ভিডিও EN
  1. Home/
  2. সাহিত্য

নাহিদ হোসাইনের গল্প

এক আকাশের নিচে

সাহিত্য ডেস্ক | প্রকাশিত: ০১:১৫ পিএম, ৩০ আগস্ট ২০২৫

‘তুমি কি শুনতে পাচ্ছো?’ আবিদের তৈরি প্যারালাল ব্রিজ ডিভাইস থেকে শব্দটি এলো। প্রথমে মনে হলো ভুল শুনছে সে। এরপর শুনলো ‘আমি সায়রা বলছি’।

আবিদ একজন কোয়ান্টাম রিসার্চার। গত কয়েক মাস ধরে সে চেষ্টা করছে মানুষের মনের তরঙ্গ ও নিউরন কোড ব্যবহার করে
অন্য আরেকটি পৃথিবীর মানুষের সাথে যোগাযোগ করার। ডিভাইস থেকে আসা ভয়েসের কোডের সাথে ওর পৃথিবীর কারও মিল নেই। প্রতিদিন একই সময়ে ডিভাইস থেকে নতুন নতুন প্রশ্ন করা হয়, প্রাথমিকভাবে সে ধরে নিলো এটি অন্য কোনো ইউনিভার্সের।
‘সায়রা, তুমি কেমন আছো? আমি আবিদ।’ আবিদ সংকেত পাঠায়।

সায়রা একজন লেখক। তার গল্পগুলো জীবনের সাথে মিলে যায় বলে খুব অল্প সময়েই পাঠকপ্রিয়তা অর্জন করে। বাবার অব্যবহৃত ওয়াকিটকি থেকে একদিন কিছু শব্দ আসে। প্রতিদিন রাত দুইটায় ডিভাইসটি অ্যাকটিভ হয়। প্রথমে ভয় পেলেও সায়রার নিঃসঙ্গ জীবনের একমাত্র সঙ্গী হয়ে ওঠে।

আবিদের পৃথিবীর প্রযুক্তি অনেক আগেই সময়কে স্পর্শ করে ফেলেছে। চারপাশের হাইটেক প্রযুক্তির ভিড়ে সায়রার উপস্থিতি তার মনে নতুন একটি অনুভূতির জন্ম নেয়। কিউরেটা বলল, ‘এই অনুভূতিকে একসময় ভালোবাসা বলা হতো।’ নতুন অনুভূতিটাকে যত্ন করে মেমোরিতে রেখে দিলো আবিদ।

‘একদিন তোমাকে আমাদের পৃথিবীতে নিয়ে আসবো, এখানে দুইটা চাঁদ ওঠে। একটা গোল সাদা চাঁদ, আরেকটি লাল।’ বলল আবিদ।
‘তোমাদের পৃথিবীতে কি বৃষ্টি হয়?’ জানতে চায় সায়রা।
‘বৃষ্টি কী?’

সঙ্গে সঙ্গে কিউরেটার স্ক্রিনে ভেসে উঠলো বৃষ্টি পড়ার সুন্দর মুহূর্ত। আবিদ অবাক হয়ে বলে, ‘এত সুন্দর হয় বৃষ্টি! কিন্তু আফসোস আমাদের গ্রহে বৃষ্টি নেই, সূর্যাস্ত নেই। এক কৃত্রিম আলো চারপাশ ঘিরে রেখেছে।’

মৃদু হেসে সায়রা বলে, ‘পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দর জিনিস হলো বৃষ্টি। রিমঝিম শব্দে মনে একটা সুর তৈরি করে।’
‘আমরা একদিন নিশ্চয়ই বৃষ্টিতে ভিজবো।’

আবিদ চেষ্টা করে একটা ওয়ার্মহোল জেনারেটর তৈরি করার, যা দিয়ে দুটো ইউনিভার্স সংযুক্ত করা যাবে। ডিভাইসটি তৈরি হয়ে গেলেও কাজ হচ্ছে না। কারণ সায়রার পৃথিবী ৯৯২ কয়েক হাজার আলোকবর্ষ দূরে।

‘আমার ভালোবাসা অন্য এক ইউনিভার্সে’ শিরোনামে সায়রার বইটি ২০০৭ সালের বইমেলায় বেস্ট সেলার হয়। চারদিক থেকে অভিনন্দন বার্তা আসতে থাকে। শুধু আসেনি আবিদের। কয়েকদিন ধরে আবিদের সঙ্গে যোগাযোগ নেই সায়রার। সন্ধ্যার আকাশে চাঁদের দিকে তাকিয়ে সায়রা বলে, ‘এই চাঁদ, আবিদের আকাশের দুইটা চাঁদকে বলো না আমার সাথে যেন আবিদ যোগাযোগ করে, বলবে তো?’

বেশ কিছুদিন পর কিউরেটার স্ক্রিনে ভেসে ওঠে, কাছাকাছি আসবে ইউনিভার্স। কিছু সময়ের জন্য ইউনিভার্সগুলো পরস্পরের কাছাকাছি আসবে। তারপর আবার দূরে সরে যাবে। প্যারালাল ব্রিজ ডিভাইসটি হাতে নিয়ে আবিদ সংকেত পাঠায়, ‘সায়রা আমি আসছি’।

নির্ধারিত রাতে আবিদ যন্ত্র চালু করে। চারপাশে ঝলসে ওঠে নীলচে আলো। তার সামনের বাতাস কাঁপতে শুরু করে। এক মুহূর্তে সে চোখে দেখে—অন্য এক নীলচে আকাশ আর দূরে বারান্দায় দাঁড়িয়ে থাকা এক মেয়ে, যার হাতে পুরোনো এক ওয়াকিটকি। আবিদ এগিয়ে যায়।

‘এক আকাশের নিচে’ লেখক আবিদ সায়রা রহমান। ২০০৮ সালের বইমেলায় বইটি বেশ পাঠকপ্রিয়তা অর্জন করে। বইটির প্রচ্ছদের মতোই সায়রা এখন আবিদের হাত ধরে আছে। এক আকাশের নিচের চাঁদের আলো এসে পড়ছে তাদের ওপর।

এসইউ/এএসএম

আরও পড়ুন