ভিডিও EN
  1. Home/
  2. আইন-আদালত

এটিএম আজহারের রিভিউ: যে আশায় জামায়াতের আইনজীবীরা

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক | প্রকাশিত: ০৯:১২ এএম, ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

৫ আগস্ট ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পালিয়ে যাওয়ার পর পরিবর্তিত রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে প্রায় সব দলের শীর্ষ নেতারাই কারামুক্ত হয়েছেন। তবে আটকে রয়েছেন জামায়াতে ইসলামীর সাবেক ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল এটিএম আজহারুল ইসলাম। বেশ কয়েক মাসের প্রক্রিয়ার পর মঙ্গলবার থেকে তার মামলার রিভিউ শুনানি শুরু হয়েছে। সেটি আজ (বুধবার) আবারও শুনানির জন্য ধার্য রয়েছে।

তবে এ রিভিউ নিয়ে দলটির শীর্ষ আইনজীবীরা বলছেন, এটি কেবল এ মামলার রিভিউ নয়। এর মাধ্যমে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে যতগুলো বিচার হয়েছে সবগুলোতেই বড় ধাক্কা লাগবে।

সাতটি গ্রাউন্ড যুক্ত হয়েছে আগেই

শুনানির বিষয়ে আইনজীবী শিশির মনির বলেন, এটিএম আজহারুল ইসলামকে ফ্যাসিস্ট সরকারের সময় তখনকার দিনের আপিল বিভাগ মৃত্যুদণ্ডাদেশ দিয়েছিল। ওই আদেশের বিরুদ্ধে আমরা রিভিউ আবেদন করেছিলাম। আজ শুনানির একপর্যায়ে আপিল বিভাগ আমাদের কাছে এডিশনাল গ্রাউন্ড চেয়েছেন। এর জন্য সাতটি গ্রাউন্ড তৈরি করা হয়েছিল আগেই। এটার কপিও আজ আদালতে জমা দেওয়া হয়েছে। তৎকালীন আদালত উনাকে তিনটি ঘটনায় মৃত্যুদণ্ড দিয়েছিল। মামলায় আরেকজন বিচারপতি তখন ভিন্নমত পোষণ করে উনাকে খালাস দিয়েছিলেন। এ বিষয়গুলো আবেদনে উঠে এসেছে।

সাবেক শীর্ষ নেতাদের দণ্ড নিয়ে প্রশ্ন

এক প্রশ্নের জবাবে শিশির মনির বলেন, প্রথাগত আন্তর্জাতিক আইন বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে না মর্মে অতীতে আপিল বিভাগ বলেছেন। এটিই আজ রিভিউ হচ্ছে। শুধু এটিএম আজহারের ক্ষেত্রে নয়; আবদুল কাদের মোল্লা, মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী, মুহাম্মদ কামারুজ্জামান, আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ, মীর কাসেম আলীসহ সবার ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক আইনের প্রথাগত বিধান প্রযোজ্য নয় বলে রায় দিয়েছিলেন। আজ যদি সেসব রায় এই পয়েন্টে রিভিউ হয় তাহলে আন্তর্জাতিক আইনের প্রয়োগ না করার কারণে যে অবিচার হয়েছে সেটা নতুন করে আবার প্রমাণিত হবে।

আইনজীবী এহসান এ সিদ্দিক বলেন, প্রথাগত আন্তর্জাতিক আইন এ মামলায় প্রযোজ্য হবে না বলে আপিল বিভাগ অতীতে রায় দিয়েছিলেন। কিন্তু এ ক্ষেত্রে প্রথাগত আন্তর্জাতিক আইন প্রযোজ্য হবে বলে শুনানিতে যুক্তি তুলে ধরা হয়েছে।

বাংলাদেশের আইন অনুযায়ীই আন্তর্জাতিক আইন মেনে বিচার ও রায় দিতে হবে। আন্তর্জাতিক আইন না মেনে এর আগে আপিল বিভাগ, ট্রাইব্যুনাল রায় দিয়েছে। কিন্তু আমাদের দেশের আইনেই আছে ইন্টারন্যাশনাল আইন মেনে রায় দিতে হবে। এটা হচ্ছে ইন্টারন্যাশনাল অফেন্সেস। রিভিউ আবেদনের শুনানিতে এই যুক্তিই প্রধান গ্রাউন্ড বলে জানান সিদ্দিক।

আগের প্রক্রিয়া

এর আগে ৯ জানুয়ারি রিভিউ আবেদনের বিষয়টি উত্থাপন করেন সিনিয়র আইনজীবী আবদুর রাজ্জাক। তিনি বলেছিলেন, আসামি ১০ বছর ধরে মৃত্যুর সেলে আছেন। জরুরি ভিত্তিতে রিভিউ আবেদন শুনানি করা দরকার। আদালত আবেদন মঞ্জুর করে ২৩ জানুয়ারি শুনানির দিন ঠিক করেন আদালত।

২০২০ সালের ১৯ জুলাই খালাস চেয়ে আপিল বিভাগের সংশ্লিষ্ট শাখায় রিভিউ আবেদন করেছিলেন এটিএম আজহারুল ইসলাম। ২৩ পৃষ্ঠার রিভিউ আবেদনে ১৪টি যুক্তি দেখিয়ে উনার খালাস চাওয়া হয়।

২০১৪ সালের ৩০ ডিসেম্বর এটিএম আজহারুল ইসলামকে মৃত্যুদণ্ড দেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। ওই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল শুনানির পর ২০১৯ সালের ৩১ অক্টোবর এটিএম আজহারুল ইসলামকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের দেওয়া মৃত্যুদণ্ডাদেশ বহাল রেখে রায় দেন আপিল বিভাগ। প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বাধীন চার বিচারপতির আপিল বিভাগের বেঞ্চ এ রায় ঘোষণা করেন।

আজহারকে খালাস দিয়েছিলেন এক বিচারক

এটিএম আজহারের মামলার বিষয়ে কী প্রত্যাশা? জানতে চাইলে শিশির মনির আরও বলেন, এ মামলায় অ্যাপ্রোপিয়েট কেইস অ্যালাও হওয়ার উপযুক্ত গ্রাউন্ড (যুক্তি) রয়েছে। যেমন- একজন বিচারপতি কিন্তু আজহার সাহেবকে খালাস দিয়েছিলেন। বাই মেজরিটি কিন্তু তার সাজা হয়েছে। তিনজন একদিকে আর একজন একদিকে। তিনি হলেন বিচারপতি জিনাত আরা। তিনি আজহারকে খালাস দিয়ে বলেছেন, যে প্লেইস অব অকারেন্স অর্থাৎ ঘটনার যে জায়গাটি আর সাক্ষিরা এসে যে জায়গার কথা বলছেন দুটার পার্থক্য থাকার পরও সেখানে তাকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে। সে জন্যই বিচারপতি জিনাত আরা তাকে খালাস দিয়ে বলেছেন, এগুলো অ্যাক্সসেপ্ট করা যায় না। কিন্তু কোর্ট বলেছেন (অন্য বিচারকরা), অনেক দিনের পুরাতন ঘটনা, কিছু ডিসপোডেন্সি হবেই।

তিনি বলেন, জিনাত আরা বলেছিলেন সন্দেহাতীত যদি না হয় তাহলে সাজা দেওয়া যায় না। এজন্য আমার মনে হয় এটা একটা অ্যাপ্রোপ্রিয়েট কেইস। ফাইটটা লম্বা হবে! দূরুহ হবে। কিন্তু অর্জন করতে পারলে আগের বিচারের পুরো প্রসেসটা সম্পর্কে বড় ধরনের ধাক্কা লাগবে।

এফএইচ/এমএইচআর/এএসএম