চলতি বছরই চূড়ান্ত হচ্ছে ন্যাশনাল পোর্ট স্ট্র্যাটেজি: নৌ-উপদেষ্টা
মতবিনিময় সভায় বক্তব্য দেন নৌপরিবহন উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) ড. এম সাখাওয়াত হোসেন
দেশের স্থল, নৌ ও সমুদ্র বন্দরগুলোর দীর্ঘমেয়াদি ও টেকসই উন্নয়নে ন্যাশনাল পোর্ট স্ট্র্যাটেজি শীর্ষক একটি জাতীয় কৌশলপত্র তৈরি করছে সরকার। চলতি বছরেই এটি চূড়ান্ত করা হবে বলে জানিয়েছেন নৌপরিবহন এবং শ্রম ও কর্মসংস্থান উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) ড. এম সাখাওয়াত হোসেন।
মঙ্গলবার (১১ নভেম্বর) রাজধানীর একটি হোটেলে বাংলাদেশ ন্যাশনাল পোর্ট স্ট্র্যাটেজি চূড়ান্তকরণের লক্ষ্যে সংশ্লিষ্ট অংশীজনদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় এ কথা বলেন তিনি। জাপান সরকার ও জাইকার সহযোগিতায় এটি বাস্তবায়ন করবে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়।
সাখাওয়াত হোসেন বলেন, ন্যাশনাল পোর্ট স্ট্র্যাটেজির খসড়া প্রণয়নের কাজ শেষ পর্যায়ে রয়েছে। আশা করছি এই বছরের মধ্যেই এই স্ট্র্যাটেজি চূড়ান্তকরণের কাজ শেষ হবে। আগামী বছরের জানুয়ারি থেকে এটি কার্যকর করা হবে।
বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে দেশের বন্দরগুলো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে। বন্দরকেন্দ্রিক ব্যবসা-বাণিজ্য, আমদানি-রপ্তানি দেশের জিডিপিতে অসামান্য অবদান রেখে চলেছে। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য যে, গত ৫৪ বছরেও বাংলাদেশে কোনো সমন্বিত বন্দর ব্যবস্থাপনা কৌশলপত্র প্রণয়ন করা হয়নি। প্রত্যেকটি বন্দর পৃথক পৃথকভাবে তাদের কার্যক্রম ও উন্নয়ন পরিকল্পনা গ্রহণ করে থাকে। উন্নত বিশ্বের ন্যায় বাংলাদেশেও আধুনিক বন্দর ব্যবস্থাপনা নিশ্চিতে বর্তমান সরকার ‘ন্যাশনাল পোর্ট স্ট্র্যাটেজি’ প্রণয়ণের উদ্যোগ নিয়েছে। উপদেষ্টা এ কৌশলপত্র প্রদানের লক্ষ্যে উচ্চ পর্যায়ে একটি কমিটি গঠন করেন। কমিটি বিশ্বের বিভিন্ন উন্নত দেশের পোর্ট স্ট্র্যাটেজি পর্যালোচনা করে দেশি-বিদেশি বিশেষজ্ঞদের থেকে প্রাপ্ত পরামর্শের ভিত্তিতে দেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো প্রণীতব্য ‘ন্যাশনাল পোর্ট স্ট্র্যাটেজি’ র খসড়া প্রস্তুত করেছে বলে জানিয়েছে নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়।
আরও পড়ুন
তিন-চার দিনের মধ্যেই জুলাই সনদ বাস্তবায়ন বিষয়ে পরিষ্কার জানা যাবে
দেশের সব বিমানবন্দরে বিশেষ সতর্কতার নির্দেশ
বিশ্বের বিখ্যাত বন্দরগুলো এখন ডিজিটালাইজেশনের মাধ্যমে তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করছে। এর ফলে সেখানে বেশি বেশি বিদেশি বিনিয়োগ হচ্ছে বলে উল্লেখ করেন নৌপরিবহন উপদেষ্টা। তিনি বলেন, আমাদের মেরিটাইম সেক্টরেও আরও বেশি দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে সরকার কাজ করছে। এ লক্ষ্যে একটি কার্যকর ও টেকসই বন্দর ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করতে বর্তমান সরকার দায়িত্ব গ্রহণের সঙ্গে সঙ্গেই ‘ন্যাশনাল পোর্ট স্ট্র্যাটেজি’ প্রণয়ণের উদ্যোগ নেয়।
এই কৌশলপত্রের মাধ্যমে একটি সমন্বিত, শক্তিশালী ও যুগোপযোগী বন্দর কাঠামো গড়ে তোলা হবে জানিয়ে উপদেষ্টা বলেন, বন্দরকেন্দ্রিক সব সেবাকে একটি প্লাটফর্মে আনতে মেরিটাইম সিঙ্গেল উইন্ডো চালু করা হবে। যেখানে ব্যবসায়ীরা স্বল্পতম সময়ের মধ্যে হয়রানিমুক্ত সেবা পাবেন।
এ সময় উপদেষ্টা ‘ন্যাশনাল পোর্ট স্ট্র্যাটেজি’ প্রণয়নের মাধ্যমে দেশের বন্দর ব্যবস্থাপনায় একটি নতুন অধ্যায়ের সূচনা হতে যাচ্ছে বলেও উল্লেখ করেন।
নৌপরিবহন উপদেষ্টা দেশের সমুদ্রবন্দর ও অভ্যন্তরীণ নদী-বন্দরগুলোর কার্যক্রমের সঙ্গে স্থলবন্দরগুলোর কার্যক্রমকে সমান্তরালে সংযুক্ত রেখে যাবতীয় কার্যক্রম পরিচালনার ওপর ন্যাশনাল পোর্ট স্ট্র্যাটেজিতে গুরুত্বারোপ করা হয়েছে বলেও জানান। জাতীয় এ কৌশলপত্র প্রণয়নের মাধ্যমে দেশের মেরিটাইম সেক্টরে একটি বৈপ্লবিক পরিবর্তন সাধিত হবে বলেও উপদেষ্টা আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
মতবিনিময় সভায় সভাপতির বক্তব্য নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. নূরুন্নাহার চৌধুরী জাপান সরকার ও জাইকা-কে ওই কৌশলপত্র প্রণয়নে সার্বিক সহযোগিতার জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, নৌপরিবহন উপদেষ্টার সার্বিক দিক নির্দেশনায় প্রণীত ন্যাশনাল পোর্ট স্ট্র্যাটেজি আধুনিক বন্দর ব্যবস্থাপনায় নতুন সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন করবে। এটি ভবিষ্যৎ মেরিটাইম সেক্টরের এক অনবদ্য দলিল।
চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল এস এম মনিরুজ্জামান সভায় ফোকাল পারসন হিসেবে বক্তব্য রাখেন।
এ সময় নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন বিভিন্ন দপ্তর/ সংস্থার প্রধান ও মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
আরএমএম/কেএসআর/এমএস