ভিডিও EN
  1. Home/
  2. লাইফস্টাইল

আক্কেল দাঁত: মুখের ছোট অতিথি, বড় ঝামেলা

জান্নাত শ্রাবণী | প্রকাশিত: ০১:২৭ পিএম, ০২ সেপ্টেম্বর ২০২৫

আপনি কি কখনো হঠাৎ মুখে ছোট্ট এক অতিথি অনুভব করেছেন? যেটি আসলে দাঁত? হ্যাঁ, বলছি আক্কেল দাঁতের কথা, যা ইংরেজিতে ‘উইশডম টিথ’ নামে পরিচিত। প্রথম শুনলে মনে হতে পারে, একটা দাঁত কি এত সমস্যা করতে পারে? কিন্তু বাস্তবতা অন্যরকম। আক্কেল দাঁত জীবনের ছোটখাটো আনন্দ থেকে শুরু করে রুটিনের সবকিছুতেই ঢুকে পড়ে। মুখে ব্যথা, খাওয়ার চ্যালেঞ্জ হঠাৎ হেসে ওঠার সময়ও ব্যথা, আর কখনো কখনো মেজাজও খারাপ করে দেয়।

আমার নিজের অভিজ্ঞতা মনে পড়ছে। প্রথম দিনগুলোতে গরম স্যুপ আর ঠান্ডা আইসক্রিম ছাড়া কিছুই খেতে পারিনি। দাঁত যেন নিজের মতো করে বলছে, আজ খেতে পারবে না! সাধারণ খাবারের স্বাদ পাওয়ার সুযোগও নেই। হাসতে গেলে মনে হয়, দাঁতগুলো আরও জোরে চেঁচাচ্ছে। বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা বা হাসি-ঠাট্টা? সবই খানিকটা সীমিত। আক্কেল দাঁতের সঙ্গে জড়িয়ে থাকে অনেক মজার মুহূর্তও। ছোট অতিথি হলেও সে একধরনের ‘ব্যথার রাজা’।

তবে আক্কেল দাঁত শুধুই ব্যথার কারণ নয়। এটি আমাদের দৈনন্দিন জীবনেও প্রভাব ফেলে। ঘুমের সময়ও শান্তিতে থাকতে পারে না, চুপচাপ ঘুম ভাঙে। খাওয়ার সময় মনোযোগ কেবল ব্যথার দিকে চলে যায়। এমন মুহূর্তে মনে হয়, একদম ছোট দাঁত, কিন্তু প্রভাব যেন অনেক বড়। কখনো কখনো মুখে ব্যথার সঙ্গে সঙ্গে গরম পানি বা ঠান্ডা পানিতে ঠাণ্ডা লাগানোও ব্যর্থ হয়ে যায়।

কিন্তু আক্কেল দাঁতের সমস্যার মধ্যেও আনন্দ খুঁজে পাওয়া যায়। এই অভিজ্ঞতা মানুষকে আরও সাবধান করে তোলে। যেমন- খাওয়ার সময় পচা বা শক্ত খাবার থেকে দূরে থাকার শিক্ষা, দাঁতের স্বাস্থ্য রক্ষায় নিয়মিত ব্রাশ ও ডেন্টাল চেকআপের গুরুত্ব বোঝায়। মজার গল্প তৈরি হয়-বন্ধুদের সঙ্গে হাসি-ঠাট্টা, ব্যথার অদ্ভুত কাহিনী শেয়ার করা এবং কখনো কখনো সোশ্যাল মিডিয়ায় মিম বানানোও হয়।

আক্কেল দাঁত: মুখের ছোট অতিথি, বড় ঝামেলা

এই আক্কেল দাঁতের স্মৃতিময় গল্প ও যন্ত্রণা নিয়ে কথা হয় মতিউর’স ডেন্টালের অভিজ্ঞ চিকিৎসক ডা. মতিউর রহমান খন্দকারের সঙ্গে। তিনি বলেন, আক্কেল দাঁত সাধারণত ১৭–২৫ বছর বয়সে আসে। তবে সবাই এই সমস্যায় পড়েন না। অনেকের জন্য দাঁত স্বাভাবিকভাবে জায়গায় আসে, কেউ কেউ অপারেশনের মাধ্যমে এটা সরিয়ে দেয়। তবে যাদের মুখে জায়গা কম থাকে, তারা ব্যথার সঙ্গে সঙ্গে জীবনের ছোট ছোট রুটিনেও সমস্যায় পড়েন। যেমন- খাওয়া-দাওয়া ঠিকঠাক নয়, ঘুম ব্যাহত এবং হাসি-ঠাট্টাও কিছুটা রুদ্ধ।

আক্কেল দাঁতের ব্যথা হালকা করার কিছু উপায়ও আছে। গরম লবণ পানিতে কুলকুল করা, ঠাণ্ডা কমপ্রেস, ব্যথার ঔষধ গ্রহণ এবং সঠিক দাঁতের পরিচর্যা-এসব কিছু কার্যকর পদ্ধতি। তবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো, ধৈর্য ধরে সময় দেওয়া। মনে রাখতে হবে, এই ছোট অতিথি একসময় বিদায় নেবে আর তার পরে মুখ ও রুটিন আবার স্বাভাবিক হবে।

ঝামেলা থেকে বাঁচতে অনেকেই আক্কেল দাঁত উঠার সঙ্গে সঙ্গে সেটি তুলে ফেলন, এতে কি ধরনের সুবিধা-অসুবিধা হতে পারে? এমন প্রশ্নের উত্তরে ডা. মতিউর জানান সুবিধা-অসুবিধার কথা, সঙ্গে দিয়েছেন কিছু কার্যকরী পরামর্শও।

সুবিধা
ব্যথা কমানো: যদি আক্কেল দাঁত অর্ধেক বের হয় বা সঠিকভাবে না ওঠে, তখন দাঁতের আঘাত, ইনফেকশন বা চোয়ালের ব্যথা হতে পারে। ফেলে দিলে এই ব্যথা কমে।
দাঁতের স্বাস্থ্য রক্ষা: সঠিকভাবে না ওঠা দাঁত পাশের দাঁতের সঙ্গে ঘষে ফেলে, যা ক্যাভিটি বা দাঁতের ক্ষয় করতে পারে। অপসারণ করলে পাশের দাঁত নিরাপদ থাকে।
ইনফেকশন প্রতিরোধ: আংশিকভাবে বের হওয়া আক্কেল দাঁতের চারপাশে খাবার জমে গেলে ইনফেকশন বা গাম ডিজিজ হতে পারে। ফেলে দিলে এটি রোধ হয়।
চোয়াল ও মুখের স্বাচ্ছন্দ্য বৃদ্ধি: মুখে জায়গা কম থাকলে দাঁত চাপ সৃষ্টি করে। অপসারণের পর চোয়াল আরামদায়ক হয়।
ভবিষ্যতের জটিলতা কমানো: যাদের আক্কেল দাঁত পরে সমস্যা করতে পারে (যেমন-কাঁধে ব্যথা, সাইনাস সমস্যা), আগেভাগে ফেলে দিলে ভবিষ্যতে বড় সমস্যার ঝুঁকি কমে।

আক্কেল দাঁত: মুখের ছোট অতিথি, বড় ঝামেলা

অসুবিধা
অপারেশনের ঝুঁকি: যেকোনো দাঁতের সার্জারির মতো, ব্লিডিং, ইনফেকশন, বা অ্যানেসথেসিয়ার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হতে পারে।
সুইলিং ও ব্যথা: অপারেশনের পর মুখ ফোলা, চোয়াল ব্যথা এবং অস্বস্তি হতে পারে।
খাবার সীমাবদ্ধতা: সার্জারির পর প্রথম কয়েকদিন মসৃণ খাবার (সুপ, পুডিং) খেতে হয়, শক্ত খাবার না খাওয়া ভালো।
সময় লাগে: সার্জারি এবং পুনরুদ্ধারে কিছুদিন সময় লাগে, তাই দৈনন্দিন রুটিন প্রভাবিত হতে পারে।
ক্লান্তি ও হালকা জ্বর: সার্জারির পর শরীর কিছুটা ক্লান্ত হতে পারে, কখনো কখনো হালকা জ্বরও দেখা দেয়।

পরামর্শ
>> সব আক্কেল দাঁত ফেলে দেওয়ার প্রয়োজন নেই। যদি দাঁত সঠিকভাবে উঠে যায়, ব্যথা না করে এবং পাশে দাঁতের ক্ষতি না করে, তখন ফেলে দেওয়ার প্রয়োজন নেই। তবে যদি দাঁত অর্ধেক বা কাত হয়ে বের হয়, ব্যথা বা ইনফেকশন হয়, ডেন্টিস্টের পরামর্শ অনুযায়ী অপসারণ করা উত্তম।

>> সার্জারির পর মুখ পরিষ্কার রাখা, গরম লবণজল দিয়ে কুলকুল করা, এবং ডেন্টিস্টের নির্দেশ মেনে চলা জরুরি।

একটি মজার বিষয় হলো, আক্কেল দাঁত মানুষকে জীবনকে আরও হাস্যোজ্জ্বল দৃষ্টিতে দেখতে শেখায়। ছোট সমস্যার জন্য জীবনকে হতাশ করার দরকার নেই। ব্যথার মধ্যে মজা খুঁজে নেওয়া, হাসি বজায় রাখা এবং নিজেকে ফানি পরিস্থিতিতে উপভোগ করার শিক্ষা দেয়। তাই, মুখের ছোট অতিথি হলেও তার গল্প জীবনকে করে রঙিন, মজার এবং স্মরণীয়।

সবশেষে বলা যায়, আক্কেল দাঁত আমাদের শেখায় ছোট সমস্যা হলেও তা বড় ঝামেলায় পরিণত হতে পারে। তাই ধৈর্য, সতর্কতা এবং হাসি-ঠাট্টা এক সঙ্গে থাকা জরুরি। মুখের ছোট অতিথি হলেও, তার অভিজ্ঞতা জীবনের ছোট মুহূর্তগুলোকে আরও আনন্দদায়ক ও শিক্ষণীয় করে তোলে। আপনি যদি কখনো মুখে আক্কেল দাঁতের উপস্থিতি অনুভব করেন, ভাববেন না শুধু ব্যথা। ভাবুন এটা একটি ছোট অতিথি, যা আসছে আপনাকে শেখানোর জন্য, ধৈর্য ধরতে, মজার গল্প তৈরি করতে এবং হাসতে শেখাতে।

জেএস/জেআইএম