ভিডিও EN
  1. Home/
  2. জাতীয়

মানবতাবিরোধী অপরাধ : আপিল শুনানির অপেক্ষায় ৮ মামলা

প্রকাশিত: ১১:১৩ এএম, ২০ জুন ২০১৫

মুক্তিযুদ্ধকালীন মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে দেয়া রায়ের বিরুদ্ধে আনা আরো ৮টি আপিল মামলা সুপ্রিমকোর্টের আপিল বিভাগে শুনানির অপেক্ষায় রয়েছে। এর মধ্যে বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর মৃত্যুদণ্ডের রায়ের বিরুদ্ধে আনা আপিলের শুনানি ১৬ জুন শুরু হয়েছে।

ইতোমধ্যে চার মামলায় আনা আপিল নিষ্পত্তি হয়েছে। এর মধ্যে জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদের আপিলেও মৃত্যুদণ্ড বহাল রেখে গত ১৬ জুন রায় ঘোষণা করেছেন সুপ্রিমকোর্টের আপিল বিভাগ। আপিলের রায়ের বিরুদ্ধে রিভিউ আবেদন করা হবে বলে জানান মুজাহিদের আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন।

তিনি বলেন, সংক্ষিপ্ত আকারে দেয়া আপিলের রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি প্রকাশের পর রায় পুনর্বিবেচনার (রিভিউ) আবেদনের জন্য ১৫ দিন সময় পাবেন মুজাহিদ।

আপিলে শুনানির অপেক্ষায় থাকা মামলার আসামিরা হলেন- জামায়াতের আমীর মতিউর রহমান নিজামী, জামায়াতের নির্বাহী পরিষদের সদস্য মীর কাশেম আলী, ব্রাহ্মণবাড়ীয়ার মোবারক হোসেন, জাতীয় পার্টির নেতা সাবেক প্রতিমন্ত্রী সৈয়দ মোহাম্মদ কায়সার, জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এটিএম আজহারুল ইসলাম, জামায়াতের নায়েবে আমীর আব্দুস সুবহান, জাতীয় পার্টির নেতা সাবেক সংসদ সদস্য পলাতক ইঞ্জিনিয়ার আব্দুল জব্বার ও চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জের মাহিদুর রহমান।

২০১৩ সালের ২১ জানুয়ারি প্রথম রায়ে জামায়াতে ইসলামীর সাবেক রুকন আবুল কালাম আজাদ ওরফে বাচ্চু রাজাকারের ফাঁসির আদেশ দিয়ে প্রথম রায় ঘোষণা করা হয়। পলাতক থাকায় তিনি আপিলের সুযোগ পাননি। এরপর একই বছরের ৫ ফেব্রুয়ারি দ্বিতীয় রায়ে জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আব্দুল কাদের মোল্লাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয়া হয়। ২০১৩ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর আপিল বিভাগ এ মামলার চূড়ান্ত রায়ে কাদের মোল্লাকে মৃত্যুদণ্ড দেন, যা ২০১৩ সালের ১২ ডিসেম্বর কার্যকর করা হয়।

ট্রাইব্যুনালের তৃতীয় রায়ে ২০১৩ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি জামায়াতের নায়েবে আমীর দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর ফাঁসির আদেশ হয়। ওই রায়ের বিরুদ্ধে আপিলের রায়ে গতবছর ১৭ সেপ্টেম্বর তার সাজা কমিয়ে আমৃত্যু কারাদণ্ডের আদেশ দেয় আপিল বিভাগ। ২০১৩ সালের ৯ মে চতুর্থ রায়ে জামায়াতের আরেক সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মোহাম্মদ কামারুজ্জামানকে মৃত্যুদণ্ড দেয় ট্রাইব্যুনাল। ওই রায়ের বিরুদ্ধে আপিলেও কামারুজ্জামানকে ট্রাইব্যুনালের মৃত্যুদণ্ডের রায় বহাল রেখে রায় দেন সুপ্রিমকোর্টের আপিল বিভাগ। গত ১১ এপ্রিল কামারুজ্জামানের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়।

পঞ্চম রায়ে মুক্তিযুদ্ধকালীন জামায়াতের আমীর গোলাম আযমকে ২০১৩ সালের ১৫ জুলাই ৯০ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। রায়ের বিরুদ্ধে আপিলের শুনানি অপেক্ষমান থাকা অবস্থায় গত বছর ২৩ অক্টোবর কারা হেফাজতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হয় তার। ইতোমধ্যে তার আপিলটি অকার্যকর ঘোষণা করা হয়েছে। একই বছরের ১৭ জুলাই ষষ্ঠ রায়ে জামায়াতের বর্তমান সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদকে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়। এ রায়ের বিরুদ্ধে আনা আপিলের ওপর গত ১৬ জুন রায় ঘোষণা করা হয়েছে। আপিলেও বুদ্ধিজীবী হত্যার দায়ে মৃত্যুদণ্ড বহাল রেখে রায় দিয়েছে আপিল বিভাগ। এ রায় রিভিউ’র আবেদন করা হবে বলে জানিয়েছে আসামিপক্ষ।

২০১৩ সালের ১ অক্টোবর সপ্তম রায়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর ফাঁসির রায় হয়। এ রায়ের বিরুদ্ধে আনা আপিলের ওপর শুনানি অব্যাহত রয়েছে। একই বছরের ৯ অক্টোবর বিএনপির সাবেক মন্ত্রী আবদুল আলীমকে আমৃত্যু কারাদণ্ড দেয় ট্রাইব্যুনাল। দণ্ড ভোগ করা অবস্থায় ৮৩ বছর বয়সে গতবছর ৩০ আগস্ট মৃত্যুবরণ করেন তিনি। ফলে তার আপিল মামলাটি অকার্যকর ঘোষণা করেন আপিল বিভাগ।

বুদ্ধিজীবী হত্যার দায়ে ’৭১-এর দুই আল-বদর নেতা আশরাফুজ্জামান খান ও চৌধুরী মঈনুদ্দীনকে ২০১৩ সালের ৩ নভেম্বর মৃত্যুদণ্ড দেয় ট্রাইব্যুনাল। তারা দু’জনেই পলাতক রয়েছেন। ফলে তারা আপিলের সুযোগ পাননি।

দশম রায়ে গতবছর ২৯ অক্টোবর জামায়াতের বর্তমান আমীর মতিউর রহমান নিজামীকে মৃত্যুদণ্ড দিয়ে রায় ঘোষণা করেন আদালত। এ রায়ের বিরুদ্ধে আনা আপিল শুনানির অপেক্ষায় রয়েছে। একাদশ রায়ে গতবছর ২ নভেম্বর জামায়াতের নির্বাহী পরিষদ সদস্য মীর কাসেম আলীকে মৃত্যুদণ্ড দেয় ট্রাইব্যুনাল। এ রায়ের বিরুদ্ধে আনা আপিল শুনানির অপেক্ষায় রয়েছে।

গতবছর ১৩ নভেম্বর ঘোষিত ফরিদপুরের নগরকান্দা পৌরসভার মেয়র ও বিএনপি নেতা পলাতক জাহিদ হোসেন ওরুফে খোকন রাজাকারকে মৃত্যুদণ্ড রায় দেয় ট্রাইব্যুনাল। এটি ছিল দ্বাদশ রায়। আসামি পলাতক থাকায় আপিলের সুযোগ পাননি। ব্রাহ্মণবাড়ীয়ার মোবারক হোসেনকে মৃত্যুদণ্ড দিয়ে গতবছর ২৪ নভেম্বর ঘোষিত রায় ট্রাইব্যুনালে দেয়া ১৩তম রায়। এ রায়ের বিরুদ্ধে আসামিপক্ষে আনা আপিল শুনানির অপেক্ষায় রয়েছে। সাবেক প্রতিমন্ত্রী সৈয়দ মোহাম্মদ কায়সারকে মৃত্যুদণ্ড দিয়ে গতবছর ২৩ ডিসেম্বর টাইব্যুনাল ১৪তম রায় ঘোষণা করেছে। এ রায়ের বিরুদ্ধে আনা আপিলও শুনানির অপেক্ষায় রয়েছে।

এছাড়া গতবছর ৩০ ডিসেম্বর জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারী জেনারেল এটিএম আজহারুল ইসলামকে মৃত্যুদণ্ড দিয়ে ট্রাইব্যুনাল ১৫তম রায় ঘোষণা করে। এ রায়ের বিরুদ্ধে আসামিপক্ষ আনা আপিল শুনানির অপেক্ষায় রয়েছে। জামায়াতের নায়েবে আমীর আব্দুস সুবহানকে মৃত্যুদণ্ড দিয়ে গত ১৮ ফেব্রুয়ারি ঘোষিত রায় ট্রাইব্যুনালের ১৬তম রায়। এ রায়ের বিরুদ্ধে আসামিপক্ষ আপিল দায়ের করেছে। এ আপিল শুনানির অপেক্ষায় রয়েছে।

জাতীয় পার্টির নেতা ও সাবেক সংসদ সদস্য পিরোজপুরের মঠবাড়িয়ার পলাতক ইঞ্জিনিয়ার আব্দুল জব্বারকে আমৃত্যু কারাদণ্ড দিয়ে গত ২৪ ফেব্রুয়ারি ঘোষিত রায় ট্রাইব্যুনালের ১৭তম রায়। আসামি পলাতক থাকায় আপিলের সুযোগ পাননি। তবে এ রায়ের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষ আপিল করেছে। আপিলে আসামির মৃত্যুদণ্ডের আর্জি জানানো হয়েছে। যা শুনানির অপেক্ষায় রয়েছে। চাঁপাইনবাবগঞ্জের রাজাকার মাহিদুর রহমান ও আফসার হোসেন চুটুকে মানবতাবিরোধী অপরাধে আমৃত্যু কারাদণ্ড দিয়ে গত ২০ মে ঘোষিত রায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের ১৮তম রায়। রায়ের বিরুদ্ধে আসামি মাহিদুর রহমানের পক্ষে আপিল দায়ের করা হয়েছে।

গত ৯ জুন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার পলাতক সৈয়দ মো. হাসান আলী ওরফে হাছেন আলীর বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় মৃত্যুদণ্ড দিয়ে রায় ঘোষণা করা হয়। এটি ট্রাইব্যুনালের ১৯তম রায়। এ রায়ের বিরুদ্ধে ৩০ দিনের মধ্যে সুপ্রিমকোর্টের আপিল বিভাগে আপিল করা যাবে। তবে সেই সুযোগ নিতে হলে হাসান আলীকে আদালতে আত্মসমর্পণ করতে হবে। পলাতক থাকলে আপিলের সুযোগ পাবেন না এ আসামি।

আরএস/আরআইপি/এসআরজে