শেষ জীবনে ‘চরম ইসলামবিদ্বেষী’ হয়ে উঠেছিলেন ব্রিজিত বার্দো
ফরাসি চলচ্চিত্রের কিংবদন্তি অভিনেত্রী ও পশু অধিকারকর্মী ব্রিজিত বার্দো মারা গেছেন। রোববার (২৮ ডিসেম্বর) ৯১ বছর বয়সে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। তার মৃত্যুতে বিনোদন জগতে নেমে এসেছে শোকের ছায়া। সোশ্যাল মিডিয়া ও আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলোতে চলছে ব্রিজিতের কীর্তি নিয়ে নানা আলোচনা। এর মধ্যেই উঠে এসেছে শেষ জীবনে তার চরম ইসলামবিদ্বেষী হয়ে ওঠার বিষয়টিও।
জানা যায়, জীবনের শেষভাগে এসে একাধিকবার ইসলামবিদ্বেষী মন্তব্য করে বিতর্কের মুখে পড়েন ব্রিজিত বার্দো। একসময়ের পর্দা কাঁপানো এই তারকার বক্তব্য ও অবস্থান ইউরোপজুড়ে সমালোচনার জন্ম দেয় এবং ফ্রান্সে বহুবার মামলার কারণও হয়।
১৯৬০ ও ৭০-এর দশকে ফরাসি সিনেমার প্রতীক হিসেবে পরিচিত ব্রিজিত বার্দো অভিনয় জীবন থেকে সরে দাঁড়ানোর পর নিজেকে পশু অধিকার আন্দোলনে সম্পূর্ণভাবে যুক্ত করেন। তবে এই আন্দোলনের আড়ালে মুসলিম সম্প্রদায়কে লক্ষ্য করে করা একাধিক মন্তব্য তাকে ক্রমে বিতর্কিত ব্যক্তিত্বে পরিণত করে। বিশেষ করে হালাল পদ্ধতিতে পশু জবাই ও মুসলিম অভিবাসন বিষয়ে তার বক্তব্যকে অনেকেই ইসলামবিদ্বেষী ও ঘৃণামূলক বলে আখ্যা দেন।
ইসলামবিদ্বেষী কর্মকাণ্ড ও মন্তব্য
বার্দোর প্রধান আক্রমণগুলো ছিল মূলত ফ্রান্সে ইসলামি রীতিনীতি এবং মুসলিমদের ক্রমবর্ধমান উপস্থিতির বিরুদ্ধে-
১. পশু কোরবানির বিরোধিতা: তিনি কোরবানির ঈদে (ঈদুল আজহা) পশু জবাইয়ের প্রক্রিয়ার তীব্র সমালোচনা করে মুসলিমদের বর্বর’ এবং ‘নিষ্ঠুর’ বলে আখ্যা দিয়েছিলেন।
২. লিখিত ঘৃণা প্রকাশ: ২০০৩ সালে প্রকাশিত তার বই Un Cri dans le Silence (একটি নীরব চিৎকার)-এ তিনি মুসলিমদের ‘আক্রমণকারী’ বলে সম্বোধন করেন এবং দাবি করেন, তারা ফ্রান্সকে ধ্বংস করছে।
৩. মসজিদ নিয়ে মন্তব্য: ১৯৯৮ সালে তিনি অভিযোগ করেছিলেন, ফ্রান্সে মসজিদের সংখ্যা বেড়ে যাচ্ছে, আর গির্জার ঘণ্টাগুলো নীরব হয়ে পড়ছে।
৪. উসকানিমূলক চিঠি: ২০০৬ সালে তৎকালীন ফরাসি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী নিকোলাস সারকোজিকে লেখা একটি চিঠিতে ব্রিজিত বলেন, ‘এই জনসংখ্যা (মুসলিম) আমাদের নাকাল করে ছাড়ছে এবং আমাদের দেশে তাদের নিজস্ব নিয়ম চাপিয়ে দিয়ে আমাদের ধ্বংস করছে’।
পরিণতি ও আইনি সাজা
এসব কর্মকাণ্ডের জন্য ব্রিজিত বার্দোকে বেশ কয়েকবার কঠোর আইনি ও সামাজিক পরিণতির সম্মুখীন হতে হয়েছিল-
১. বারবার জরিমানা: ১৯৯৭ সাল থেকে শুরু করে বিভিন্ন সময়ে আদালত তাকে জরিমানা করেন। এর মধ্যে ২০০৮ সালে ১৫ হাজার ইউরো এবং ২০২১ সালে ৫পাঁচ হাজার ইউরো জরিমানা করা হয়।
২. কারাদণ্ডের সুপারিশ: ২০০৮ সালের একটি মামলায় প্রসিকিউটররা তার দুই মাসের স্থগিত কারাদণ্ডের আবেদন করেছিলেন। যদিও শেষ পর্যন্ত আদালত কেবল বড় অংকের জরিমানার রায় দেন।
৩. সামাজিক ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ: ব্রিজিতের এসব বর্ণবাদী মন্তব্যের পর ফ্রান্সের অনেক শহর থেকে তার স্মরণে নির্মিত ‘মারিয়ান’ ভাস্কর্যগুলো সরিয়ে ফেলা হয়।
৪. ঘৃণা ছড়ানোর দায়ে নিন্দা: আদালত তার রায়ে উল্লেখ করেন, বার্দোর শব্দচয়ন পাঠকদের মনে মুসলিম সম্প্রদায়ের প্রতি ঘৃণা ও সহিংসতা উসকে দিতে পারে।
জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত বার্দো তার এই বিতর্কিত অবস্থানের জন্য লজ্জিত হননি। বরং তিনি দাবি করতেন, তিনি যা বিশ্বাস করেন, তা-ই বলছেন। এর ফলে একসময়ের বিশ্বখ্যাত এই অভিনেত্রী শেষ জীবনে অনেকের কাছেই একজন সাম্প্রদায়িক ও উগ্রপন্থি ব্যক্তিত্ব হিসেবে পরিচিতি পান।
সূত্র: টাইম, দ্য গার্ডিয়ান, দ্য উইক, আল-জাজিরা, দ্য কনভারসেশন
কেএএ/
সর্বশেষ - আন্তর্জাতিক
- ১ ধর্ষণে অভিযুক্ত বিজেপি কাউন্সিলরের স্বামীর দম্ভ, ভিডিও ভাইরাল
- ২ সেনা শাসনের ছায়ায় মিয়ানমারের নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি কম
- ৩ শেষ জীবনে ‘চরম ইসলামবিদ্বেষী’ হয়ে উঠেছিলেন ব্রিজিত বার্দো
- ৪ ঝড়-তুষারপাতে সুইডেনে নিহত ৩, ফিনল্যান্ডে বিদ্যুৎবিচ্ছিন্ন হাজারও মানুষ
- ৫ ইউক্রেনে শক্তি প্রয়োগ করে লক্ষ্য পূরণের হুঁশিয়ারি পুতিনের