নীতিশ-নাইডুকে জোটে রাখতে কী মূল্য দেবে বিজেপি?
নীতিশ কুমার এবং চন্দ্রবাবু নাইডু। ছবি সংগৃহীত
ভারতের ১৮তম লোকসভা নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণা হয়েছে মঙ্গলবার (৪ জুন) রাতে। এই ফলাফল অবাক করেছে প্রায় সবাইকে। কারণ, বুথফেরত জরিপগুলো যেভাবে আভাস দিচ্ছিল, এবারের নির্বাচনেও নরেন্দ্র মোদীর জয়জয়কার হতে যাচ্ছে, ভূমিধস জয় পেতে যাচ্ছে বিজেপি; সেটি কার্যত ভুল প্রমাণিত হয়েছে। প্রত্যাশিত ৪০০ আসনে জয় পাওয়া দূরের কথা, একক সংখ্যাগরিষ্ঠতাই পায়নি বিজেপি। ফলে, প্রথমবারের মতো সরকার গড়তে শরিকদের ওপর নির্ভর করতে হচ্ছে নরেন্দ্র মোদীকে।
ঘোষিত ফলাফল অনুসারে, ভারতের লোকসভায় ৫৪৩টি আসনের মধ্যে ২৪০ আসনে জয় পেয়েছে ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি)। অর্থাৎ, সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিশ্চিত করতে এখনো ৩২ আসন দরকার তাদের। এর জন্য প্রথমবারের মতো জোট শরিকদের ওপর নির্ভর করতে হচ্ছে নরেন্দ্র মোদীকে।
আরও পড়ুন>>
- চূড়ান্ত ফল ঘোষণা: বিজেপি ২৪০, কংগ্রেস ৯৯
- সরকার গঠন নিয়ে দৌড়ঝাঁপ, বিজেপির ভাগ্য শরিকদের হাতে
- সরকার গঠনের আশা ছাড়েনি কংগ্রেস, ইঙ্গিত নতুন শরিকের
এ অবস্থায় সবচেয়ে বেশি আলোচিত দল হয়ে উঠেছে চন্দ্রবাবু নাইডুর টিডিপি এবং নীতিশ কুমারের জেডিইউ। বলা হচ্ছে, এ দুটি দলই হতে পারে এবারের ‘কিংমেকার’। নির্বাচনে টিডিপি ১৬ এবং জেডিইউ ১২ আসনে জয় পেয়েছে।
দল দুটি বর্তমানে বিজেপির নেতৃত্বাধীন এনডিএ জোটের শরিক হলেও গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে, তাদের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করছে বিরোধী দল কংগ্রেসও। কারণ, দুটি দলই একসময় কংগ্রেসের মিত্র ছিল। পরে তারা গেরুয়া শিবিরের ছত্রছায়ায় আসে।
বুধবার (৫ জুন) সন্ধ্যায় টিডিপি-জেডিইউসহ এনডিএ জোটের সব শরিকের সঙ্গে বৈঠকে বসছে বিজেপি। নরেন্দ্র মোদীর বাসভবনে হবে গুরুত্বপূর্ণ এই বৈঠক। সেখানে দু’পক্ষের মধ্যে তুমুল দরকষাকষি হতে পারে বলে অনুমান করা যায়।
নীতিশ এবং নাইডু উভয়েই ঝানু রাজনীতিক। জোট সরকারে থাকার দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞতা রয়েছে তাদের। দরকষাকষিতেও তারা বেশ দক্ষ।
বিজেপি যদি একাই সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেতো, তাহলে মিত্রদের যা দিতো তা নিয়েই খুশি থাকতে হতো। কিন্তু এবার বিজেপির অপ্রত্যাশিত ফলাফল শরিকদের সামনে দরকষাকষির দারুণ সুযোগ এনে দিয়েছে এবং প্রবীণ রাজনীতিবিদরা নিশ্চয় সেই সুযোগ হাতছাড়া করবেন না।
কী চায় দুই শরিক
জেডিইউ এরই মধ্যে ইঙ্গিত দিয়েছে, তারা বিজেপি নেতৃত্বের কাছে কী চাইতে পারে। কিন্তু টিডিপি এ বিষয়ে একেবারেই মুখে কুলুপ এঁটে রয়েছে।
এনডিটিভির সঙ্গে আলাপকালে জেডিইউর জ্যেষ্ঠ নেতা কেসি ত্যাগী বলেছেন, ‘আমন্ত্রণ বাড়ানো হলে’ তার দল সরকারে যোগ দেওয়ার বিষয়টি বিবেচনা করবে। তিনি বলেন, আমরা আশা করি, নতুন সরকার বিহারকে বিশেষ মর্যাদা দেওয়ার কথা বিবেচনা করবে এবং দেশব্যাপী জাতিশুমারি করবে।
আরও পড়ুন>>
- কারাগার থেকে বেরিয়ে সরাসরি ‘কিংমেকার’ নাইডু
- একই প্লেনে নীতিশ-তেজস্বী, নতুন সরকার নিয়ে জল্পনা
- ফলাফল দেখে যা বললেন মোদী
কেসি ত্যাগী অবশ্য স্পষ্ট বলেছেন, এগুলো এনডিএ জোটকে জেডিইউর সমর্থনের শর্ত নয়। তিনি বলেন, আমাদের সমর্থন নিঃশর্ত। তবে বিহারের বিশেষ মর্যাদা না পাওয়া পর্যন্ত বেকারত্ব শেষ হবে না। তাই, বিহার থেকে এনডিএ যে সমর্থন পেয়েছে, তা মাথায় রেখে আমরা আশা করি, একে বিশেষ মর্যাদা দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হবে।
জোটে থাকতে জেডিইউ’র শর্তগুলোর বিষয়ে কিছুটা ইঙ্গিত পাওয়া গেলেও টিডিপির দাবিদাওয়া সম্পর্কে এখনো তেমন কিছু জানা যায়নি। দলীয় সূত্র বলছে, কেন্দ্রীয় সরকারে গুরুত্বপূর্ণ কোনো মন্ত্রণালয় চাইতে পারে টিডিপি।
আরেকটি মূল বিষয় হিসেবে অন্ধ্র প্রদেশের অগ্রাধিকারমূলক মর্যাদা আলোচনায় আসতে পারে। মূলত, এই বিশেষ মর্যাদার দাবি নিয়ে বিরোধের জেরেই ২০১৬ সালে বিজেপির ছায়া থেকে বেরিয়ে এসেছিলেন নাইডু।
আপাতত, টিডিপি এবং জেডিইউ উভয়েই জোর দিয়ে বলছে, তারা এনডিএ’র সঙ্গেই রয়েছে। কিন্তু দুই কিংমেকারের নাম যখন চন্দ্রবাবু নাইডু এবং নীতিশ কুমার, তখন কোনো সম্ভাবনাই উড়িয়ে দেওয়া যায় না।
সূত্র: এনডিটিভি
কেএএ/