ভিডিও EN
  1. Home/
  2. আইন-আদালত

‘পুলিশ আমার সামনে চাচাকে গুলি করেছে’

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক | প্রকাশিত: ১০:৪৩ এএম, ২৭ অক্টোবর ২০২৫

জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের সময় রাজধানীর চানখাঁরপুলে পুলিশের গুলিতে ৬ জন নিহতের ঘটনায় করা মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় আরও একজনের সাক্ষ্যগ্রহণ করা হয়েছে।

রোববার (২৬ অক্টোবর), আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এ, এই মামলায় জবানবন্দি দেন নিহত ইয়াকুবের ভাতিজা আবদুস সালাম। তিনি প্রসিকিউশনের ২০তম সাক্ষী হিসেবে জবানবন্দি দিয়েছেন। এ মামলার পরবর্তী সাক্ষ্যগ্রহণের জন্য ২ নভেম্বর দিন ধার্য করা হয়েছে।

রোববার (২৬ অক্টোবর) ট্রাইব্যুনাল-১ এর বিচারপতি মো. শফিউল আলম মাহমুদের নেতৃত্বে দুই সদস্যের বিচারিক প্যানেল এ দিন ধার্য করেন। অন্য সদস্য হলেন- অবসরপ্রাপ্ত জেলা ও দায়রা জজ মো. মোহিতুল হক এনাম চৌধুরী। ট্রাইব্যুনালে প্রসিকিউশনের পক্ষে শুনানি করেন প্রসিকিউটর গাজী এমএইচ তামিম। সঙ্গে ছিলেন প্রসিকিউটর সাইমুম রেজা তালুকদার, মামুনুর রশীদসহ অন্যরা।

জবানবন্দিতে তিনি বলেন, গত বছরের ৫ আগস্ট চাচার সঙ্গে আমিও আন্দোলনে যোগ দিয়েছিলাম। চানখাঁরপুলে পুলিশ আমার সামনে চাচাকে গুলি করে। তখন চাচা শরীর থেকে রক্ত ঝরছিল। আমি ওই দৃশ্যের ভিডিও ধারণ করেছিলাম। পরে তদন্ত কর্মকর্তা আমার কাছ থেকে সেই ভিডিওসহ মোবাইল জব্দ করেছিলেন।

গত বছর ৫ আগস্ট সরকার পতনের দিন রাজধানীর চানখাঁরপুল এলাকায় পুলিশের গুলিতে আনাস, মোস্তাকিম, ইয়াকুব, ইসমামুলসহ কয়েকজন পুলিশের গুলিতে নিহত হন। এ ঘটনায় মামলা দায়েরের পর ৬ মাস ১৩ দিনে তদন্ত শেষ আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা। গত ২০ এপ্রিল চিফ প্রসিকিউটরের কার্যালয়ে মামলার তদন্ত প্রতিবেদন দেয় সংস্থাটি।

এটিই ছিল জুলাই-আগস্টের গণ-আন্দোলনে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলার প্রথম তদন্ত প্রতিবেদন। পরে গত ২৫ মে এই মামলার আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল করা হলে ট্রাইব্যুনাল তা আমলে নেন। এ মামলায় ৭৯ জনকে সাক্ষী করেছে প্রসিকিউশন। পরে গত ১৪ জুলাই আসামিদের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল। এ মামলায় এখন পর্যন্ত ২০ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ ও জেরা সম্পন্ন হয়েছে।

গত ১৬ অক্টোবর দ্বিতীয় দিনের মতো এ মামলায় অবশিষ্ট সাক্ষ্য দেন যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া। তিনি জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চেয়েছেন। সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে তাকে জেরা করেন স্টেট ডিফেন্স ও আসামিপক্ষের আইনজীবীরা। ৯ অক্টোবর তার সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়। তবে শেষ না হওয়ায় অবশিষ্ট জবানবন্দি নিতে প্রসিকিউশনের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ১৬ অক্টোবর দিন ধার্য করেন ট্রাইব্যুনাল-১।

১৯ নম্বর সাক্ষী হিসেবে নিজের সাক্ষ্যে জুলাই-আগস্ট আন্দোলনের পুরো পটভূমি তুলে ধরেন আসিফ মাহমুদ। একইসঙ্গে গত বছরের ৫ আগস্ট চানখারপুলে চালানো আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নৃশংসতার বিবরণ দেন। এমনকি ডিবি পরিচয়ে রাতের আঁধারে নিজেকে গুম করার কথাও জবানবন্দিতে পেশ করেন তিনি। এসব ঘটনার জন্য সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালসহ সরাসরি জড়িতদের দায়ী করেন এই উপদেষ্টা।

এ মামলায় গ্রেফতার চার আসামি হলেন- শাহবাগ থানার সাবেক ওসি (অপারেশন) মো. আরশাদ হোসেন, কনস্টেবল মো. সুজন মিয়া, মো. ইমাজ হোসেন ইমন ‍ও মো. নাসিরুল ইসলাম। পলাতক আসামিরা হলেন— সাবেক ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমান, ডিএমপির সাবেক যুগ্ম কমিশনার সুদীপ কুমার চক্রবর্তী, রমনা অঞ্চলের সাবেক অতিরিক্ত উপকমিশনার শাহ আলম মো. আখতারুল ইসলাম ও রমনা অঞ্চলের সাবেক সহকারী কমিশনার মোহাম্মদ ইমরুল।

গত ১৪ জুলাই চানখারপুলের মামলাটির পলাতক চার আসামিসহ আটজনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল।

২০২৪ সালের ৫ আগস্ট চানখারপুল এলাকায় শিক্ষার্থীদের শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে গুলি চালায় পুলিশ। এতে বহু হতাহতের ঘটনার পাশাপাশি শাহরিয়ার খান আনাস, শেখ জুনায়েদ, মো. ইয়াকুব, মো. রাকিব হাওলাদার, মো. ইসমামুল হক ও মানিক মিয়া শাহরিক নিহত হন।

এফএইচ/এমআরএম/এএসএম