ভিডিও EN
  1. Home/
  2. জাতীয়

সেনাসদর

রোডম্যাপ অনুযায়ী নির্বাচন চায় সেনাবাহিনী, যেন ব্যারাকে ফিরতে পারে

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক | প্রকাশিত: ০৭:১৪ পিএম, ০৫ নভেম্বর ২০২৫

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের ঘোষিত রোডম্যাপ অনুযায়ী একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য জাতীয় নির্বাচন চায় সেনাবাহিনী, যেন তারা নিজ নিজ ব্যারাকে ফিরে যেতে পারেন।

বুধবার (৫ নভেম্বর) সেনাসদরে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন জেনারেল অফিসার কমান্ডিং, আর্মি সদরদপ্তরের ট্রেনিং অ্যান্ড ডকট্রিন কমান্ড (জিওসি আর্টডক) লেফটেন্যান্ট জেনারেল মো. মাইনুর রহমান।

তিনি বলেন, দেশের জনগণের মতো সেনাবাহিনীও চায় সরকারের রূপরেখা অনুযায়ী একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হোক। সরকারের কাঠামো ও সময়সূচি অনুযায়ী অনুষ্ঠিত নির্বাচন জাতীয় স্থিতিশীলতা জোরদার করবে, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি উন্নত করবে এবং সেনাবাহিনীকে ব্যারাকে ফিরে যাওয়ার সুযোগ করে দেবে।

তিনি আরও বলেন, সরকারের ঘোষিত পরিকল্পনা অনুযায়ী এরই মধ্যে প্রস্তুতি নিচ্ছে সেনাবাহিনী। আমাদের বর্তমান প্রশিক্ষণ কার্যক্রমগুলো পরিচালিত হচ্ছে নির্বাচনের সময় যেসব দায়িত্ব পালন করতে হতে পারে, তা মাথায় রেখে।

আরও পড়ুন
নির্বাচন হলে দেশ ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্থিতিশীল হবে: সেনাসদর
গ্রেফতার সেনা কর্মকর্তাদের চাকরি আছে কি না, যা বললো সেনাসদর

জিওসি মাইনুর রহমান বলেন, শান্তিকালে সেনাবাহিনীর প্রধান কাজ যুদ্ধের প্রস্তুতি নেওয়া। আমরা যেভাবে যুদ্ধ করি, সেভাবেই প্রশিক্ষণ নিই। গত ১৫ মাস ধরে আমরা ব্যারাকের বাইরে কঠিন পরিস্থিতিতে মোতায়েন রয়েছি। যদি এ অবস্থা নির্বাচন পর্যন্ত চলতে থাকে, তাহলে আমাদের প্রশিক্ষণ ব্যাহত হবে। সেনাবাহিনী এমন অনেক কঠিন পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়েছে, যা বাংলাদেশ আগে কখনো দেখেনি। তাই বিশ্রাম ও পুনর্গঠনও প্রয়োজনীয়।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচারিত অপপ্রচার বিষয়ে তিনি বলেন, কিছু স্বার্থান্বেষী মহল সেনাবাহিনী ও এর নেতৃত্বকে কলঙ্কিত করতে মিথ্যা ও বিভ্রান্তিকর প্রচারণা চালাচ্ছে। এটি অত্যন্ত দুঃখজনক। আমি আপনাদের আশ্বস্ত করছি, সেনাবাহিনীর প্রতিটি সদস্য সেনাবাহিনী প্রধান ও ঊর্ধ্বতন নেতৃত্বের প্রতি সম্পূর্ণ অনুগত। সেনাবাহিনী এখন আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি ঐক্যবদ্ধ এবং আমাদের ভ্রাতৃত্ববোধ আরও দৃঢ় হয়েছে।

সবাইকে এ ধরনের অপপ্রচার থেকে বিরত থেকে ঐক্যের সঙ্গে এগিয়ে যাওয়ার আহ্বান জানিয়ে এই সেনা কর্মকর্তা বলেন, এসব মিথ্যা প্রচারণায় সেনাবাহিনীর প্রতিক্রিয়া দেখানোর প্রয়োজন নেই। আমাদের নিজস্ব সরকারি ওয়েবসাইট রয়েছে, যেখানে আমরা আমাদের কার্যক্রম প্রকাশ করি।

দীর্ঘমেয়াদে সেনা মোতায়েন প্রসঙ্গে লেফটেন্যান্ট জেনারেল মাইনুর রহমান বলেন, গত ১৫ মাসে সেনাসদস্যদের নানা ধরনের কাজ করতে হয়েছে—কুমিল্লা ও নোয়াখালীর বন্যাদুর্গতদের ত্রাণ বিতরণ থেকে শুরু করে থানা রক্ষা, ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ, এমনকি বেসামরিক প্রশাসনকেও সহায়তা করতে হয়েছে। আমরা সেখানে না থাকলে পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারতো। সীমিত জনবল নিয়েও আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছি।

আরও পড়ুন
সেনাসদস্যরা সেনাপ্রধান-সিনিয়র লিডারশিপের প্রতি ‘শতভাগ অনুগত’
প্রস্তুতি থাকতে হবে যেন অস্ত্রের চালান ঢাকায় না আসে: সেনাসদর

ঢাকায় বনলতা এক্সপ্রেস ট্রেনে এবং চট্টগ্রামের পাহাড়ি অঞ্চলে অস্ত্র-গোলাবারুদ উদ্ধার প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে জিওসি মাইনুর বলেন, এসব অস্ত্র-গোলাবারুদ উদ্ধার যেমন উদ্বেগজনক, তেমনই এটি আমাদের সফলতারও ইঙ্গিত। অস্ত্রগুলো গন্তব্যে পৌঁছানোর আগেই উদ্ধার হওয়া আমাদের সতর্কতার প্রমাণ। আমরা অভিযান আরও জোরদার করবো এবং নজরদারি বাড়াবো। অন্যান্য সংস্থাও এ বিষয়ে কাজ করছে। আমাদের প্রস্তুত থাকতে হবে যেন কোনো অস্ত্রের চালান ঢাকা পর্যন্ত না পৌঁছায়। আর যদি পৌঁছে, তাহলে তা মোকাবিলার জন্যও আমরা প্রস্তুত থাকবো।

ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে বাংলাদেশ সীমান্তের কাছাকাছি ভারতীয় বিমানবাহিনীর সাম্প্রতিক মহড়া নিয়ে প্রশ্নের জবাবে লেফটেন্যান্ট জেনারেল মাইনুর বলেন, এটি একটি রাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ বিষয়। এ ধরনের মহড়া স্বাভাবিক এবং উদ্বেগের কিছু নয়। প্রতিটি দেশই প্রস্তুতির জন্য মহড়া চালায়। আমরাও প্রয়োজনে মহড়া পরিচালনা করি। এটি সেই দৃষ্টিকোণ থেকেই দেখা উচিত।

সংবাদ সম্মেলনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় সারাদেশে মোতায়েন থাকা সেনাবাহিনীর অর্ধেক সদস্যকে সাময়িকভাবে প্রত্যাহারের বিষয়ে সরকারের সিদ্ধান্তের বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে মিলিটারি অপারেশনস ডিরেক্টরেটের (এমওডি) পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল দেওয়ান মোহাম্মদ মনজুর হোসেন বলেন, প্রত্যাহারের বিষয়ে আমরা চিঠি পেয়েছি... এবং সে অনুযায়ী আমরা আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি বিবেচনায় রেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব।

তিনি বলেন, গত ১৫ মাস ধরে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় বেসামরিক প্রশাসনকে সহায়তা করে আসছে। এর পাশাপাশি, চুরি যাওয়া অস্ত্র ও গোলাবারুদ উদ্ধার এবং চিহ্নিত অপরাধীদের গ্রেফতারে অভিযান চলছে।

টিটি/এমকেআর/এমআইএইচএস/এএসএম