পূজা কমিটির মতবিনিময়
নির্বাচন নিয়ে সংখ্যালঘুদের অতীত অভিজ্ঞতা বেদনা, উদ্বেগ ও শঙ্কার
বাংলাদেশ পূজা উদ্যাপন পরিষদ ও মহানগর সর্বজনীন পূজা কমিটি আয়োজিত মতবিনিময় সভা/ছবি: সংগৃহীত
নির্বাচন নিয়ে সংখ্যালঘুদের অতীত অভিজ্ঞতা অত্যন্ত বেদনা, উদ্বেগ ও শঙ্কার বলে মন্তব্য করেছেন মহানগর সর্বজনীন পূজা কমিটির সভাপতি জয়ন্ত কুমার দেব।
তিনি বলেন, একমাত্র ব্যতিক্রম ছিল ২০০৮ সালের নির্বাচন। এছাড়া স্বাধীনতার পর থেকে প্রতিটি নির্বাচনে এবং নির্বাচনের আগে ও পরে ধর্মীয় সংখ্যালঘুরা আক্রান্ত হয়েছে।
শনিবার (৬ ডিসেম্বর) রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে বাংলাদেশ পূজা উদ্যাপন পরিষদ ও মহানগর সর্বজনীন পূজা কমিটি আয়োজিত ‘ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও আমাদের প্রত্যাশা’ শীর্ষক এক মতবিনিময় সভায় জয়ন্ত কুমার এসব কথা বলেন।
লিখিত বক্তব্যে পূজা কমিটির সভাপতি বলেন, সব নির্বাচনি প্রচারণায় ধর্ম ব্যবহৃত হয়েছে। সম্প্রদায়গত ঘৃণা-বিদ্বেষ প্রচারণার হাতিয়ার হয়ে রক্তাক্ত অধ্যায়ের সূচনা করেছে। নির্বাচনে পরাজিত দল হামলা চালিয়ে নির্যাতন করে। কিন্তু দেখা গেছে, বিজয়ী দলও হামলা করে। আর নির্বাচনে হামলার মুখ্য শিকার হয় প্রধানত ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘুরা।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সাম্প্রদায়িক প্রচারণা, ঘৃণা ও বিদ্বেষ প্রকাশ করে বয়ান প্রচার এবং সভা-সমাবেশ, বিশেষ করে ধর্মীয় সমাবেশে বিদ্বেষ ও উসকানিমূলক বক্তব্য ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের সবসময় শঙ্কার মধ্যে রাখে বলে বক্তব্যে উল্লেখ করা হয়।
সাম্প্রতিক সময়ে এগুলো আরও প্রকট আকার ধারণ করেছে উল্লেখ করে বলা হয়, নির্বাচন এলে তা আরও বেড়ে যায়। এতে করে স্বাভাবিকভাবে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের মধ্যে নির্বাচনে অংশগ্রহণ, বিশেষ করে ভোট দেওয়ার ক্ষেত্রে শঙ্কা ও অনীহা তৈরি করে। এ ব্যাপারে সরকার ও রাজনৈতিক দলগুলোকে সক্রিয় ভূমিকা নিতে হবে।
আরও পড়ুন
হিন্দু-মুসলমান ভাই ভাই, ধানের শীষে ভোট চাই: মির্জা ফখরুল
সিইসির সঙ্গে বৈঠকে হিন্দু মহাজোট, ভোটে ধর্মের ব্যবহার বন্ধের দাবি
সংগঠন দুটির পক্ষ থেকে লিখিত বক্তব্যে আরও বলা হয়, স্বাধীনতার পর থেকে সব জাতীয় সংসদের দিকে দৃষ্টিপাত ও পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘুদের প্রতিনিধিত্ব যা থাকা উচিত তা কখনো ছিল না। স্বাধীনতার পর মাত্র একবার ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘুদের প্রতিনিধিত্ব সর্বোচ্চ ২২-এ পৌঁছেছিল। অধিকাংশ সংসদে এ সংখ্যা ১০ পেরোয়নি। ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের এখন পর্যন্ত যে প্রবণতা দেখা যাচ্ছে তা অত্যন্ত হতাশাব্যঞ্জক। বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন ও গণ-অভ্যুত্থানের পর এ চিত্র গণতান্ত্রিক ধারার বিকাশের বিরোধী।
এসময় আসন্ন নির্বাচন সামনে রেখে নয় দফা দাবি জানায় বাংলাদেশ পূজা উদ্যাপন পরিষদ ও মহানগর সর্বজনীন পূজা কমিটি।
নয় দফা দাবিগুলো হলো-
১. মুক্তিযুদ্ধ ও গণ-অভ্যুত্থানের চেতনায় যুগোপযোগী সংস্কারসহ বাহাত্তরের সংবিধান হবে আগামী দিনে রাজনীতির মূল ভিত্তি।
২. রাজনীতি ও সব নির্বাচনে ধর্মের ব্যবহার নিষিদ্ধ থাকবে। ঘৃণা ও বিদ্বেষমূলক বক্তব্য শাস্তিযোগ্য অপরাধ বলে গণ্য করতে হবে।
৩. জাতীয় ও স্থানীয় নির্বাচনে রাজনৈতিক দলগুলোকে ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘুদের যথাযথ প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করতে হবে। এ ব্যাপারে আইনগত বাধ্যবাধকতা থাকতে হবে। দলীয় কাঠামোতেও যথাযথ প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত থাকতে হবে। প্রয়োজনে নির্বাচন কমিশন নিবন্ধনের সময় আইনগত বাধ্যবাধকতার বিধান করতে পারে।
৪. জাতীয় নির্বাচনের পূর্বাপর অন্তত এক মাস ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তায় সেনা ও বিশেষায়িত বাহিনী মোতায়েন নিশ্চিত করতে হবে। স্থানীয় নির্বাচনেও নিরাপত্তায় কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে।
৫. জীবন-জীবিকার সব পর্যায়ে সমঅধিকার নিশ্চিত করতে হবে। সরকারি, স্বায়ত্বশাসিত প্রতিষ্ঠানে নিয়োগ ও পদোন্নতিতে বৈষম্য নিরসন করতে হবে।
৬. গণ-অভ্যুত্থানের পর সরকারি, স্বায়ত্বশাসিত প্রতিষ্ঠান ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে যাদের নির্বিচারে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে তাদের অবিলম্বে পুনর্বহাল করতে হবে।
৭. বাড়িঘর, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান, মন্দির ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে হামলা, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ এবং জায়গাজমি ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান দখলের জন্য দায়ীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। চাঁদাবাজি বন্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে হবে এবং চাঁদাবাজদের গ্রেফতার করে কঠোর শাস্তি দিতে হবে।
৮. গণ-অভ্যুত্থানের পর ব্যাপকহারে ভিত্তিহীন মামলা করা হয়েছে, আইন মন্ত্রণালয় থেকে তা স্বীকৃত হয়েছে। এসব মামলায় ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘুদের বিদ্বেষপ্রসূতভাবে জড়ানো হয়েছে। কাউকে কাউকে গ্রেফতারও করা হয়েছে। অবিলম্বে এসব মামলা প্রত্যাহার ও গ্রেফতারদের মুক্তি দিতে হবে।
৯. সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মূল আট দফা দাবি রাজনৈতিক দলগুলো তাদের নির্বাচনি ইশতেহারে অন্তর্ভুক্ত করে অঙ্গীকার ঘোষণার মাধ্যমে সমঅধিকারের চেতনার প্রতি অবস্থান স্পষ্ট করতে হবে।
কেআর/একিউএফ/জেআইএম