দেবব্রত চক্রবর্তী বিষ্ণুর গুচ্ছ কবিতা
আমাকে নাও, আমি যাব

আমাকে নাও, আমি যাব
(শ্রদ্ধাস্পদ ডা. হরিপদ রায়কে)
আমাকে নাও, আমি যাব; আর পারছি না দুর্বহ ভার বইতে
এখানে এখন দুঃখ-অনুতাপ তাদের সংসার ছড়িয়েছে চারদিকে
দুঃখের-অনুতাপের কষ্টগুলো ফেরি করে বেচতে যাব
অন্য কোনো সংসারে অনেক দামে।
আমাকে নাও, এখনই নাও; তুমি অন্তত সদয় হও
জীবনের গলিতে জীবনের এত ক্ষয় আর দেখতে পারছি না
অনিশ্চয়তার ছায়া কেবল প্রলম্বিত হচ্ছে ক্ষিপ্র গতিতে
এখানে এখন জীবনের দাম বড্ড কম, বরং বলা ভালো সবচেয়ে কম।
তুমি একদিন আমাকে বলেছিলে, সর্বংসহা হও
বলেছিলে, যদি তা পারো দেখবে কষ্ট আর স্পর্শ করবে না
আমি তোমাকে বলছি, এসব সে রকম কষ্ট নয়; অন্যরকম
তোমাকে আরও বলছি, কোনো প্রশ্ন করো না; আমাকে নাও এখনই।
সব মেরুকরণের সমীকরণ এক নয়, সময় ও ঘটনার গর্ভে জন্ম নেওয়া
ধ্বনি-প্রতিধ্বনির অদৃশ্য কম্পনে পাল্টে যায় জীবনের সমীকরণ-মেরুকরণ
তুমি আমাকে আর কি সান্ত্বনা দেবে, আর কি শোনাবে অভয় বাণী
আর কিচ্ছু শুনবো না, যাব এখনই; আমি যে আজ নিরাশ্রয়ী গৃহী।
অতলান্ত স্মৃতি
(জীবনযোদ্ধা নাজনীন নাহারকে)
তোমার দীর্ঘ শ্বাসের ভাঁজে ভাঁজে দাগ কেটে যাওয়া রেখাগুলো
ঢুকে গেছে আমার অন্তঃপুরে জীবাশ্মের মতো
কিছু দুঃখের কোনো অর্থ হয় না, কোনো ভাষা হয় না
হয় না কোনো কারণও , এগুলো সংজ্ঞাহীন দুঃখ।
তুমি-আমি তো থাকি পাশাপাশি তবুও কত যেন অলীক দূরত্ব
তোমার দীর্ঘশাস একটু ছুয়ে দেখার অপেক্ষা আমার অনন্তকালের
বহুবার তোমাকে ডেকেছি , বলেছি এসো ; দ্বিধাহীনভাবে এসো
তোমার দীর্ঘ শ্বাসের ভাঁজে ভাঁজে প্রদীপ জ্বালি।
প্রতিবারই তুমি খুব সন্তর্পণে এড়িয়ে গেছো আমার আকুল আহ্বান
বলেছো, কিছু কিছু বিষয় চিরদিন নীরবে রয়ে যায় দীর্ঘ শ্বাসের ভাঁজে
এর কোনো ভাগ কাউকে দেওয়া যায় না , দেওয়া উচিত না
তোমাকে ছাড়াই আমার কেটে গেলো যুগ-যুগান্তর !
আমাদের পাশের ধূধূ করা মাঠ ঘেঁষে বয়ে চলা যৌবনা নদী
দেখো কেমন শ্রীহীন হয়ে গেলো , এখন নদীটি খুব ম্রিয়মাণ
তুমি বললে , 'এ তো অন্য কিছু নয়; আমার দীর্ঘ শ্বাসের বর্জ্য তার বুকজুড়ে'
আর তখনই স্মৃতির অতলান্ত থেকে ভেসে এল হৃদয় বিদীর্ণ করা ক্ষত।
কী ভীষণ আকুলতা
(স্মৃতি চক্রবর্তী, সহধর্মিণীকে)
তোমার অন্তঃপুরে তরঙ্গয়ায়িত নদীতে কতবার ডুবে গেছি
কী ভীষণ অকূল পাথারের মতো মনে হয়েছে প্রতিবারই
আবার যখন ডুবে যাব তখন বুকের গহিন জুড়ে
আমার নিঃশব্দ সময় , নির্জন আকুতি স্পর্শ করে বাজিয়েও বিরহী সেতার।
মরে যাওয়ার আগেও মানুষ বহুভাবে মরে একান্ত গোপনে
মুক্তো তো জানে না ঝিনুক বুকে কী বেদনা পুষে
কতটুকু শূন্য হয়ে গেলে পূর্ণ হওয়ার আর কোনো পথ থাকে না
সকালের কোমল রোদে তখন যেন রাত নেমে আসে।
তোমার আঙ্গুলগুলো দিয়ে নানারকম অলংকার বানাতে চেয়েছি কতবার
এর হিসাব তুমি জানো না, জানবেও না; কোনোদিন না
যদি দিতে চাও ততটুকুই দিও যতটুকু দিলে আর কিছু চাইবার থাকবে না
তোমাকে ভুলে অন্য কাউকে খুঁজতে চাই না, কখনো না।
তুমিময় ভীষণ আকুলতায় সময়ের আয়না জুড়ে ভাসে কত নীল পদ্ম
তুমি কি জানো ক্লিওপেট্রা-সিজারের প্রণয় অভিষেক হয়েছিল নীল পদ্ম দিয়েই
রামও অকাল বোধনে দুর্গাকে ১০৮ নীল পদ্ম দিয়ে করেছিলেন আরাধনা
আমিও বেদনার জীবন ভেঙ্গে তোমার চোখেই গচ্ছিত রেখেছি অনাবিল স্বপ্ন।
এইচআর/এমএস