গ্রিসে চাকরির প্রলোভনে লিবিয়ায় পাচার
দেশে বসে মুক্তিপণ আদায়, চক্রের সদস্য গ্রেফতার
লিবিয়ায় মানবপাচারের অভিযোগে গ্রেফতার নজির হোসেন/ছবি অপরাধ তদন্ত বিভাগ
গ্রিসে উচ্চ বেতনে চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে বাংলাদেশি যুবকদের লিবিয়ায় পাচার, সেখানে নির্যাতন এবং দেশে বসে মুক্তিপণ আদায়ের অভিযোগে মানবপাচারকারী চক্রের সক্রিয় এক সদস্যকে গ্রেফতার করেছে অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।
বুধবার (১০ ডিসেম্বর) হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর এলাকা থেকে মোহাম্মদ নজির হোসেন (৫৫) নামে ওই ব্যক্তিকে গ্রেফতার করা হয়। বৃহস্পতিবার (১১ ডিসেম্বর) দুপুরে সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার জসীম উদ্দিন খান এ তথ্য জানান।
তিনি বলেন, ২০২৪ সালে গ্রিসে কর্মসংস্থানের লোভনীয় প্রস্তাব দিয়ে চক্রের গ্রিসপ্রবাসী সদস্য মো. শরীফ উদ্দিন দুই যুবকের কাছ থেকে জনপ্রতি ১৫ লাখ টাকায় চুক্তি করেন। প্রথম ধাপে দুজন দুই লাখ টাকা ও পাসপোর্ট জমা দেন। পরে চলতি বছরের জুলাইয়ে তাদের বাংলাদেশ থেকে দুবাই, সেখান থেকে মিশর হয়ে লিবিয়ায় পাঠানো হয়।
লিবিয়ায় পৌঁছানোর পর চক্রের সদস্যরা ভুক্তভোগীদের একদল মাফিয়ার হাতে তুলে দেন। সেখানে তাদের আটক রেখে শারীরিক নির্যাতন ও মুক্তিপণ দাবি করা হয়। দেশে বসে চক্রের সদস্য নজিরসহ সহযোগীরা এক পরিবারের কাছ থেকে ২১ লাখ ৮০ হাজার টাকা এবং অন্য পরিবারের কাছ থেকে ১৬ লাখ টাকা আদায় করেন।
সিআইডির এই কর্মকর্তা আরও বলেন, মুক্তিপণের টাকা নেওয়ার পরও ভুক্তভোগীদের মুক্তি না দিয়ে তাদের লিবিয়ার পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হয়। ৪৫ দিন জেল খাটার পর আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থার (আইওএম) সহায়তায় ২৯ আগস্ট দেশে ফিরতে সক্ষম হন তারা।
ডেমরা মডেল থানায় দায়ের হওয়া আরেক মামলায় দেখা যায়, চক্রটির আরেক সদস্য মো. বাহাদুর ফারাজীর মাধ্যমে আরেক যুবক গ্রিসে চাকরির প্রলোভনে প্রতারিত হন। তাকে পাসপোর্ট ও আট লাখ টাকা দিতে হয়। এরপর নজির হোসেন বিমানবন্দরে সেই ভুক্তভোগীকে পাসপোর্ট, ভিসা ও টিকিট সরবরাহ করেন।
লিবিয়ায় পৌঁছানোর পর ওই যুবককেও আটক করে নির্যাতন ও টাকা দাবি করা হয়। এ ঘটনায় নজির দেশের ভুক্তভোগীর পরিবারের কাছ থেকে বিভিন্ন সময়ে ১১ লাখ টাকা মুক্তিপণ আদায় করেন। মুক্তিপণ পরিশোধের পর তাকে মরুভূমিতে ছেড়ে দেওয়া হয় এবং পরে পুলিশ তাকে জেলে পাঠায়। লিবিয়ায় ১৯ দিন কারাবন্দি থাকার পর তিনি ২৫ আগস্ট আইওএম'র সহায়তায় দেশে ফেরেন।
বিশেষ পুলিশ সুপার জসীম উদ্দিন খান আরও বলেন, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতার নজির দুই মামলাতেই সম্পৃক্ততার কথা স্বীকার করেছেন। তাক গ্রেফতার দেখিয়ে আদালতে সোপর্দ ও রিমান্ড আবেদন করা হবে।
টিটি/বিএ/জেআইএম