ভিডিও EN
  1. Home/
  2. মতামত

শিশুর দক্ষতা বাড়াতে করণীয়

ডা: সেলিনা সুলতানা | প্রকাশিত: ০৯:৫৬ এএম, ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫

স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারীরা শিশুর নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষায় বিকাশগত বিলম্বের লক্ষণগুলো খুঁজে বের করার চেষ্টা করেন। এ সময় শিশুর মধ্যে যদি অটিজমের কোনও লক্ষণ দেখা দেয়, তাহলে একজন শিশু বিশেষজ্ঞের কাছে রেফার করেন, যিনি অটিজম স্পেকট্রাম ডিসঅর্ডারে আক্রান্ত শিশুদের চিকিৎসা করেন। এই বিশেষজ্ঞ, একজন শিশু মনোরোগ বিশেষজ্ঞ, চিকিৎসা মনোবিজ্ঞানী, একজন শিশু স্নায়ু বিশেষজ্ঞ, একজন ডেভলপমেন্টাল পেডিট্রিশিয়ান বা উন্নয়নমূলক শিশু বিশেষজ্ঞ হতে পারেন।

যেহেতু অটিজম স্পেকট্রাম ডিসঅর্ডারের লক্ষণ এবং এর তীব্রতা ব্যাপকভাবে পরিবর্তিত হতে পারে, তাই রোগ নির্ণয় করা কঠিন হতে পারে। এখানে সুনির্দিষ্ট কোন মেডিকেল পরীক্ষা নেই যা দিয়ে ডায়াগনোসিস করা যাবে। বিশেষজ্ঞ টিম শিশুকে পর্যবেক্ষণ করবে এবং জিজ্ঞাসা করবেন যে সময়ের সাথে সাথে শিশুটি কীভাবে সামাজিক যোগাযোগ এবং আচরণের ক্ষেত্রে বিকশিত হয়েছে বা পরিবর্তিত হয়েছে। স্বাভাবিক বিকাশে যদি কোনও সীমাবদ্ধতা পরিলক্ষিত হয়, তাহলে কথা,ভাষার ব্যবহার, মানসিক বিকাশ, সামাজিক ও মানসিক সমস্যা চিহ্নিত করা হয়।

শিশুর আরও পরীক্ষা করা হয় যেমন শ্রবণশক্তি পরীক্ষা, রক্তে সীসার মাত্রা পরীক্ষা এবং অটিজমের জন্য স্ক্রিনিং পরীক্ষা। একজন অভিজ্ঞ শিশু বিশেষজ্ঞ, তিনি স্নায়বিক চেকআপে শিশুটির মানসিক অবস্থা, বুদ্ধিবৃত্তিক অক্ষমতা, উদ্যোগ, পারিবারিক বা জেনেটিক কোন সমস্যা, মৃগী রোগ থাকলে সেগুলো শনাক্ত করার চেষ্টা করবেন। যেখানে একটি বিশেষজ্ঞদের দল থাকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

দৈনন্দিন জীবনযাত্রার দক্ষতা শেখানোর জন্য পেশাগত থেরাপি বা অকুপেশনাল থেরাপি, চলাফেরা ও ভারসাম্য উন্নত করার জন্য শারীরিক থেরাপি সাহায্য করতে পারে। বাবা-মা এবং পরিবারের অন্যান্য সদস্যরা অটিজম আক্রান্ত শিশুদের সাথে কীভাবে খেলতে হয় এবং তাদের সাথে কীভাবে আগ্রহ দেখাতে হয় তা শিখে সামাজিক যোগাযোগের দক্ষতা, চ্যালেঞ্জিং আচরণ এবং দৈনন্দিন জীবনযাত্রার দক্ষতা বাড়াতে পারেন।

অটিজম তিন বছরের পূর্বেই ডায়াগনসিস করা যায়। বর্তমানে এমন কিছু জেনেটিক টেস্ট এবং সাইকোলজিক্যাল টেস্ট আছে যার মাধ্যমে একজন বাচ্চার অটিজম তিন বছরের পূর্বেই ডায়াগনসিস করা যায়।

সাইকোলজিক্যাল পরীক্ষাগুলোর মধ্যে একটি অন্যতম পরীক্ষা হলো ADOS 2 (বারো মাস থেকে প্রাপ্তবয়স্ক)।

অটিস্টিক অবস্থার উন্নতির জন্য কোন ঔষধ নেই। ঔষধ অটিজম স্পেকট্রাম ডিসঅর্ডারের লক্ষণ ভালো করতে পারে না, তবে নির্দিষ্ট ওষুধ লক্ষণগুলো নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করতে পারে। কিছু গুরুতর সতর্কতার লক্ষণগুলোর চিকিৎসার জন্য অ্যান্টিসাইকোটিক ও অ্যান্টিডিপ্রেসেন্ট ঔষধ দিয়ে থাকেন। অন্যান্য মানসিক ওষুধগুলো লক্ষণ দেখে ব্যবহার করা হয়ে থাকে।

এখানে একজন পুষ্টি বিশেষজ্ঞের মতামত অবশ্যই থাকতে হবে। কিছু গবেষণা দেখায় যে গ্লুটেন, কেসিন সমৃদ্ধ খাবারে অটিজম বৈশিষ্ট্য সম্পন্ন শিশুদের অস্থিরতা বেড়ে যায়। গ্লুটেন গম, বার্লি এবং রাইতায় থাকে, কেসিন দুধ, পনির এবং অন্যান্য দুগ্ধজাত দ্রব্যে পাওয়া যায়। উপরের খাবারগুলোয় সীমাবদ্ধ রাখলে শিশু একটি সুষম খাদ্য পাচ্ছে কিনা তা নিশ্চিত করতে একজন পুষ্টিবিদের পরামর্শ মতে খাদ্য তালিকা তৈরি করে নেয়া উচিত।

বিহেভিয়ার এন্ড কমিউনিকেশনস থেরাপি, এখানে অনেক প্রোগ্রাম আছে যেগুলো অটিজম স্পেক্ট্রাম ডিসর্ডার এর সাথে সংযুক্ত। কিছু প্রোগ্রাম চ্যালেঞ্জিং বিহেভিয়ারকে কমিয়ে আনার চেষ্টা করে।শিক্ষার জন্য নতুন দক্ষতা শিখানো হয়।অন্যান্য প্রোগ্রাম গুলো শিশুদের সামাজিক পরিস্থিতিতে কীভাবে অংশগ্রহণ করতে হয় বা অন্যদের সাথে আরও ভালভাবে যোগাযোগ করতে হয় তা শেখানোর উপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করে।

অ্যাপ্লাইড বিহেভিয়ারাল এনালাইসিস(ABA) - এটি একটি প্রোগ্রাম যার লক্ষ্য শিশুর আচরণগত দিকগুলো বিশ্লেষণ করা, যেখানে প্রাথমিক দক্ষতা শেখানো হয় যাতে শিশু যথাসম্ভব স্বাভাবিকভাবে কাজ করতে পারে। এ থেরাপির মাধ্যমে ইতিবাচক আচরণ শেখানো হয় এবং নেতিবাচক আচরণ সংশোধন করা হয়। শিশুদের নতুন দক্ষতা শিখাতে পুরস্কার দিয়ে অনুপ্রাণিত করা হয়।

অকুপেশনাল থেরাপি, শিশুদের ক্ষেত্রে খেলার মাধ্যমে তাদের দক্ষতা গুলো বাড়ানোর চেষ্টা করা হয়। অটিজম আক্রান্ত বড় শিশুদেরকে কিছু দক্ষতা প্রদান করা হয়, যাতে তারা জীবিকা অর্জন করতে পারে। এটি তাদের মোটর স্কুল ও ইন্দ্রিয়গত সমস্যাগুলো উন্নয়নেও সহায়তা করে।

স্পিচ থেরাপি, একজন অভিজ্ঞ থেরাপিস্টের এটি করা উচিত। স্পিচ থেরাপির মাধ্যমে শিশুকে কথা বলা, সঠিকভাবে যোগাযোগ করা শেখানো হয়। স্পিচ থেরাপি তাড়াতাড়ি শুরু করলে বেশিরভাগ শিশুরই শব্দভান্ডার বাড়ানোর দক্ষতা অর্জন করতে পারে। শিশুর চাহিদার উপর নির্ভর করে যোগাযোগ দক্ষতা উন্নত করার জন্য স্পিচ থেরাপি প্রয়োজন।

দৈনন্দিন জীবনযাত্রার দক্ষতা শেখানোর জন্য পেশাগত থেরাপি বা অকুপেশনাল থেরাপি, চলাফেরা ও ভারসাম্য উন্নত করার জন্য শারীরিক থেরাপি সাহায্য করতে পারে। বাবা-মা এবং পরিবারের অন্যান্য সদস্যরা অটিজম আক্রান্ত শিশুদের সাথে কীভাবে খেলতে হয় এবং তাদের সাথে কীভাবে আগ্রহ দেখাতে হয় তা শিখে সামাজিক যোগাযোগের দক্ষতা, চ্যালেঞ্জিং আচরণ এবং দৈনন্দিন জীবনযাত্রার দক্ষতা বাড়াতে পারেন।

অটিজম সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধির কারণে, আজকের দৃষ্টিভঙ্গি আগের চেয়ে অনেক বেশি ইতিবাচক হয়েছে। যার ফলে স্বাভাবিক বিকাশে কোন বিলম্ব হলে অতি দ্রুত পিতা-মাতা তাদের শিশুদের নিয়ে বিশেষজ্ঞদের শরণাপন্ন হচ্ছেন।

লেখক : কনসালটেন্ট: নিউরোডেভলপমেন্টাল ডিজঅর্ডার এবং চাইল্ড ডেভেলপমেন্ট এন্ড পেডিয়াট্রিক ডিপার্টমেন্ট, বেটার লাইফ হসপিটাল। প্রাক্তন অটিজম বিশেষজ্ঞ: ঢাকা কমিউনিটি মেডিকেল কলেজ এন্ড হসপিটাল।

এইচআর/এএসএম

আরও পড়ুন