২০৩০ সালের মধ্যে জনসংখ্যার ৫৭ শতাংশই হবে যুবক
বর্তমান বিশ্বে তরুণ প্রজন্মই সবচেয়ে বড় সংখ্যা। ৩০ বছরের কম বয়সী তিন বিলিয়নেরও বেশি তরুণ রয়েছে। আগামী ২০৩০ সালের মধ্যে বিশ্বের অর্ধেকের বেশি মানুষ ৩০ বা তার কম বয়সী অর্থাৎ যুবকদের দ্বারা পূর্ণ হবে। আন্তর্জাতিক এক সমীক্ষায় শতাংশ হিসেবে যা ৫৭ শতাংশে পৌঁছাবে বলে আশা করা হয়েছে। এদের প্রশিক্ষণ ও সুন্দর গাইড-লাইনের মাধ্যমে আনতে না পারলে আগামীতে মহাবিপর্যয় নেমে আসবে বিশ্বে। তাই এ ব্যাপারে এখনই পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
পাশাপাশি তাদের প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতে পদক্ষেপ নেওয়া এবং স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রগুলোকে যুব-বান্ধব করা অত্যন্ত প্রয়োজন। কেননা যেকোনো দেশের প্রাণশক্তি হলো তরুণসমাজ। আজকের কিশোর, তরুণ ও যুবরাই আগামীর পরিবার, সমাজ ও দেশের চালিকাশক্তি। তাদের সুস্থ, সবল ও কর্মক্ষম করে জাতিগঠনের কোনো বিকল্প নেই বলে অভিমত ব্যক্ত করেছেন বক্তারা।
শুক্রবার (১১আগস্ট) রাজধানীর বাংলাদেশ শিশু কল্যাণ পরিষদ মিলনায়তনে বেসরকারি এনজিও লাইট হাউসের আয়োজনে ইউএসএআইডি সুখী জীবন প্রকল্প, পাথ ফাইন্ডার ইন্টারন্যাশনালের সহযোগিতায় মিডিয়া অ্যাডভোকেসি সভায় এসব অভিমত গণমাধ্যমে তুলে ধরা হয়।
লাইট হাউসের নির্বাহী প্রধান মো. হারুন অর রশিদের সভাপতিত্বে সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন ঢাকা রিপোর্টাস ইউনিটির (ডিআরইউ) সভাপতি মুরসালিন নোমানী এবং বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন বাংলাদেশ সম্পাদক ফোরামের সদস্য সচিব ও দৈনিক আজকালের খবরের সম্পাদক ফারুক আহমেদ তালুকদার। সভায় বিভিন্ন গণমাধ্যমকর্মী উপস্থিত ছিলেন।
সমীক্ষায় দেখা যায়, ৬৭ শতাংশ লোক একটি ভালো ভবিষ্যতে বিশ্বাস করে। এ বিষয়ে সবচেয়ে বেশি আশাবাদী ১৫ থেকে ১৭ বছর বয়সীরা। ফলে বিশ্বের জনসংখ্যার অর্ধেক হিসাবে, সুস্থ তরুণ প্রজন্মের সমাজের উন্নতিতে সাহায্য করার বিরাট সম্ভাবনা রয়েছে। এ প্রেক্ষাপটে ২০২২ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যার ৩৭ দশমিক ৭১ শতাংশ বা ৬ কোটি ২২ লাখ ৮১ হাজার জন যুবক। এর মধ্যে ১০ থেকে ১৪ বছর বয়সী কিশোর-কিশোরী ৯ দশমিক ৮৯ শতাংশ, ১৫ থেকে ১৯ বছর বয়সী কিশোর-কিশোরী ১০ দশমিক শূন্য ৩ শতাংশ, ২০ থেকে ২৪ বছর বয়সী তরুণ-তরুণীর ৯ দশমিক শূন্য ৮ শতাংশ, এবং ২৫ থেকে ২৯ বছর বয়সী যুবক-নারী ৮ দশমিক ৭১ শতাংশ। এ বিপুল জনসংখ্যাকে জনশক্তিতে রূপান্তর করতে হবে।
সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে মুরসালিন নোমানী বলেন, দেশের প্রাণশক্তি হলো তরুণসমাজ। এদের যথাযথ গাইডলাইনের মাধ্যমে গড়ে তুলতে হবে। এইচএসসির পরীক্ষার পর মেধা অনুযায়ী শিক্ষার্থীদের দেশ ও দেশের উন্নয়নে কাজে লাগাতে হবে। অন্যথায় উন্নয়নের চাকা থেমে পিছিয়ে পড়বে বাংলাদেশ। এক্ষেত্রে কারিগরি ও টেকনিক্যাল বিষয়ে বেশি গুরুত্ব দিতে হবে। একই সঙ্গে দেশের বিশাল এ যুবসমাজকে রাজনীতি, অর্থনীতি ও সমাজনীতিসহ সব বিষয়ে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে। পাশাপাশি স্বাস্থ্যসেবা উন্নত করতে হবে। সবাই যদি নিজের ও পরিবারের জন্য সঠিক তথ্য জেনে সুচিন্তিত সিদ্ধান্ত নিতে পারেন এবং কাঙ্ক্ষিত স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করা সম্ভব হয়, এতেই এগিয়ে যাবে বাংলাদেশ।
তিনি বলেন, পরিকল্পিত পরিবার গঠনের পাশাপাশি, নিরাপদ ও সুষ্ঠু প্রজনন স্বাস্থ্যসেবা সবার জন্য নিশ্চিত করতে বাংলাদেশ সরকারের পাশাপাশি কাজ করছে বিভিন্ন বেসরকারি উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা। তারপরেও এর পরিধি আরও বাড়াতে হবে। এক্ষেত্রে গণমাধ্যমকর্মীদের অনেক ভূমিকা রয়েছে।
সভায় জানানো হয়, টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা ২০৩০ অর্জন করতে হলে সব বয়সী মানুষের সক্ষমতার পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়নের পাশাপাশি সবার অধিকার, বিশেষত প্রজনন অধিকার নিশ্চিত করতে হবে। আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে সামাজিক রীতিনীতি ও বিশ্বাস অনেক ক্ষেত্রেই তরুণ প্রজন্মের প্রজনন অধিকার ও স্বাস্থ্য সেবা বাধাগ্রস্ত করে। এ থেকে উত্তরণের জন্য প্রয়োজন আন্তঃপ্রজন্মের সংহতি ও সহযোগিতা।
অন্যদিকে ১২ আগস্ট বিশ্ব যুব দিবস পালিত হবে। জাতিসংঘ কর্তৃক বিশ্ব যুব দিবস-২০২৩ এর নির্ধারিত প্রতিপাদ্য ‘যুবদের পরিবেশ বান্ধব দক্ষতাই: গড়বে টেকসই ধরিত্রী’। প্রতি বছরের এ দিনটিতে আন্তর্জাতিক যুব দিবস পালিত হয়ে থাকে। ১৯৯৯ সালের ১৭ ডিসেম্বর জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে আন্তর্জাতিক যুব দিবস পালনের প্রস্তাবটি অনুমোদিত হয়েছিল। দিনটি প্রথম পালিত হয় ২০০০ সালে।
দিবসটি উপলক্ষে রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে সভা-সেমিনার ও র্যালির আয়োজন করা হবে। দুপুর ২ টায় রাজধানীর বনানীর কড়াইল এরশাদ স্কুল মাঠে র্যালি অনুষ্ঠিত হবে। এছাড়া বনানীর এরশাদ স্কুল মাঠ ও গাজীপুরের টঙ্গী এরশাদ নগরের টিডিএস প্রাথমিক বিদ্যালয় অডিটরিয়ামে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে।
এমএএস/এমএএইচ/এএসএম