জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ৯৮৮ জনের চাকরি পুনর্বহালের নির্দেশ

২০১১ সালে উচ্চ আদালতের নির্দেশে চাকরিচ্যুত জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ৯৮৮ কর্মকর্তা-কর্মচারীকে সিনিয়রিটি সুযোগ-সুবিধাসহ চাকরি পুনর্বহালের নির্দেশ দিয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ। আজকের রায়ের ফলে তাদের চাকরিতে বহাল হতে আর কোনো আইনি বাধা নেই।
মঙ্গলবার (২৭ মে) প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বাধীন সাত সদস্যের আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ ও নিয়মিত বেঞ্চ রায় এ ঘোষণা করেন। আদালতে আজ বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষে ছিলেন জ্যেষ্ঠ সালাহ উদ্দিন দোলন, অ্যাডভোকেট মো.আসাদুজ্জামান ও ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল। অপরপক্ষে (চাকরিচ্যুতদের) ছিলেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী খায়ের এজাজ মাস্উদ। রায় ঘোষণার সময় আইনজীবী, কর্মকর্তা, কর্মচারীরা উপস্থিত ছিলেন।
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
আইনজীবীরা বলেন, ২০০৩ সালের ১৭ নভেম্বর থেকে ২০০৪ সালের ৩১ আগস্ট পর্যন্ত জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়োগপ্রাপ্ত ৯৮৮ জনের চাকরি পুর্নবহালের রায় দিয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ। যাদের আদালতের রায়ে চাকরিচ্যুত করেছিল বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
আইনজীবী সালাহ উদ্দিন দোলন সাংবাদিকদের বলেন, ৯৮৮ জনের চাকরিচ্যুতি একটি বড় ঘটনা। যেটা সর্বোচ্চ আদালতের রায়ে হয়েছিল। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ নিজে রিভিউ করে। সেটির শুনানি শেষে আজ রায় ঘোষিত হয়েছে। আজকের রায়ের ফলে তাদের চাকরিতে বহাল হতে আর বাধা নেই।
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
তিনি বরেন, রায় পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আমরা বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেটের কাছে পাঠাবো। সিন্ডিকেট সিদ্ধান্ত নিবে কত তারিখ থেকে এদের পুনর্বহাল করবে। চাকরিচ্যুতি থেকে পুর্নবহাল পর্যন্ত সময়টাকে অসাধারণ ছুটি হিসেবে গণ্য করেছেন আদালত। তাদের জ্যেষ্ঠতা কোনোভাবে অ্যাফেক্টেড হবে না। সিনিয়রিটির ধারাবাহিকতা থাকবে। তাদের মধ্যে অনেকে মারা গেছেন। এখন সবার বেনিফিটের বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় সিদ্ধান্ত নেবেন। এখন যারা জীবিত আছেন তাদের মধ্যে যারা ফিরতে চান তাদের চাকরিতে ফিরতে বাধা নেই।
আইনজীবী আরও বলেন, সীমাহীন অবিচারের পর আজ যে একটা ন্যায়বিচার পেলাম সেটার জন্য ৫ আগস্ট পর্যন্ত শহীদ হয়েছেন সবার পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানাই। তাদের জন্য আল্লাহর কাছে জান্নাতের প্রার্থনা করি। যারা আহত তাদের সুস্থতা কামনা করি। কারণ ৫ আগস্ট না হলে এ রিভিউ করতে পারতাম না।
বিজ্ঞাপন
আইনজীবীরা জানান, ২০০৩ সালের ১৭ নভেম্বর থেকে ২০০৪ সালের ৩১ আগস্ট পর্যন্ত জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল নিয়োগ বাতিলের জন্য সাবেক এমপি অ্যাডভোকেট ফজলে রাব্বী মিয়া ২০০৪ সালে হাইকোর্টে একটি রিট করেন। ২০০৬ সালের ২২ আগস্ট সেই রিটের রুল খারিজ করে দেন। নির্ধারিত সময়ে এর বিরুদ্ধে কোনো আপিল বা রিভিউ করেনি। ২০১০ সালে মামলার পক্ষ না হয়েও রিভিউ করেন তৎকালীন আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য ও মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক।
২০১১ সালের ২৩ আগস্ট ২০০৩ সালের ১৭ নভেম্বর থেকে ২০০৪ সালের ৩১ আগস্ট পর্যন্ত জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল নিয়োগ বাতিলের রায় দেন হাইকোর্ট বিভাগের তৎকালীন বিচারপতি এএইচএম শামসুদ্দিন চৌধুরী (মানিক) ও বিচারপতি গোবিন্দ চন্দ্র ঠাকুর।
ওই রায়ের বিরুদ্ধে ২০১১ সালের ১ ডিসেম্বর লিভ টু আপিল করা হয়। আপিল বিভাগ বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরীর রায় বাতিল করে ২০০৪ সালে ফজলে রাব্বী মিয়ার রিটে জারি করা রুল পুনরায় নিষ্পত্তির নির্দেশ দেন। পুনরায় শুনানি শেষে ২০১২ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্ট নয়টি নির্দেশনা দিয়ে রুল যথাযথ ঘোষণা করেন। ওই নির্দেশনার আলোকে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ৯৮৮ জনের চাকরি অবসান করে। ২০১২ সালে ওই রায়ের বিরুদ্ধে লিভ টু আপিল করেন সংক্ষুব্ধরা।
বিজ্ঞাপন
২০১৬ সালে আপিল বিভাগ লিভ টু আপিল নিষ্পত্তি করেন। আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ গত ৪ সেপ্টেম্বর রিভিউ আবেদনের সিদ্ধান্ত নেন। সেই রিভিউয়ের শুনানি শেষে মঙ্গলবার রায় ঘোষণা করা হয়।
এফএইচ/জেএইচ/জিকেএস
বিজ্ঞাপন