ভিডিও EN
  1. Home/
  2. আইন-আদালত

ট্রাইব্যুনালে বোনের জবানবন্দি

নিহত সৈকতের বাবাকে একজনের ফোন, ‘দ্রুত আসেন, না হলে লাশও পাবেন না’

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক | প্রকাশিত: ০৮:১৪ পিএম, ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৫

২০২৪ সালের ১৯ জুলাই বিকেলে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে যোগ দিয়েছিলেন মাহামুদুর রহমান সৈকত। সেদিনই তাকে গুলি করে হত্যা করে পুলিশ। সেই সংবাদ মোবাইল ফোনে তার বাবাকে জানান অপরিচিত এক ব্যক্তি। তিনি হাসপাতালে আসার আহ্বান জানিয়ে বলেন, দ্রুত আসেন, না হলে লাশও পাবেন না।

আন্দোলন দমনে ঘটানো মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিনজনের বিরুদ্ধে মামলায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ দেওয়া জবানবন্দিতে এসব কথা বলেন সৈকতের বোন সাবরিনা আফরোজ সেবন্তী।

সোমবার (২২ সেপ্টেম্বর) ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন বিচারিক প্যানেলে রাষ্ট্রপক্ষের ৪৯তম সাক্ষী সেবন্তী জবানবন্দি পেশ করেন। এরপর সাক্ষীকে জেরা করেন আসামিপক্ষের রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী।

আরও পড়ুন

ছাত্র-জনতার ওপর হেলিকপ্টার থেকে বোমা নিক্ষেপের নির্দেশ দেন হাসিনা
নতুন হত্যা মামলায় গ্রেফতার দেখানো হলো সালমান-আনিসুল-আতিককে
বিচারের মুখোমুখি হওয়ার ভয়ে দেশত্যাগ করেছেন শেখ হাসিনাসহ অন্যরা

জবানবন্দিতে সেবন্তী বলেন, ‘আমি জুলাই গণঅভ্যুত্থানে শহীদ মাহামুদুর রহমান সৈকতের বোন। নিজেও একজন জুলাইযোদ্ধা। ২০২৪ সালের ১৯ জুলাই জুমার নামাজ শেষে বাসা থেকে খেয়ে মোহাম্মদপুর এলাকার নুরজাহান রোডের দক্ষিণ মাথায় আন্দোলনে যান সৈকত। বিকেল পৌনে ৪টার দিকে খুব কাছ থেকে আমার ভাইকে গুলি করে হত্যা করে পুলিশ। ওই সময় আমার বাবা গ্রামের বাড়ি সন্দ্বীপে ছিলেন। তিনি সেখান থেকে সৈকতের মোবাইলে কয়েকবার ফোন করেন। পরে ফোনটি রিসিভ করেন একজন অপরিচিত ব্যক্তি। আমার বাবাকে ওই ব্যক্তি জানান, এ ফোনটি যার তিনি পুলিশের গুলিতে নিহত হয়েছেন। আমরা তাকে সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে নিয়ে যাচ্ছি। আপনারা দ্রুত হাসপাতালে আসেন। না হলে লাশও পাবেন না। তখন ফুপাতো ভাই সাইফুর রহমান হায়দারকে হাসপাতালে যেতে বলেন আমার বাবা। খবর পেয়ে আমিও ছুটে যাই।’

সৈকতের বোন বলেন, ‘হাসপাতালে আমি আমার ভাইয়ের লাশসহ পাঁচটি লাশ দেখি। আমার ভাইয়ের মাথায় গুলি লেগেছিল। তার মাথায় মোটা রক্তাক্ত ব্যান্ডেজ ছিল। অপর লাশগুলোর প্রত্যেকের মাথা, পেট ও বুকে গুলির চিহ্ন দেখি। আমি যতক্ষণ হাসপাতালে ছিলাম ততক্ষণ অনবরত গুলিবিদ্ধ আন্দোলনকারীদের নিয়ে আসতে দেখি। হাসপাতালের মেঝেতে অনেক রক্ত দেখি। আমার ভাইয়ের মাথা থেকে নির্গত রক্ত এক ব্যক্তিকে বালতি দিয়ে পানি ঢেলে ধুতে দেখি। ভাইয়ের লাশ দেখে আমি কান্নায় ভেঙে পড়ি। পরে আমার মা একা বাসায় থাকায় ফুপাতো ভাইকে হাসপাতালে রেখে আমি বাসার উদ্দেশে রওনা হই। ওই দিন রাত নয়টার দিকে হাসপাতাল থেকে ফুপাতো ভাই আমার ভাই সৈকতের লাশ বুঝে নেয়। পরদিন সৈকতের জানাজা শেষে মোহাম্মদপুর তাজমহল রোডে অবস্থিত জামে মসজিদ কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়।’

সৈকতের হত্যাকাণ্ডের নির্দেশদাতা হিসেবে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ও পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুনকে দায়ী করেন সেবন্তী। তিনি বলেন, ‘এছাড়াও যারা তাদের নির্দেশ মেনে নিরস্ত্র, নিরীহ ছাত্র-জনতার ওপর মারণাস্ত্র ব্যবহার করে নিহত ও আহত করেছে তাদের দায়ী এবং বিচার ও ফাঁসি দাবি করছি।’

মানবতাবিরোধী অপরাধের এ মামলায় ২০তম কার্যদিবসে সেবন্তিসহ এখন পর্যন্ত রাষ্ট্রপক্ষের সাক্ষী হিসেবে সাক্ষ্য দিয়েছেন ৪৯ জন।

এফএইচ/একিউএফ/এমএস