ভিডিও EN
  1. Home/
  2. মতামত

ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী : আদর্শের রাজনীতির পথে হাঁটতে হবে

ড. মিল্টন বিশ্বাস | প্রকাশিত: ১০:১৯ এএম, ০৪ জানুয়ারি ২০২১

আজ ৪ জানুয়ারি ছাত্রলীগের ৭৩তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী। গতকাল এ উপলক্ষে ছাত্রলীগ সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয় পত্রিকান্তরে এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, অপরাধীদের জায়গা হবে না ছাত্রলীগে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের প্রত্যাশা করেছেন নতুন বছরে ছাত্র রাজনীতি ইতিবাচক ধারায় ফিরবে। কারণ অপরাধে জড়িত থাকায় প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) শাখা ছাত্রলীগের শীর্ষ নেতাদের বহিষ্কার করা হয়েছে। ছাত্রলীগ নেতা হয়ে অপরাধ করলেই তাকে আইনের আওতায় আনা হচ্ছে। তাদের বিরুদ্ধে দলের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী ব্যবস্থাও নেওয়া হচ্ছে। তবে বেশ কিছু অনাকাক্সিক্ষত ঘটনায় ২০২০ সালে দেশজুড়ে ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতা-কর্মীকেও নির্মমভাবে খুন করেছে প্রতিপক্ষরা।

ভালো-মন্দ মিলে বিভিন্ন পরিস্থিতির মধ্যে বর্তমান কমিটি ২০১৯ সালে দায়িত্ব গ্রহণের পর ছাত্রলীগের ৭৩তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে অঙ্গীকার করেছে- গৌরব, ঐতিহ্য, সংগ্রাম ও সাফল্যের ধারাবাহিকতা বজায় রেখে অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ বিনির্মাণ করবে। আমরা জানি বঙ্গবন্ধুর আমল থেকে ছাত্রলীগ শিক্ষার্থী ও সাধারণ মানুষের জন্য কাজ করছে। এজন্য করোনাভাইরাস মহামারিকালে সাধারণ মানুষের পাশে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা দাঁড়িয়েছে। তারা মৃতদেহ সৎকার করেছে, হ্যান্ড স্যানিটাইজার, মাস্ক বিতরণসহ করোনাকালে সাধারণ মানুষকে সচেতন করার সব কৌশল অবলম্বন করেছে। কোথাও অক্সিজেন সিলিন্ডারের অভাব দেখা দিলে নেতাকর্মীরা বিনামূল্যে সেটি সরবরাহ করেছে। এম্বুলেন্স সার্ভিস দিচ্ছে বিনামূল্যে। বোরো মৌসুমে হাওরাঞ্চলে ধানকাটা শ্রমিকের অভাব দেখা দিলে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা ধান কেটে কৃষকের বাড়ি পৌঁছে দিয়েছে। এমনকি শিক্ষার্থীদের বাড়িভাড়া ও অন্যান্য আর্থিক সমস্যায় তাদের পাশে থেকে সমস্যা সমাধানে চেষ্টা করেছে।

বিজ্ঞাপন

বিজ্ঞাপন

ছাত্রলীগের বর্তমান সভাপতি বলেছেন, শেখ হাসিনা যে সিদ্ধান্ত দেন সেই আলোকে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ পরিচালিত হয়। নেত্রী যে নির্দেশনা দিচ্ছেন সেগুলো তারা পালন করে যাচ্ছেন। তার মতে, ছাত্রলীগ একটি আদর্শিক ছাত্র সংগঠন, ছাত্রলীগ ৫০ লাখ নেতাকর্মীর সংগঠন, শিক্ষার্থীদের সংগঠন। বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে ধারণ করে নেত্রীর নির্দেশনা বাস্তবায়ন করাই তাদের অন্যতম কাজ।

উল্লেখ্য, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৪৮ সালের ৪ জানুয়ারি সময়ের দাবিতেই বাংলাদেশ ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠা করেন। প্রতিষ্ঠার পর থেকেই ভাষার অধিকার, শিক্ষার অধিকার, বাঙালির স্বায়ত্তশাসন প্রতিষ্ঠা, দুঃশাসনের বিরুদ্ধে গণঅভ্যুত্থান, সর্বোপরি স্বাধীনতা ও স্বাধিকার আন্দোলনের ছয় দশকের সবচেয়ে সফল সাহসী সারথি এই সংগঠন। বঙ্গবন্ধু যতদিন এই সংগঠনের সঙ্গে ছিলেন ততদিন সোনার বাংলা বিনির্মাণে কর্মী গড়ার পাঠশালা হিসেবে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ কাজ করে গেছে। শিক্ষা, শান্তি ও প্রগতির পতাকাবাহী এই সংগঠন বিদ্যার সঙ্গে বিনয়, শিক্ষার সঙ্গে দীক্ষা, কর্মের সঙ্গে নিষ্ঠা, জীবনের সঙ্গে দেশপ্রেম এবং মানবীয় গুণাবলির সংমিশ্রণ ঘটিয়েছে সূচনাকাল থেকেই। ১৯৭১ সালের ৩ মার্চ বঙ্গবন্ধু ছাত্রলীগের সমাবেশে বলেছিলেন, ‘দানবের সঙ্গে লড়াইয়ে যে কোনো পরিণতিকে মাথা পেতে বরণের জন্য আমরা প্রস্তুত। ২৩ বছর রক্ত দিয়ে এসেছি। প্রয়োজনবোধে বুকের রক্তগঙ্গা বইয়ে দেব। তবু সাক্ষাৎ মৃত্যুর মুখে দাঁড়িয়েও বাংলার শহীদদের রক্তের সঙ্গে বেইমানি করব না।’ মুক্তিযুদ্ধে এ সংগঠনের ১৭ হাজার বীর যোদ্ধা তাদের বুকের তাজা রক্ত দিয়ে স্বাধীনতা অর্জনে অবদান রাখেন।

বিজ্ঞাপন

বিজ্ঞাপন

যেহেতু বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে ধারণ আর নেত্রীর নির্দেশনা বাস্তবায়ন করেই ছাত্রলীগ পথ চলে এজন্য শেখ হাসিনার প্রত্যাশা নিয়ে কিছু কথা বলা দরকার। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁর একটি প্রবন্ধে ছাত্র রাজনীতির মূল লক্ষ সম্পর্কে লিখেছেনÑ ‘ছাত্র রাজনীতির মূল লক্ষ্য হচ্ছে সমাজ, দেশ ও রাষ্ট্রের ভবিষ্যৎ নেতৃত্বদানে নিজেকে গড়ে তোলা।’ (শেখ হাসিনা রচনাসমগ্র ১, পৃ ১৭৯) এজন্য তিনি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে শিক্ষার উপযুক্ত শান্তিপূর্ণ পরিবেশ ফিরিয়ে আনার প্রত্যাশা ব্যক্ত করেছিলেন ১৯৯৪ সালে। তিনি আরো লিখেছেন ‘আমরা শিক্ষাঙ্গনে সন্ত্রাসের বিরোধী।’ ২০২১ সালে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বাংলাদেশ নির্মাণের নতুন প্রজন্মের সাহসী সৈনিকরা অনেকেই নেতৃত্বে এগিয়ে এসেছেন। আর জননেত্রী শেখ হাসিনার যুগোপোযোগী নেতৃত্বের কারণে দেশ এগিয়ে চলেছে। এর আগে কারও মুখের দিকে না তাকিয়ে শিক্ষাঙ্গনে সন্ত্রাসে জড়িতদের বিরুদ্ধে ‘যথাযথ ব্যবস্থা’ নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন তিনি।

তিনি বলেছিলেন, ‘এখানে একটা নির্দেশ আমি দিতে চাই, যারাই এ ধরনের সমস্যা সৃষ্টি করবে বা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সন্ত্রাস করবে, যে দলের হোক, কে কোন দলের সেটা দেখার কথা না, যারা এ ধরনের কর্মকাণ্ড করবে সাথে সাথে তাদের বিরুদ্ধে অ্যাকশন নিতে হবে।’ ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে মতবিনিময়কালেও তিনি বলেছেন, ‘কী পেলাম চিন্তা না করে জনগণকে কী দিলাম- সেই চিন্তা কর।’ উপরন্তু তিনি তাদের লেখাপড়ায় মনোযোগী হতে বলেছেন এবং উৎসাহব্যঞ্জক কথায় নানান দিক-নির্দেশনা দিয়েছেন। তাঁর মতে, এই ছাত্রদের মধ্য থেকেই গড়ে উঠবে আগামী দিনের নেতৃত্ব। তারাই দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাবে। দেশ ও জাতির সেবা করা তথা দেশপ্রেমিক হওয়ার ওপরও তিনি গুরুত্বারোপ করেন। শেখ হাসিনা নিজে ষাটের দশকে ছাত্রলীগের সক্রিয় কর্মী ছিলেন আর বঙ্গবন্ধুর আদর্শে পথ চলছেন দীর্ঘদিন। এজন্য তাঁর কথাগুলো খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ফলে ছাত্রলীগ সম্পর্কে নানারকম অভিযোগের অবসানও হচ্ছে। তিনি অবগত আছেন কিছু ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীর অসদাচরণ সম্পর্কে। তিনি জানেন ছাত্রলীগের ছেলে-মেয়েরা মেধাবী হলেও লেখাপড়ায় মনোযোগী নয়। চাঁদাবাজি ও টেন্ডারবাজিতে জড়িয়ে আছে আরো কিছু ছাত্র। সব পরিস্থিতি জেনেই তিনি তরুণদের উদ্দেশ্যে তাঁর প্রত্যাশার কথা জানিয়েছেন।

বিজ্ঞাপন

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার যুগোপোযোগী নেতৃত্বের কারণে দেশ এগিয়ে চলেছে। ২০০৯ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত একটানা ক্ষমতায় আসীন আওয়ামী লীগ। সেই ২০০৮ সালের নির্বাচন থেকেই তরুণ ভোটারদের কথা তাঁর মনে এসেছে, এজন্য ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর নির্বাচনের আগে তিনি নির্বাচনি ইশতেহারটিও প্রাণপ্রাচুর্যে ভরা তরুণদের কাছে উপস্থাপন করেছিলেন। তাঁর প্রত্যাশা ডিজিটাল বাংলাদেশ এখন স্বপ্ন নয়, বাস্তব। দেশকে এগিয়ে নিতে চান তিনি, বাংলাদেশের মানুষ ভাল থাকুক, সুখে থাকুক, উন্নত জীবন পাকÑ এটাই তাঁর প্রত্যাশা। এজন্য ছাত্রসংগঠন রাজনীতির নামে নৈরাজ্য সৃষ্টি করলে তাদেরকে নিয়ন্ত্রণ করা প্রয়োজন। আমাদের মত উন্নয়নশীল দেশে উন্নয়নের অনেক অন্তরায়ের মধ্যে একটি অন্তরায় হল নোংরা ছাত্ররাজনীতি। অভিযোগ রয়েছে, বর্তমান ছাত্র সংগঠনগুলোর নেতৃত্ব ছাত্রদের ন্যায্য দাবি-দাওয়াসহ জাতীয় ইস্যুতে সোচ্চার হওয়ার চেয়ে নিজেদের আখের গোছাতেই ব্যস্ত। এই প্রবণতা থেকে ছাত্রদের মুক্ত করতে পারে শেখ হাসিনার রাজনৈতিক ক্যারিয়ার। শেখ হাসিনা ছাত্রলীগের একজন নেত্রী হিসেবে পাকিস্তান আমলে ‘ইডেন মহাবিদ্যালয় ছাত্রী সংসদ’-এ ভিপি পদে নির্বাচিত হয়েছিলেন। তিনি বঙ্গবন্ধুর মেয়ে হিসেবে নন, সে সময় তাঁর মেধা ও যোগ্যতার ভিত্তিতে সাধারণ ছাত্রীদের মন জয় করে নির্বাচিত হন। এটি ছিল আদর্শের জয়। এই আদর্শভিত্তিক সংগঠন ছাত্রদের পথপ্রদর্শক।

অবশ্য দু’দশক আগে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা ছাত্রদের দিয়ে দেশের উন্নয়ন ত্বরান্বিত করার চিন্তা করেন। ১৯৯৪ সালে তাঁর লিখিত ‘শিক্ষিত জনশক্তি অর্থনৈতিক উন্নয়নের পূর্বশর্ত’ শীর্ষক প্রবন্ধে আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থাকে বাস্তবমুখী করে গড়ে তুলতে চেয়েছিলেন তিনি। দেশের উৎপাদনমুখী কর্মকান্ডের সঙ্গে শিক্ষিত যুবক-তরুণীদের যথাযথভাবে সম্পৃক্ত করাই তাঁর লক্ষ্য ছিল। প্রতিটি ছাত্র যাতে তাদের নিজস্ব স্বাভাবিক মেধা-মনন, ক্ষমতা ও প্রবণতা অনুযায়ী পেশা বেছে নিতে পারে তার জন্য উপযুক্ত পরিবেশ সৃষ্টি করা তাঁর অন্তরের চাওয়া ছিল। সেসময় তাঁর প্রত্যয়দদৃপ্ত উচ্চারণ হলো- ‘শিক্ষাঙ্গনে শান্তি ও শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে আমরা বদ্ধপরিকর।’

আগেই বলা হয়েছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অস্থিরতা বিরাজ করলে তা প্রতিবিধানে তিনি সবসময়ই উদ্যমী ভূমিকা পালন করেছেন। উক্ত প্রবন্ধে তিনি ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের দিয়ে নিরক্ষরতা দূর করার কথা বলেছিলেন। একই কথা ছাত্রলীগকে এখনও স্মরণ করিয়ে দেন তিনি। উপরন্তু তিনি ফেল করা হতাশ শিক্ষার্থীদের নিয়ে ভেবেছিলেন। উপযুক্ত প্রশিক্ষণ দিয়ে তাদের দেশের সম্পদ উৎপাদনে ও গঠনমূলক কাজে নিয়োজিত করার কথাও লিখেছেন। সময়োপযোগী ও বাস্তবমুখী পরিকল্পনা গ্রহণ করে তাদের সমাজের দায়িত্ববান নাগরিক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার কথা ছিল তাঁর লেখায়। দুই দশক আগের এসব ভাবনার প্রতিফলন দেখা যাচ্ছে বর্তমান রাষ্ট্র পরিচালনায়।

বিজ্ঞাপন

গত মহাজোট সরকারের অন্যতম কীর্তি জাতীয় শিক্ষানীতি-২০১০ প্রণয়ন। ‘শিক্ষানীতি ২০১০’-এ ছাত্রদের চরিত্র গঠনের ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। শিক্ষানীতির ‘শিক্ষার উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য’ তিনÑ অংশে বলা হয়েছে: ‘মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় শিক্ষার্থীদের অনুপ্রাণিত করে তোলা ও তাদের চিন্তা-চেতনায় দেশাত্মবোধ, জাতীয়তাবোধ এবং তাদের চরিত্রে সুনাগরিকের গুণাবলি (যেমন: ন্যায়বোধ, অসাম্প্রদায়িক চেতনাবোধ, কর্তব্যবোধ, মানবাধিকার সচেতনতা, মুক্তবুদ্ধির চর্চা, শৃঙ্খলা, সৎ জীবনযাপনের মানসিকতা, সৌহার্দ্য, অধ্যবসায় ইত্যাদি) বিকাশ ঘটানো’ হবে।

এ কথা সত্য, মুক্তিযুদ্ধ-পরবর্তীকালে ছাত্ররাজনীতির রূপ পাল্টেছে। ২০২০-২০২১ সালের ছাত্ররাজনীতি এবং ষাট-সত্তর দশকের ছাত্ররাজনীতি কখনই এক নয়। কারণ মুক্তিযুদ্ধের পর ছাত্ররাজনীতি এবং বর্তমানের রাজনৈতিক বাস্তবতার রাজনীতি একেবারেই ভিন্ন। মুক্তিযুদ্ধের পর বাংলাদেশে ছাত্রসংখ্যা এবং বর্তমানের ছাত্র সংখ্যার মধ্যে ব্যাপক পার্থক্য রয়েছে। মুক্তিযুদ্ধের সময় ছাত্রসংগঠনগুলোর মধ্যে একটা স্পৃহা কাজ করতো, দেশকে স্বাধীন করতে হবে। কারণ এর মাধ্যমে বাংলাদেশের আলাদা একটা ভূখণ্ড হবে এবং বাংলাদেশ তার আত্মপরিচয় হিসেবে জাতীয় সংগীত ও পতাকা পাবে। সর্বোপরি পৃথিবীর বুকে বাংলাদেশ একটি স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে বিশ্ব দরবারে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারবে। ১৯৭১ সালে ছাত্ররা যুদ্ধ করেছে দেশের বাইরের শক্তি পাকিস্তানের সঙ্গে। কিন্তু বর্তমানে ছাত্রসংগঠনগুলো দেশের ভেতরে অর্থাৎ ঘরের ভেতরের শত্রুর সঙ্গে যুদ্ধ করছে।

বর্তমানে বাংলাদেশের ভেতর এমন কতকগুলো সংগঠন রয়েছে যারা বাঙালি এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতানাকে ধারণ করে না এবং যারা ধারণ করে তাদেরকে দমন করার চেষ্টা করে। এরা বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ভাঙতেও সাহস দেখায়। ফলে বর্তমান ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারের চিন্তা-চেতনা হল কীভাবে বাংলাদেশকে সমৃদ্ধশালী এবং বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা প্রতিষ্ঠা করা যায়। আওয়ামী লীগ সরকারের চিন্তা-চেতনা ও কর্মসূচির সাথে ছাত্রলীগের চিন্তা-চেতনার একটা গভীর মিল রয়েছে। বাংলাদেশ ছাত্রলীগ সরকারের এই কর্মসূচিকে সমর্থন করে এবং এর সফলতার জন্য কাজ করে। অন্যদিকে ছাত্রলীগ শিক্ষা নিয়ে রাজনীতি করে। তাই ছাত্রলীগের প্রধান মন্ত্র হল শিক্ষা ব্যবস্থাকে পরিচালনা করা। একবিংশ শতাব্দীর ছাত্রদের এই স্বপ্ন ও আকাঙ্ক্ষার পিছনে রয়েছে বিংশ শতাব্দীর বিশ্বব্যাপী ছাত্র রাজনীতির প্রাণিত ইতিহাস। বিংশ শতাব্দী ছিল বিশ্বব্যাপী ছাত্র রাজনীতির অঢেল অর্জন আর অধিকার আদায়ের স্মরণীয় যুগ। একারণে এই একবিংশ শতাব্দীর বিশ্বায়নের যুগে দাঁড়িয়ে ওই শতাব্দীর শিক্ষার্থীদের নিজ নিজ যোগ্যতা ও মেধার মাধ্যমে জাতীয় রাজনীতিতে ব্যাপক প্রভাব বিস্তার করার বিষয়টি আমরা উপলব্ধি করতে পারছি। কেবল রাজনীতি নয় পরিবেশ, অর্থনীতি এবং সমাজ পরিবর্তনের নানা ক্ষেত্রে তারা পাঠ্যসূচির বাইরে অবদান রেখেছে।

বিজ্ঞাপন

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তাঁর জীবনের সর্বশেষ অর্থাৎ ১৯৭৪ সালের বিজয় দিবসের ভাষণে বলেছিলেন : ‘একটি কথা আমি প্রায়ই বলে থাকি। আজো বলছি, সোনার বাংলা গড়তে হলে সোনার মানুষ চাই।’ সেদিন তিনি আরো বলেছিলেন, ‘চরিত্রের পরিবর্তন না হলে এ অভাগা দেশের ভাগ্য ফেরানো যাবে কিনা সন্দেহ। স্বজনপ্রীতি, দুর্নীতি ও আত্মপ্রবঞ্চনার ঊর্ধ্বে থেকে আমাদের সকলকে আত্মসমালোচনা, আত্মসংযম এবং আত্মশুদ্ধি করতে হবে। মনে রাখতে হবে আপনি আপনার কর্তব্য দেশের জনগণের প্রতি কতটা পালন করেছেন, সেটাই বড় কথা।’ চরিত্র পরিবর্তনের যে কথা তিনি বলেছিলেন তা বর্তমান ছাত্রসমাজের ক্ষেত্রে একান্তই প্রযোজ্য। কারণ কৃষক-শ্রমিকের পর দেশের উন্নয়নের চাকা ঘুরছে তাদের হাত দিয়ে। জাতির পিতা যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলায় বার বার বলতেন, স্বাধীনতা অর্জন করা যত সহজ, রক্ষা করা আরও কঠিন। তিনি স্বাধীনতার অর্জনকে সাফল্যের স্বর্ণশিখরে নিতে আদর্শ ও ত্যাগের মহিমায় একটি জাতিকে নৈতিক চরিত্রে দাঁড় করানোর আকুতি জানিয়েছেন। তাঁর নিরাভরণ সাদামাটা জীবনের ছবি এখনো উজ্জ্বল হয়ে আছে। তার আদর্শের অনুসারী হয়েই আত্মসমালোচনা, আত্মসংযম আর আত্মশুদ্ধির মাধ্যমে আদর্শের রাজনীতির পথে হাঁটতে হবে বর্তমান ছাত্র সমাজকে। এই শতাব্দীর বিশ্বের সর্ববৃহৎ ছাত্র সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগ। গৌরব, ঐতিহ্য, সংগ্রাম ও সাফল্যের দীর্ঘ পথচলায় ছাত্রলীগ বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ধারণ করেই রাজনীতির সুস্থ ধারা অব্যাহত রাখবে- প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে আমাদের এটাই প্রত্যাশা।

লেখক : কবি, কলামিস্ট, সাধারণ সম্পাদক, বাংলাদেশ প্রগতিশীল কলামিস্ট ফোরাম, নির্বাহী কমিটির সদস্য, সম্প্রীতি বাংলাদেশ এবং অধ্যাপক, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়।
drmiltonbiswas1971@gmail.com

এইচআর/জেআইএম

বিজ্ঞাপন