ভিডিও EN
  1. Home/
  2. জাগো জবস

বিদেশে উচ্চশিক্ষা ও ক্যারিয়ারে যেসব দক্ষতা জরুরি

আনিসুল ইসলাম নাঈম | প্রকাশিত: ০৫:১৯ পিএম, ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৫

তরুণ-তরুণীরা স্বপ্ন দেখছেন বিশ্বজয়ের। সেই স্বপ্ন পূরণের অন্যতম পথ হলো বিদেশে উচ্চশিক্ষা। কিন্তু ভিন্ন সংস্কৃতি ও নতুন পরিবেশে মানিয়ে নেওয়া অনেক শিক্ষার্থীর জন্য কঠিন হয়ে দাঁড়াচ্ছে। তবে শুধু ভিসা পাওয়া বা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়াই শেষ লক্ষ্য নয়—এটি বরং যাত্রার শুরু। নতুন দেশে গিয়ে ভিন্ন সংস্কৃতি ও পরিবেশের সাথে মানিয়ে নিতে হলে দরকার অধ্যবসায়, মানসিক শক্তি এবং দূরদর্শী পরিকল্পনা।

যারা একাডেমিক জ্ঞান অর্জনের পাশাপাশি নিজেদের অভিযোজন ক্ষমতা ও দক্ষতা গড়ে তুলতে পারেন; তারাই সত্যিকারের সফল হয়ে গড়ে তোলে উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ। অচেনা পরিবেশে মানিয়ে নিয়ে নিজের ক্যারিয়ার এগিয়ে নিতে হলে প্রয়োজন কিছু অপরিহার্য দক্ষতা। এমন কয়েকটি দক্ষতার বিষয়ে আলোচনা করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের বেলোয়েট কলেজের স্নাতকের শিক্ষার্থী জোবায়ের আহমেদ। লিখেছেন আনিসুল ইসলাম নাঈম—

সাংস্কৃতিক সচেতনতা ও মানিয়ে নেওয়ার দক্ষতা
বিদেশে গিয়ে অনেক শিক্ষার্থীই সাংস্কৃতিক ধাক্কার (কালচারাল শক) মুখোমুখি হন। নতুন নিয়ম-কানুন, ভিন্ন ভাষা, আলাদা জীবনধারা ও সামাজিক শিষ্টাচার প্রথমে বিভ্রান্তি বা একাকিত্ব তৈরি করতে পারে। তবে এই ধাক্কা স্থায়ী নয়। স্থানীয় সংস্কৃতি সম্পর্কে জানতে আগ্রহী হওয়া, বন্ধু ও সহপাঠীদের সাথে খোলামেলা যোগাযোগ রাখা এবং নতুন অভিজ্ঞতাকে ইতিবাচকভাবে গ্রহণ করার মাধ্যমে সহজেই এটি কাটিয়ে ওঠা সম্ভব। ধৈর্য, শেখার মানসিকতা এবং মানিয়ে নেওয়ার দক্ষতাই একজন শিক্ষার্থীকে সাংস্কৃতিক ধাক্কা অতিক্রম করে সফলভাবে নতুন পরিবেশে প্রতিষ্ঠিত হতে সাহায্য করে।

যোগাযোগে পারদর্শিতা
বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়ে সফল হতে শুধু ভাষাজ্ঞান নয় বরং আত্মবিশ্বাস ও কার্যকর যোগাযোগের দক্ষতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ক্লাস আলোচনায় যুক্তি তুলে ধরা, সেমিনারে পরিষ্কারভাবে মত প্রকাশ করা কিংবা গবেষণায় দলের সঙ্গে সমন্বয় করার সময় এ দক্ষতা প্রয়োজন হয়। অনেক সময় একই ভাষা হলেও উচ্চারণ, শব্দচয়ন বা আঞ্চলিক পার্থক্যের কারণে ভুল বোঝাবুঝি হতে পারে। তাই ধৈর্য ধরে শোনা এবং প্রয়োজনমতো প্রশ্ন করার অভ্যাস গড়ে তোলা জরুরি। আন্তঃসাংস্কৃতিক প্রেক্ষাপটে সহপাঠী ও শিক্ষকদের সঙ্গে সম্পর্ক গড়তে সহানুভূতিশীল মনোভাব ও সক্রিয় শ্রবণ ক্ষমতা সমানভাবে দরকার। এসব যোগ্যতাই শিক্ষার্থীর একাডেমিক যাত্রাকে সমৃদ্ধ করে এবং আন্তর্জাতিক অঙ্গনে তার ভবিষ্যতের পথ প্রশস্ত করে।

যুক্তিভিত্তিক চিন্তা ও সিদ্ধান্ত গ্রহণের সক্ষমতা
উচ্চশিক্ষার অঙ্গনে শুধু পড়াশোনার চাপ সামলানো নয় বরং চিন্তা-ভাবনার ধরনই এখানে বড় পরীক্ষা। বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো শিক্ষার্থীদের কাছে প্রত্যাশা করে—তারা যেন প্রশ্ন করতে শেখে, নানা তথ্যসূত্র যাচাই করে নতুন দৃষ্টিকোণ বের করে আনে। ভিন্ন ভিন্ন দিক থেকে সমস্যার বিশ্লেষণ এবং সৃজনশীল সমাধান উপস্থাপনই একজন শিক্ষার্থীকে আলাদা করে তোলে।

আরও পড়ুন
যেভাবে তুরস্কের সরকারি বৃত্তি পেলেন মাইনুল
যুক্তরাষ্ট্রে স্কলারশিপ পেতে চান, রইলো ফয়সালের পরামর্শ

তথ্যপ্রযুক্তি ও গবেষণামূলক দক্ষতা
বৈশ্বিক শিক্ষায় ডিজিটাল দক্ষতা অপরিহার্য। শিক্ষার্থীদের জন্য অনলাইন গবেষণা টুল, ডেটা বিশ্লেষণ সফটওয়্যার এবং ভার্চুয়াল সহযোগিতা প্ল্যাটফর্মে পারদর্শিতা প্রয়োজন। তবে প্রযুক্তিগত দক্ষতার পাশাপাশি গুরুত্বপূর্ণ হলো তথ্য যাচাই করতে পারা। এ ছাড়া কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করে কাজ সহজ করা, তথ্য বিশ্লেষণ দ্রুততর করা এবং নতুন সমাধান উদ্ভাবন করা শিক্ষার্থীর গবেষণার মান ও কার্যকারিতা উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়ায়।

মানসিক শক্তি এবং আত্মনিয়ন্ত্রণ
বিদেশে পড়াশোনা মানে শুধুই নতুন দেশ বা বিশ্ববিদ্যালয় নয়, এটি পরিবার থেকে দূরে থাকা, নতুন নিয়ম ও পরিবেশের সাথে মানিয়ে নেওয়া এবং প্রচণ্ড একাডেমিক চাপ মোকাবিলা করার চ্যালেঞ্জও বয়ে নিয়ে আসে। তাই শিক্ষার্থীদের জন্য মানসিক স্থিতিশীলতা, আত্মশৃঙ্খলা এবং চাপ ব্যবস্থাপনার ক্ষমতা অপরিহার্য। এ দক্ষতাগুলো গড়ে উঠলে তারা মনোযোগ ধরে রাখতে পারেন, চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হলেও শান্ত থাকায় সক্ষম হন।

নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণ এবং টিমওয়ার্কের ক্ষমতা
বিদেশে পড়াশোনা কেবল একাডেমিক অর্জনের জন্য নয়; এটি নতুন সম্পর্ক গড়ার, নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণের এবং পেশাগত সুযোগ উন্মুক্ত করার সুযোগও দেয়। শিক্ষার্থীরা সহপাঠী, শিক্ষক এবং শিল্পবিশেষজ্ঞদের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তুলে একাডেমিক অভিজ্ঞতা সমৃদ্ধ করতে পারেন। লিংকডইনে বা ব্যক্তিগত পরিচিতি ব্যবহার করে শক্তিশালী সম্পর্ক তৈরি করা শিক্ষার্থীদের একাডেমিক প্রকল্প, গবেষণা এবং পেশাগত সুযোগ কাজে লাগাতে সাহায্য করে। ভবিষ্যতে এ নেটওয়ার্ক ইন্টার্নশিপ, গবেষণামূলক সুযোগ এবং চাকরির ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ সহায়ক হিসেবে কাজ করে।

এ দক্ষতাসমূহ আয়ত্ত করলে শিক্ষার্থীরা পড়াশোনায় এগিয়ে থাকবেন। পাশাপাশি নতুন আইডিয়া সৃষ্টি, চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা এবং সাংস্কৃতিকভাবে সুদক্ষ বৈশ্বিক নাগরিক হিসেবে আত্মপ্রকাশ করবেন। বিভিন্ন দেশের শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের সঙ্গে কাজ করার মাধ্যমে তারা সমস্যা সমাধানে দক্ষতা অর্জন করেন। দলগত প্রকল্পে নেতৃত্ব দিতে শেখেন। এমনকি বৈচিত্র্যময় সমাজে মানিয়ে নেওয়ার ক্ষমতা গড়ে তোলে।

এসইউ/এএসএম

আরও পড়ুন