শাহজাহান চৌধুরীর হাতে নগদ ১ কোটি ৩৪ লাখ টাকা, হলফনামায় ৭১ মামলা
চট্টগ্রাম-১৫ (সাতকানিয়া-লোহাগাড়া) আসন থেকে আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নেওয়ার জন্য মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন জামায়াতে ইসলামী মনোনীত প্রার্থী শাহজাহান চৌধুরী। মনোনয়নপত্রের সঙ্গে হলফনামাও জমা দিয়েছেন তিনি।
হলফনামার তথ্য অনুযায়ী, শাহজাহান চৌধুরীর আয়ের কাঠামো, সম্পদের ধরন এবং মামলার সংখ্যাসহ একাধিক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য উঠে এসেছে। তার হাতে নগদ ১ কোটি ৩৪ লাখ টাকা, হলফনামায় ৭১ মামলা কথা উল্লেখ করা হয়েছে।
নির্বাচন কমিশনে জমা দেওয়া হলফনামায় শাহজাহান চৌধুরী তার পেশা ব্যবসায়ী হিসেবে উল্লেখ করেছেন এবং শিক্ষাগত যোগ্যতা হিসেবে এলএলবি (অনার্স) দেখিয়েছেন। তবে ব্যবসা থেকে তার বার্ষিক আয় মাত্র ৯৬ হাজার ৫৯০ টাকা, যেখানে কৃষিখাত থেকে আয় হয়েছে ৬ লাখ ৪৮ হাজার ৫০০ টাকা, যা তার মোট আয়ের বড় অংশ।
হলফনামা অনুযায়ী শাহজাহান চৌধুরীর ঘোষিত আয়ের উৎসগুলো বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, চাকরি থেকে তিনি বার্ষিক আয় দেখিয়েছেন ৩ লাখ ৬০ হাজার টাকা।
শেয়ার, বন্ড, সঞ্চয়পত্র ও ব্যাংক আমানত থেকে তার আয় ৬৩ হাজার ৪৭১ টাকা। এছাড়া ‘অন্যান্য উৎস’ হিসেবে নির্ভরশীলদের বার্ষিক আয় দেখানো হয়েছে ৪ লাখ ৬০ হাজার টাকা, যা আয়ের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ হলেও উৎসের বিস্তারিত স্পষ্ট নয়।
নগদ সম্পদে বড় ব্যবধান
অস্থাবর সম্পদের হিসাবে সবচেয়ে চোখে পড়ার মতো বিষয় হলো নগদ টাকার পরিমাণ। হলফনামা অনুযায়ী শাহজাহান চৌধুরীর নিজের নামে নগদ অর্থ রয়েছে ১ কোটি ৩৪ লাখ ৩৭ হাজার ২৫২ টাকা। অন্যদিকে তাঁর স্ত্রীর নামে নগদ অর্থ দেখানো হয়েছে ২৮ লাখ ৭৫ হাজার টাকা।
তিনটি ব্যাংকে তার নিজ নামে জমা আছে মোট প্রায় ৭ লাখ ৯৫ হাজার টাকার কিছু বেশি। বন্ড, ঋণপত্র ও স্টক এক্সচেঞ্জে তালিকাভুক্ত নয় এমন শেয়ারে বিনিয়োগ দেখিয়েছেন ১ লাখ ১১ হাজার টাকা। সঞ্চয়পত্র, স্থায়ী আমানত, ডাক সঞ্চয়পত্র এবং ক্রিপ্টোকারেন্সিতে বিনিয়োগ দেখানো হয়েছে মোট ৬ লাখ ৬৭৬ টাকা।
হলফনামায় সোনা ও মূল্যবান ধাতুর ক্ষেত্রে নিজ নামে অধিগ্রহণকালীন মূল্য দেখানো হয়েছে মাত্র ২৫ হাজার টাকা এবং স্ত্রীর নামে ৪০ হাজার টাকা। ইলেকট্রনিক পণ্যের মূল্য দেখানো হয়েছে ৩৩ হাজার ১৭০ টাকা এবং আসবাবপত্রের মূল্য ৪০ হাজার টাকা। সব মিলিয়ে অস্থাবর সম্পদের বর্তমান আনুমানিক মূল্য নিজ নামে দেখানো হয়েছে ১ কোটি ৯৫ লাখ টাকা এবং স্ত্রীর নামে ৪০ লাখ টাকা।
স্থাবর সম্পদে তুলনামূলক কম মূল্যায়ন
স্থাবর সম্পদের ক্ষেত্রে শাহজাহান চৌধুরী নিজ নামে ১ দশমিক ৫ একর কৃষি জমির অর্জনকালীন মূল্য দেখিয়েছেন মাত্র ১ লাখ ৩০ হাজার টাকা। অকৃষি জমির ক্ষেত্রে নিজ নামে দেখানো হয়েছে ১ লাখ টাকা। সব মিলিয়ে নিজ নামে থাকা স্থাবর সম্পদের বর্তমান মূল্য দেখানো হয়েছে মাত্র ৫ লাখ টাকা, যা তার ঘোষিত নগদ সম্পদের তুলনায় অত্যন্ত কম।
মামলার সংখ্যায় বড় চিত্র
হলফনামায় শাহজাহান চৌধুরী তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময়ে দায়ের করা মোট ৭১টি মামলার বিবরণ উল্লেখ করেছেন। তবে এসব মামলার বর্তমান অবস্থা চলমান, নিষ্পত্তিকৃত বা খালাস সংক্রান্ত বিস্তারিত তথ্য হলফনামায় স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়নি।
প্রশ্ন তুলছে সম্পদ আয়ের সামঞ্জস্য
ঘোষিত আয়ের পরিমাণ, বিশেষ করে ব্যবসা থেকে তুলনামূলক কম আয় এবং এর বিপরীতে বিপুল নগদ অর্থের উপস্থিতি স্বাভাবিকভাবেই সম্পদ অর্জনের উৎস ও সময়কাল নিয়ে প্রশ্ন তৈরি করছে। একই সঙ্গে স্থাবর সম্পদের মূল্যায়ন ও অস্থাবর সম্পদের ভারসাম্য নিয়েও আলোচনার সুযোগ তৈরি হয়েছে।
এমআরএএইচ/এমএএইচ/