ভিডিও EN
  1. Home/
  2. সাহিত্য

হাবিবুর রহমানের তিনটি কবিতা

সাহিত্য ডেস্ক | প্রকাশিত: ০১:২৪ পিএম, ২০ জানুয়ারি ২০২৩

কদম ফুল

হাসনাহেনা ফোটে কেবল রাতে
গোলাপ ছিঁড়তে কাঁটা বিঁধে হাতে।
শিয়াল কাঁটার ফুলটা ভীষণ ভালো
তুলতে তো সেই কাঁটাই কাল হলো।

দোলনচাঁপা দুঃখ পুষে রাখে
শিমুল গাছে ভূতেরা সব থাকে
তখন থেকে ফুলের প্রতি ভয়
ফুলগুলো সব কেমন যেন হয়।

ঘাসফুলেদের সুবাস পাই না মোটে
সোনালুটা দেখতে ভালো বটে।
কাঠগোলাপে ভীষণ মাথা ধরে
কৃষ্ণচূড়া রক্ত হয়ে ঝরে।

টবে তোমার লজ্জাবতী ফোটে
আমার বুকে দখিন হাওয়া ছোটে।
কুসুম চিনতে হয় না এখন ভুল
জুঁই-কামিনী সত্যি ভালো ফুল।

তখন থেকে ফুলের সাথে ভাব
গন্ধরাজটা সত্যি লা-জবাব।
বর্ষাকালে ঝিলের ভীষণ সুখ
লাল শালুকে রঙিন সারা বুক।

তুমি হঠাৎ কদম নিয়ে হাতে
মিষ্টি হেসে যাচ্ছ অচিন পথে।
ফুলটা ভালো, ভীষণ সাদাসিধে
নেই কাঁটা তাও কাঁটার মতো বিঁধে।

সেদিন থেকে প্রিয় কদম ফুল
আমিও এখন কদমে মশগুল।

****

মড়ক

মস্তিষ্কে শুকনো পাতার খেলা।
পায়ের তলায় পুরোনো রক্তের ছাপ।
চোখের সামনে লাশ কাটা ঘর।
ছুটে আসছে গাড়ি
ওপাশে শ্মশান-কবর।

শুনতে পাচ্ছো?
তোমার মারণাস্ত্র কাজে আসছে না।
সীমান্তের কাঁটাতার তোমার ঘরের দেওয়াল,
এঘরে তুমি আর ওঘরে তোমার প্রিয়জন।
তোমার কি ভয় হচ্ছে, বলো ভয় হচ্ছে?

একটি কফিন তোমার অপেক্ষায়।
একটি কবর তোমার অপেক্ষায়।
খানিক বাদেই আসবে লাশবাহী গাড়ি।
কার বুকে ঠেকাবে মেশিনগান?
কার বুকে চালাবে গুলি?

যে তোমাকে বাঁচাতে পারতো
সে মরছে তোমারি পাতানো খেলায়।
যুদ্ধে অথবা ক্ষুধায়।

তবু একদিন থেমে গেলে মহামারি,
থামবে না জানি যুদ্ধের নেশা
মানুষের আহাজারি।
থামবে না জানি ক্ষুধা-দারিদ্র্য
থামবে না জানি ভয়।
মানব কলমে দানব অতীত
সেই মত কথা কয়।

জানি বেঁচে গেলে ভুলে যাবে সব
মানবধর্ম এই,
পৃথিবীতে আজও মানুষের চেয়ে বড় জানোয়ার নেই।

****

পরিযায়ীর সাধ মেটে না

দেখছি দূরের সুনীল আকাশ দেখছি মেঘের কালো
সোনার আলো চিলের ডানায় জগত ঘুরে এলো।
এমনি দিনে হঠাৎ প্রাণে বিষাদ-বীণা বাজে,
একই রকম আকাশ তবু একলা কেন লাগে?
কেন আমি নিজের মাঝে নিজেই ভীষণ পর?
কোথায় আমার স্বর্গভূমি সোনাগাজীর চর?

সাগরজলের লোনা ঢেউ ডাকছে ফিরে আয়
কেওড়া বনের সবুজ মায়া বিলীন হয়ে যায়।
থেকে থেকে ফেনী নদীর ভাঙন ধরে প্রাণে
পরিযায়ী জীবন বড় পোড়ায় ক্ষণে ক্ষণে।

এমনি দিনে চিলের মতো গজায় যদি ডানা
অমনি আবার আসবো ফিরে যে পথ চিরচেনা।
আসবো ফিরে দখিন চরে পূর্ণিমার একরাতে
কাকতাড়ুয়া ভূতের মতো হলুদ সরষে ক্ষেতে।
ফিরবো আবার নিজের বাড়ি নিজের বসতঘর
কেওড়া বনে শুনতে যাবো অচিন পাখির স্বর।
দেখবো আবার দু’চোখজুড়ে বনফুলের দেশ
রাত-বিরাতে বসবো গিয়ে যেথায় পথের শেষ।
চেনা সুরে পথিক বাউল ধরবে প্রাণের গান
জেলের জালে রুপোর মতো সুখের বুনো তান।

চেনা পথের চেনা পথিক চেনা লোকালয়
যেদিক ফিরি সবই যেন আপন মনে হয়।
স্বপ্নগুলোয় নিত্যদিনই গজায় নতুন ডানা
রাত পোহালেই পরিযায়ীর আঁধার ঘোচে না।
শেষ বিকেলে এই অভিলাষ এটুকু সাধ থাক
পরিযায়ীর পরান বায়ু বঙ্গেতে ফুরাক।

এসইউ/এমএস

আরও পড়ুন