আদালত অবমাননার মামলায় শেখ হাসিনার ৬ মাসের কারাদণ্ড
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা/ফাইল ছবি
ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার অভিযোগে ছয় মাসের কারাদণ্ড দিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। একইসঙ্গে গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জের শাকিল আকন্দ বুলবুল ওরফে মো. শাকিল আলমকে (৪০) দুই মাসের কারাদণ্ড দেন ট্রাইব্যুনাল।
পালিয়ে যাওয়ার পর প্রথমবার সাজাপ্রাপ্ত হলেন শেখ হাসিনা ও শাকিল আকন্দ। দণ্ডপ্রাপ্তদের গ্রেফতার অথবা আত্মসমর্পণের দিন থেকে এই কারাদণ্ড কার্যকর হবে বলে রায়ে উল্লেখ করা হয়েছে।
বুধবার (২ জুলাই) ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ-১ এ রায় ঘোষণা করেন। ট্রাইব্যুনালের অন্য দুই সদস্য হলেন বিচারপতি মো. শফিউল আলম মাহমুদ ও বিচারপতি মো. মোহিতুল হক এনাম চৌধুরী।
আদালতে আজ শেখ হাসিনা ও শাকিলের পক্ষে শুনানি করেন রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী (স্টেট ডিফেন্স) মো. আমির হোসেন। অ্যামিক্যাস কিউরি হিসেবে বক্তব্য রাখেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এ ওয়াই মশিউজ্জামান। প্রসিকিউশনের পক্ষে ছিলেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম ও প্রসিকিউটর তানভীর জোহা।
চিফ প্রসিকিউটর সাংবাদিকদের জানান, ‘আমার বিরুদ্ধে ২২৭টি মামলা হয়েছে, তাই ২২৭ জনকে হত্যার লাইসেন্স পেয়ে গেছি’ এমন বক্তব্য সংবলিত একটি অডিও ক্লিপ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়। এরপর এটি নিয়ে দেশের প্রায় সব গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ করা হয়েছিল। সংবাদে সেটি শেখ হাসিনার কণ্ঠ বলে দাবি করা হয়। পরবর্তীতে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) ফরেনসিক পরীক্ষার মাধ্যমে অডিওটির সত্যতা যাচাই করে নিশ্চিত করে যে, সেটি শেখ হাসিনারই কণ্ঠ। এই বক্তব্যকে আদালত অবমাননাকর বলে উল্লেখ করে প্রসিকিউশন ট্রাইব্যুনালে একটি আবেদন দাখিল করেছিল।
বিষয়টি আমলে নিয়ে অভিযুক্তদের ১৫ মে’র মধ্যে জবাব দাখিলের নির্দেশ দেন ট্রাইব্যুনাল। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে জবাব না দেওয়ায়, তাদের ২৫ মে ট্রাইব্যুনালে হাজির হওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়। কিন্তু সেটিও অমান্য করায় গত ২৬ মে পত্রিকায় প্রকাশের জন্য বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়। সেখানে ৩ জুন সকাল ১০টায় সশরীরে ট্রাইব্যুনালে উপস্থিত হয়ে বক্তব্য প্রদানের নির্দেশ দেওয়া হয়। কিন্তু নির্দেশনা অমান্য করে অভিযুক্তরা ট্রাইব্যুনালে উপস্থিত হননি বা কোনো জবাবও দাখিল করেননি। এর পরিপ্রেক্ষিতে আজ উভয় পক্ষের শুনানি শেষে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এ রায় ঘোষণা করেন।
গত ১৯ জুন আদালত অবমাননার এই মামলার পূর্ণাঙ্গ শুনানির জন্য এ ওয়াই মশিউজ্জামানকে অ্যামিকাস কিউরি (আদালতের বন্ধু) হিসেবে নিয়োগ দেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। একই সঙ্গে এ বিষয়ে পরবর্তী শুনানির জন্য ২ জুলাই দিন ধার্য করা হয়। এরই ধারাবাহিকতায় আজ সেটির শুনানি শেষে এ আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল।
- আরও পড়ুন:
শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে চূড়ান্ত শুনানির জন্য অ্যামিকাস কিউরি নিয়োগ
শেখ হাসিনাকে ট্রাইব্যুনালে হাজির হতে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের নির্দেশ
‘২২৭ জনকে হত্যার লাইসেন্স পেয়ে গেছি’ বক্তব্যটি শেখ হাসিনার
আইন অনুযায়ী, এ ধরনের মামলায় কোনো পক্ষের জন্য সরকারি খরচে আইনজীবী নিয়োগের বিধান না থাকলেও ন্যায়বিচারের স্বার্থে শেখ হাসিনার পক্ষে একজন আইনজীবী নিয়োগ দেন আদালত।
অ্যামিকাস কিউরি নিয়োগের পর প্রসিকিউটর গাজী এম এইচ তামিম সাংবাদিকদের বলেন, ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগ নেতা শাকিল আলম বুলবুলের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার অভিযোগের শুনানিতে একজন অ্যামিকাস কিউরি (আদালত বন্ধু) নিয়োগ দিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।
পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দেওয়ার পরও শেখ হাসিনা ও অপর অভিযুক্ত হাজির না হওয়ার প্রেক্ষাপটে বিচারের স্বচ্ছতার স্বার্থে অ্যামিকাস কিউরি হিসেবে সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী এ ওয়াই মশিউজ্জামানের অভিমত ট্রাইব্যুনাল শুনবেন বলে জানান প্রসিকিউটর গাজী এমএইচ তামিম।
জুলাই গণঅভ্যুত্থানের ঘটনায় দায়ের করা মামলা নিয়ে দেওয়া বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে শেখ হাসিনা ও ছাত্রলীগ নেতা শাকিল আলম বুলবুলের বিরুদ্ধে গত ৩০ এপ্রিল আদালত অবমাননার অভিযোগ দাখিল করেন চিফ প্রসিকিউটর। সেদিন ট্রাইব্যুনাল অভিযোগ গ্রহণ করে ১৫ মের মধ্যে অভিযুক্তদের জবাব দেওয়ার নির্দেশ দেন। কিন্তু ওইদিন কোনো জবাব দাখিল না করায় তাদের ২৫ মে ট্রাইব্যুনালে হাজির হওয়ার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়।
এর আগে ‘আমার বিরুদ্ধে ২২৭টি মামলা হয়েছে, তাই ২২৭ জনকে হত্যার লাইসেন্স পেয়ে গেছি’-এমন বক্তব্যের শেখ হাসিনার একটি অডিও ভাইরাল হয়। পরে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) ওই কথোপকথনের ফরেনসিক পরীক্ষা করে সত্যতা পায়। এরপরই আদালত অবমাননার আবেদন দাখিল করা হয় ট্রাইব্যুনালে।
প্রসিকিউশন জানায়, পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের পরও শেখ হাসিনা নিজে উপস্থিত হননি কিংবা কোনো আইনজীবীর মাধ্যমে ব্যাখ্যা দেননি। এ অবস্থায় ট্রাইব্যুনাল এখন আইন অনুযায়ী সংশ্লিষ্টদের শাস্তি দিতে পারে।
ট্রাইব্যুনালের বিধান অনুযায়ী, আদালত অবমাননার অভিযোগ প্রমাণিত হলে এক বছরের কারাদণ্ড অথবা পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ডই হতে পারে।
এফএইচ/জেএইচ/এমএস