কাজ সামলে ঈদের প্রতিবেলায় নিজেকে সাজাবেন যেভাবে

ঈদ মানেই আনন্দ, আর এই আনন্দে নিজেকে পরিপাটি রাখা তো চাই-ই। রোজার ঈদের চেয়ে কোরবানির ঈদে কাজের‌ চাপ বেশি থাকে। কারণ কোরবানির ঈদে মাংস কাটাকাটির কাজ করতে হয়। তার ওপর যেহেতু জৈষ্ঠ্য মাস, কখনো ভারি বৃষ্টি আবার কখনো সূর্যের তীব্র দাবদাহ।

তাই কোরবানির ঈদে নারীদের সাজ ও পোশাকের ক্ষেত্রে কিছু জিনিস মাথায় রাখা দরকার। যেন পরিবেশের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে পোশাক ও সাজ নির্বাচন করা যায়। তাই চলুন জেনে নিই, কোরবানির ঈদের দিন সকাল থেকে রাত পর্যন্ত কোন সময় কেমনভাবে নিজেকে গুছিয়ে নিলে আরাম ও স্টাইল দুটোই বজায় থাকবে-

১. ব্যস্ততার মাঝে সকালের সাজসজ্জা

কোরবানির সকাল মানেই ব্যস্ততা। এসময় কাজের চাপও বেশি থাকে। তাই সকালের লুকটা হওয়া চাই সহজ ও আরামদায়ক। ঈদের দিন সকালে কাজের চাপ বেশি থাকে, যেমন -রান্নার কাজ, খাবার পরিবেশন ইত্যাদি। ফলে আবহাওয়া যেমনি হোক গরম লাগাটাই স্বাভাবিক। গোসলের পর হালকা রঙের কটনের সালোয়ার-কামিজ পছন্দের তালিকায় রাখতে পারেন। কারণ কাজের সময় ভারি পোশাক পড়া খুবই অস্বস্তিকর।

সকালের সাজসজ্জার জন্য প্রথমেই আপনার মুখ ফেসওয়াশ কিংবা ক্লিনজার দিয়ে ধুয়ে ‌তারপর মুখে টোনার দিয়ে মুখে ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করুন। এরপর খুব হালকা বিবি ক্রিম বা শুধুই সানস্ক্রিন নাগান। সকালে অতিরিক্ত কোনো মেকআপ না করাই ভালো। ন্যাচারাল লুক রাখার চেষ্টা করবেন যেন দেখতে সতেজ লাগে। এরপর চাইলে চোখের ওপরে আইলাইনার টেনে নিচে কাজল দিতে পারেন এবং ঠোঁটে টিন্টেড লিপবাম দিন‌ অথবা হালকা শেডের লিপস্টিক ব্যবহার করতে পারেন। পোশাকের রঙের সঙ্গে মিল রেখে লিপস্টিক শেড ব্যবহার করবেন। ছোট কানের দুল আপনার পছন্দের তালিকায় রাখতে পারেন যা আপনার সকালের সাজকে প্রাণবন্ত করে তুলবে। চুল চাইলে খোলা রাখতে পারেন তবে কাজের সময় অবশ্যই বেঁধে নিবেন। সুন্দর একটা খোঁপা অথবা বেণী।

২. দুপুরের সাজসজ্জা

ঈদে দুপুরের সময় মেহমান আপ্যায়ন, রান্না-বান্না ও গৃহস্থালি কাজের চাপ থাকে। তবে ব্যস্ততা কাটিয়ে নিজের সাজসজ্জাতে মনোযোগ দেওয়াও বাঞ্ছনীয়। তাই তারাতাড়ি কাজ শেষ করে আরেকবার গা ধুয়ে নিতে পারেন। এসময় গাড় রঙের কটন কামিজ বা কুর্তি পড়তে পারেন। কারণ আপনার মেকআপ লুক ন্যাচারাল থেকে গর্জিয়াস লুকের মাঝামাঝি থাকলে ভালো।

গরমে দুপুরে হালকা মেকআপ করাই শ্রেয়। হালকা মেকআপ করলে গরমে গলে যাওয়ার সম্ভাবনাও কম থাকবে। মেকআপ দেওয়ার আগে মুখমণ্ডল ৪-৫ মিনিটের মত বরফ দেওয়া পানিতে ভিজিয়ে রাখুন। এতে করে মেকআপ মুখে ভালোভাবে বসবে, তাছাড়া চেহারার ক্লান্তিভাবও কমে যাবে। এরপর ‌হালকা মেকআপ করে ফেস পাউডার দিয়ে ত্বক ম্যাট রাখতে পারেন। চোখে হালকা কাজল ঠোঁটে সফট কোরাল বা পিচ টোনের লিপস্টিক দিতে পারেন। যেহেতু গরম তাই চুল বেঁধে মানানসই যেকোনো স্টাইলে চুল বাঁধবেন। এতে কাজ করতেও সুবিধা হবে।

৩. বিকেলের লুক

ঈদের দিন সবচেয়ে আরামদায়ক সময় হলো বিকেলবেলা। কারণ এসময় কাজের চাপ কমে আসে। তাই এসময় চাইলে আপনি স্নিগ্ধ লুক দিতেই পারেন। তবে তা যেন আবহাওয়ার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে হয়। এর জন্য আপনি প্রিন্টেড লন কামিজ, এক টোনের ড্রেসের সঙ্গে কনট্রাস্ট ওড়না বা সফট সিল্ক বা মসলিন শাড়ি পরতে পারেন।

মাথায় রাখবেন পোশাকের সঙ্গে মানানসই সাজ দিতে হবে। তাই লাইট ফাউন্ডেশন দিয়ে ওয়াটার প্রুফ মেকআপ করুন। কারণ এই সময়ে কখনও বৃষ্টি আবার কখনও রোদ। মুখে দাগ থাকলে কনসিলার দিয়ে ঢেকে নিতে পারেন। এরপর চোখে একটু স্মাজি আইলাইনার ও মাসকারা দিতে পারেন। চোখের নিচের পাশ দিয়ে কালো বা গাঢ় রঙের আইশ্যাডো দিতে পারেন। যদি কোনো ডার্ক লুক চান, সঙ্গে রাখুন যেকোনো ডার্ক রঙের লিপস্টিক। কানে বড় দুল রাখতে পারেন, সঙ্গে অন্য গয়না। চুল খোলা রাখতে পারেন।

৪. রাতের জাঁকজমক

এই সময়টা একটু জমকালো সাজের সুযোগ থাকে। রাতের পরিবেশ থাকে মনোরম। তাই আপনি চাইলে গর্জিয়াস লুক আনতে পারেন মেকআপে। যা রাতের আবহাওয়ার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ। বিশেষ করে রাতে কোন পার্টি বা রেস্টুরেন্টে গেলে গর্জিয়াস লুক আপনাকে আত্মবিশ্বাসী করে তুলবে।

পোশাকের ক্ষেত্রে আপনি শাড়ি, জর্জেট বা সিল্কের গর্জিয়াস সালোয়ার-কামিজ বেছে নিতে পারেন। পোশাকের রঙ মেরুন, গাঢ় নীল, গাঢ় সবুজ, গোল্ডেন, কিংবা কালো গতে পারে। স্টাইলিশ কাট বা ডিজাইনার আউটফিট যেমন অনারকলি বা কেপ স্টাইল কামিজও পছন্দের তালিকায় রাখতে পারেন।

অন্যদিকে মেকআপের ক্ষেত্রে ফ্ল’লেস বেস তৈরির জন্য প্রাইমার, ফাউন্ডেশন ও কনসিলার ব্যবহার করুন। আর চোখ সাজানোর জন্য স্মোকি আই বা গ্লিটারি আইশ্যাডো, উইংড আইলাইনার এবং ডার্ক মাস্কারা দিন। ঠোঁটের জন্য ডার্ক রেড, মেরুন বা পাম শেড দিতে পারেন। এগুলো গর্জিয়াস লুকের জন্য পারফেক্ট। সবশেষে গালের হাড়, নাকের ওপর আর কপালের মাঝ বরাবর হালকা হাইলাইট করুন।

চুলের জন্য হালকা কার্লস, খোলা চুল বা স্টাইলিশ খোঁপা বা বেণী করতে পারেন। চাইলে ছোট্ট ফুল বা চুলের এক্সেসরিজ ব্যবহার করুন। গয়নার জন্য ঝুমকা, স্টেটমেন্ট নেকপিস বা চোকার, হ্যান্ডকাফ বা স্টোন রিং পছন্দ করতে পারেন। কারন গর্জিয়াস লুকে ভারী গয়না মানায়। সবশেষে মানানসই ক্লাচ বা হ্যান্ডব্যাগ রাখুন। হিল জুতা সাজকে পূর্ণতা দেবে।

জাগোনিউজের খবর পেতে ফলো করুন আমাদের গুগল নিউজ চ্যানেল।

ঈদের আনন্দ যেন রোদ-বৃষ্টিতে হারিয়ে না যায়, তাই সময়ভেদে পরিপাটি থাকা কিন্তু খুব জরুরি। সাজ হোক মাপের মধ্যে, আর পোশাক হোক ত্বক আর আবহাওয়ার সঙ্গে মানানসই – এই মন্ত্রে আপনি থাকবেন ঈদের দিনজুড়ে স্টাইলিশ।

সানজানা/এএমপি/এএসএম