অর্থনৈতিক সংকট নিয়ে গভীর অসন্তোষ, ইরানে ছড়িয়ে পড়ছে বিক্ষোভ
অর্থনৈতিক অস্থিরতা ও ইরানি মুদ্রার মান অবনতির প্রতিবাদে ইরানের রাজধানী তেহরানে বিক্ষোভে নামেন দোকানদার ও ব্যবসায়ীরা/ ছবি: এএফপি
ইরানের সরকার বিক্ষোভকারীদের দাবিদাওয়া ধৈর্যের সঙ্গে শোনার অঙ্গীকার করেছে। মুদ্রার ব্যাপক অবমূল্যায়ন ও ভয়াবহ অর্থনৈতিক পরিস্থিতির জেরে শুরু হওয়া এই বিক্ষোভ তেহরান থেকে দেশের আরও কয়েকটি শহরে ছড়িয়ে পড়েছে।
রাষ্ট্র পরিচালিত সংবাদ সংস্থা আইআরএনএ জানিয়েছে, মঙ্গলবার (৩১ ডিসেম্বর) রাজধানী তেহরানে শিক্ষার্থীরা রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ করেন। পাশাপাশি ইসফাহান, ইয়াজ্দ ও জানজান শহরের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও প্রতিষ্ঠানে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে।
ইরানের শ্রম আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত সংবাদ সংস্থা ইলনা জানায়, রাজধানীর সাতটি বিশ্ববিদ্যালয়সহ সারা দেশে মোট ১০টি বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হয়েছে।
এই বিক্ষোভ ছিল টানা তৃতীয় দিনের মতো প্রতিবাদ। রোববার তেহরানের জোমহুরি এলাকায় দুটি প্রধান প্রযুক্তি ও মোবাইল ফোন বিপণিকেন্দ্রের আশপাশে এবং গ্র্যান্ড বাজারের কাছে দোকানিরা তাদের ব্যবসা বন্ধ করে রাস্তায় নামেন। কারণ, রিয়ালের রেকর্ড পতনের ফলে আমদানি পণ্যের দাম বেড়ে যায় এবং খুচরা ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্ত হন।
সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে রিয়ালের মান দ্রুত কমে গেছে। কারণ যুক্তরাষ্ট্র ও তার পশ্চিমা মিত্ররা নিষেধাজ্ঞা ও কূটনৈতিক চাপ বাড়িয়েছে। রোববার বিক্ষোভ শুরুর সময় এক মার্কিন ডলারের বিনিময়ে প্রায় ১৪ লাখ ২০ হাজার রিয়াল লেনদেন হচ্ছিল, যেখানে এক বছর আগে এই হার ছিল প্রায় ৮ লাখ ২০ হাজার রিয়াল।
দশকের পর দশক ধরে পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞায় জর্জরিত ইরানের অর্থনীতি গত সেপ্টেম্বরের শেষ দিক থেকে আরও চাপে পড়েছে। তখন জাতিসংঘ দেশটির পারমাণবিক কর্মসূচির সঙ্গে সংশ্লিষ্টভাবে ১০ বছর আগে প্রত্যাহার করা আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা পুনর্বহাল করে।
ক্রমবর্ধমান বিক্ষোভের প্রতিক্রিয়ায় এক সরকারি মুখপাত্র বলেন, সরকার বিক্ষোভকারীদের উদ্বেগের কথা শুনবে।
তেহরানে এক সংবাদ সম্মেলনে ফাতেমেহ মোহাজেরানি বলেন, কঠোর কণ্ঠ থাকলেও সরকার ধৈর্যের সঙ্গে শুনবে, কারণ আমরা বিশ্বাস করি আমাদের জনগণ যথেষ্ট ধৈর্যশীল। আর যখন তাদের কণ্ঠ উঁচু হয়, তখন বোঝা যায় তাদের ওপর চাপ অনেক বেশি।
তিনি বলেন, সরকারের কাজ হলো মানুষের কণ্ঠ শোনা এবং সমাজে বিদ্যমান সমস্যাগুলো সমাধানের জন্য একটি যৌথ বোঝাপড়ায় পৌঁছাতে সহায়তা করা।
তিনি আরও জানান, সরকার শান্তিপূর্ণ সমাবেশের অধিকার স্বীকার করে।
প্রেসিডেন্ট মাসউদ পেজেশকিয়ান মঙ্গলবার শ্রমিক নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন এবং অর্থনৈতিক সংকট মোকাবিলায় কিছু প্রস্তাব দেন বলে আধা-সরকারি মেহর নিউজ এজেন্সি জানায়।
পেজেশকিয়ান বলেন, তিনি সরকারি কর্মকর্তাদের বিক্ষোভকারীদের ন্যায্য দাবি শোনার নির্দেশ দিয়েছেন এবং তাদের জীবিকা রক্ষার অঙ্গীকার করেছে।
কুইন্সি ইনস্টিটিউট ফর রেসপনসিবল স্টেটক্রাফটের নির্বাহী সহ-সভাপতি ত্রিতা পারসি বলেন, ইরানের জনগণের সরকারের ওপর আস্থা নেই যে তারা এই অর্থনৈতিক সমস্যাগুলো সমাধান করতে পারবে।
তিনি বলেন, প্রেসিডেন্ট নিজেই প্রায় এক সপ্তাহ আগে বলেছেন যে তিনি এসব সমস্যার বিষয়ে কিছুই করতে পারছেন না।
তিনি আরও বলেন, এই সমস্যাগুলো মোকাবিলায় সরকারের সক্ষমতার ওপর আস্থার ঘাটতির বড় একটি কারণ আসলে সরকারের নিজস্ব বক্তব্য।
তার মতে, এখন বড় প্রশ্ন হলো—এই বিক্ষোভ আরও গতি পাবে কি না এবং অর্থনৈতিক সমস্যার বাইরেও অন্য ইস্যুতে জনরোষ প্রকাশের রূপ নেবে কি না।
সূত্র: আল-জাজিরা
এমএসএম
সর্বশেষ - আন্তর্জাতিক
- ১ মিয়ানমারে ‘প্রহসনের’ নির্বাচন, ৫০% এর বেশি ভোট পড়ার দাবি জান্তার
- ২ গাজায় কাজ করা ডজনখানেক সহায়তা সংস্থাকে নিষিদ্ধ করছে ইসরায়েল
- ৩ অর্থনৈতিক সংকট নিয়ে গভীর অসন্তোষ, ইরানে ছড়িয়ে পড়ছে বিক্ষোভ
- ৪ খালেদা জিয়াকে ভোলেননি জন্মভিটা জলপাইগুড়ির মানুষ
- ৫ ভারতে চলন্ত গাড়িতে নারীকে ২ ঘণ্টা দলবদ্ধ ধর্ষণের পর ছুড়ে ফেলা হলো রাস্তায়