ঝিনাইদহ-১ আসন
গেজেট স্থগিতের বিরুদ্ধে আব্দুল হাইয়ের আপিল
ফাইল ছবি
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঝিনাইদহ-১ আসনের নৌকার প্রার্থী আব্দুল হাইকে বিজয়ী ঘোষণা করা নির্বাচন কমিশনের (ইসি) গেজেট স্থগিত করেন হাইকোর্ট। সেই আদেশের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে আবেদন করা হয়েছে।
সোমবার (৫ জানুয়ারি) সকালে আপিল বিভাগের সংশ্লিষ্ট শাখায় নৌকার বিজয়ী প্রার্থী আব্দুল হাই এর পক্ষে এ আবেদন করেন অ্যাডভোকেট এম. সাঈদ আহমেদ রাজা।
এর আগে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঝিনাইদহ-১ আসনের নৌকা প্রতীকের প্রার্থী মো. আব্দুল হাইকে বিজয়ী ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন। ইসির সেই গেজেট দুই মাসের জন্য স্থগিত করেছিলেন হাইকোর্ট।
এ আদেশের ফলে দুই মাস মো. আব্দুল হাইয়ের সংসদ সদস্য পদ স্থগিত থাকবে। সংসদের চলতি অধিবেশনে আব্দুল হাই অংশ নিতে পারবেন না বলে জানিয়েছেন আইনজীবীরা।
ওই আসনের পরাজিত স্বতন্ত্র প্রার্থী নজরুল ইসলাম দুলালের নির্বাচনি আবেদনে প্রাথমিক শুনানি নিয়ে ১ ফেব্রুয়ারি সমনসহ এ আদেশ দেন বিচারপতি এ কে এম আসাদুজ্জামানের একক হাইকোর্ট বেঞ্চ।
আদালতে ওইদিন আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী শাহ মঞ্জুরুল হক। সঙ্গে ছিলেন আইনজীবী মোহাম্মদ মুজিবুর রহমান।
আইনজীবী শাহ মঞ্জুরুল হক বলেন, ‘গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ, ১৯৭২-এর ৪৯ ধারা অনুসারে নির্বাচনে কারচুপি, ভোটে অনিয়মের অভিযোগ তুলে পরাজিত স্বতন্ত্র প্রার্থী নজরুল ইসলাম দুলাল নির্বাচনি আবেদন করেছিলেন। আদালত শুনানির পর হাইকোর্ট আবেদনটি মঞ্জুর করে ঝিনাইদহ-১ আসনে মো. আব্দুল হাইকে বিজয়ী ঘোষণা করা ইসির গেজেট দুই মাসের জন্য স্থগিত করেছেন। ফলে আব্দুল হাইয়ের সংসদ সদস্য পদ দুই মাসের জন্য স্থগিত থাকবে। চলতি সংসদ অধিবেশনে তিনি অংশ নিতে পারবেন না।’
আইনজীবী মোহাম্মদ মুজিবুর রহমান বলেন, ‘প্রধান নির্বাচন কমিশনার-সিইসসহ পাঁচজন কমিশনার, মো. আব্দুল হাইসহ ওই আসনের পাঁচজন প্রার্থী, ঝিনাইদহের পুলিশ সুপার, সংশ্লিষ্ট থানার ভারপ্রার্ত কর্মকর্তা -ওসিসহ ১৭ জন বিবাদীর বিরুদ্ধে সমন জারি করা হয়েছে। তবে তাদের সশরীরে হাজির হতে হবে না।
নির্ধারিত তারিখে আইনজীবীর মাধ্যমে অভিযোগের বিষয়ে তাদের ব্যাখ্যা দিতে হবে।’ আদালত মৌখিক আদেশে এ বিষয়ে শুনানির পরবর্তী তারিখ উল্লেখ করেননি বলে জানান এই আইনজীবী।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঝিনাইদহ-১ আসনে মোট প্রার্থী ছিলেন ৬ জন। তারা হলেন- তৃণমূল বিএনপির কেএম জাহাঙ্গীর মজুমদার (সোনালী আঁশ), জাতীয় পার্টির মনিকা আলম (লাঙ্গল), আওয়ামী লীগের আব্দুল হাই (নৌকা), ন্যাশনাল পিপলস পার্টির আনিচুর রহমান (আম), স্বতন্ত্র প্রার্থী নজরুল ইসলাম (ট্রাক) ও মুনিয়া আফরিন (ফুলকপি)। নজরুল ইসলাম দুলাল ঝিনাইদহ জেলা আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি।
আবেদন থেকে জানা যায়, ভোটের পর বিকেল সাড়ে চারটায় রিটার্নিং কর্মকর্তা একটি রেজাল্ট শিট দিয়ে ঘোষণা দেন যে, বিনাইদহ-১ আসনে ৪৯ শতাংশ ভোট পড়েছে। সে ফলাফলে স্বতন্ত্র প্রার্থী নজরুল ইসলাম পেয়েছেন ৮০ হাজার ৫৪৭ ভোট পেয়েছেন। আব্দুল হাই ৬৫ হাজার ভোট পেয়েছেন, বলা হয়। অর্থাৎ ১৫ হাজার ৭৫৫ ভোটের ব্যবধানে স্বতন্ত্র নজরুল ইসলাম দুলাল বিজয়ী হয়েছেন বলে ঘোষণা করা হয়। কিন্তু পরদিন অর্থাৎ ৮ জানুয়ারি আরেকটি রেজাল্ট শিট দিয়ে রিটার্নিং কর্মকর্তা ঘোষণা করেন, ৫৮. ২৭ শতাংশ ভোট পড়েছে।
আগের দিনের থেকে প্রদেয় ভোট ৯ শতাংশ বেশি দেখিয়ে আব্দুল হাইকে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়। চূড়ান্ত ফলাফলে দেখানো হয়, আব্দুল হাই পেয়েছেন ৯৪ হাজার ৩৭৯ ভোট। আর নজরুল ইসলাম দুলাল পেয়েছেন ৮০ হাজার ৫৪৭ ভোট। আব্দুল হাই ১৩ হাজার ৮৩২ ভোট বেশি পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন। এতে কারসাজির অভিযোগ তুলে পর দিনই ঘোষিত ফলাফল বাতিল চেয়ে রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে আবেদন করেন নজরুল ইসলাম। কাজ না হওয়ায় ১০ জানুয়ারি তিনি নির্বাচন কমিশনে আবেদন করেন। কিন্তু কমিশন আবেদন নথিভুক্ত করে রাখলেও এখন পর্য়ন্ত তা নিষ্পত্তি না করায় গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ, ১৯৭২-এর ৪৯ ধারায় তিনি হাইকোর্টে নির্বাচনি আবেদন করেন। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর থেকে ভোটের দিন পর্যন্ত আচরণবিধি লঙ্ঘনের দায়ে আব্দুল হাইয়ের বিরুদ্ধে পাঁচটি মামলা হয় বলে আবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।
এফএইচ/এসএনআর/জেআইএম