গুলিবিদ্ধ হলে করণীয়, রক্তপাত থামানো থেকে নিরাপদ স্থান পর্যন্ত
ছবি: সংগৃহীত
গুলির আঘাত সেকেন্ডের ভেতর পরিস্থিতিকে ভয়াবহ করে তুলতে পারে। ক্ষত কোথায় লেগেছে, বুলেটের গতি ও ধরন আর কত দ্রুত চিকিৎসা শুরু হয়েছে এই তিনটি বিষয়ের ওপরই নির্ভর করে আহত ব্যক্তির বেঁচে থাকার সম্ভাবনা। তবে হাসপাতাল পৌঁছানোর আগের সময়টুকুতে কিছু সঠিক সিদ্ধান্ত ও পদক্ষেপ অনেক ক্ষেত্রেই প্রাণ রক্ষা করতে পারে।
প্রথম মুহূর্তে যে তিনটি কাজ জরুরি
গুলিবিদ্ধ হওয়ার ঘটনা ঘটলে আতঙ্কিত না হয়ে দ্রুত এই বিষয়গুলো নিশ্চিত করুন—
- আহত ব্যক্তি নিজে চলতে পারলে বা সাহায্যে সরানো সম্ভব হলে তাকে ঝুঁকিমুক্ত স্থানে নিয়ে যান। গুলির উৎস থেকে দূরে থাকা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।
- যদি ঘটনাটি দুর্ঘটনাজনিত হয়, তবে নিশ্চিত করুন অস্ত্রটি নিরাপদ অবস্থায় আছে এবং কেউ আর আঘাত পাবে না।
- নিরাপদ স্থানে পৌঁছেই ৯৯৯ নম্বরে ফোন করুন। অপারেটর যা নির্দেশ দেবেন, তা অনুসরণ করুন। যত দ্রুত সম্ভব হাসপাতালে নেওয়ার ব্যবস্থা করুন-এটাই বাঁচার সবচেয়ে কার্যকর উপায়।
সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ধাপ রক্তপাত নিয়ন্ত্রণ
- গুলির আঘাতে মৃত্যু হয় মূলত অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে। তাই প্রথম লক্ষ্য হবে রক্তপাত বন্ধ করা।
- যে জায়গা দিয়ে রক্ত বের হচ্ছে, সেখানে শক্তভাবে চাপ দিন। প্রয়োজন হলে হাঁটু বা শরীরের ওজন ব্যবহার করে চাপ বাড়াতে হতে পারে।
- পরিষ্কার কাপড়, গজ, তোয়ালে-হাতে যা পাওয়া যায় তা দিয়ে ক্ষত ঢেকে চেপে ধরুন। এতে রক্ত জমাট বাঁধতে সাহায্য করে।
আরও পড়ুন:
টুর্নিকেট ব্যবহার করলে সতর্ক থাকুন
পেশাদার টুর্নিকেট থাকলে ব্যবহার করা যেতে পারে, তবে ভুলভাবে লাগালে রক্তনালী ও টিস্যু মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। টুর্নিকেট না জানলে শুধু চাপ প্রয়োগই নিরাপদ।

যেসব ভুল একেবারেই করা যাবে না
- আহত ব্যক্তিকে পানি, খাবার বা পানীয় দেবেন না। এতে বমি বা শ্বাসনালীতে তরল ঢোকার ঝুঁকি থাকে।
- অকারণে পা বা মাথা উঁচু করবেন না। এতে ভেতরের রক্তক্ষরণ বাড়তে পারে, বিশেষ করে বুক বা পেটের আঘাতে।
- আহত ব্যক্তি সচেতন থাকলে যেভাবে আরাম পায় সেভাবে থাকতে দিন।
- অচেতন হলে তাকে রিকভারি পজিশনে (কাত হয়ে, এক পা ভাঁজ করে) রাখুন।
শরীরের কোন অংশে গুলি লাগলে কী করবেন
বুকে গুলি লাগলে: হৃদপিণ্ড, ফুসফুস বা বড় ধমনী ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। অনেক সময় ক্ষত দিয়ে বাতাস ঢুকে ফুসফুস বসে যায়। তাই ক্ষতস্থানে প্লাস্টিক বা পলিথিন জাতীয় কিছু দিয়ে ঢেকে দিন, যেন বাতাস ঢুকতে না পারে। শ্বাস নিতে সমস্যা বাড়লে ঢাকনাটি সাময়িকভাবে খুলে দিন।
পেটে গুলি লাগলে: ভেতরের অঙ্গ ক্ষতি, তীব্র রক্তপাত বা অন্ত্র ফুটো হওয়ার ঝুঁকি থাকে। তাই ক্ষতস্থানে চাপ দিন। পেট ফুলে উঠলে ক্ষত ছোট মনে করে ভুল করবেন না, এ ক্ষেত্রে দ্রুত অস্ত্রোপচার দরকার হতে পারে।
হাত বা পায়ে গুলি লাগলে: রক্তনালী, স্নায়ু বা হাড় ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। আহত অঙ্গ নড়াবেন না। শুধু রক্তপাত বন্ধের দিকে মনোযোগ দিন।
ঘাড় বা মেরুদণ্ডে গুলি লাগলে: স্থায়ী পক্ষাঘাতের ঝুঁকি থাকে। আহত ব্যক্তিকে একদম নড়াবেন না। ঘাড়ের সামনের দিকে আঘাত পেলে রক্তপাত থামাতে হালকা কিন্তু দৃঢ় চাপ দিন।
গুলির আঘাত কেন এত ভয়ংকর?
বুলেট শরীরে ঢুকে শুধু একটি ছিদ্র তৈরি করে না; ভেতরে গিয়ে ঘুরে ঘুরে একাধিক টিস্যু, অঙ্গ ও রক্তনালী ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে। ক্ষতির মাত্রা নির্ভর করে- গুলির গতি, বুলেটের আকার, শরীরের কোন অংশে আঘাত লেগেছে।
সুস্থ হতে কত সময় লাগে?
হালকা গুলিবিদ্ধ ক্ষত (যেখানে গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি) প্রায় ৭–১০ দিনের মধ্যে ভালো হতে পারে। তবে জটিল আঘাতে সুস্থ হতে মাসের পর মাস সময় লাগে। শারীরিক ক্ষতির পাশাপাশি মানসিক আঘাতও দীর্ঘস্থায়ী হতে পারে। ভয়, দুঃস্বপ্ন, অস্থিরতা, খাওয়ার অনীহা ইত্যাদি দেখা দিলে অবশ্যই চিকিৎসকের সাহায্য নিতে হবে। এগুলো কেবল জরুরি প্রাথমিক করণীয়। পূর্ণ চিকিৎসার জন্য দ্রুত বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের তত্ত্বাবধানে নেওয়াই একমাত্র সঠিক পথ।
তথ্যসূত্র: ভেরি ওয়েল হেলথ
জেএস/