ভিডিও EN
  1. Home/
  2. আইন-আদালত

রাইদার চালকের জবানবন্দি

ব্রেক ফেল করে আইল্যান্ডে লাগাতে গিয়ে প্রকৌশলীকে চাপা দেয় বাসটি

জাহাঙ্গীর আলম | প্রকাশিত: ০৯:৪২ পিএম, ২১ এপ্রিল ২০২৪

রাজধানীর হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের থার্ড টার্মিনালের সীমানা প্রাচীর ভেঙে প্রবেশ করে সিভিল অ্যাভিয়েশনের এক জ্যেষ্ঠ প্রকৌশলীকে চাপা দিয়ে হত্যার দায় স্বীকার করেছেন অভিযুক্ত বাসচালক মাহমুদ হাসান হিমেল (২৫)। রাইদা পরিবহনের ওই বাসচালক জবানবন্দিতে আদালতকে বলেন, বাসের ব্রেক ফেল করায় আইল্যান্ডে লাগাতে গিয়ে প্রকৌশলীকে পিষ্ট করেন তিনি। নিহত প্রকৌশলীর নাম মাইদুল ইসলাম সিদ্দিকী (৩৬)।

গত শুক্রবারের এ ঘটনায় করা মামলায় অভিযুক্ত বাসচালক জবানবন্দিতে আরও বলেন, ব্রেক ফেল করায় বাসটি আইল্যান্ডে ধাক্কা খায়। এরপর গাড়িটি বামে চাপাতে গেলে মোটরসাইকেল আরোহী প্রকৌশলী মাইদুল ইসলাম সিদ্দিকী পিষ্ট হন। এ ঘটনা বুঝতে পেরে তিনি দ্রুত সেখান থেকে পালিয়ে যান।

রোববার (২১ এপ্রিল) আসামি মাহমুদ হাসানকে আদালতে হাজির করে পুলিশ। এরপর তিনি ঘটনার দায় স্বীকার করে সেচ্ছায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিতে সম্মত হওয়ায় তা রেকর্ড করার আবেদন করেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা। আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ শেখ সাদী আসামির জবানবন্দি রেকর্ড করেন। এরপর তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। পুলিশ ও আদালত সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

 

অভিযুক্ত বাসচালক জবানবন্দিতে আরও বলেন, ব্রেক ফেল করায় বাসটি আইল্যান্ডে ধাক্কা খায়। এরপর গাড়িটি বামে চাপাতে গেলে মোটরসাইকেল আরোহী প্রকৌশলী মাইদুল ইসলাম সিদ্দিকী পিষ্ট হন। এ ঘটনা বুঝতে পেরে তিনি দ্রুত সেখান থেকে পালিয়ে যান

 

চালক মাহমুদ জবানবন্দিতে আরও বলেন, আমি কিছুদিন আগে হেলপার থেকে ড্রাইভার হয়েছি। এক দালালের মাধ্যমে লার্নার কার্ড করি। আমি বিআরটিএ অফিসে কখনো যাইনি। আমার গাড়ির হেলপারকে আমি চিনি না।

প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ আদালতের

রাজধানীর হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের থার্ড টার্মিনালের সীমানা প্রাচীর ভেঙে প্রবেশ করে সিভিল অ্যাভিয়েশনের সিনিয়র প্রকৌশলী মাইদুল ইসলাম সিদ্দিকীকে চাপা দিয়ে হত্যার ঘটনায় করা মামলায় আগামী ৩০ মে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। রোববার ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট শেখ সাদী মামলার এজাহার গ্রহণ করে এ দিন ধার্য করেন।

গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়েছেন রাইদার চালক

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা বিমানবন্দর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) সুমন চন্দ্র দাস আসামি মাহমুদকে আদালতে হাজির করে জবানবন্দি রেকর্ড করার আবেদন করে একটি প্রতিবেদন দাখিল করেন। তিনি প্রতিবেদনে উল্লেখ করেন, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে রাইদা পরিবহনের বাসচালক মাহমুদ হাসান গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়েছেন। যা যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে। তিনি স্বেচ্ছায় ঘটনার দায় স্বীকার করে জবানবন্দি দিতে ইচ্ছুক। তাই তার জবানবন্দি রেকর্ড করার আবেদন করলাম।

আরও পড়ুন

এর আগে গত শনিবার (২০ এপ্রিল) ভোরে র্যাব-১ ও র্যাব-৮ এর যৌথ অভিযানে বরিশালের হিজলা উপজেলার হরিনাথপুরের নিজ বাসা থেকে আসামিকে গ্রেফতার করা হয়।

গত শুক্রবার (১৯ এপ্রিল) হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে তৃতীয় টার্মিনালের প্রাচীর ভেঙে রাইদা পরিবহনের একটি বাস ঢুকে যায়। এ ঘটনায় সিভিল অ্যাভিয়েশনের সিনিয়র একজন প্রকৌশলী নিহত হন। নিহতের নাম মাইদুল ইসলাম সিদ্দিকী। তিনি সিভিল অ্যাভিয়েশনের সিনিয়র সাব-অ্যাসিস্ট্যান্ট ইঞ্জিনিয়ার।

 

রাস্তা দিয়ে মোটরসাইকেল চালিয়ে যাচ্ছিলেন সিভিল প্রকৌশলী মাইদুল। রাইদা পরিবহনের ওই বাস তার মোটরসাইকেলটি চাপা দিলে তিনি গুরুতর আহত হন। পরে কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। এ ঘটনায় বিমানবন্দর থানায় একটি মামলা করা হয়

 

পুলিশ জানায়, রাইদা পরিবহনের একটি বাস নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে থার্ড টার্মিনালের সীমানা প্রাচীর ভেঙে ভেতরে ঢুকে যায়। এসময় রাস্তা দিয়ে মোটরসাইকেল চালিয়ে যাচ্ছিলেন সিভিল প্রকৌশলী মাইদুল। রাইদা পরিবহনের ওই বাস তার মোটরসাইকেলটি চাপা দিলে তিনি গুরুতর আহত হন। পরে কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। এ ঘটনায় বিমানবন্দর থানায় একটি মামলা করেন সিভিল অ্যাভিয়েশনের কনভেয়ার বেল্ট অপারেটর আব্দুল্লাহ আল মামুন।

পেছন দিক থেকে মোটরসাইকেলে সজোরে ধাক্কা দেয় বাসটি

মামলার এজাহারে বাদী উল্লেখ করেন, আমি দীর্ঘদিন ধরে সিভিল অ্যাভিয়েশনে কনভেয়ার বেল্ট অপারেটর হিসেবে কর্মরত আছি। গত শুক্রবার (১৯ এপ্রিল) সকাল ১০টার দিকে মাইদুল ইসলাম সিদ্দিকী তার ব্যক্তিগত মোটরসাইকেলে নিজ বাসা থেকে ঢাকা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর অফিসে যাচ্ছিলেন। পথে বিমানবন্দর থানাধীন উত্তরাগামী এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের বাহির মুখ সংলগ্ন থার্ড টার্মিনালের সামনে পাকা রাস্তার পাশে পৌঁছালে রাইদা পরিবহনের একটি বাস (রেজি নং- ঢাকা মেট্রো-ব-১৫-০৮৩৯) পেছন দিক থেকে মোটরসাইকেলটিকে সজোরে ধাক্কা দেয়। অজ্ঞাতপরিচয় চালক বেপোরোয়াভাবে বাসটি চালাচ্ছিলেন। এসময় বাসটি মোটরসাইকেলসহ ভিকটিমকে নিচে ফেলে পিষ্ট করে পাশের টিনের বেড়া ভেঙে ভেতরে ঢুকে যায়। এতে মাইদুল ইসলাম গুরুতর আহত হন।

এজাহারে আরও বলা হয়, দুর্ঘটনার পর বাসচালক ঘটনাস্থলে গাড়িটি ফেলে কৌশলে দ্রুত পালিয়ে যান। বিমানবন্দর থানা পুলিশ সংবাদ পেয়ে তাৎক্ষণিক ঘটনাস্থলে গিয়ে উপস্থিত লোকজনের সহায়তায় ভিকটিমকে জখম অবস্থায় কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। দ্রুত ও বেপরোয়া গতিতে গাড়ি চালানোর কারণেই এ দুর্ঘটনা ঘটে।

মামলার বাদী আরও বলেন, আমি মোবাইল ফোনের মাধ্যমে খবর পেয়ে কুর্মিটোলা হাসপাতালে গিয়ে দেখি পুলিশ মৃতের সুরতহাল সম্পন্ন করে মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগের মর্গে পাঠিয়ে দিয়েছে। ময়নাতদন্ত শেষে মৃতের নিজ বাড়ি বগুড়ায় মরদেহ পৌঁছে দিয়ে ভিটটিমের পরিবারের লোকদের সঙ্গে আলোচনা করে এজাহার দাখিল করায় বিলম্ব হলো।

চালকের নেই লাইসেন্স, বাসের নেই ফিটনেস

রাইদা পরিবহনের ওই বাসটির চালক গ্রেফতার আসামি মাহমুদ হাসান হিমেলের (২৫) যথাযথ লাইসেন্স ছিল না। এছাড়া রাইদা পরিবহনের বাসটির ফিটনেস সংক্রান্ত কাগজপত্রও ছিল না। শনিবার বিকেলে রাজধানীর উত্তরায় র্যাব-১ কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান র্যাব-১ এর উপ-অধিনায়ক মেজর মোহাম্মদ মাসুদ হায়দার।

আরও পড়ুন

মোহাম্মদ মাসুদ হায়দার বলেন, গত ১৯ এপ্রিল সকাল ১০টার দিকে রাজধানীর বিমানবন্দর এলাকায় তৃতীয় টার্মিনালের বাউন্ডারি ভেঙে রাইদা পরিবহনের একটি বাস ভেতরে ঢুকে যায়। এসময় বাসটি মোটরসাইকেল আরোহী প্রকৌশলী মাইদুল ইসলাম সিদ্দিকীকে চাপা দেয়। তাৎক্ষণিকভাবে আহত ব্যক্তিকে কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।

 

মাইদুল ইসলাম সিদ্দিকী ব্যক্তিগত মোটরসাইকেলে বাসা থেকে বিমানবন্দরে অফিসে যাচ্ছিলেন। পথে বিমানবন্দর থানাধীন উত্তরাগামী এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের বাহির মুখ সংলগ্ন থার্ড টার্মিনালের সামনে পাকা রাস্তার পাশে পৌঁছালে রাইদা পরিবহনের একটি বাস পেছন দিক থেকে মোটরসাইকেলটিকে সজোরে ধাক্কা দেয়। এতে তিনি গুরুতর আহত হন

 

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা বিমানবন্দর থানার এসআই সুমন চন্দ্র দাস জাগো নিউজকে বলেন, এ হত্যার ঘটনায় করা মামলায় অভিযুক্ত বাসচালক আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। তিনি পুরো ঘটনা আদালতে স্বীকার করেছেন।

বিমানবন্দর থানার আদালতের সাধারণ নিবন্ধন কর্মকর্তা পুলিশের এসআই মোজাফ্ফর জাগো নিউজকে বলেন, এ হত্যার মামলার এজহার গ্রহণ করে আগামী ৩০ মে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।

জেএ/এমকেআর/জিকেএস