্জেগোভিনা গৃহযুদ্ধ: সার্বদের মুসলিম নিধনের ৩০ বছর

আন্তর্জাতিক ডেস্ক | প্রকাশিত: ০৯:৩৭ পিএম, ১৫ ডিসেম্বর ২০২৫

বসনিয়া-হার্জেগোভিনায় ভয়াবহ গৃহযুদ্ধ শেষ হওয়ার তিন দশক পার হলেও জাতিগত নির্মূলের ক্ষত আজও তাড়া করে ফিরছে নাগরিকদের। ১৯৯২ থেকে ১৯৯৫ সাল পর্যন্ত চলা ওই যুদ্ধে প্রায় এক লাখ মানুষ নিহত হয় এবং দুই কোটিরও বেশি মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়। নিহতদের দুই-তৃতীয়াংশ ছিলেন বসনিয়ার মুসলিম।

সাবেক যুগোস্লাভিয়ার ভাঙনের প্রেক্ষাপটে জাতিগত উত্তেজনা ও প্রতিদ্বন্দ্বী জাতীয়তাবাদী পরিকল্পনার ফলে এই যুদ্ধের সূচনা হয়। সংঘাতের চূড়ান্ত রূপ দেখা যায় ১৯৯৫ সালে সংঘটিত স্রেব্রেনিৎসা গণহত্যায়। এটি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ইউরোপে সংঘটিত সবচেয়ে ভয়াবহ গণহত্যা হিসেবে স্বীকৃত।

স্বাধীনতা থেকে যুদ্ধ

১৯৯২ সালের ১ মার্চ বসনিয়া ও হার্জেগোভিনায় অনুষ্ঠিত গণভোটে অংশগ্রহণকারী ভোটারের ৯৯ শতাংশ স্বাধীনতার পক্ষে রায় দেন। তবে বসনিয়ান সার্ব জনগোষ্ঠী ভোট বর্জন করে এবং পরে আলাদা প্রশাসনিক কাঠামো গড়ে তোলে।

১৯৯২ সালের এপ্রিলে ইউরোপীয় কমিউনিটি বসনিয়াকে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার পরপরই বসনিয়ান সার্ব বাহিনী দেশটির বিভিন্ন এলাকায় হামলা শুরু করে। একই মাসে রাজধানী সারায়েভো অবরোধের মুখে পড়ে যা প্রায় ৪৩ মাস স্থায়ী হয়। এই অবরোধে প্রায় ১১ হাজার মানুষ নিহত হন যাদের মধ্যে এক হাজারের বেশি শিশু।

ব্যাপক হত্যাযজ্ঞ ও বাস্তুচ্যুতি

যুদ্ধ চলাকালে সংঘটিত সহিংসতায় প্রায় ১ লাখ ৪ হাজার মানুষ নিহত হন যাদের বেশিরভাগই ছিলেন বেসামরিক নাগরিক। নিহতদের দুই-তৃতীয়াংশ ছিলেন বসনিয়ার মুসলিম।

আন্তর্জাতিক ও স্থানীয় হিসাব অনুযায়ী, তৎকালীন জনসংখ্যার অর্ধেকেরও বেশি প্রায় ২২ লাখ মানুষ শরণার্থী বা অভ্যন্তরীণভাবে বাস্তুচ্যুত হন। এদের বড় একটি অংশ আজও নিজ ভূমিতে ফিরতে পারেননি।

স্রেব্রেনিৎসা গণহত্যা

১৯৯৫ সালের জুলাইয়ে জাতিসংঘ ঘোষিত ‘নিরাপদ এলাকা’ স্রেব্রেনিৎসায় বসনিয়ান সার্ব বাহিনী হামলা চালায়। কয়েক দিনের মধ্যে ৮ হাজারের বেশি বসনিয়াক পুরুষ ও কিশোরকে হত্যা করা হয় এবং তাদের মরদেহ গণকবর দেওয়া হয়। নারী, শিশু ও বৃদ্ধদের জোরপূর্বক এলাকা থেকে বিতাড়িত করা হয়।

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল ও আন্তর্জাতিক বিচার আদালত এই হত্যাকাণ্ডকে আনুষ্ঠানিকভাবে গণহত্যা হিসেবে ঘোষণা করে।

যুদ্ধের অবসান ও বিচার

স্রেব্রেনিৎসা হত্যাকাণ্ডের পর ন্যাটো বিমান হামলা জোরদার করে। এর পরই ১৯৯৫ সালের নভেম্বরে ডেটন শান্তিচুক্তি স্বাক্ষরিত হয় যা যুদ্ধের অবসান ঘটায়।

যুদ্ধাপরাধের বিচার করতে জাতিসংঘ ১৯৯৩ সালে গঠন করে আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনাল (আইসিটিওয়াই)। এতে ১৬১ জন অভিযুক্ত হন এবং ৯০ জন দোষী সাব্যস্ত হন। বসনিয়ান সার্ব নেতা রাদোভান কারাদজিচ ও সেনাপ্রধান রাতকো ম্লাদিচ দুজনই গণহত্যার দায়ে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে দণ্ডিত হন।

সূত্র : আল-জাজিরা

কেএম