ভিডিও EN
  1. Home/
  2. জাতীয়

লিবিয়ায় বাংলাদেশি হত্যাকারীদের বিচারের আওতায় আনতেই হবে : ব্র্যাক

কূটনৈতিক প্রতিবেদক | প্রকাশিত: ০৩:৫০ পিএম, ২৯ মে ২০২০

লিবিয়ায় ২৬ বাংলাদেশিকে গুলি করে হত্যার ঘটনায় জড়িত মানবপাচারকারী চক্রকে দ্রুত গ্রেফতার ও শাস্তির আওতায় আনার দাবি জানিয়েছে বেসরকারি সংস্থা ব্র্যাক।

প্রতিষ্ঠানটির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, এ বিষয়ে প্রয়োজনে বাংলাদেশকে আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থার সহযোগিতা নিতে হবে। কারণ লিবিয়ার এই পাচারকারী চক্র ইউরোপে পাঠানোর নামে দীর্ঘদিন ধরে অভিবাসীদের জিম্মি ও নিপীড়ন করছে। এরই সর্বশেষ শিকার বাংলাদেশিরা।

শুক্রবার (২৯ মে) ব্র্যাকের অভিবাসন কর্মসূচি প্রধান শরিফুল হাসান সাংবাদিকদের দেয়া এক বিবৃতিতে এসব কথা বলেন।

এর আগে, বৃহস্পতিবার লিবিয়ায় ২৬ বাংলাদেশিসহ ৩০ অভিবাসী শ্রমিককে গুলি করে হত্যা করেছে মানবপাচারকারী চক্রের এক সদস্যের পরিবারের লোকজন। নিহত বাকি চারজন আফ্রিকান। সাহারা মরুভূমি অঞ্চলের মিজদা শহরের এ ঘটনা ঘটে; যেখানে ১১ জন বাংলাদেশি আহত হন।

তিনি বলেন, ‘নিয়ন্ত্রণ করা (আধিপত্য) নিয়ে লিবিয়ায় গৃহযুদ্ধ চলছে। এটি তাদের অভ্যন্তরীণ বিষয়। কিন্তু এই সুযোগ নিয়ে গত প্রায় এক দশক ধরে মানবপাচারকারী চক্র সেখানে সক্রিয়। তারা ইউরোপে লোক পাঠানোর নামে একজনের কাছ থেকে গড়ে তিন থেকে চার লাখ টাকা নিচ্ছে। ভূমধ্যসাগরের কাছে লিবিয়ার বিভিন্ন সীমান্তে ক্যাম্প করে তারা লোকজনকে জিম্মি করে ছোট ছোট নৌকায় করে ইউরোপে পাঠাচ্ছে।’

শরিফুল হাসান বলেন, ‘প্রায়ই সেখানে দুর্ঘটনায় বাংলাদেশিরা প্রাণ হারাচ্ছেন। সর্বশেষ ২৬ জন নিহতের ঘটনায় বেঁচে যাওয়া একজন বাংলাদেশি ঘটনার যে বিবরণ দিয়েছেন এবং গণমাধ্যমের খবরেও সেসব কথা উঠে এসেছে। ৩৭ জন বাংলাদেশিসহ ৪০-৪২ জন মানুষকে জিম্মি করে মুক্তিপণ আদায়ের জন্য জড়ো করেছিল মানবপাচারকারী চক্র। এই চক্রকে গ্রেফতার করে বিচারের আওতায় আনার পাশাপাশি এর সঙ্গে জড়িতদের সবাইকে খুঁজে বের করতে বিভিন্ন দেশকে প্রয়োজনে একসঙ্গে কাজ করতে হবে।’

ব্র্যাকের এ কর্মকর্তা জানান, গত কয়েকবছরে আইওএম ও ব্র্যাকের প্রত্যাশা প্রকল্প থেকে ৩৫০ জন লিবিয়াফেরত বাংলাদেশিকে সহায়তা দেয়া হয়েছে। ফিরে আসা বাংলাদেশিরা জিম্মি ও মুক্তিপণ আদায়সহ নিপীড়নের নানা ঘটনার বর্ণনা দিয়েছেন। আন্তর্জাতিক বিভিন্ন প্রতিবেদন ও গণমাধ্যমেও এসব কথা উঠে এসেছে। এভাবে যেন আর কোনো অভিবাসী সেখানে প্রাণ না হারায় আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থাকে সেই দায়িত্ব নিতে হবে। এ বিষয়ে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়কে জোর ভূমিকা পালন করতে হবে।

ইউএনএইচসিআর-এর তথ্য অনুযায়ী, ২০১৪ থেকে এ বছরের এপ্রিল পর্যন্ত প্রায় সাড়ে বিশ লাখ মানুষ ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়েছেন। এভাবে সাগরপথ পাড়ি দিতে গিয়ে ১৯ হাজারেরও বেশি মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন, যার মধ্যে অনেক বাংলাদেশি রয়েছেন। ভূমধ্যসাগর দিয়ে যত মানুষ ইউরোপে প্রবেশ করার চেষ্টা করে, সেই তালিকার শীর্ষ ১০-এ আছে বাংলাদেশ। এ বছরের জানুয়ারি থেকে এপ্রিলেই শুধু ৬৯৩ জন বাংলাদেশি এভাবে ইউরোপে প্রবেশ করতে গিয়ে আটক হয়েছেন। আফগানিস্তান, সিরিয়া, আলজেরিয়া, মরক্কো, মালি, আইভরি কোস্ট, ইরাক, গায়েনা ও সুদানের মতো দেশের সঙ্গে বাংলাদেশিদের এভাবে ইউরোপ যাত্রা দেশের ভাবমূর্তিকেও সংকটে ফেলে।

শরিফুল হাসান বলেন, ‘বাংলাদেশ থেকে লিবিয়ায় কর্মী পাঠানো গত পাঁচ বছর ধরেই বন্ধ। তারপরও কী করে এত লোক বাংলাদেশ থেকে লিবিয়া যাচ্ছে, সেই ঘটনার তদন্ত করা উচিত। মূলত বাংলাদেশের সিলেট, সুনামগঞ্জ, নোয়াখালী, মাদারীপুর, শরীয়তপুরসহ সুনির্দিষ্ট কিছু এলাকার লোকজন এভাবে ইউরোপে যায়। কাজেই এই এলাকার স্থানীয় দালাল ও মানবপাচার চক্রকে চিহ্নিত করতে হবে। তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে বাংলাদেশকেই। পাশাপাশি আন্তর্জাতিক মানবপাচারকারী যে চক্রগুলো রয়েছে লিবিয়া বা অন্য দেশে তাদের বিরুদ্ধেও সোচ্চার হতে হবে আন্তর্জাতিকভাবে। বাংলাদেশ যেহেতু ‘পালেরমো প্রোটোকল’ অনুসমর্থনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে, কাজেই সেই সুযোগ রয়েই গেছে। মনে রাখতে হবে, যথাযথ ব্যবস্থা না নিলে এমন প্রাণহানির ঘটনা চলতেই থাকবে। স্বজন হারাতে হবে অনেক পরিবারকে। সংকটে পড়বে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি। কাজেই এই মরণযাত্রা বন্ধ করতেই হবে। এ বিষয়ে সচেতনতা তৈরিসহ অন্য সব কাজে সরকারের সঙ্গে থাকবে ব্র্যাক।’

জেপি/এফআর/পিআর