ভিডিও EN
  1. Home/
  2. সাহিত্য

উত্তর-ঔপনিবেশিক নিসর্গতত্ত্ব ও আমিনুল ইসলামের কবিতা: শেষ পর্ব

সাহিত্য ডেস্ক | প্রকাশিত: ০৩:০২ পিএম, ২৬ জানুয়ারি ২০২৩

নাজিব ওয়াদুদ

আমিনুল ইসলাম মূলত প্রেমের কবি। কিন্তু একইসঙ্গে এ কথাও মনে রাখতে হবে যে, তার প্রেমের কবিতাও উপনিবেশবাদ-বিরোধী চেতনায় উদ্বুদ্ধ। তার ‘আমাদের ভালোবাসার দিন’, ‘তৃতীয় বিশ্ব’, ‘তবুও চাই ভালেবাসা’, ‘ভালোবাসার চোখ’ প্রভৃতি কবিতায় উত্তর-উপনিবেশবাদী মনোভাব স্পষ্টভাবে ফুটে উঠেছে। পশ্চিমাদের কাছে প্রেম-ভালোবাসা-স্নেহ-মমতা-পারিবারিক বন্ধন এগুলো এখন অতীতের বস্তাপচা বিষয়। তারা ৩৬৫ দিনের মধ্যে একদিনকে বেছে নিয়েছে ভালোবাসার দিন (ভ্যালেন্টাইন্স ডে) দিন হিসেবে। কিন্তু প্রাচ্যে এখনো প্রতিটি দিনই ভালোবাসার দিন, প্রেম-ভালোবাসা, স্নেহ-মমতা, পারিবারিক বন্ধন আজও প্রবহমান জীবনযাপনের নৈমিত্তিক চর্যায়। কবির পর্যবেক্ষণ—
আমাদের রাত আমাদের যত দিন
হয়তো কেবলি সময়ের সিলেবাস
প্রতিটি মিনিট সেকেন্ড অথবা ক্ষণ
উষ্ণ করিছে প্রেম-প্রণয়ের শ্বাস।
আমাদের নেই পেট্রিয়টের গোলা
বি-ফিফটি-টু লাগবে না কোনো কাজে
অধরে অধর আমরা রচিলে মিনার
টুইন টাওয়ারও নুয়ে আসে ঘনলাজে।
আমরা মানি না ভালোবাসাহীন দিন
আমরা মানি না ভালোবাসাহীন রাত
বসন্ত অধবা সিডর ঘূর্ণিঝড়ে
প্রেমের বাঁধনে আমরা বেঁধেছি হাত।
(আমাদের ভালেবাসার দিন: কুয়াশার বর্ণমালা)

আমিনুল ইসলাম উপনিবেশবাদ-বিরোধী, তাই বলে পশ্চিমা সভ্যতার প্রতি কবি কোনো বিদ্বেষ নেই তার। সেই সভ্যতার যা-কিছু ভালো তা তিনি সন্তুষ্টচিত্তে গ্রহণ করতে প্রস্তুত। তার অপছন্দ কেবল তার সাম্রাজ্যবাদী-বর্ণবাদী-উপনিবেশবাদী চারিত্র্য। তিনি পশ্চিমকে এশিয়া-আফ্রিকার এই ভালোবাসার মনটাকে আতস্থ করে নিতে বলেছেন। তাতে তারাও অন্তরের দিক থেকে সমৃদ্ধ হতে পারবে এবং প্রতীচ্য ও প্রাচ্যের মধ্যে সৃষ্ট অথবা কৃত্রিমভাবে রচিত কথিত ‘সভ্যতার সংকট’ দূর হবে। তিনি বলেন—
যারা একবার দেখেছে—তোমার মেঘ-ছোঁয়া চুল, চাঁদ-ছোঁয়া ঠোঁট,
কিংবা যারা দেখেছে তোমার প্রভাতী চোখ অথবা গোধুলি অধর-
তারা জানে- ঐশ্বর্যের কোনও অভাব নেই; অথচ এতটুকু হাসি
দিয়েই কেন যে কেড়ে নিতে চাও সুদে-মূলে প্রণয়ের পুঁজি—
ছোট এ হৃদয়ের যাবতীয় খনি—তা নিয়ে ভাবতে গেলে বিস্ময় জাগে।
আর যদি শেষাবধি তা-ই ঘটে,—তবে শূন্য হৃদয়ে বাঁচবো কী করে!
আবার আমি মরে গেলে সে-ক্ষতিটাও যে তোমারই—একথা রটিয়ে
রাখো—অনুগত বাতাসে। তাই বুঝি আমার মৃত্যুর বিপক্ষে তুমি—
যেমন শোষিত শ্রমিকের ধ্বংসের বিপক্ষে রক্তচোষা শোষকের দল!

তোমাকে ভালো লাগে বলেই এসব কথা বলি। হে ধনিনী, তোমাতে
মিশিয়ে নাও—এক আকাশ ম্যান্ডেলার মন; ভরে তো আছোই;
উপচে উঠবে তুমি! তখন—হে আমার সুপারপাওয়ার অব লাভ,
সাম্রাজ্যবাদীর কায়দায়—তোমাকে নিতে হবে না আর কোনো কিছুই।
(ভালোবাসার চোখ: অগ্রন্থিত)

আমিনুল ইসলামের অনেকগুলো কবিতায় উপনিবেশবাদবিরোধী বক্তব্য রয়েছে। এসব কবিতায় উপনিবেশবাদের কুফল, ঔপনিবেশিকের কূট-কায়দা, উপনিবেশিতের পরাজিত মনোভাব, প্রতিবাদ-সংগ্রাম সবকিছুর ছবি রয়েছে। সুতরাং তাকে উত্তর-ঔপনিবেশিক তত্ত্বের অনুগামী হিসেবে চিত্রিত করা যায়। কিন্তু তিনি একথা জানেন ও মানেন যে, ঔপনিবেশিকতা কেবল মানুষের ওপরই নিপীড়ন চালায় না, তার আগ্রাসন প্রকৃতিকেও ধ্বংস করে। বিশ্বব্যাপী ক্রমবর্ধমান পরিবেশ-সংকটের মূল কারণ ইউরো-মার্কিন চক্রের মাত্রারিক্ত লোভ ও লালসা। তারা পারমাণবিক বোমা, হাইড্রোজেন বোমা, নাপাম বোমা, কার্পেট বোমা এবং নানাবিধ আন্তঃমহাদেশীয় ক্ষেপণাস্ত্র তৈরি করছে এবং তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোয় নিক্ষেপ করছে, চালাচ্ছে ধ্বংসলীলা। বারুদে বিষাক্ত হয়ে উঠছে আকাশ-বাতাস-মৃত্তিকা-জল। আমিনুল ইসলামের কবিতা সেইসব ছবিকে ধারণ করেছে দুঃখ এবং ক্ষোভের সঙ্গে—
এ কোন্ বাতাস বলো ফাগুনে হলুদ ইস্তেহার
বোঝে নাকো ঘাসফুল এ কেমন অকালের ভাও
শিমুল পলাশ বোবা হাতে নিয়ে ম্লান এজাহার
বাগানে বাগানে পড়ে গেছে কোন্ যমছোঁয়া বাও!
বাতাসে গ্যাসের চুলো—পুড়ে ওঠে শ্বেত অম্লজান
শূন্যের চাদরে দ্যাখো বেড়ে যায় ছিদ্র আর ক্ষত
নীলিমা বিবর্ণ তাই থেমে যায় বলাকার গান
জলের শরীর সেও হয়ে ওঠে বারুদে বিক্ষত।
(ভালোবাসার পদাবলী: শরতের ট্রেন শ্রাবণের লাগেজ)
কিংবা—
ইঁদুর উধাও কেন—পেঁচারা পায়নি ভেবে শেষ
পাখি নয়,—ধানকাটা মাঠে ওড়ে বিষমাখা ঘ্রাণ
ক্ষীণ স্রোত, ঢেউ নেই, আছে শুধু বেদনার রেশ
সভ্যতার ধোঁয়া টেনে কেশে ওঠে সমুদ্রের প্রাণ।
(শীত এসে কড়া নাড়ে ধোঁয়া ওঠা হেমন্তের দ্বারে: শরতের ট্রেন শ্রাবণের লাগেজ)

তিনি সভ্যতা, আধুনিকতা বা প্রগতিশীলতার নামে পশ্চিমা উপনিবেশবাদীদের আগ্রাসী অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক ও সামরিক নীতি ও তৎপরতা সম্পর্কে প্রাচ্যবাসীকে সচেতন করে দিতে চেয়েছেন। উপনিবেশবাদীরা তাদের সাম্রাজ্যবাদী নীতি বাস্তবায়নের জন্য তৈরি করছে মারণাস্ত্র, সেই লোভের পথ ধরেই চলছে তথাকথিত শিল্প-প্রতিযোগিতা আর ধ্বংস হচ্ছে পরিবেশ ও প্রকৃতি। আমিনুল ইসলামের কবিতায় তার চিত্র প্রকাশ পেয়েছে এইভাবে—
দ্যাখো—ঈগল কেমন তার নখরপ্রযত্নে টানে
আকাশের নীল!
তাহলে যে বলাকারা!
হংসমিথুন আর মেলোডি ডুয়েট?
উপরে তাকানো মানা।
তাই যদি হয়—
কবিরা কোথায় পবে আরাধ্য উপমা?
মৌসুমে কি বৃষ্টি হবে?
নাকি ঐ পাখার আঘাতে ছিঁড়ে যাবে
মৌসুমের ছয়রঙা ব্যাকরণ!
কুরলের চঞ্চু হতে নেমে এলে
ফোঁটা ফোঁটা লালসার লালা-
কে বাঁচাবে নৃত্যপ্রিয় বেনেবউয়ের অভয়-অরণ্য
কিংবা পাবদা-চাপিলা-পুঁটির রুপালি শহর?

দ্যাখো—বেগ বাড়ে সর্বগ্রাসী বাণিজ্যবায়ুর
আর এসকল প্রশ্ন বাজে
রূপশালী ধানের ডগায়—বটপাতার হাসিমাখা রূপকথার মাঠে।
(আগ্রাসন: জলচিঠি নীলস্বপ্নের দুয়ার)

আমিনুল ইসলাম উপনিবেশবাদী-সাম্রাজ্যবাদী শিল্প-তৎপরতা আর সামরিক শিল্পনীতিকে ‘বিষের বাঁশি’ বলে আখ্যায়িত করেছেন। যে বাঁশির সুরে ও শব্দে প্রকৃতি ও পরিবেশে ছড়িয়ে পড়ছে বিষ এবং ধ্বংসের জীবাণু—
বাঁশি বাজে সর্বনাশের বাঁশি বাজে ভাঙার
বাঁশি বাজে আক্রমণের বাঁশি বাজে হানার
বাঁশির সুরে গলে পড়ে মেরুবাসী তুষার
বাঁশির সুরে ফুলে ওঠে কেয়ামতী জোয়ার
বিষের বাঁশি ছিদ্র করে শূন্যে ঝোলা জাল
ছিদ্র দেখে বৃক্ষ ভাবে পাতায় ঢেকে ডাল
বাঁশি শুনে মাটি কাঁপে—কাঁপে শূন্য পাড়া
ঢেউ দেখে মনে হয়- জলেও জাগে সাড়া।

কিন্তু মানুষ প্রকৃতি থেকে দূরে সরে গিয়ে কিংবা প্রকৃতির বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে নিজের অস্তিত্বই টিকিয়ে রাখতে পারবে না। তখন প্রকৃতিই প্রতিশোধ নেবে। প্রকৃতিই হলো প্রাণের ও প্রাণীর মূল। সেটিই তার জননীকোল। সেখানে তাকে ফিরতেই হবে। প্রতিটি বিষয় ও বস্তু তার মূলের দিকে প্রত্যাবর্তন করে, সেজন্য মানুষেরও প্রকৃতির কাছে না ফিরে উপায় নেই। অথচ জীবনের আধার সেই প্রকৃতি ঔপনিবেশিকতা ও আধুনিকতার আগ্রাসনে অস্তিত্বসঙ্কটে পড়েছে। আমিনুল ইসলামের কবিতায় পরিবেশদূষণের ছবি এবং সেজন্য তার আর্তনাদ ফুটে উঠেছে বারবার—
বস্তুত প্রাণের ধর্ম প্রত্যাবৃত্তি ছিন্নযোগমূলে
স্মৃতি ধায় সত্তা ধায় বোধাতীত শূন্যজন্মধূলে;
উপরন্তু বাড়ে ঝঞ্ঝা, অবিবেকী বাড়ছে দূষণ;
প্রসারিত হিমহাত, নিসঃঙ্গতা গ্রাসিছে ভুবন।
গর্জিত দূষণে ভীত ঘনমুখি পাখির ডানায়
করাতের শব্দে জাগে প্রতিধ্বনি সমূহ শঙ্কায়।
(জলটুঙি: তন্ত্র থেকে দূরে)

কিন্তু তিনি ঔপনিবেশিকের ধ্বংসযজ্ঞ অবলোকন করে নিশ্চুপ বসে থাকতে পারেন না, তার কবল থেকে প্রকৃতিকে রক্ষা করতে চান—
টমাহক গিলে গিলে অগ্নিসহ আমি, এক অদ্ভুত প্রেমিক
উধাও-বসন্তের বিশ্বে যমদূতের অভিসন্দর্ভ।
স্বপ্নের আঙিনা ছোঁয়া নশ্বর তল্লাটে
জীবনানন্দীয় প্রত্যয়ে অশত্থের বীজ রোপি রোজ
আর শোনাই গান;
হে বন্ধু, ভুলো না চিনে নিতে,
কোনোদিন নিপাতনে সত্য হলে মুগ্ধকল্প কবির বিশ্বাস।
(তবু প্রেম তবু ঘর বাঁধা: তন্ত্র থেকে দূরে)

আমিনুল ইসলাম খুবই পরিষ্কারভাবেই একজন পরিবেশবাদী কবি। মানুষের বহুমুখী লোভ আর বিচিত্র লিপ্সা দিনদিন পৃথিবীর নৈসর্গিক পরিবেশকে নষ্ট করে দিচ্ছে। মানুষ গড়ে তুলছে কারখানা আর কারখানা। ফলে দূষণ আর দূষণ। কিন্তু এত এত সামরিক অস্ত্র তৈরির কারখানা, এত এত কসমেটিক তৈরির ফ্যাক্টরি এসবের কি আদৌ মানবীয় প্রয়োজন আছে? কেন এত বোমাবাজি? মানুষ তার সাম্রাজ্যবাদী লিপ্সা আর পুঁজিবাদী লোভ সংবরণ করতে পারলে এসবের কোনো প্রয়োজন হবে না। বায়ুদূষণ, পানিদূষণ, মৃত্তিকাদূষণ, শব্দদূষণ না ঘটালে এত এত ড্রাগ ফ্যাক্টরির প্রয়োজনও কমে আসবে সিংহভাগে। প্রকৃতিকে যত বেশি দূষিত করা হবে, তত বেশি গড়ে উঠবে হাসপাতাল। অনাক্রান্ত প্রকৃতিই সকল শান্তি ও সুস্থতার আধার। আমিনুল সেই অনাক্রান্ত প্রকৃতিকেই ফিরে পেতে চান। সব ইজম বা তন্ত্র থেকে দূরে তিনি প্রকৃতির বিধানকেই জীবনযাপনের বিধান হিসেবে অনুসরণের প্রবল পক্ষপাতী।

তারচেয়ে চলো যাই ফেলে আসা বটের ছায়ায়
স্বোপার্জিত তৃণে বাঁধি ভালোবাসার দুইচালা ঘর।
ভুুল হলে আছে তো বাবুই—নিসর্গের কনসালট্যান্ট
আয়োজিত উৎসবের জারজ কথার চেয়ে
বেহেতর অনেক মুখরিত হয়ে শোনা
শ্যামাদোয়েলের কণ্ঠে মুক্ত কবিগান।

ধাবমান দিনের সন্তাপে হৃদয় আক্রান্ত হলে
পরশ বুলিয়ে দেবে মাটিছোঁয়া সাঁঝের বাতাস।
নগরীর কুটিল দালানে জমলে জমুক যত তন্ত্রের ফ্যাসাদ
আমাদের সবুজের সংবিধান অলংঘিত...
পরিব্যপ্ত প্রাণের বর্ণমালায়।
(তন্ত্র থেকে দূরে: তন্ত্র থেকে দূরে)

আমিনুল ইসলামের মূল কাব্যপ্রবণতা প্রেমমুখী। কিন্তু তার মধ্যে ঐতিহ্যচেতনা এতটাই প্রবল যে, প্রেমও অধিকাংশ সময় ঐতিহাসিক পরিপ্রেক্ষিত লাভ করে। আর তার প্রেমবোধ ও নিসর্গচেতনা ঐতিহ্য ও ইতিহাসচেতনার সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়, যা শেষ পর্যন্ত উত্তর-ঔপনিবেশিক বোধ জাগ্রত করে। তার প্রথম দিককার কাব্যগ্রন্থগুলোয়, বিশেষতঃ তন্ত্র থেকে দূরে এবং মহানন্দা এক সোনালি নদীর নাম গ্রন্থে তার এই মনোভাব অত্যন্ত প্রবল এবং ঔপনিবেশিকতার মোকাবিলায় কিংবা ঔপনিবেশিকতার ক্ষতি পুষিয়ে নিতে, নিসর্গের ব্যবহার খুব নিবিড়। আমিনুল ইসলামের কবিতায় উত্তর-ঔপনিবেশিক নিসর্গতত্ত্বের অধিকাংশ বৈশিষ্ট্য উল্লেখযোগ্য ব্যাপ্তি ও অঙ্গীকারসমেত জায়গা করে নিয়েছে। এটি তাত্ত্বিক প্রণোদনার ফল এমনটি হয়তো নয়, তার ঐতিহ্য ও ইতিহাসচেতনা এবং নিসর্গপ্রেমই এর মূল কারণ বলে মনে হয়।

আরও পড়ুন
উত্তর-ঔপনিবেশিক নিসর্গতত্ত্ব ও আমিনুল ইসলামের কবিতা: পর্ব ০১

উত্তর-ঔপনিবেশিক নিসর্গতত্ত্ব ও আমিনুল ইসলামের কবিতা: পর্ব ০২

উত্তর-ঔপনিবেশিক নিসর্গতত্ত্ব ও আমিনুল ইসলামের কবিতা: পর্ব ০৩

লেখক: কথাসাহিত্যিক, প্রাবন্ধিক ও অনুবাদক।

এসইউ/এএসএম

আরও পড়ুন