অফিস ইয়োগা: সার্বিক সুস্থতার সহজ উপায়

সকাল নয়টায় ডেস্কে বসা, তারপর টানা কম্পিউটার অথবা ল্যাপটপ স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে থাকা, মিটিং, ইমেইল ইত্যাদির চাপ। দিনের শেষে যেন মাথাটা ফেটে যাবে – এটাই কি আপনারও গল্প?
তাহলে আপনি জানেন না, অফিসে ইয়োগা বা যোগব্যায়াম কতটা বদলে দিতে পারে আপনার কর্মজীবনের ছন্দ।
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
অফিসে মানসিক চাপ?
বর্তমানে কর্মজীবী মানুষের মানসিক চাপের অন্যতম উৎস হলো কাজের চাপ, দীর্ঘ সময় বসে থাকা, সময়ের অভাব, এবং প্রতিযোগিতার রেষারেষি।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ২০১৯ সালে বলেছিল, বিশ্বজুড়ে প্রতি পাঁচজনে একজন কর্মজীবী মানুষ মানসিক চাপ বা উদ্বেগে ভুগছেন। বিশেষ করে কর্পোরেট সংস্কৃতিতে বাজি রেখে কাজ করার চাপ দিন দিন যেনো অসহনীয় হয়ে উঠছে। অথচ এর মাঝেই কিছু কর্মস্থল খুঁজে নিচ্ছে একটি ভিন্ন পথ – তা হলো ইয়োগা অথবা যোগব্যায়াম।
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
যোগব্যায়াম বদলে দিতে পারে অফিসের পরিবেশ
যোগব্যায়াম মানে শুধু শরীর বাঁকানো নয়, বরং শরীর-মন-শ্বাস-চিন্তার একত্র সাধনা। অফিসে বা কাজের ফাঁকে মাত্র ৫ থেকে ১০ মিনিটের সহজ চর্চাও এনে দিতে পারে প্রশান্তি, মনোযোগ বৃদ্ধি এবং মানসিক স্বস্তি।
বিজ্ঞাপন
চলুন যেনে নেওয়া যাক অফিসে যোগব্যায়াম করার কিছু কার্যকর উপকারিতা-
১. স্ট্রেস বা চাপ কমাতে উপকারী
কিছুক্ষণ চোখ বন্ধ করে শ্বাস নিয়ন্ত্রণের অনুশীলন করলে কর্টিসল অর্থ্যাৎ মানসিক চাপের হরমোন কমে যায়। এতে মাথা ঠাণ্ডা থাকে এবং সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা বাড়ে।
২. মনোযোগ ফিরে আসে
যোগব্যায়াম ও ধ্যান চর্চা কাজের প্রতি মনোযোগ বাড়ায়। হাভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের এক গবেষণায় বলা হয়েছে, ৮ মিনিট মাইন্ডফুলনেস যোগ করলে কাজের উৎপাদনশীলতা বাড়ে। যা দীর্ঘমেয়াদে কর্মদক্ষতা ও মানসিক স্বাস্থ্যে ইতিবাচক প্রভাব ফেলে।
৩. কাঁধ, ঘাড় ও পিঠের ব্যথায় আরাম
সারাদিন ডেস্কে বসে থাকার কারণে ঘাড়-পিঠে টান পড়ে। তাহলে অফিসে বসেই করতে পারেন সহজ দুটি যোগ ব্যায়াম ‘ডেস্ক কাও স্ট্রেচ’ ও ‘সিটেড টুইস্ট’।
বিজ্ঞাপন
ডেস্ক কাউ স্ট্রেচ হলো একটি সহজ যোগব্যায়াম, যা চেয়ারে বসেই করা যায়। প্রথমে সোজা হয়ে বসে শ্বাস নিন, পিঠ বাঁকা করে বুক ফোলান (গরুর মতো)। তারপর শ্বাস ছাড়তে ছাড়তে পিঠ গোল করে মাথা নিচু করুন (বিড়ালের মতো)। এভাবে ৫-১০ বার করলে পিঠ, কাঁধ ও ঘাড়ের জড়তা দূর হয়, বসার ক্লান্তি কমে।
আর সিটেড টুইস্টে চেয়ারে বসেই শরীরটাকে ডান বা বাঁ দিকে ঘুরিয়ে কিছুক্ষণ ধরে রাখুন – এতে কোমরের শক্তি ও হজমশক্তি বাড়ে, এবং সারা শরীরে রক্ত চলাচল বাড়ে।
৪. পাঁচ মিনিট চোখ বন্ধ করে ফুরফুরে মেজাজ
যখন মাথায় একগাদা মেইল অথবা কাজ জমে থাকে, তখন মন থেমে যায়। পাঁচ মিনিট চোখ বন্ধ করে শ্বাস গ্রহণ ও ত্যাগ করলে মস্তিষ্কে রক্ত প্রবাহ বাড়ে, চিন্তা পরিষ্কার হয়। মেজাজ ফুরফুরে হয়ে যায়।
বিজ্ঞাপন
অফিসেই কোন সময়ে ও কীভাবে করবেন যোগব্যায়াম?
১. দুপুরের খাবারের আগে বা পরে মাত্র ৫-১০ মিনিট সময় বের করুন।
২. ডেস্ক বা ব্রেকরুমে বসেই কিছু হালকা স্ট্রেচিং, ঘাড় ঘোরানো, হাত-পায়ের ব্যায়াম করতে পারেন।
৩. শ্বাসপ্রশ্বাসের উপর নিয়ন্ত্রণ রাখার জন্য দিনে অন্তত একবার ধ্যান বা ‘ব্রিদিং এক্সারসাইজ’ করুন।
৪. চাইলে সপ্তাহে একদিন অফিসে 'ইয়োগা সেশন' আয়োজন করতে পারেন।
ঢাকার গুলশানের আহিংসা জি স্টুডিয়ার ইয়োগা প্রশিক্ষক তানি বাতেন বলেন, 'প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা – এই দীর্ঘ সময় আমরা শরীরের একটানা একই ভঙ্গিতে ব্যবহার করি। অথচ অফিসে ১০ মিনিটের যোগব্যায়াম চর্চা কর্মীদের স্ট্রেস হরমোন কমায় ও শরীরচর্চার একটি ন্যূনতম জায়গা তৈরি করে'।
বিজ্ঞাপন
ইয়োগা প্রশিক্ষক আরও বলেন, 'অনেক প্রতিষ্ঠান এখন নিয়মিত কর্পোরেট যোগব্যায়াম সেশন নিচ্ছে, যেখানে কর্মীদের মানসিক স্বাস্থ্য উন্নত হচ্ছে, কর্মক্ষেত্রে অনুপস্থিতি কমেছে, আর কর্মপরিবেশ অনেক হালকা হয়েছে। আমরা চাইলেই অফিসে বসে মাত্র কয়েক মিনিটেই এই চর্চা করে কর্মদক্ষতা ফেরাতে পারি'।
তানি বাতেন আরও বলেন, 'বিশেষ করে টিম বিল্ডিংয়ের জন্য একসঙ্গে যোগব্যায়াম করা দারুণ কার্যকর। এটা একরকম থেরাপি যেটা কেউ টের না পেয়েই গ্রহণ করে ফেলে।'
সুতরাং অফিসের ফাইল, মেইল, মিটিং, প্রেজেন্টেশন – এসবের মাঝে একটু থেমে, নিজের দিকে ফিরে তাকানোটা যদি হয় পাঁচ মিনিটের যোগব্যায়াম চর্চা দিয়ে, তাহলে সেই থামাটাই হয়ে উঠতে পারে নতুন করে শুরু করার শক্তি।
বিজ্ঞাপন
শান্ত/এএমপি/জেআইএম
আরও পড়ুন
বিজ্ঞাপন