ভিডিও EN
  1. Home/
  2. জাগো জবস

‘আমি চাই ওরা শিখুক, বড় হোক’

জাগো নিউজ ডেস্ক | প্রকাশিত: ০৬:৫৩ পিএম, ০৫ অক্টোবর ২০২৫

সেগুনবাগিচার ব্যস্ত মহল্লার একটি স্কুলে চলছে ক্লাস। সুবিধাবঞ্চিত, অবহেলিত, দরিদ্র ঘরের সন্তানরা একত্র হয়ে মনোযোগ দিয়ে শুনছে। মার্কার ঘষে হোয়াইট বোর্ডে পড়াচ্ছেন মো. আসিফুল ইসলাম। এ যেন এক ভিন্নধর্মী স্কুল। নাম জুম বাংলাদেশ স্কুল। আজকের শিক্ষক দিবস উপলক্ষে জাগো নিউজের সঙ্গে কথা বললেন এই তরুণ শিক্ষক। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন মাহমুদা আক্তার

জাগো নিউজ: আপনি প্রতিষ্ঠানের হয়ে পড়াচ্ছেন, সেটার শুরুটা কেমন ছিল?

মো. আসিফুল ইসলাম: মাত্র ১৩ জন পথশিশুকে নিয়ে ২০১৬ সালে জুম বাংলাদেশের যাত্রা শুরু হয় এখানেই। তখন বিকেলে রাস্তায় ব্যানার পেতে স্বেচ্ছাসেবীরা ক্লাস নিতেন। শুরুটা মোটেও সহজ ছিল না। শিশুরা নিয়মিত আসতো না, অনেকেই আগ্রহও দেখাতো না। তবুও ধীরে ধীরে সংখ্যাটা বেড়েছে। এই স্কুলগুলো থেকে এখন পর্যন্ত ১৩৩৬ জনেরও বেশি পথশিশু অক্ষরজ্ঞান অর্জন করেছে। বর্তমানে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ানো হয় এখানে। এরপর অন্য কোনো স্কুলে আমাদের‌ প্রতিষ্ঠানের অর্থায়নে ভর্তি করানোর ব্যবস্থা করা হয়।

‘আমি চাই ওরা শিখুক, বড় হোক’

জাগো নিউজ: জুম বাংলাদেশ ঠিক কাদের নিয়ে কাজ করে?

মো. আসিফুল ইসলাম: আমরা মূলত দুই ধরণের শিশুদের নিয়ে কাজ করি। এক পথশিশু আর দুই সুবিধাবঞ্চিত শিশু। পথশিশুরা সেইসব শিশু, যাদের পরিবার নেই; রেলস্টেশন, ফুটপাতেই যাদের দিন কাটে। আর সুবিধাবঞ্চিত শিশুরা হলো এমন পরিবার থেকে আসা বাচ্চা, যাদের বাবা–মা আছেন কিন্তু অর্থনৈতিক কারণে তাদের পড়াশোনার সুযোগ হয় না। অনেকে রিকশাচালক, কেউ বাসায় কাজ করেন। সব মিলিয়ে ওদের শিক্ষার পথটা কঠিন। আমরা ওদের জন্যই আলাদা ব্যবস্থায় পড়ার সুযোগ তৈরি করি।

জাগো নিউজ: স্কুলের কার্যক্রমটা এখন কতটা বিস্তৃত?

মো. আসিফুল ইসলাম: বর্তমানে আমাদের প্রায় সাত থেকে আটটা শাখা আছে। এর মধ্যে চারটা একাডেমিক স্কুল, যেখানে নিয়মিত ক্লাস হয়। আর বাকিগুলো ভ্রাম্যমাণ স্কুল। রেলস্টেশন বা রাস্তার ধারে যেখানে পথশিশুদের পাওয়া যায়। ওদের খুঁজে বের করেই ক্লাস নেওয়া হয়।

জাগো নিউজ: আপনি নিজে কীভাবে এই কাজে যুক্ত হলেন?

মো. আসিফুল ইসলাম: আমি সিদ্ধেশ্বরী কলেজে অনার্স সেকেন্ড ইয়ারে পড়ি। এইচএসসি পরীক্ষার পর ফাঁকা সময়টা বসে না থেকে আমি এখানে যুক্ত হই। আমি বিশ্বাস করি ‘উইজডম হ্যাজ নো ভ্যালু আনটিল ইউ শেয়ার ইট উইথ আদার্স’ অর্থাৎ, ‘জ্ঞান ততক্ষণ পর্যন্ত কোনো মূল্য রাখে না, যতক্ষণ না তুমি তা অন্যদের সঙ্গে ভাগ করো।’ তাই নিজের জ্ঞানটা আমি ভাগ করে নিতে চাই। সকাল আটটায় ঘুম থেকে উঠে স্কুলে আসি, দেড়টা-দুইটার দিকে বাসায় ফিরি। এই কাজটা আমার জীবনেও একটা রুটিন এনে দিয়েছে।

‘আমি চাই ওরা শিখুক, বড় হোক’

জাগো নিউজ: এখানে পড়ানোটা সাধারণ স্কুলের মতোই, না একটু আলাদা?

মো. আসিফুল ইসলাম: আমরা বাচ্চাদের একদম হাতে ধরে পড়াই। তাই তাদের শেখায় কোনো ঘাটতি থাকে না। তারা পড়তে পারে, অঙ্ক করতে পারে অন্য স্কুলের বাচ্চাদের মতোই। আসলে পার্থক্যটা শুধু সুযোগের। ওরা সুযোগ পেলেই এগিয়ে যায়।

জাগো নিউজ: ক্লাসে শৃঙ্খলা বজায় রাখা নিশ্চয়ই সহজ নয়?

মো. আসিফুল ইসলাম: (হেসে) হ্যাঁ, শুরুতে সহজ ছিলো না। কিন্তু ওদের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তোলাই মূল কৌশল। আমি ওদের বন্ধু হয়ে কথা বলি, একইসাথে শ্রদ্ধা করতেও শেখাই। এখন বললে চুপ হয়ে যায়, বোর্ডে যেতে বললে ছুটে যায়।

জাগো নিউজ: কখনো কোনো কঠিন বা আবেগময় পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়েছেন?

মো. আসিফুল ইসলাম: হ্যাঁ, এমন অনেক সময় এসেছে। কিছুদিন আগে ক্লাস থ্রির দুই ছাত্রী কুলসুম আর জান্নাত আমাকে বললো, তাদের বাবা-মা গার্মেন্টসে কাজে পাঠানোর পরিকল্পনা করছেন। মাসে ৭–৮ হাজার টাকা আয় হবে, সংসারের উন্নতি হবে। তাই পড়াশোনার বদলে কাজে দেওয়ার পরিকল্পনা করছেন। অথচ ওরা দুইজনই দারুণ ছাত্রী। আমি ওদের বলেছি, আমি তাদের বাবা-মায়ের সঙ্গে কথা বলবো।

জাগো নিউজ: আপনি নিজে কী উদ্দেশ্যে পড়ান?

মো. আসিফুল ইসলাম: ব্যক্তিগত কোনো লাভের চিন্তা আমার নেই। আমি চাই, এই বাচ্চাগুলো শেখুক, বড় হোক। ওদের চোখে ভবিষ্যতের স্বপ্ন দেখতে পাই এইটাই আমার সবচেয়ে বড় তৃপ্তি।

এমআইএইচ/এমএস

আরও পড়ুন