ভিডিও EN
  1. Home/
  2. জাতীয়

প্রধান উপদেষ্টাকে অভিযোগ

আওয়ামী লীগ নেতাদের দিয়ে চাঁদাবাজি করছেন বিএনপি নেতা

নিজস্ব প্রতিবেদক | প্রকাশিত: ০৬:০৮ পিএম, ০২ অক্টোবর ২০২৪

রাজধানীর দক্ষিণখানের কাওলা এলাকার বাসিন্দা সাজ্জাদ হোসেন জাকির ও আব্দুল হান্নান। চলাফেরা করেন একসঙ্গে। স্বেচ্ছাসেবক লীগের পরিচয়ে বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে হয়ে ওঠেন ভূমিদস্যু। তাদের নেতৃত্বে গড়ে ওঠা চক্রের ফাঁদে পড়ে বহু মানুষ সর্বস্বান্ত হয়েছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। এ নিয়ে হয়েছে মামলাও।

জানা যায়, স্থানীয় কমিশনার আনিসুর রহমান নাঈম ও ঢাকা-১৮ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য হাবিব হাসান নিয়ন্ত্রিত আওয়ামী ক্যাডারবাহিনীর সদস্য হিসেবেই এতদিন তাদের চিনতেন এলাকাবাসী। আওয়ামী লীগের পতনের পরও তারা সেই চাঁদাবাজি, দখলদারিত্ব ও ভূমিদস্যুপনা চালু রেখেছেন। শুধু পাল্টে গেছে আশ্রয়দাতা! আওয়ামী লীগের ক্যাডারবাহিনীর এ সদস্যরা এখন অপকর্ম করছেন বিএনপি নেতা আলাউদ্দিন সরকার টিপুর আশ্রয়ে-প্রশ্রয়ে।

আওয়ামী লীগের ক্যাডারদের আশ্রয় দেওয়া ও তাদের দিয়ে অপকর্ম করার অভিযোগে বিএনপির পক্ষ থেকে টিপুকে শোকজ করা হলেও তা থামেনি। বাধ্য হয়ে এবার প্রধান উপদেষ্টার দপ্তরে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দা আজিজুল হক। বুধবার (২ অক্টোবর) এ অভিযোগ দেন তিনি। অভিযোগপত্রে আজিজুল হক নিজেকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনের সক্রিয় কর্মী হিসেবে পরিচয় দিয়েছেন।

তবে আলাউদ্দিন সরকার টিপুর দাবি—দীর্ঘদিন এলাকায় না থাকায় কে বিএনপি, কে আওয়ামী লীগ—তা তিনি চিনতে পারেননি। আর আওয়ামী লীগের রাজনীতি করে বিএনপি সাজা অপকর্মকারীদের দাবি—তারা একটা সময় বিএনপি করতেন। চাপে পড়ে আওয়ামী লীগে যোগ দিয়েছিলেন। এখন আবার শুধরে নিয়ে বিএনপিতে ফিরছেন।

চাঁদাবাজি-দখলের যত অভিযোগ

লিখিত অভিযোগে বলা হয়েছে, ‘বিএনপির ঢাকা মহানগর উত্তরের সাবেক (বিলুপ্ত) আহ্বায়ক কমিটির সদস্য আলাউদ্দিন সরকার টিপুর কর্মকাণ্ডে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছেন উত্তরা, বিমানবন্দর ও দক্ষিণখানের বাসিন্দারা। ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর তার চাঁদাবাজি ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের মাত্রা বেড়েই চলেছে। আওয়ামী লীগ নেতা ও ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ৪৯ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর আনিসুর রহমান নাঈমের ব্যবসা-বাণিজ্য রক্ষার দায়িত্ব নিয়েছেন বিএনপি নেতা টিপু।’

‘টিপুর শেল্টারে উত্তরা, বিমানবন্দর ও দক্ষিণখানে চাঁদাবাজি, জমি দখল ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড পরিচালনা করছে আওয়ামী লীগ নেতা সাজ্জাদ হোসেন জাকির (৪২) এবং আব্দুল হান্নান। টিপুর ছেলে দোহা কিশোরগ্যাংয়ের সদস্যদের নিয়ে দক্ষিণখান থানা তাঁতী লীগের সহ-সভাপতি হুমায়ুন কবিরের অফিস পাহারার দায়িত্ব পালন করছে। কোনো ব্যবসা-বাণিজ্য না করেও আলাউদ্দিন সরকার টিপু গত দুই মাসে নিজের বাড়ির একাধিক ছাদ ঢালাই করেছেন। চলাচল শুরু করেছেন দামি গাড়িতে।’

আওয়ামী লীগ নেতাদের দিয়ে চাঁদাবাজি করছেন বিএনপি নেতা

অভিযোগে আরও উল্লেখ করা হয়, জমি ক্রয়-বিক্রয়, দখল ও জাল দলিল তৈরি করে জমি বিক্রিতে অভিযুক্ত সাজ্জাদ হোসেন জাকিরের জেএসডি এন্টারপ্রাইজ এখন টিপুর শেল্টারে পরিচালিত হচ্ছে। এ প্রতিষ্ঠান এক সময় উত্তরায় ছাত্রহত্যার ঘটনায় দায়ের করা একাধিক মামলার আসামি কাউন্সিলর আনিসুর রহমান নাঈমের শেল্টারে পরিচালিত হতো। টিপুর মাধ্যমে উত্তরায় আওয়ামী সন্ত্রাসীরা বিএনপির রাজনীতিতে সক্রিয় অংশগ্রহণ করছেন। বিমানবন্দর রেল স্টেশনের সামনের ফুটপাত ও আশকোনার ফুটপাত এখন টিপুর নিয়ন্ত্রণে। তার লোকেরা এখন এখানে দোকান বসিয়ে চাঁদা আদায় করেন।

টিপুকে বিএনপির শোকজ

এদিকে, আলাউদ্দিন সরকার টিপুর অনৈতিক কর্মকাণ্ডের ব্যাপারে জেনে তাকে ৩০ সেপ্টেম্বর কারণ দর্শানোর নোটিশ (শোকজ) করে বিএনপি। নোটিশে বলা হয়, বিএনপির নেতা হয়েও দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গ এবং নৈতিকতা পরিপন্থি কর্মকাণ্ডে আপনি লিপ্ত রয়েছেন বলে সুস্পষ্ট অভিযোগ রয়েছে। আপনি রাজধানীর দক্ষিণখান এলাকায় একই মঞ্চে আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীদের বসিয়ে বক্তৃতা করিয়েছেন, যার ছবি গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে।

প্রধান উপদেষ্টাকে দেওয়া অভিযোগে বিষয়টি উল্লেখ করে বলা হয়, ‘তবুও তার (বিএনপি নেতা টিপু) অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড থেমে নেই। উত্তরা, বিমানবন্দর ও দক্ষিণখানের মানুষের শান্তির কথা বিবেচনা করে টিপুকে গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনতে আপনার (প্রধান উপদেষ্টা) সুদৃষ্টি কামনা করছি।’

ভোল পাল্টে বিএনপিতে সক্রিয় হওয়া সাজ্জাদ হোসেন জাকির জাগো নিউজকে বলেন, ‘আমরা একটা সময় বিএনপি করতাম। মাঝে খুব চাপে ছিলাম। বোঝেনই তো… আওয়ামী লীগ সবাইরে বিএনপি করাইছে। এখন জোর-জুলুম নাই। তাই বিএনপিতে থাকতে চাই।’

জানতে চাইলে বিএনপি নেতা আলাউদ্দিন সরকার টিপু জাগো নিউজকে বলেন, আওয়ামী লীগের অত্যাচারে দীর্ঘ ১৭ বছর আমি এলাকায় ছিলাম না। জেল খেটেছি। শেখ হাসিনার পতনের পর এলাকায় বিভিন্ন প্রোগ্রামে যাচ্ছি। সেখানে অনেকে থাকছেন। যারা নতিস্বীকার করে আওয়ামী লীগে যোগ দিয়েছিলেন, তাদের বের করে দিচ্ছি। অথবা সেখান থেকে আমি সরে আসছি। যে প্রোগ্রামের ছবি প্রকাশ্যে আনা হচ্ছে, সেদিনের বিষয়টি আমি বুঝতে পারিনি। বিষয়টি জানার পর আরও সতর্ক হয়েছি।

চাঁদাবাজি, দখলের অভিযোগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘এগুলো সত্য নয়। এসব অভিযোগ তুলছেন হয়তো আমাদের দলেরই ষড়যন্ত্রকারী কোনো পক্ষ। সামনে কমিটি হবে, নির্বাচন হবে। সেখানে যেন আমি প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে না পারি, সেজন্য ষড়যন্ত্র চলছে। এগুলো সব ভিত্তিহীন ও মিথ্যা।’

এএএইচ/এমআরএম/জিকেএস