কার্নিশে ছাত্রকে গুলি: সাবেক ডিএমপি কমিশনারসহ ৫ জনের বিচার শুরু
জুলাই আন্দোলনকালে আমির হোসেনকে (বাঁয়ে) একটি নির্মাণাধীন ভবনের কার্নিশে গুলি করা হয়/ ফাইল ছবি
জুলাই আন্দোলনকালে রাজধানীর রামপুরায় ভবনের কার্নিশে ঝুলে থাকা আমির হোসেনকে গুলি এবং একই এলাকায় অন্য দুজনকে হত্যার ঘটনায় পাঁচজনের বিচার শুরু হয়েছে।
এ সংক্রান্ত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) সাবেক কমিশনার হাবিবুর রহমানসহ এ পাঁচজনের বিরুদ্ধে বৃহস্পতিবার (১৮ সেপ্টেম্বর) আনুষ্ঠানিক অভিযোগ গঠন করেছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনাল। একই সঙ্গে মামলায় রাষ্ট্রপক্ষের সূচনা বক্তব্য উপস্থাপন ও সাক্ষ্য নেওয়ার জন্য আগামী ১৬ অক্টোবর দিন ধার্য করেছেন আদালত।
ট্রাইব্যুনাল-১ এর চেয়ারম্যান বিচারপতি গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের বিচারিক প্যানেল এ আদেশ দেন। প্যানেলের অন্য দুই সদস্য হলেন বিচারপতি মো. শফিউল আলম মাহমুদ ও বিচারক মো. মোহিতুল হক এনাম চৌধুরী।
মামলার বাকি চার আসামি হলেন ডিএমপির খিলগাঁও জোনের সাবেক অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (এডিসি) মো. রাশেদুল ইসলাম, রামপুরা থানার সাবেক ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মশিউর রহমান, থানার সাবেক উপ-পরিদর্শক (এসআই) তরিকুল ইসলাম ভূঁইয়া ও সাবেক সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই) চঞ্চল চন্দ্র সরকার।
আসামিদের মধ্যে গত ২৬ জানুয়ারি সাবেক এএসআই চঞ্চলকে গ্রেফতার করে ডিএমপি। পরে ২৮ জানুয়ারি তাকে ট্রাইব্যুনালে হাজির করলে বিচারক কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। আজ বৃহস্পতিবারও তাকে ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়। বাকি আসামিরা পলাতক।
এর আগে শিক্ষার্থী আমিরকে গুলি এবং অন্য দুজনকে হত্যার মামলায় অভিযোগ গঠন বিষয়ে শুনানি শেষ হয় ট্রাইব্যুনালে। পরে অভিযোগ গঠনের আদেশের জন্য রাষ্ট্রপক্ষের সময় আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে তা পিছিয়ে বৃহস্পতিবার দিন ধার্য করা হয়েছিল। গত ১১ সেপ্টেম্বর এ দিন ঠিক করা হয়।
আদালতে ওই দিন রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম। তার সঙ্গে ছিলেন গাজী এম এইচ তামিম ও আবদুস সাত্তার পালোয়ান। অন্যদিকে পলাতক আসামিদের পক্ষে রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী মো. আমির হোসেন ও গ্রেফতার আসামির পক্ষে আইনজীবী সারওয়ার জাহান নিপ্পন শুনানিতে ছিলেন।
বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন চলাকালে ২০২৪ সালের ১৯ জুলাই শিক্ষার্থী আমির জুমার নামাজ পড়ে বাসায় ফিরছিলেন। বাসার কাছে এসে তিনি পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার মধ্যে পড়েন। এ সময় পুলিশ গুলি করা শুরু করে। আমির দৌড়ে নির্মাণাধীন একটি ভবনের চারতলায় গিয়ে আশ্রয় নেন। একপর্যায়ে বিক্ষোভকারীদের ধাওয়া করে পুলিশও ভবনটির চারতলায় ওঠে।
সেখানে আমিরকে পেয়ে পুলিশ সদস্যরা তার দিকে আগ্নেয়াস্ত্র তাক করে বারবার নিচে লাফ দিতে বলেন। একজন পুলিশ সদস্য তাকে ভয় দেখাতে কয়েকটি গুলিও করেন। ভয়ে আমির লাফ দিয়ে নির্মাণাধীন ভবনটির রড ধরে ঝুলে থাকেন। তখন তৃতীয় তলা থেকে এক পুলিশ সদস্য তাকে লক্ষ্য করে ছয়টি গুলি করেন। গুলিগুলো তার দুই পায়ে লাগে। পরে পুলিশ চলে গেলে তিনি ঝাঁপ দিয়ে কোনোরকমে তৃতীয় তলায় পড়েন। তখন তার দুই পা দিয়ে রক্ত ঝরছিল।
প্রায় তিন ঘণ্টা পর একজন শিক্ষার্থী ও দুজন চিকিৎসক আমিরকে উদ্ধার করে স্থানীয় একটি হাসপাতালে নিয়ে যান। পরে সেখান থেকে তাকে নেওয়া হয় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। এ ঘটনায় ভাগ্যক্রমে বেঁচে যান আমির। তবে রামপুরায় একই দিন ঘটনাস্থলের সামনে দুজনকে নির্মমভাবে গুলি করে হত্যার অভিযোগ রয়েছে।
এফএইচ/একিউএফ/জেআইএম