ভিডিও EN
  1. Home/
  2. আইন-আদালত

চুক্তিভিত্তিক বিচারক নিয়োগ দিলেই কি মামলা জট কমবে?

মুহাম্মদ ফজলুল হক | প্রকাশিত: ১২:২১ পিএম, ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

বিচারাধীন মামলার জট লেগেই আছে বছরের পর বছর। এই সংকট সমাধানে অবসরপ্রাপ্ত বিচারকদের চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের প্রস্তাব দিয়েছে বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশন। মামলা নিষ্পত্তিতে প্রয়োজনে আইন সংশোধনের কথাও বলেছেন তারা। তবে বিষয়টি নিয়ে পক্ষে-বিপক্ষে মত দিয়েছেন আইন বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন, স্বল্পমেয়াদি এই উদ্যোগে মামলার জট খুলবে না।

বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশন গঠন

জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতায় আসা অন্তর্বর্তী সরকার দুই ধাপে মোট ১১টি সংস্কার কমিশন গঠন করে। আইনের শাসন ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে গত ৩ অক্টোবর গঠন করা হয় বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশন। বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের সাবেক বিচারপতি শাহ আবু নাঈম মোমিনুর রহমানের নেতৃত্বে আট সদস্যবিশিষ্ট কমিশন বিচার বিভাগের সংস্কার প্রস্তাব প্রস্তুতের লক্ষ্যে কাজ করে। এরই মধ্যে গত ১৫ জানুয়ারি সংস্কার কমিশন প্রাথমিক প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। চূড়ান্ত প্রতিবেদন বুধবার (৫ ফেব্রুয়ারি) জমা দেওয়ার কথা রয়েছে বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশনের। 

প্রাথমিক প্রতিবেদনে বেশ কয়েকটি সংস্কার প্রস্তাব দিয়েছে বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশন। এর মধ্যে রয়েছে মামলা জট নিরসনে স্বল্পমেয়াদি ব্যবস্থা হিসেবে দ্রুততম সময়ের মধ্যে আপিল/রিভিশন নিষ্পত্তি করা, প্রয়োজনে আইন সংশোধন করে প্রতি জেলায় সম্প্রতি অবসরপ্রাপ্ত এক বা একাধিক বিচারককে নির্দিষ্ট মেয়াদে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দিয়ে অতি পুরোনো মামলাগুলো অগ্রাধিকার ভিত্তিতে নিষ্পত্তি করা।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দেওয়ানি কার্যবিধি ও তৎসংশ্লিষ্ট আইনে প্রয়োজনীয় সংশোধনী আনার মাধ্যমে সমন জারির ব্যবস্থা ত্বরান্বিত করতে হবে। জারিকারকদের যথোপযুক্ত ভ্রমণ ভাতা ও আনুষাঙ্গিক খরচের জন্য বাজেট বরাদ্দ দিতে হবে। দেওয়ানি মামলায় জবাব দাখিলের ক্ষেত্রে নির্ধারিত সময়সীমা কঠোরভাবে অনুসরণ করতে হবে। মামলার সব পর্যায়ে বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তি উৎসাহিত করতে হবে। মামলার চূড়ান্ত শুনানি পর্যায় সংক্ষিপ্ত করতে হবে।

মামলা জট নিরসনে স্বল্পমেয়াদি ব্যবস্থা হিসেবে অবসরপ্রাপ্ত জেলা জজদের মধ্যে যারা সৎ, দক্ষ ও সুস্বাস্থ্যের অধিকারী তাদের দু-তিন বছরের জন্য চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেওয়ার প্রস্তাব-কমিশন সূত্র

প্রস্তাবে আরও বলা হয়েছে, বর্তমানে প্রচলিত সংক্ষিপ্ত মেমো অব আপিল বা রিভিশনের দরখাস্তের পরিবর্তে বিস্তারিত কারণ উল্লেখপূর্বক মেমো/দরখাস্ত দাখিল এবং এসবের বিপরীতে বিস্তারিত লিখিত উত্তর দাখিল বাধ্যতামূলক করতে হবে। একই সঙ্গে শুনানি পর্যায়ে আইনজীবীর অনুপস্থিতির ক্ষেত্রে ওই সব মেমো/দরখাস্ত বিশ্লেষণ করে গুণাগুণের ভিত্তিতে রায় দিতে হবে। প্রয়োজনীয় অবকাঠামো নির্মাণ, জনবল নিয়োগ ও বাজেট বরাদ্দ করতে হবে।

বিদ্যমান সংবিধানের ১০০ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, বিভাগীয় পর্যায়ে হাইকোর্ট বিভাগের কার্যক্রম সম্প্রসারণ এবং উপজেলা সদর পর্যায়ে দেওয়ানি ও ফৌজদারি বিচারব্যবস্থাসহ লিগ্যাল এইড কার্যক্রম সম্প্রসারণ করতে হবে। প্রতিটি জেলায় এবং হাইকোর্ট বিভাগে মনিটরিং প্রক্রিয়া সক্রিয় করতে হবে।

আরও পড়ুন:

কমিশন সূত্র জানায়, প্রস্তাবগুলো বাস্তবায়ন হলে দেওয়ানি মামলা নিষ্পত্তিতে দীর্ঘসূত্রতা কমবে। বিচারপ্রার্থীদের আইনগত সহায়তা কার্যক্রম কীভাবে সম্প্রসারণ করা যায় বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশন সেসব বিষয়েও কাজ করছে।

দেশে বিচারাধীন মামলা কত?

সুপ্রিম কোর্টের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, গত বছরের ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সারাদেশে ১৭ লাখ ২১ হাজার ২৬৬টি দেওয়ানি মামলা বিচারাধীন। এর মধ্যে অধস্তন আদালতে ১৬ লাখ পাঁচ হাজার ৮০২টি, সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগে ৯৭ হাজার ৪৭৫টি এবং আপিল বিভাগে বিচারাধীন ১৭ হাজার ৯৮৯টি মামলা। ওই সময় পর্যন্ত অধস্তন আদালতে পাঁচ বছরের বেশি সময় ধরে বিচারাধীন মামলার সংখ্যা চার লাখ ১১ হাজার ১১৮টি। এছাড়া সেপ্টেম্বর পর্যন্ত উচ্চ আদালতের নির্দেশে চার হাজার ৮৬৪টি দেওয়ানি মামলার বিচারিক কার্যক্রম স্থগিত ছিল।

আইন বিশেষজ্ঞদের মতপার্থক্য

এসব সংস্কার প্রস্তাব নিয়ে ভিন্নমত পোষণ করেন আইন বিশেষজ্ঞরা। কেউ বলছেন, অবসরপ্রাপ্তদের চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দিলে হয়তো কিছু মামলা কমতে পারে তবে জট কমাতে হলে নতুন করে স্থায়ী বিচারক নিয়োগের ব্যবস্থা করা দরকার। অস্থায়ী বা চুক্তিভিত্তিক নিয়োগে দায়বদ্ধতা কম থাকে। নিয়মিত বিচারকদের মধ্যে থেকে পদোন্নতি দিয়ে অভিজ্ঞদের পদোন্নতি এবং নতুন বিচারক নিয়োগে তাদের কাজের প্রতি দায়বদ্ধতা তৈরি হবে। তাই বিচার বিভাগ নিয়ে মহাপরিকল্পনা নিতে হবে, বিশেষ করে বাজেট বৃদ্ধি, জনবল বাড়িয়ে আরও বিচারক নিয়োগের ওপর গুরুত্ব দেওয়া দরকার বলে মনে করেন কেউ কেউ।

মামলা জট কমাতে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের প্রস্তাব কমিশনের

আবার কেউ কেউ বলছেন, মামলার সুষ্ঠু বণ্টন, বিচারকের কর্মঘণ্টার সঠিক ব্যবহার, তদন্ত শেষ করার জন্য সময় বেঁধে দেওয়া, সঠিক সময়ে তদন্ত ও সাক্ষী শেষ করা এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা যেন সাক্ষ্য দিতে গড়িমসি করতে না পারে সে বিষয়ে তাদের শাস্তির বিধান করা। একই সঙ্গে তাদের আদালতে আসা যাওয়ার পরিপূর্ণ ব্যয়ভার রাষ্ট্রকে বহন করার ব্যবস্থা করার মত দেন।

আরও পড়ুন:

চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ যেভাবে দেখছেন একজন বিচারক

চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের বিষয়ে সাবেক বিচারক ও সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল ইকতেদার আহমেদ জাগো নিউজকে বলেন, চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ নিয়ে হয়তো বলা হয়েছে, পৃথিবীর অন্য দেশেও আছে অ্যাক্টিং জাজ। উচ্চ আদালতের বিচারক তো ৬৭ বছর বয়সে অবসরে যান। অধস্তন (বিচারিক) আদালতের বিচারকরা ৫৯ বছর বয়সে অবসরে যান। সেখানে সাত-আট বছরের বয়সের একটা ব্যবধান রয়েছে। যারা ইচ্ছুক তাদের মধ্যে থেকে দুই-চার বছর কাজ করতে পারেন। পৃথিবীর অন্য দেশেও আছে যে জাজদের চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেওয়া হয়, মামলার জট কমানোর জন্য।

গত বছরের ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সারাদেশে ১৭ লাখ ২১ হাজার ২৬৬টি দেওয়ানি মামলা বিচারাধীন। ওই সময় পর্যন্ত অধস্তন আদালতে পাঁচ বছরের বেশি সময় ধরে বিচারাধীন মামলার সংখ্যা ৪ লাখ ১১ হাজার ১১৮টি। এছাড়া সেপ্টেম্বর পর্যন্ত উচ্চ আদালতের নির্দেশে ৪ হাজার ৮৬৪টি দেওয়ানি মামলার বিচারিক কার্যক্রম স্থগিত রয়েছে। সুপ্রিম কোর্টের সর্বশেষ তথ্য।

তিনি আরও বলেন, আমাদের দেশে হলে সেটা স্বচ্ছতার ভিত্তিতে হতে হবে এবং যারা আগ্রহী তাদের সুযোগ দিতে হবে।

মামলা জট কমাতে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের প্রস্তাব কমিশনের

কমিশনের এই প্রস্তাব ভালো উদ্যোগ কি না এমন প্রশ্নের জবাবে ইকতেদার আহমেদ বলেন, যেহেতু মামলার জট রয়েছে, জট কমাতে ভালো উদ্যোগ বলা যায়। আবার দেখা যাচ্ছে যারা অবসরে যাচ্ছেন তাদের মধ্যে অনেকেই কর্মক্ষম থাকছেন, তাদের কাজে লাগানো গেলো। কিন্তু এটা পিক অ্যান্ড চুজ হতে পারবে না, সবার জন্য উন্মুক্ত থাকবে। যিনি সুযোগ গ্রহণ করবেন তিনি যাতে পারেন।

প্রশাসনে হতে পারে, কিন্তু বিচার বিভাগে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ হয় না

মামলার জট কমাতে চুক্তিভিত্তিক বিচারক নিয়োগের বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী জাগো নিউজকে বলেন, ‘চুক্তিভিত্তিতে নিয়োগ দিয়ে মামলার জট কমাবে, বিচার বিভাগীয় সংস্কার কমিশনের এমন সুপারিশকে আমি গ্রহণযোগ্য মনে করছি না। আমি মনে করি মামলার জট কমাতে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের প্রয়োজন নেই। কারণ অধস্তন আদাতের বিচারক নিয়োগের দায়িত্ব জুডিসিয়াল সার্ভিস কমিশনের। জুডিসিয়াল সার্ভিস কমিশনের অধীনে যত বিচারক নিয়োগ হয় তাদের অভিজ্ঞতা রয়েছে।’ যেহেতু বাংলাদেশে মামলা জট দীর্ঘদিনের সমস্যা, অধস্তন আদালতের অনেক অভিজ্ঞ বিচারক রয়েছেন। অভিজ্ঞ বিচারকদের মধ্য থেকে পদোন্নতি দিয়ে তাদের স্থানে আরো বিচারক নিয়োগ দেওয়ার পরামর্শ দেন তিনি।

অবসরপ্রাপ্ত বিচারক নিয়োগের বিষয়ে সংস্কার কমিশনের প্রস্তাবের বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী ও মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশের সভাপতি অ্যাডভোকেট মনজিল মোরসেদ জাগো নিউজকে বলেন, বিচার বিভাগের কাজটা বা সার্ভিসের কাজ এটা তো কন্ট্রাক্টে করানো যায় না, যে ভাই আস তুমি কাজটি করে দিয়ে যাও। এতে জবাবদিহিতা থাকে না।

মনজিল মোরসেদ প্রশ্ন তোলেন, ওনারা দৃষ্টিটা অন্যদিকে কেন দিচ্ছেন? ওনাদের বলা দরকার যে প্রচুর নতুন বিচারক নিয়োগ দেন। এটা তো বলা দরকার। এখানে বিচারক যারা আছেন সবাই তো অভিজ্ঞ। অবসরে যাওয়ার পরেও একটা জীবন আছে। তাদের অবসর সময় ভালো কাটুক। চুক্তিভিত্তিক আনলে তাদের ওপর জবাবদিহিতা ওইভাবে থাকে না। আপনি যখন সার্ভিসে থাকবেন, দায়িত্বে থাকবেন, তখন একটা দায়বদ্ধতা থাকে। কিন্তু যারা চলে গেছেন, তাদের বাইরে থেকে আনা সমীচীন হবে না। আমাদের আইন-কানুনে নেই এবং অ্যালাউ করে না। প্রশাসনে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ হতে পারে, কিন্তু বিচার বিভাগে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ হয় না। তারা কিছু মামলা হয়তো নিষ্পত্তি করে যাবেন। কিন্তু মামলা জটের মূল কারণ খোঁজ করে সেটি দূর করার জন্য ব্যবস্থা নিতে হবে।

মামলা জট কমাতে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের প্রস্তাব কমিশনের

‘চুক্তিভিত্তিক নয় বরং যথেষ্ট পরিমাণ বিচারক নিয়োগ দেন। সে ক্ষেত্রে কাজে লাগবে, পারমানেন্টলি সমস্যা দূর হবে। মামলার জট কমাতে বিচার বিভাগ নিয়ে মহাপরিকল্পনা করা দরকার, দরকার বাজেট বৃদ্ধির, লোকবল ও বিচারক বাড়াতে নিয়োগের ওপর তাগিদ দেওয়া।’ যোগ করেন মনজিল মোরসেদ।

অন্য দেশেও আছে অর্থাৎ অ্যাক্টিং জাজ, উচ্চ আদালতের বিচারক তো ৬৭ বছর বয়সে অবসরে যান। অধস্তন (বিচারিক) আদালতের বিচারকরা ৫৯ বছর বয়সে অবসরে যান। সেখানে সাত-আট বছরের বয়সের একটা ব্যবধান রয়েছে। যারা ইচ্ছুক তাদের মধ্যে থেকে দু-চার বছর কাজ করতে পারেন।-সাবেক বিচারক ও সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল ইকতেদার আহমেদ।

জট কমাতে কিছুটা সাহায্য করবে

এ বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী ও বারের সাবেক সম্পাদক ব্যারিস্টার মো. রুহুল কুদ্দুস কাজল জাগো নিউজকে বলেন, ‘যেহেতু বাংলাদেশে মামলা জট দীর্ঘদিনের সমস্যা, অনেক অভিজ্ঞ বিচারক রয়েছেন, যাদের হাইকোর্ট থেকে ৬৭ বছর এবং বিচারিক (অধস্তন) আদালত থেকে অবসরে চলে যাওয়ার পর তারা কর্মক্ষম থাকেন। সেই বিবেচনায় যদি কেউ ইচ্ছুক থাকেন এবং সরকার মনে করেন এরকম ক্ষেত্রে অ্যাডহক ভিত্তিতে নিয়োগ দিয়ে জট কমাবে, তাহলে সেটা করতেই পারে। আমি মনে করি এটা করতে পারলে মামলা জট কমাতে কিছুটা হলেও সাহায্য করবে।’

আরও পড়ুন:

জটের ভিন্ন কারণ ও মামলার সুষ্ঠু বণ্টনের দাবি

এ বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট মো. খাদেমুল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, শুধু বিচারক সংকটের কারণেই মামলার জট কথাটি পুরোপুরি সত্য নয়। বরং বিচার বিভাগের কর্মকর্তার কর্মঘণ্টার উপযুক্ত ব্যবহার এবং মামলা ব্যবস্থাপনাগত দুর্বলতাও জটের অন্যতম কারণ। যেমন সব আইনে তদন্ত প্রক্রিয়া শেষ করার সময়সীমা উল্লেখ করা হয়নি। যে কারণে হাজার হাজার মামলা তদন্ত শেষ করতে না পারায় ঝুলে গেছে। মামলা বণ্টনের ক্ষেত্রেও দুর্বলতা রয়েছে। কোনো কোনো আদালতে মামলার চাপে ছয় থেকে এক বছর লাগে পরবর্তী শুনানির দিন-ক্ষণ ঠিক করার ক্ষেত্রে। আবার কোনো আদালতে মামলার সংখ্যা এত কম যে এক থেকে দুই ঘণ্টার মধ্যে দিনের বিচারিক কাজ শেষ করা হচ্ছে। যেমন চেক প্রতারণার (এনআইঅ্যাক্ট) মামলা শুধু যুগ্ম দায়রা জজকে বিচারের দায়িত্ব দেওয়ার পর এসব আদালতে মামলার চাপ কয়েকগুণ বেড়েছে।

তিনি আরও বলেন, অতিরিক্ত দায়রা জজ ও বিশেষ জজ আদালতগুলোতে মামলার সংখ্যা কম। এক্ষেত্রে মামলার বণ্টন পদ্ধতিতে ভারসাম্য আনা হলে মামলা নিষ্পত্তির হার বাড়ানো সম্ভব। যে সব ছোটখাটো অভিযোগ দায়েরের পর বাদীপক্ষ সাক্ষী দিচ্ছে না, সে সব মামলা দ্রুত নিষ্পত্তির উদ্যোগ নিতে হবে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা সাক্ষ্য দিতে গড়িমসি করলে শাস্তির বিধান করতে হবে, একই সঙ্গে তাদের আদালতে আসা যাওয়ার পরিপূর্ণ ব্যয়ভার রাষ্ট্রকে বহন করতে হবে। দেওয়ানি মামলা নিষ্পত্তির ক্ষেত্রে অভিজ্ঞ বিচারকদের কাজে লাগানো যেতে পারে। সে ক্ষেত্রে অবসরপ্রাপ্ত বিচারকদের মধ্যে থেকেই যে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দিতে হবে বিষয়টি তা নয় বরং তাদের মধ্য থেকে সৎ ও দক্ষদের আরবিট্রেটর (মধ্যস্থতাকারী) হিসেবে নিয়োগ দিয়ে বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তিতে মনোযোগ দেওয়া যেতে পারে।

এফএইচ/এসএনআর/এমএমএআর/এমএস