ভেনেজুয়েলা উপকূলে আরও একটি তেলের ট্যাংকার জব্দ করলো যুক্তরাষ্ট্র
ভেনেজুয়েলা উপকূলে আরও একটি তেলের ট্যাংকার জব্দ করেছে যুক্তরাষ্ট্র। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ঘোষিত ‘অবরোধ’ কার্যকরের অংশ হিসেবে এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। এ ঘটনায় ক্ষোভ জানিয়েছে ভেনেজুয়েলা সরকার। তাদের অভিযোগ, এটি আন্তর্জাতিক জলসীমায় ‘চুরি ও ছিনতাই’-এর শামিল।
মার্কিন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ক্রিস্টি নোম শনিবার (২০ ডিসেম্বর) সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে এক পোস্টে ট্যাংকার জব্দের বিষয়টি নিশ্চিত করেন। তিনি জানান, পেন্টাগনের সহায়তায় যুক্তরাষ্ট্রের কোস্টগার্ড এই অভিযান চালিয়েছে।
নোম লিখেছেন, নিষেধাজ্ঞাভুক্ত তেলের অবৈধ পরিবহন বন্ধে যুক্তরাষ্ট্র অভিযান চালিয়ে যাবে। তার কথায়, এই তেল আঞ্চলিক মাদক-সন্ত্রাসে অর্থ জোগাতে ব্যবহৃত হয়। পোস্টের সঙ্গে সমুদ্রে একটি বড় ট্যাংকারের ওপর নিচু দিয়ে উড়তে থাকা হেলিকপ্টারের প্রায় আট মিনিটের একটি ভিডিও যুক্ত করা হয়।
আরও পড়ুন>>
ভেনেজুয়েলায় মার্কিন অবরোধ/ বিশ্ববাজারে বাড়লো তেলের দাম
ভেনেজুয়েলার তেলবাহী ট্যাংকারের ওপর ‘সর্বাত্মক অবরোধের’ নির্দেশ ট্রাম্পের
যুক্তরাষ্ট্রের হামলা ঠেকাতে কতটা প্রস্তুত ভেনেজুয়েলা?
ভোররাতে চালানো এই অভিযানটি সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে ভেনেজুয়েলার আশপাশে যুক্তরাষ্ট্রের দ্বিতীয় ট্যাংকার জব্দের ঘটনা।
এর আগে, গত মঙ্গলবার ডোনাল্ড ট্রাম্প ভেনেজুয়েলায় যাতায়াতকারী সব নিষেধাজ্ঞাভুক্ত তেল ট্যাংকারের বিরুদ্ধে ‘সম্পূর্ণ ও সর্বাত্মক অবরোধ’-এর নির্দেশ দেন। ওই নির্দেশনার পর থেকেই ক্যারিবীয় অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক উপস্থিতি বাড়ছে।
ভেনেজুয়েলা সরকারের অভিযোগ, যুক্তরাষ্ট্রের এই পদক্ষেপ আন্তর্জাতিক জলসীমায় ‘গুরুতর জলদস্যুতা’। দেশটির ভাইস প্রেসিডেন্ট ডেলসি রদ্রিগেজ এক বিবৃতিতে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক সদস্যরা একটি বেসরকারি তেলবাহী জাহাজ জোরপূর্বক দখল করেছে এবং নাবিকদের ‘জোর করে গুম’ করেছে।
তিনি হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, এসব কাজ শাস্তিহীন থাকবে না। এ বিষয়ে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদসহ বিভিন্ন বহুপক্ষীয় সংস্থা ও বিশ্বের বিভিন্ন সরকারের কাছে অভিযোগ জানানো হবে।
কোন জাহাজ জব্দ
যুক্তরাজ্যভিত্তিক সামুদ্রিক ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা প্রতিষ্ঠান ভ্যানগার্ড জানিয়েছে, জব্দ হওয়া জাহাজটি পানামার পতাকাবাহী ‘সেঞ্চুরিজ’ বলে ধারণা করা হচ্ছে। ক্যারিবীয় সাগরে বার্বাডোসের পূর্বদিকে জাহাজটি আটক করা হয়।
ওয়াশিংটনভিত্তিক আইন প্রতিষ্ঠান হিউজেস হাবার্ডের অংশীদার জেরেমি প্যানার রয়টার্সকে বলেন, এই জাহাজটি যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞার তালিকায় নেই। তার মতে, নিষেধাজ্ঞাবিহীন কোনো জাহাজ জব্দ করা ভেনেজুয়েলার ওপর ট্রাম্প প্রশাসনের চাপ আরও বাড়ানোর ইঙ্গিত দেয় এবং কেবল নিষেধাজ্ঞাভুক্ত ট্যাংকার অবরোধের ঘোষণার সঙ্গেও সাংঘর্ষিক।
রয়টার্স জানিয়েছে, ভেনেজুয়েলার রাষ্ট্রীয় তেল কোম্পানি পিডিভিএসএর অভ্যন্তরীণ নথি অনুযায়ী, সেঞ্চুরিজ জাহাজটি চীনের উদ্দেশে প্রায় ১৮ লাখ ব্যারেল ‘মেরেই’ ক্রুড তেল বহন করছিল। জাহাজটি ভেনেজুয়েলা থেকে ‘ক্র্যাগ’ নাম ব্যবহার করে তেল বোঝাই করে এবং নিষেধাজ্ঞাভুক্ত দেশগুলোর তেল পরিবহনে ব্যবহৃত তথাকথিত ‘শ্যাডো ফ্লিট’-এর অংশ।
রপ্তানিতে ধস
যুক্তরাষ্ট্রের এই অভিযানের ফলে ভেনেজুয়েলার তেল রপ্তানি উল্লেখযোগ্যভাবে কমে গেছে। গত সপ্তাহে প্রথম ট্যাংকার জব্দের পর কার্যত এক ধরনের অবরোধ পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। ফলে কোটি কোটি ব্যারেল তেলবোঝাই জাহাজ ভেনেজুয়েলার জলসীমা ছাড়তে সাহস পাচ্ছে না।
যদিও ভেনেজুয়েলা থেকে তেল বহনকারী বহু জাহাজ নিষেধাজ্ঞার আওতায়, তবে কিছু জাহাজ—বিশেষ করে ইরান ও রাশিয়ার তেল পরিবহনকারী—নিষেধাজ্ঞার বাইরে রয়েছে। এছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের শেভরনের মতো কিছু কোম্পানি অনুমোদিত জাহাজে ভেনেজুয়েলার তেল পরিবহন করে থাকে।
সূত্র: আল-জাজিরা
কেএএ/