ভিডিও EN
  1. Home/
  2. সাহিত্য

দুই বন্ধু এক দেশ: সুখপাঠ্য একাত্তরের বাংলাদেশ

ডা. মামুন আল মাহতাব স্বপ্নীল | প্রকাশিত: ০২:২৫ পিএম, ১৬ জুন ২০২২

বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের যে বিরাট ক্যানভাস তা সৃষ্টি হয়েছে অনেক ছোট ছোট তুলির খোচায়। অনেকের অনেক ছোট-বড় অবদান আমাদের ঘটনাবহুল মুক্তিযুদ্ধ। মুক্তিযুদ্ধের এই ক্যানভ্যাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ সংযোজন দ্য কনসার্ট ফর বাংলাদেশ। একাত্তরের পহেলা আগস্ট নিউ ইয়র্কের ম্যাডিসন গার্ডেন স্কয়ারে আজকের বাংলাদেশের নড়াইলের সন্তান পণ্ডিত রবিশঙ্করের উদ্যোগে আয়োজিত হয়েছিল কনসার্টটি। তার আহ্বানে সেই কনসার্টে যোগ দিয়েছিলেন জর্জ হ্যারিসন।

দর্শকদের অপ্রত্যাশিত চাপ আর প্রত্যাশা পূরণে একইদিনে পরপর দু’বার আয়োজিত হয়েছিল কনসার্টটি। আয়োজকদের প্রত্যাশা ছাপিয়ে সংগৃহীত হয়েছিল প্রায় আড়াই লাখ ডলার। যা পরে ইউনিসেফের মাধ্যমে ভারতে আশ্রয় নেওয়া বাংলাদেশি শরণার্থীদের কল্যাণে ব্যয় করা হয়েছিল। দু’জন ভিনদেশি মানুষ মানবিকতার বিপর্যয়ে সাড়া দিয়ে অনন্য নিদর্শন স্থাপন করেছিলেন ‘দ্য কনসার্ট ফর বাংলাদেশ’ আয়োজনের মাধ্যমে। তারা একইসাথে অসীম সাহসিকতারও পরিচয় দিয়েছিলেন। কারণ কনসার্টের শিরোনামে পূর্ব পাকিস্তান না লিখে লেখা হয়েছিল বাংলাদেশ।

বিজ্ঞাপন

বিজ্ঞাপন

আবু সাঈদ ও প্রিয়জিৎ দেবসরকার ভৌগলিকভাবে সহস্রাধিক মাইলের ব্যবধানে অবস্থান করলেও সেদিনের দুই বন্ধু পণ্ডিত রবিশঙ্কর ও জর্জ হ্যারিসনের মতোই তারাও এক হয়েছিলেন ভৌগলিক দূরত্বকে জয় করে দুই মহান বন্ধুর মহান কীর্তিকে আজকের প্রজন্মের সামনে তুলে ধরতে। তাদেরই যৌথ প্রযোজনায় প্রকাশিত হচ্ছে ‘দ্য কনসার্ট ফর বাংলাদেশ, দুই বন্ধু এক দেশ’ বইটির প্রকাশক স্বপ্ন ’৭১ প্রকাশন।

নিয়াজ চৌধুরী তুলির করা প্রচ্ছদে মুন্সিয়ানার ছাপ পণ্ডিত রবিশঙ্কর ও জর্জ হ্যারিসনের প্রচ্ছদে দারুণ উপস্থাপনা বইটির প্রতি দৃষ্টি আকৃষ্ট করে। পাতা উল্টাতে পাঠককে করে তোলে আগ্রহী। তিনটি অধ্যায়ে বিন্যাস্ত বইটিতে দ্য কনসার্ট ফর বাংলাদেশ আয়োজনের প্রেক্ষাপট, ফলাফল ও প্রতিক্রিয়া যেমন তুলে ধরা হয়েছে সবিস্তারে; তেমনই কনসার্ট ফর বাংলাদেশে অংশগ্রহণকারী অন্যান্য শিল্পীদেরও পরিচিতি সেখানে স্থান পেয়েছে।

বিজ্ঞাপন

বিজ্ঞাপন

দ্য কনসার্ট ফর বাংলাদেশের কথা আমরা যারা জানি, তারা শুধু মনে রেখেছি পণ্ডিত রবিশঙ্কর ও জর্জ হ্যারিসনকে। কিন্তু সফল এই কনসার্টের পেছনে যে বব ডিলন, আল্লা রাখা খান, আলী আকবর খান, রিঙ্গু স্টার, বিলি প্রিস্টন, এরিক ক্ল্যাপটন এমন আরও অনেকে সক্রিয়ভাবে অংশ নিয়েছিলেন, তা আমাদের বেশিরভাগের কাছে অজানা। বইটিতে আছে তাদের পরিচিতিও। যেমন আছে পণ্ডিত রবিশঙ্কর ও জর্জ হ্যারিসনের কনসার্ট সম্বন্ধে ব্যক্তিগত উপলব্ধি, যা পরবর্তী প্রকাশিত ও প্রচারিত তাদের সাক্ষাৎকার থেকে নেওয়া।

বইটিতে আরও সংযোজিত হয়েছে দ্য কনসার্ট ফর বাংলাদেশের পোস্টারসহ বাংলাদেশের বেশ কিছু ছবিও। বইটির প্রথম অধ্যায় একাত্তরের নয় মাস এবং তার পূর্ব ও পরবর্তী ঘটনা প্রবাহের চুম্বক অংশগুলো লিপিবদ্ধ করার প্রয়াসও প্রশংসনীয়। এখানে যেমন অপারেশন সার্চ লাইটের কথা উঠে এসেছে; তেমনই এসেছে অপারেশন গ্রেট ফ্লাই ইনের কথাও।

বিজ্ঞাপন

আমরা হয়তো অনেকেই জানি না, ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ থেকে ৬ এপ্রিল পর্যন্ত পাকিস্তান তার বেসামরিক ও সামরিক বিমান পরিবহনের প্রায় পুরোটুকু সক্ষমতা ব্যবহার করে পশ্চিম পাকিস্তান থেকে পাঁচ বিগ্রেড সেনা বাংলাদেশে উড়িয়ে এনেছিল। বাংলাদেশে বাঙালি নিধনযজ্ঞ সুচারুভাবে সফল করার জন্য। এককথায় আমার কাছে ‘দ্য কনসার্ট ফর বাংলাদেশ, দুই বন্ধু এক দেশ; কয়েক ঘণ্টায় সুখপাঠ্য একাত্তরের বাংলাদেশ।

এসইউ/এএসএম

আরও পড়ুন

বিজ্ঞাপন