সংসদ নির্বাচন: রিটার্নিং অফিসার-সহকারী রিটার্নিং অফিসার এবার কারা
নির্বাচনী প্রশিক্ষণ ইন্সটিটিউটে ইউএনওদের নির্বাচন ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত প্রশিক্ষণের উদ্বোধন করেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার এএমএম নাসির উদ্দিন
আগামী বছরের ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠিত হবে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। নির্বাচন সামনে রেখে বুধবার (২২ অক্টোবর) সকালে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটে (ইটিআই) উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের (ইউএনও) প্রশিক্ষণ কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এএমএম নাসির উদ্দিন। এসময় ভালো নির্বাচন না করার পরিণতি স্মরণ করিয়ে দেওয়া হয় কর্মকর্তাদের। এছাড়া আগামী নির্বাচনে ৬৬ জন রিটার্নিং অফিসার ও ৫৯২ জনের বেশি সহকারী রিটার্নিং অফিসার নিয়োগ করার বিষয়েও ইঙ্গিত দেওয়া হয়।
প্রশিক্ষণের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন চার নির্বাচন কমিশনারও। এসময় তারা বলেন, ভালো নির্বাচন করার কোনো বিকল্প নেই। এখন থেকে ভোটের পরিবেশ ও আইন শৃঙ্খলার সুষ্ঠু আবহ তৈরি করতে হবে। একইসঙ্গে আগামী নির্বাচনে রিটার্নিং অফিসার ও সহকারী রিটার্নিং অফিসার হিসেবে জেলা প্রশাসক ও ইউএনওদের দায়িত্ব দেওয়ার ইঙ্গিতও দিয়েছেন একজন নির্বাচন কমিশনার।
রিটার্নিং ও সহকারী রিটার্নিং অফিসার কারা এবার
ভোটে রিটার্নিং অফিসার ও সহকারী রিটার্নিং অফিসারের দায়িত্ব এবং ভূমিকার কথা তুলে ধরে গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের (আরপিও) বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন নির্বাচন কমিশনার আব্দুর রহমানেল মাছউদ। তিনি বলেন, একেবারে চরম বাস্তবতা হচ্ছে এই দেশের নির্বাচন পরিচালনা করেন রিটার্নিং অফিসার তথা ডিসি। সহকারী রিটার্নিং অফিসার কাকে নিয়োগ করা হয়; যুগ যুগ ধরে প্রচলিত নিয়ম অনুযায়ী উপজেলা নির্বাহী অফিসারকেই নিয়োগ করা হয়। যাদের ওপর নির্বাচন পরিচালনার ভার থাকে, তাদের নিরপেক্ষভাবে কাজ করার নির্দেশনা দেন এ নির্বাচন কমিশনার।
সবাই সচেষ্ট থাকলে ভালো নির্বাচন সম্ভব জানিয়ে আব্দুর রহমানেল মাছউদ বলেন, ‘আমাদের ভালো নির্বাচন করা ছাড়া অন্য বিকল্প নাই। দেওয়ালে পিঠ থেকে গেছে। আমাদের যার যার দায়িত্ব সে দায়িত্ব যদি আমরা পালন করি তাহলে নিশ্চয় আমরা সুন্দর, সুষ্ঠু এবং নিরপেক্ষ গ্রহণযোগ্য নির্বাচন দিতে পারবো।’
ভয় নেই সাহসী হোন, কারও পক্ষে কাজ করবেন না
নির্বাচন কমিশনার মো. আনোয়ারুল ইসলাম সরকার বলেন, রাজনৈতিক দলগুলোকে মোটিভেট করতে হবে, ভোটারদের কাছে যেতে হবে। সুশৃঙ্খল পরিবেশ ভালো নির্বাচনের জন্য অপরিহার্য।
মাঠ কর্মকর্তাদের উদ্দেশে তিনি বলেন, পক্ষপাতিত্ব করা যাবে না। এখন থেকে মোবাইল কোর্ট রেগুলার করতে হবে। এই নির্বাচনে যারা ভালো দায়িত্ব পালন করবে তাদের জন্য পুরস্কারের ব্যবস্থা করা হবে।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের ভূমিকা তুলে ধরে এ নির্বাচন কমিশনার জানান, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার নিরপেক্ষভাবে কাজ করবে, এখন সততা, নিষ্ঠা দেখানোর সুযোগ। ইউএনওদের নেতৃত্ব, দক্ষতা, নিরপেক্ষতা ও মনোভাবের ওপর নির্ভর করবে সামগ্রিক নির্বাচনের অবস্থা।
অতি সাহসী নয়, আগের প্রশিক্ষণ ‘ডিলিট’
নির্বাচন কমিশনার তাহমিদা আহমদ বলেন, ‘সাহসী হবেন, তবে অতি সাহসী না। অতীতে অতি উৎসাহী হয়ে অনেকে অনেক কিছু করেছেন। এবার এসব করা যাবে না। আগের প্রশিক্ষণ ভুলে যেতে হবে, সেটা ডিলিট করে দেন। এখন যেই প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে সেটি নিতে হবে। আগের নির্বাচন আমরা সবাই মিলে নষ্ট করেছি। এখন সবাই মিলে ভালো নির্বাচন করতে হবে।’
নির্বাচন কমিশনার আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ বলেন, তফসিল ঘোষণার পর সার্বিক বিষয়টি নির্বাচন কমিশনের হাতে চলে আসবে। এটার জন্য আমরা অপেক্ষা করবো না। নির্বাচনের সুষ্ঠু পরিবেশ তৈরির আবহটা এখন থেকেই তৈরি করতে হবে।
আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ বলেন, পোস্টাল ভোটিংয়ের অ্যাপ্লিকেশন পদ্ধতিটা আমরা অনলাইনে নিয়ে গেছি। অ্যাপ্লিকেশনটা এই মুহূর্তে ট্রায়ালে। আশা করছি ১৬ নভেম্বর নিবন্ধন অ্যাপ উদ্বোধন করা হবে। পোস্টাল ব্যালট পেপারে ‘না’ ভোটসহ ১১৬টি প্রতীক থাকবে বলে জানান তিনি।
নির্বাচন কমিশনার সানাউল্লাহ আরও বলেন, নির্বাচন সামনে রেখে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটরা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। নির্বাচনের মাঠে যারা আছেন, তারা যেন আচরণবিধি মেনে চলেন। সুষ্ঠু ভোটের পরিবেশ এখন থেকে তৈরি করতে হবে। ভোটের সময় প্রায় ৩ হাজারের বেশি নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট থাকেন। আশা করবো, এবার যেন গুরুত্ব অনুধাবন করে তারা মাঠে গিয়ে কাজ করেন।
ভালো নির্বাচন করতে নির্বাচন কমিশন প্রতিশ্রুতিবদ্ধ জানিয়ে ইসি সচিব আখতার আহমেদ বলেন, এবার সবাইকে নিরপেক্ষভাবে কাজ করতে হবে। সেইসঙ্গে গুজব, অপতথ্য, মিথ্যা তথ্য ও এআইয়ের অপব্যবহার রোধের পাশাপাশি সঠিক তথ্যপ্রবাহ নিশ্চিতে সবার সহযোগিতা চান তিনি।
এমওএস/এমএমকে/এমএস