ভিডিও EN
  1. Home/
  2. আইন-আদালত

অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেলদের পদত্যাগে আইনাঙ্গনে যে গুঞ্জন

মুহাম্মদ ফজলুল হক | প্রকাশিত: ০৮:৫৭ এএম, ১২ অক্টোবর ২০২০

সরকারের পক্ষ হয়ে মামলা পরিচালনার জন্য রাষ্ট্রপক্ষের অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল হিসেবে দীর্ঘদিন নিয়োজিত থাকার পর পদত্যাগের মাধ্যমে দায়িত্ব ছাড়লেন সুপ্রিম কোর্টের দুই আইনজীবী। তারা হলেন-মো. মুরাদ রেজা ও মো. মোমতাজ উদ্দিন ফকির।

একজন গ্রহণযোগ্য আইনজীবীকে রাষ্ট্রের অতিরিক্ত প্রধান আইন কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ দেয়ার পর তাদের পদত্যাগ মোটেও সু-খবর না বলে মূল্যায়ন করছেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবীরা।

নিয়োগের তিন দিনের মাথায় নতুন অ্যাটর্নি জেনারেল দায়িত্ব নিয়ে আসনে বসার প্রথম দিনে ও তার কার্যভার গ্রহণের সঙ্গে সঙ্গে দুই অতিরিক্ত অ্যাটর্নির জেনারেলের পদত্যাগের ঘটনায় সুপ্রিম কোর্ট তথা দেশের আইন অঙ্গনে আরও একটি গুঞ্জন তৈরি হয়েছে। তাদের পদত্যাগের পর নতুন করে অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল হিসেবে এই আসনে আসছেন কারা, তা নিয়ে এই গুঞ্জন তৈরি হয়েছে।

মমতাজ উদ্দিন ফকির রোববার (১১ অক্টোবর) সকালে অ্যাটর্নি জেনারেলের কার্যালয়ের সলিসিটর অফিসে তার পদত্যাগপত্র জমা দেন। আর মুরাদ রেজা সরাসরি আইন মন্ত্রণালয়ে তার পদত্যাগপত্র পাঠিয়েছেন।

এ বিষয়ে আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হক সাংবাদিকদের জানান, দুজন অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল তাদের পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন। শিগগিরই এসব পদে নতুন নিয়োগের প্রক্রিয়া শুরু হবে।

মুরাদ রেজা ২০০৯ সালের ২৭ মার্চ থেকে অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেলের দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন। আর মো. মোমতাজ উদ্দিন ফকির ওই পদে নিয়োগ পান ২০১০ সালের ৪ জুলাই।

পদত্যাগের কারণ জানতে মুরাদ রেজার সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তিনি ফোন ধরেননি।
২০০৯ সাল থেকে অ্যাটর্নি জেনারেলের দায়িত্ব পালন করে আসা মাহবুবে আলম ২৭ সেপ্টেম্বর ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।

এরপর গত ৮ অক্টোবর সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি এএম আমিন উদ্দিনকে দেশের ১৬তম অ্যাটর্নি জেনারেল হিসেবে নিয়োগ দেন রাষ্ট্রপতি।

আমিন উদ্দিনের নেতৃত্বে অ্যাটর্নি জেনারেলের কার্যালয়ে এখন অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল থাকলেন কেবল এম এম মুনীর। এছাড়া ৬৭ জন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এবং ১৫৫ জন সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল মিলিয়ে মোট ২২৪ জন আইন কর্মকর্তা রয়েছেন অ্যাটর্নি জেনারেলের কার্যালয়ে।

রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা হিসেবে নতুন অ্যাটর্নি জেনারেল কাজ শুরু করার প্রথম কর্মদিবসে দুজন অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেলের পদত্যাগ করার বিষয়ে অ্যাটর্নি জেনারেল এএম আমিন উদ্দিন বলেন, ‘অ্যাটর্নি জেনারেল অফিসে সবসময় আসা-যাওয়া থাকেই। উনারা হয়তো অনেক দিন কাজ করেছেন, ব্যক্তিগত কোনো সমস্যার কারণে উনারা হয়তো আর দায়িত্বে থাকছেন না। তবে, এ বিষয়ে আমার সঙ্গে উনাদের কোনো কথা হয়নি। এখন সরকার যদি তাদের পদত্যাপত্র গ্রহণ করে, তাহলে রাষ্ট্রপতি অবশ্যই আরও দুজন অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল নিয়োগ দেবেন।’

এদিকে তাদের পদত্যাগপত্র কার্যকর হলে কারা হচ্ছেন পরবর্তী নতুন অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল, তা এখন সুপ্রিম কোর্টের প্রধান আলোচনার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। সুপ্রিম কোর্টের কাজ করে যাওয়া সিনিয়র কোনো আইনজীবীদের থেকে অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল পদে নিয়োগ দেয়া হবে? নাকি ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেলদের মধ্য থেকে দুইজনকে নিয়োগ দেয়া হবে, তা নিয়ে আইনজীবীদের মধ্যে গুঞ্জন চলছে।।

সুপ্রিম কোর্টের একাধিক সূত্র জানায়, প্রয়াত অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম ২০০৯ সালের ১৩ জানুয়ারি নিয়োগ পেয়ে মোট ১১ বছর ৮ মাস ১৪ দিন দায়িত্ব পালন করেন। দায়িত্ব পালনকালে মাহবুবে আলম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নেয়ার জন্য অ্যাটর্নি জেনারেলের পদ ছাড়ার চেষ্টা করেছিলেন বেশ কয়েকবার। কিন্তু বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারের নেতৃবৃন্দের কাছে মাহবুবে আলম ছিলেন খুবই বিশ্বস্ত ব্যক্তি। তাই মাহবুবে আলমের যোগ্যতা ও দক্ষতার সামনে জীবদ্দশায় অন্য কোনো বিকল্প খোঁজার প্রয়োজন মনে করেনি সরকার।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অ্যাটর্নি জেনারেল কার্যালয়ের একাধিক আইন কর্মকর্তা ও সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলমের মৃত্যুর পর নতুন করে অ্যাটর্নি জেনারেল নিয়োগের বিষয়টি গুরুত্ব দেয় সরকার। তাই অ্যাটর্নি জেনারেল হওয়ার প্রচেষ্টা চালিয়েছিলেন সদ্য পদত্যাগকারী অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল মুরাদ রেজা ও মো. মোমতাজ উদ্দিন ফকির। কিন্তু তাদের কাউকে নিয়োগ না দেয়াই তারা ক্ষোভ থেকে পদত্যাগ করেছেন। যদিও তাদের পদত্যাগ করার কারণ ‘ব্যক্তিগত’ বলে গণমাধ্যমকে বলা হয়েছে।

এর মধ্যে সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী এসএম মুনীরকে গত ১ সেপ্টেম্বর নতুন করে অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়। পরে গত ৮ অক্টোবর সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির বর্তমান সভাপতি ও সিনিয়র অ্যাডভোকেট এএম আমিন উদ্দিনকে বাংলাদেশের ১৬তম অ্যাটর্নি জেনারেল পদে নিয়োগ দেন রাষ্ট্রপতি।

সূত্র আরও জানায়, গত ৮ অক্টোবর পদত্যাগপত্র প্রস্তুত করে রেখেছিলেন এই দুই অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল। এর দুইদিন পর সরকারি ছুটি শেষে ১১ অক্টোবর অফিস কার্যক্রম চালু হওয়ার পর তারা নিজেদের পদত্যাগপত্র রাষ্ট্রপতির কাছে পাঠানোর জন্য মন্ত্রণালয়ে জমা দেন।

মো. মোমতাজ উদ্দিন ফকির ২০০১-২০০২ সালে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছিলেন। এর আগেও ১৯৯৪-১৯৯৫ সালে তিনি সমিতির সহ-সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন।

এদিকে সমিতির বর্তমান সভাপতি অ্যাটর্নি জেনারেল হিসেবে নিয়োগ পাওয়ায় সমিতির নির্বাচনে আবারো সরব হওয়ার কথা জানিয়ছেন এই আইনজীবী। মোমতাজ উদ্দিন ফকির বলেছেন, পদত্যাগ করলেও আবার দেখা হবে বারে।

এ বিষয়ে মোমতাজ উদ্দিন ফকির জাগো নিউজকে বলেন, ‘ব্যক্তিগত কারণে পদত্যাগ করেছি। আগেও বারে প্র্যাকটিস করতাম। এখন আবার সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী হিসেবে (বারের) প্র্যাকটিসে নিয়মিত হবো।’

তবে, এ বিষয়ে অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল মো. মুরাদ রেজা কোনো কথা বলেননি।

জানা গেছে, অ্যাটর্নি জেনারেল নিয়োগ পাওয়ার পর অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল পদ থেকে পদত্যাগ করার নজির নতুন না। এর আগে সুপ্রিম কোর্টের প্রয়াত আইনজীবী অ্যাডভোকেট মাহমুদুল ইসলামকে ২০০১ সালে যখন অ্যাটর্নি জেনারেল নিয়োগ দেয়া হয়েছিল, তখন অ্যাটর্নি জেনারেল কার্যালয় থেকে অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেলের দায়িত্ব থেকে আইনজীবী আব্দুল ওয়াদূদ পদত্যাগ করেছিলেন।

এফএইচ/এসআর/জেআইএম