ভিডিও EN
  1. Home/
  2. আইন-আদালত

১৩ নভেম্বর ঘিরে কোনো উৎকণ্ঠা নেই: প্রসিকিউটর তামিম

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক | প্রকাশিত: ০২:২৫ পিএম, ০৯ নভেম্বর ২০২৫

মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ও সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে রায় ঘোষণার দিন ঠিক করা হবে আগামী ১৩ নভেম্বর।

রায়ের দিন ঠিক করাকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক দলসহ বিভিন্ন মহল থেকে মন্তব্য করা ও কর্মকাণ্ড নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে ১৩ নভেম্বর রাজধানী ঢাকায় লকডাউন ঘোষণা এবং লোকসমাগম কেন্দ্র করে কোনো উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা নেই বলে জানিয়েছেন প্রসিকিউটর গাজী মোহাম্মদ মনোয়ার হোসাইন তামিম।

রোববার (৯ নভেম্বর) সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবনের সামনে গাজী এম এইচ তামিম কথা বলেন।

তিনি বলেন, রাজনীতিতে যাই হোক, ১৩ নভেম্বর শেখ হাসিনার মামলার রায়ের তারিখ ঘোষণা নিয়ে কোনো উদ্বেগ নেই। এছাড়াও ১৩ নভেম্বর রায় ঘোষণা করা হবে না। ঐদিন কবে রায় ঘোষণা করা হবে সেই দিন ঠিক করা হবে।

তিনি বলেন, বিচারক আদালতে রায় ঘোষণার দিন ঠিক করেন কিন্তু আপনারা জানেন, এর আগে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে কোনো মামলার কার্যক্রম শেষ হলে সেখানে (সিএবি) অপেক্ষমান রাখা হতো। এখন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে শেখ হাসিনার মামলায় রায় ঘোষণার দিন ঠিক করার জন্য একটি তারিখ ঘোষণা করেছেন। ঐদিন ট্রাইবুনাল রায় ঘোষণার তারিখ ঠিক করে দেবেন। বাইরে এবং রাজনৈতিক বক্তৃতায় আদালতের রুলস এবং ট্রামস না জেনে হয়তো রায় ঘোষণা করা হবে বলে মন্তব্য করেছেন সেটি আমরা ক্লিয়ার করলাম আজ।

সাংবাদিকের এক প্রশ্নের জবাবে প্রসিকিউটর গাজী মোনাওয়ার বলেন, শেখ হাসিনার মামলার রায়ের তারিখ নির্ধারণ করা হবে ১৩ নভেম্বর। এর জন্য প্রসিকিউশনের প্রস্তুতির কিছু নেই। প্রসিকিউশন অনিরাপদ বোধও করছে না।

তিনি আরও বলেন, প্রসিকিউশনের দায়িত্ব হলো ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা থেকে যেসব অভিযোগ আনা হয়, সেটি ট্রাইব্যুনালে প্রমাণ করার জন্য চেষ্টা করা। সাক্ষ্য উপস্থাপন করা, যুক্তিতর্ক তুলে ধরা। আর ট্রাইব্যুনালের দায়িত্ব হলো যুক্তিতর্ক এবং সাক্ষ্য বিবেচনায় রায় দেওয়া। এর বাইরে প্রসিকিউশনের আর কোনো দায়িত্ব নেই। প্রসিকিউশন অন্য কোনো বিষয়ে খেয়াল করছে না।

১৩ নভেম্বর উপলক্ষে এরই মধ্যে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে কর্মসূচি দেওয়া হয়েছে। বিএনপির দিক থেকেও বেশ কথাবার্তা বলা হচ্ছে। রাজনীতি উত্তপ্ত হচ্ছে। ১৩ নভেম্বরকে কেন্দ্র করে আলাদা করে নিরাপত্তা বাড়ানো হচ্ছে কি না? এমন প্রশ্নের জবাবে প্রসিকিউটর গাজী মোনাওয়ার বলেন, রাজনৈতিক দলগুলো রাজনৈতিক কর্মসূচি গ্রহণ করবে, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সেটার বিষয়ে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। প্রসিকিউশনের সঙ্গে রাজনৈতিক কর্মসূচি বা আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণের কোনো সম্পর্ক নেই।

আরেক প্রশ্ন ছিল প্রসিকিউশন বাড়তি কোনো চাপ অনুভব করছে কি না? এর জবাবে প্রসিকিউটর গাজী মোনাওয়ার বলেন, প্রসিকিউশন এই পরিস্থিতিতে কোনো বাড়তি চাপ অনুভব করছে না। প্রসিকিউশন শুধু মামলার অভিযোগ প্রমাণের জন্য আইনের মধ্য থেকে সর্বোচ্চ চেষ্টা করছে।

এর আগে গত ২৩ অক্টোবর জুলাই-আগস্টে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ও সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে রায় কবে ঘোষণা করা হবে তা জানানোর জন্য আগামী ১৩ নভেম্বর দিন ঠিক করেছেন।

মামলার আসামিদের মধ্যে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এখনো পলাতক। কারাগারে আটক সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন রাজসাক্ষী হয়েছেন। এই মামলায় পাঁচদিন রাষ্ট্রপক্ষের প্রসিকিউশন পক্ষে ও তিনদিন আসামিপক্ষে যুক্তিতর্ক (আর্গুমেন্ট) উপস্থাপন শেষে হয়েছে ওইদিন ।

গত ২৩ অক্টোবর ট্রাইব্যুনাল-১ এর চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের বিচারিক প্যানেল এ আদেশ দেন। ট্রাইব্যুনালের অন্য সদস্যরা হলেন বিচারপতি মো. শফিউল আলম মাহমুদ এবং অবসরপ্রাপ্ত জেলা ও দায়রা জজ মো. মোহিতুল হক এনাম চৌধুরী।

বহুল আলোচিত এই মামলায় আসামিদের বিরুদ্ধে পাঁচটি অভিযোগ এনে শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খান কামালের সর্বোচ্চ শাস্তি চেয়েছেন প্রসিকিউশন পক্ষ। অন্যদিকে, আসামিদের নির্দোষ দাবি করে তাদের খালাস চেয়েছেন রাষ্ট্রনিযুক্ত তাদের আইনজীবী। এছাড়া রাজসাক্ষী সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনেরও খালাস চাওয়া হয়েছে।

ট্রাইবুনালের আদেশের আগে চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম আসামিপক্ষে উপস্থাপিত কিছু বিষয়ের জবাব দেন। এছাড়াও রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা হিসেবে আসামিদের সর্বোচ্চ শাস্তির মাধ্যমে ন্যায়বিচারের আবেদন করেন অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান।

এই মামলায় রাষ্ট্রপক্ষে চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম ও গাজী এম এইচ তামিম শুনানি করেন। এ ছাড়া শুনানিতে প্রসিকিউটর বি এম সুলতান মাহমুদ, শাইখ মাহদি, আবদুস সাত্তার পালোয়ানসহ অন্যান্য প্রসিকিউটরা উপস্থিত ছিলেন।

শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে শুনানি করেন রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী মো. আমির হোসেন। রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।

এ বিষয়ে চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলার রায় ঘোষণার দিন ধার্যের জন্য আগামী ১৩ নভেম্বর নির্ধারণ করেছেন আদালত।

এফএইচ/এসএনআর/এএসএম