ভিডিও EN
  1. Home/
  2. জাতীয়

ঢাকার সড়কে থামে না খোঁড়াখুঁড়ি, বছরজুড়ে ভোগান্তিতে নগরবাসী

অভিজিত রায় (কৌশিক) | প্রকাশিত: ০৮:৩৩ এএম, ২৮ মে ২০২৫

রাজধানীর বিভিন্ন সড়কে বছরজুড়েই চলে খোঁড়াখুঁড়ি। সড়ক সংস্কার ও বিভিন্ন নালার নির্মাণকাজও চলে বিরামহীন। বর্ষা এলেই বাড়ে ড্রেনেজ ব্যবস্থার উন্নয়নকাজ। যখন-তখন যত্রতত্র সড়কে খোঁড়াখুঁড়ি আর ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানগুলোর ঢিমেতাল নগরবাসীর ভোগান্তি দিন দিন বাড়িয়েই তুলছে। বিশেষত, এসব উন্নয়নকাজের ফলে সড়কের বিভিন্ন অংশ মাসের পর মাস সরু করে রাখা হচ্ছে। এতে চরমভাবে বিঘ্নিত হচ্ছে যানবাহন চলাচল। সর্বোপরি বাড়ছে যানজটের তীব্রতা ও জনদুর্ভোগ।

সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, এসময়ও রাজধানীর বহু জায়গায় এ ধরনের উন্নয়নকাজ চলমান। এসব প্রকল্প বাস্তবায়নে বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি সংস্থার কাজ চলছে খুবই ধীরগতিতে। ফলে প্রতিদিনই সকাল থেকে রাত পর্যন্ত ঢাকার অধিকাংশ সড়কে যানজটে নাজেহাল হচ্ছেন বিভিন্ন গন্তব্যে ছুটে চলা মানুষ।

বিজ্ঞাপন

বিজ্ঞাপন

ঢাকার সড়কে থামে না খোঁড়াখুঁড়ি, বছরজুড়ে ভোগান্তিতে নগরবাসী

রাজধানীর শ্যামলী থেকে গাবতলীগামী প্রধান সড়কের পাশ দিয়ে চলছে চীনের সঙ্গে বাংলাদেশ সরকারের ডিপিডিসির জি-টু-জি প্রকল্পের আওতায় মাটির নিচ দিয়ে হাইভোল্টেজ বৈদ্যুতিক ট্রান্সমিশন স্থাপনের কাজ। সড়ক খুঁড়ে নিচ দিয়ে বৈদ্যুতিক তার স্থানান্তরের কাজে মারাত্মকভাবে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে যান চলাচল। এতে ওই সড়কে চলাচলকারী নগরবাসীকে প্রতিদিন দীর্ঘ যানজটের কবলে পড়তে হচ্ছে।

বিজ্ঞাপন

বিজ্ঞাপন

খননকাজে ব্যবহৃত পাইপ ও ক্যাবলসহ আনুষঙ্গিক বিভিন্ন সরঞ্জাম ফেলে রাখা হয়েছে রাস্তার ওপর। কোথাওবা ফুটপাত অচল করে রাখা হয়েছে। কোথাও কোথাও কাটা রাস্তা বন্ধ করা হলেও অধিকাংশ স্থানে এখনো কাটা অবস্থায়ই রয়েছে

উন্নয়ন প্রকল্পের আওতাধীন এ কাজটি আগামী ৩ জুনের মধ্যে শেষ হওয়ার কথা রয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা। একই সঙ্গে আগামী ৩০ বছরের জন্য সুফল পাওয়ার কথা উল্লেখ করে সাময়িক দুর্ভোগের জন্য নগরবাসীর কাছে দুঃখও প্রকাশ করছেন তারা।

আরও পড়ুন

বিজ্ঞাপন

বিগত বেশ কিছুদিন ধরে শ্যামলী থেকে কল্যাণপুরমুখী সড়কের পাশ দিয়ে রাস্তা খননকাজ চলছে। এসব খননকাজে ব্যবহৃত পাইপ ও ক্যাবলসহ আনুষঙ্গিক বিভিন্ন সরঞ্জাম ফেলে রাখা হয়েছে রাস্তার ওপর। কোথাওবা ফুটপাত অচল করে রাখা হয়েছে। কোথাও কোথাও কাটা রাস্তা বন্ধ করা হলেও অধিকাংশ স্থানে এখনো কাটা অবস্থায়ই রয়েছে সড়ক। এসব কাটা অংশের কারণে সংকুচিত হয়ে গেছে যান চলাচলের স্থান। ফলে সড়কে কিছুটা গাড়ির চাপ বাড়লেই সেসব স্থানে সৃষ্টি হচ্ছে দীর্ঘ যানজট।

ঢাকার সড়কে থামে না খোঁড়াখুঁড়ি, বছরজুড়ে ভোগান্তিতে নগরবাসী

নানান সরঞ্জামে ফুটপাত বন্ধ থাকায় গাড়ির অপেক্ষায় থাকা যাত্রীদের গাড়িতে উঠতে এখন ঝুঁকি নিয়ে মূল সড়কে দাঁড়িতে থাকতে হচ্ছে। এতে যাত্রী ওঠা-নামায় সৃষ্টি হচ্ছে বিঘ্ন। বাধাগ্রস্ত হচ্ছে যান চলাচল।

বিজ্ঞাপন

মোহাম্মদপুর থেকে শ্যামলী হয়ে উত্তরা রুটে চলাচলকারী আলিফ পরিবহন বাসের হেলপার মো. প্রিন্স জাগো নিউজকে বলেন, রাস্তাটি কাটার কারণে শ্যামলী থেকে ইউটার্ন নিতেই এখন আধাঘণ্টার বেশি সময় পার হয়ে যায়। যেখানে আগে সময় লাগতো মাত্র ৫ মিনিট। রাস্তা কাটার পর থেকে যে পরিমাণ যানজট হচ্ছে তাতে ট্রিপ অনেক কমে গেছে।

শ্যামলী থেকে গাবতলী পর্যন্ত যেতেই ঘণ্টার বেশি সময় চলে যায়। আগে এত যানজট ছিল না। এখন রাস্তা কাটার পর যানজটের কারণে কামাই-রোজগার অনেক কমে গেছে। যাত্রীরাও খুব বিরক্ত।- বাসের হেলপার শামীম

সাভার পরিবহনের হেলপার শামীম বলেন, শ্যামলী থেকে গাবতলী পর্যন্ত যেতেই ঘণ্টার বেশি সময় চলে যায়। আগে এত যানজট ছিল না। এখন রাস্তা কাটার পর যানজটের কারণে কামাই-রোজগার অনেক কমে গেছে। যাত্রীরাও খুব বিরক্ত।

ঢাকার সড়কে থামে না খোঁড়াখুঁড়ি, বছরজুড়ে ভোগান্তিতে নগরবাসী

বিজ্ঞাপন

সাভারগামী যাত্রী এরশাদ। গাড়িতে উঠতে দাঁড়িয়ে আছেন মূল সড়কে। কথা হলে তিনি বলেন, গাড়িতে ওঠার জন্য দাঁড়িয়ে আছি। রাস্তায় না দাঁড়িয়ে কী করবো। ফুটপাতে দাঁড়ানোর উপায় নেই। সবখানে পাইপ আর নানান সরঞ্জাম ফেলে রাখা হয়েছে। বাধ্য হয়ে রাস্তায় দাঁড়িয়ে আছি গাড়ির অপেক্ষায়।

চলমান এই উন্নয়নকাজের বিষয়ে জানতে চাইলে চায়না কোম্পানি টিবিএ’র বাংলাদেশ অফিসের ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার দ্বীন আমিন জাগো নিউজকে বলেন, ২০১৭ সালে বাংলাদেশে এ প্রকল্প শুরু হয়। প্রকল্পটি এখনো চলমান। মাটির নিচ দিয়ে বিদ্যুতের তার নেওয়ার কাজ চলছে। এটি চীনের সঙ্গে বাংলাদেশ সরকারের ডিপিডিসির জি-টু-জি প্রকল্পের কাজ।

ঢাকার সড়কে থামে না খোঁড়াখুঁড়ি, বছরজুড়ে ভোগান্তিতে নগরবাসী

বিজ্ঞাপন

চীনা কোম্পানি টিবিএ এই প্রকল্পের মূল ঠিকাদার। ১৭০০ কোটি টাকার এ প্রকল্পের ৭০ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। প্রকল্পটির মেয়াদ ২০২৫ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত ছিল। কিন্তু বেশ কিছু ঝামেলার কারণে সেটি আরও দেড় বছর পেছানো হয়।

বৃহৎ কিছু করতে গেলে কিছুটা দুর্ভোগ হবে এটা স্বাভাবিক। আগামী ৩০ বছর আপনি সুখে থাকবেন, এখন ৩০ দিন আপনাকে একটু কষ্ট করতে হবে।- ইঞ্জিনিয়ার দ্বীন আমিন

দ্বীন আমিন বলেন, সময় বাড়ানোর সবচেয়ে বড় কারণ সিটি করপোরেশনের অসহযোগিতা। সিটি করপোরেশন আমাদের সেভাবে কো-অপারেট করছে না। তারা খোঁড়াখুঁড়ির কাজের পারমিশনগুলো দ্রুত না দেওয়ায় কাজ ধীরগতিতে হচ্ছে। প্রকল্পের সময়সীমা বাড়িয়ে ২০২৭ সালের জুন পর্যন্ত করা হয়েছে। আশা করছি, নির্দিষ্ট সময়ে কাজ শেষ করতে পারবো।

আরও পড়ুন

বিজ্ঞাপন

‘আমাদের এই জোনে তিনটি সাব-স্টেশন আছে। এ প্রকল্পের মাধ্যমে রাজধানীবাসীর নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহের জন্য এমন একটি সিস্টেম করা হচ্ছে যেখানে পুরো ঢাকা শহর ইন্টার কানেকটেড থাকবে। বড় কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ বা যে কোনো ধরনের সমস্যায় একটি সাব-স্টেশন যদি ফেলও করে তারপরও বিদ্যুৎ সরবরাহে কোনো ব্যাঘাত হবে না। তখন হয়তো এক মিনিটের জন্য বন্ধ হয়ে আবার বিদ্যুৎ চলে আসবে’- যোগ করেন প্রকল্পের এ কর্মকর্তা।

এই প্রকল্পের আওতায় সম্পূর্ণ ঢাকা শহরে মোটামুটি ৫৫টি সাব-স্টেশন করা হয়েছে বলে জানান তিনি।

ঢাকার সড়কে থামে না খোঁড়াখুঁড়ি, বছরজুড়ে ভোগান্তিতে নগরবাসী

প্রকল্পে পুরো ঢাকা শহর তারবিহীন হবে কি না জানতে চাইলে দ্বীন আমিন বলেন, ওপর দিয়ে তারের যে লাইন আছে সেগুলো থাকবে। এটি হচ্ছে ডিস্ট্রিবিউশন নেটওয়ার্ক। আর আমরা মাটির নিচে যেটা করছি এটি হলো হাইভোল্টেজ ট্রান্সমিশন নেটওয়ার্ক। সাব-স্টেশনগুলোকে পাওয়ার দেওয়ার জন্য।

তিনি বলেন, আমাদের এ কাজে কিছুটা জনদুর্ভোগ হচ্ছে। এর জন্য আমরা দুঃখ প্রকাশ করছি। বৃহৎ কিছু করতে গেলে কিছুটা দুর্ভোগ হবে এটা স্বাভাবিক। আগামী ৩০ বছর আপনি সুখে থাকবেন, এখন ৩০ দিন আপনাকে একটু কষ্ট করতে হবে।

চলতি মে মাসের ৩০ তারিখের মধ্যে শ্যামলী এলাকার চলমান কাজ শেষ করে সড়ক খনন বন্ধ করা হবে বলেও জানান তিনি।

কেআর/এমকেআর/এমএফএ/জেআইএম

বিজ্ঞাপন