সৌমেন্দ্র গোস্বামীর কবিতা
অর্ধাঙ্গিনী ও নিশীথের মনিশা

অর্ধাঙ্গিনী
আমি তেমন গুরুত্বপূর্ণ কেউ নই—তারপরও আমাকে হারাতে দিলে
তুমি হারাবে দুটি বিশ্বস্ত হাত—তুমি ব্যতীত দ্বিতীয় কাউকে যারা
স্পর্শ করতো না
হারাবে দুটো চোখ—আজীবন মুগ্ধ হয়ে যারা শুধু তোমাকেই দেখতো
আমাকে হয়তো চলে যেতে হবে দূরে বহুদূরে আজ অথবা কাল
প্রভূত্ব নয়—ভালোবাসা, আদর, হাসিমুখ, একটু প্রশ্রয়
আর শান্তির পরশ চেয়েছিলাম
সত্যি বলছি—তীরের ফলার মতো তোমার সুন্দর শরীর
প্রদীপের সলতের মতো টানাটানা চোখ
খ্যাতি বা ঐশ্বর্যের মোহ আমাকে টানে না
আমি মানুষকে মাপতে পারি সিঁকি আধুলির মতো সূক্ষ্ম সূক্ষ্ম করে
আমি জানি, কখনো আমার জন্যে সিঁথি ভরে সিঁদুর পরতে না তুমি
বসন্ত বিকেলে চুল বেঁধে দেওয়ার আবদার নিয়ে লেখার টেবিলে
আসতে না; বৃহস্পতিবার দুই পা লাল করে আলতা পরতে না
শাড়ি কেনার সময় জিজ্ঞেস করতে না, লাল না সবুজে ভালো মানাবে,
জামদানি নেব না সিল্ক?
কস্মিনকালেও জিজ্ঞেস করতে না, ‘বেশি দেরি হবে না, যাই, প্লিজ?’
তুমি আধুনিক, নতুন ভাবে নানা মতবাদে ভাবতে পারো
আমি পারি না—এ আমার দীনতা, সংকীর্ণতা
কিন্তু দাবি নিয়ে কখনো আর দাঁড়াবো না
দহনে দহনে হৃদয় রঞ্জিত হলেও মেসেঞ্জারে লিখবো না
আমার অর্ধাঙ্গিনী সিনেমা, নাটক বইয়ের আলাপে যেমন থাকবে
সিঙাড়া-সমুচাও ভেজে খাওয়াবে ছুটির দিনে
আমি খেতে ভালোবাসি, রাঁধতে শিখবে
মাঝরাতে ঘুম ভেঙে গেলে ক্ষিধে পায় পায়েস খেতে ইচ্ছে করে
টিফিন কৌটা ভরে পায়েস রাখবে ফ্রিজে
নিচু মানসিকতা—মেল ইগো ছাইপাস হাবিজাবি ভাবছো নিশ্চয়ই
কিছু যায় আসে না—এ দীনতা, সংকীর্ণতা কিংবা হলোই না হয়
মানুষ হিসেবে আমার নিচুতা
আমার কাছে সমঅধিকার মানে কথায় কথায় লড়াই করা নয়
স্বাধীনতা মানে আপন খেয়াল খুশি নয়
অর্ধাঙ্গিনী মানে—অর্ধেক আমি অর্ধেক আলমারি
অর্ধেক বিছানা সব অর্ধেক অর্ধেক তাঁর আর আমার
দুজনে মিলে এক—ঠিক নদী শাসনে বিভাজিত নদীর মতো
কখনো যে হাত ছাড়বে না;
যে আমার মুকুট হবে, স্বপ্নের সাহস হবে, চোখের জলের বন্ধু হবে।
***
নিশীথের মনিশা
যে রিকশাটা থামার কথা ছিল আজ—না থেমেই
টিএসসি থেকে বড় রাস্তার দিকে চলে গেছে
৭৯২ দিন, অনেক সময়!
নবান্ন উৎসব শেষে শহরে নতুন দুঃখের আনাগোনা হবে
শকুন উড়বে আকাশে;
যে কাকটা চোখে দেখে না বলে
দলপতি হতে পারেনি
মাতৃবরণে যুধিষ্ঠিরের মতো সেও রাজা হবে
হেমলক আদরে দূরের বনসাই
ফোটাবে ফুল
যৌনক্রীড়াহীন কোনো বনলতার কঙ্কালে
যে কথাটা বলার ছিল—না শুনেই
যারা চলে যায়
তারাও একদিন ফিরে আসে, ফিরতে হয়;
দেখা হলে বলবো সেদিন,
কবি হতে চেয়েও চাকরি করা কেন জরুরি…
***
নিশীথের মনিশা-২
নতুন কৃষ্ণচূড়ার আনন্দ নিয়ে এসেছো তুমি
এসেছো ফিরে
পুরোনো বালির গায়ে রোদ্দুর নিয়ে
চোখের মণি দুটো আরও কালো হয়েছে মনে হলো
কিংবা কাজলও হতে পারে চোখের নিচের
ব্লাশ করছিল;
আগের চেয়ে কি ওজন বেড়েছে, মোটা হয়েছো,
ডায়েট করছো না?
ফুল আঁকা সোনালি ব্যাগটা কি পুরোনো
বসন্ত, পহেলা বৈশাখ—ভালোবাসা দিবস
এত এত আনন্দ উৎসব পেরোলো
নতুন কি কেনোনি কিছু—গহনা বানাওনি নতুন?
পুরোনো নাকফুল, ঝুমকো দুটোও পুরোনো!
যে ছেলেটা বসে ছিল পাশে, যার কাঁধে মাথা রেখেছিলে
আমার চেয়ে সুপুরুষ নয়;
বিলক্ষণ বলে দিতে পারি, কবিতা লিখতে জানে না
গান গাইতে পারে না
একাডেমিক প্রোফাইলও আমার চেয়ে ঢের ভালো নয়
কিন্তু তুমি ভালোবাসো, এই তার পূর্ণতা
আমার পরাজয়, আমি তো তোমাকে পাচ্ছি না।
এসইউ/এএসএম