২০২৫ সালে কর্মক্ষেত্রে নিহত ১১৯০ শ্রমিক
ডিআরইউ মিলনায়তনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে প্রতিবেদন প্রকাশ করে ওশি ফাউন্ডেশন/ছবি: সংগৃহীত
অনিরাপদ কর্মপরিবেশের কারণে ২০২৫ সালে দেশের বিভিন্ন খাতে ১ হাজার ১৯০ জন শ্রমিক নিহত ও ২২২ জন আহত হয়েছেন।
বেসরকারি সংস্থা বাংলাদেশ অক্যুপেশনাল সেইফটি, হেলথ অ্যান্ড এনভায়রনমেন্ট (ওশি) ফাউন্ডেশন বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন বিশ্লেষণ করে এ তথ্য জানিয়েছে। এ উপলক্ষে মঙ্গলবার (৩০ ডিসেম্বর) রাজধানীর ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি (ডিআরইউ) মিলনায়তনে এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে ওশি ফাউন্ডেশনের পক্ষে প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন সংশ্লিষ্ট প্রকল্প প্রতিনিধি মাহমুদা সুলতানা স্নিগ্ধা। এসময় জানানো হয়, ২০২৪ সালে কর্মক্ষেত্রে দুর্ঘটনায় ৯০৫ জন নিহত ও আহত হয়েছিলেন ২১৮ জন। সেই তুলনায় ২০২৫ সালে নিহতের সংখ্যা বেড়েছে ২৮৫ জন, যা কর্মক্ষেত্রে নিরাপত্তা পরিস্থিতির অবনতিশীল বাস্তবতা নির্দেশ করে।
প্রতিবেদন বিশ্লেষণে দেখা গেছে, প্রতি ১০টি কর্মক্ষেত্র দুর্ঘটনার মধ্যে গড়ে আটটিরও বেশি ঘটনায় মৃত্যু ঘটেছে। যা জরুরি উদ্ধার, চিকিৎসাহীনতা ও প্রতিরোধমূলক নিরাপত্তাব্যবস্থার কাঠামোগত দুর্বলতার ইঙ্গিত দেয়। দুর্ঘটনার পর ক্ষয়ক্ষতি মোকাবিলার পরিবর্তে প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থার অভাব এই উচ্চ মৃত্যুহারের অন্যতম কারণ।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০২৫ সালের দুর্ঘটনাগুলোর একটি বড় অংশ ঘটেছে অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে। ৮৪ শতাংশেরও বেশি ঘটেছে শ্রম আইনের কার্যকর আওতার বাইরে থাকা কর্মসংস্থানে, যা জাতীয় কর্মক্ষেত্র নিরাপত্তাব্যবস্থার সবচেয়ে বড় কাঠামোগত চ্যালেঞ্জ হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। এই বাস্তবতা স্পষ্ট করে যে, অপ্রাতিষ্ঠানিক শ্রম খাতকে শ্রম আইন ও সামাজিক সুরক্ষা কাঠামোর আওতায় না আনলে কর্মক্ষেত্রে দুর্ঘটনা উল্লেখযোগ্যভাবে কমানো সম্ভব নয়।
খাতভিত্তিক বিশ্লেষণে দেখা যায়, পরিবহন খাতে কর্মরত শ্রমিকরা পূর্ববর্তী বছরের মতো ২০২৫ সালেও সবচেয়ে বেশি দুর্ঘটনার শিকার হয়েছেন। এরপরই রয়েছে শিল্প ও উৎপাদন খাত, সেবা খাত, কৃষি খাত এবং অবকাঠামো ও নির্মাণ খাত। যেখানে চলাচল, যান্ত্রিকতা, দীর্ঘ কর্মঘণ্টা ও অনানুষ্ঠানিক নিয়োগ বেশি, সেখানেই দুর্ঘটনার ঝুঁকি তুলনামূলকভাবে বেশি দেখা গেছে।
প্রতিবেদনে কর্মক্ষেত্রে দুর্ঘটনার উল্লেখযোগ্য কারণ হিসেবে সড়ক দুর্ঘটনা, বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হওয়া, উচ্চতা বা পৃষ্ঠ থেকে পড়ে যাওয়া, অগ্নিকাণ্ড ও বিস্ফোরণ, বজ্রপাত এবং সহিংসতা ও হয়রানির কথা বলা হয়েছে। এসব দুর্ঘটনার অধিকাংশই প্রতিরোধযোগ্য হলেও কার্যকর ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা ও তদারকির অভাবে সেগুলোর পুনরাবৃত্তি ঘটছে।
সংবাদ সম্মেলনে কর্মক্ষেত্রে নিরাপত্তা পরিস্থিতির উন্নয়নে ওশি ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে কয়েকটি সুপারিশ তুলে ধরা হয়। এর মধ্যে রয়েছে শ্রম আইন ও বিধিমালার কার্যকর প্রয়োগ নিশ্চিত করতে পরিদর্শন ব্যবস্থা জোরদার, আইন অনুযায়ী কর্মক্ষেত্রে শ্রমিক প্রতিনিধির সমন্বয়ে সেফটি কমিটি গঠন, নিহত শ্রমিকের পরিবারকে ন্যূনতম বাধ্যতামূলক ক্ষতিপূরণ দেওয়া, ঝুঁকিপূর্ণ খাতে নিয়মিত সেফটি অডিট চালু, সরকারিভাবে কর্মক্ষেত্রে দুর্ঘটনা সংক্রান্ত একটি নির্ভরযোগ্য জাতীয় ডাটাবেজ তৈরি এবং অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত শ্রমিক ও তাদের পরিবারকে সামাজিক সুরক্ষা কাঠামোর আওতায় আনা।
ওশি ফাউন্ডেশন মনে করে, কর্মক্ষেত্রে নিরাপত্তা নিশ্চিত না হলে শ্রমিকের জীবন সুরক্ষা, উৎপাদনশীলতা ও টেকসই উন্নয়ন- কোনোটিই সম্ভব নয়। তাই দুর্ঘটনার পর প্রতিক্রিয়ার পরিবর্তে প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থাকেই সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়ার আহ্বান জানানো হয়।
ইএইচটি/একিউএফ