ভিডিও EN
  1. Home/
  2. আইন-আদালত

গুমের মামলায় শেখ হাসিনাকে বুধবার আদালতে হাজির করার নির্দেশ

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক | প্রকাশিত: ০৮:২৭ পিএম, ২১ অক্টোবর ২০২৫

আওয়ামী লীগের শাসনামলে গুমের ঘটনায় আলাদা দুই মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও বিভিন্ন বাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তাসহ ২৮ জনের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছিলেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। এসব মামলায় আসামিদের গ্রেফতার করে হাজির করতে আগামীকাল বুধবার দিন ধার্য করা হয়। একই দিন মামলার শুনানির দিনও ঠিক করা হয়েছে।

তারই ধারাবাহিকতায় মামলাটির বিষয়ে আগামীকাল বুধবার (২১ অক্টোবর) শুনানি হওয়ার কথা রয়েছে। এদিন মামলার আসামিদের ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হবে কি না তা নিয়ে রয়েছে সংশয়। তবে এ বিষয়ে প্রসিকিউটর গাজী মোহাম্মদ মনোয়ার হোসেন তামিম সাংবাদিকদের বলেছেন, গুমের অভিযোগে যাদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে, তারা যদি হাজির হতে চান তো পারেন বা আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যদি তাদের গ্রেফতার করে হাজির করে। তারা যদি জামিন চান এবং জামিনের গ্রাইন্ড থাকে- ট্রাইব্যুনাল চাইলে তাদের জামিন দিতে পারেন। অথবা ট্রাইব্যুনাল তাদের কারাগারে পাঠাতে পারেন।

তিনি বলেন, যদি ট্রাইব্যুনাল তাদের জেল হাজতে পাঠানোর আদেশ দেন তাহলে কারা কর্তৃপক্ষ সিদ্ধান্ত নেবে তাদের কোন কারাগারে রাখবে।

গাজি তামিম বলেন, যদি ওনারা হাজির না হন অথবা তাদের হাজির করা না হয় তাহলে তাদের বিষয়ে দুটি জাতীয় পত্রিকায় (বাংলা এবং ইংরেজি) বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হবে এবং তারিখ নির্ধারণ করা হবে ওনাদের হাজির করার জন্য। গ্রেফতারের বিষয়ে প্রসিকিউশনের কাছে কোনো তথ্য নেই। তবে ট্রাইব্যুনালের কাছে কোনো তথ্য থাকলে আগামীকাল জানানো হতে পারে।

সেনা কর্মকর্তাদের ট্রাইব্যুনালে আনা হবে কি না- এমন প্রশ্নে প্রসিকিউটর বলেন, আপনারা জানেন সাবেক বিচারপতি, সাবেক মন্ত্রী ও সাবেক সেনা কর্মকর্তাসহ বহু আসামিকে ট্রাইব্যুনালে আনা হচ্ছে। ট্রাইব্যুনালের গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির পর আসামি কে তা দেখা হয় না।

এর আগে, ট্রাইব্যুনালে গুমের দুই মামলার আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল করে প্রসিকিউশন (রাষ্ট্রপক্ষ)। পরে চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম দুটি অভিযোগ ট্রাইব্যুনালে উপস্থাপন করেন এবং তা আমলে নিয়ে পরোয়ানা জারির আবেদন করেন। ট্রাইব্যুনাল তার আবেদন মঞ্জুর করেন।

আদালতে আবেদনের পক্ষে চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম জানান, গুম, গোপন বন্দিশলায় আটক, নির্যাতন, হত্যাকাণ্ডসহ নানান ধরনের যে অপরাধ হয়েছে সেগুলোর ব্যাপারে প্রথম দুটি ফরমাল চার্জ (আনুষ্ঠানিক অভিযোগ) দাখিল করা হয়েছে। সেই ফরমাল চার্জ উপস্থাপন করেছি। ট্রাইব্যুনাল সবগুলোর বর্ণনা শুনেছেন। এরপর আসামিদের বিরুদ্ধে কগনাইজেন্স নিয়েছেন এবং তাদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা ইস্যু করেছেন।

আরও পড়ুন
নিজের দলের লোকদেরও বিচারের মুখোমুখি করেছেন শেখ হাসিনা
শাপলা চত্বরে গণহত্যা হয়নি, হয়ে থাকলেও শেখ হাসিনা জানতেন না

দুটি অভিযোগের মধ্যে একটি হলো- গত ১৫ বছরে র‌্যাবের কিছু বিপথগামী সদস্য দ্বারা টিএফআই সেল এবং বিভিন্ন গোপন বন্দিশালায় ভিন্নমতাবলম্বী রাজনৈতিক কর্মী, সাংবাদিক, ব্লগারকে আটক রেখে নির্যাতন করা হয়েছে। এমন হাজারও অভিযোগের মধ্য থেকে যেগুলো এরই মধ্যে প্রমাণ হয়েছে সেগুলোর ব্যাপারে ফরমাল চার্জ দাখিল করা হয়েছে। এর বাইরে ডিজিএফআইয়ের কিছু বিপথগামী সদস্য যারা জেআইসি নামক যে সেন্টারটি আছে সেটি অপব্যবহার করে রাজনৈতিক বা অরাজনৈতিক ব্যক্তিদের আটক রেখেছিলেন। সেটার ব্যাপারে আলাদা ফরমাল চার্জ দাখিল করা হয়। এ ঘটনার সঙ্গে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, শেখ হাসিনার সাবেক নিরাপত্তা উপদেষ্টা তারিক আহমেদ সিদ্দিকসহ র‌্যাব ও ডিজিএফআইয়ের বেশ কিছু অফিসার যারা আসামি, তাদের অন্তর্ভুক্ত করা হয়।

এই মামলায় শেখ হাসিনার সঙ্গে আসাদুজ্জামান খান ও তারিক আহমেদ সিদ্দিক ছাড়াও আসামিরা হলেন সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদ, র‍্যাবের সাবেক মহাপরিচালক এম খুরশিদ হোসেন, র‍্যাবের সাবেক মহাপরিচালক ব্যারিস্টার মো. হারুন-অর-রশিদ, র‍্যাবের সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপস) কর্নেল আনোয়ার লতিফ খান, র‍্যাবের সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপস) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. জাহাঙ্গীর আলম, র‍্যাবের সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপস) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল তোফায়েল মোস্তফা সারোয়ার, র‍্যাবের সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপস) কর্নেল কে এম আজাদ, র‍্যাবের সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপস) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. কামরুল হাসান, র‍্যাবের সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপস) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মাহাবুব আলম, র‍্যাবের সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপস) কর্নেল আবদুল্লাহ আল মোমেন, র‍্যাবের সাবেক পরিচালক (ইন্টেলিজেন্স উইং) লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. সারওয়ার বিন কাশেম, র‍্যাবের সাবেক পরিচালক (ইন্টেলিজেন্স উইং) লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব.) মুহাম্মাদ খায়রুল ইসলাম, র‍্যাবের সাবেক পরিচালক (ইন্টেলিজেন্স উইং) লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. মশিউর রহমান জুয়েল এবং র‍্যাবের সাবেক পরিচালক (ইন্টেলিজেন্স উইং) লেফটেন্যান্ট কর্নেল সাইফুল ইসলাম সুমন।

দ্বিতীয় মামলায় শেখ হাসিনা, তারিক আহমেদ সিদ্দিকসহ আসামি ১৩ জন। এই মামলায়ও পাঁচটি অভিযোগ আনা হয়েছে আসামিদের বিরুদ্ধে। এই মামলায় শেখ হাসিনা ও তারিক সিদ্দিকের সঙ্গে অন্য আসামিরা হলেন ডিজিএফআইয়ের সাবেক মহাপরিচালক লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. আকবর হোসেন, ডিজিএফআইয়ের সাবেক মহাপরিচালক মেজর জেনারেল (অব.) মো. সাইফুল আবেদিন, ডিজিএফআইয়ের সাবেক মহাপরিচালক লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. সাইফুল আলম, ডিজিএফআইয়ের সাবেক মহাপরিচালক লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) আহমেদ তাবরেজ শামস চৌধুরী, ডিজিএফআইয়ের সাবেক মহাপরিচালক মেজর জেনারেল (অব.) হামিদুল হক, ডিজিএফআইয়ের সিটিআইবির সাবেক পরিচালক মেজর জেনারেল (অব.) মোহাম্মদ তৌহিদুল উল ইসলাম, ডিজিএফআইয়ের সিটিআইবির সাবেক পরিচালক মেজর জেনারেল শেখ মো. সরওয়ার হোসেন, ডিজিএফআইয়ের সিটিআইবির সাবেক পরিচালক মেজর জেনারেল কবীর আহাম্মদ, ডিজিএফআইয়ের সিটিআইবির সাবেক পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মাহবুবুর রহমান সিদ্দিকী, ডিজিএফআইয়ের সিটিআইবির সাবেক পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আহমেদ তানভির মাজাহার সিদ্দিকী এবং লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব.) মখছুরুল হক।

ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতন ঘটে। তিনি দেশ ছেড়ে পালিয়ে গিয়ে ভারতে আশ্রয় নেন। এখনো সেখানেই রয়েছেন। তার সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানও রয়েছেন ভারতে। শেখ হাসিনার বোন শেখ রেহানার দেবর তারিক সিদ্দিকও বিদেশে।

অভ্যুত্থানের পর গঠিত অন্তর্বর্তী সরকার শেখ হাসিনার শাসনামলে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে করার সিদ্ধান্ত নিয়ে আওয়ামী লীগ আমলে গঠন করা এই আদালত অন্তর্বর্তী সরকার সচল করে।

এফএইচ/কেএসআর/এমএস