নিজেকে কেন ধ্বংস করছি

আমরা লক্ষ্য করছি মানুষ যেন আজ কিসের নেশায় মত্ত হয়ে দিগবিদিক ঘুরছে আর হিতাহিত জ্ঞান হারিয়ে নৃশংস সব কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়ছে। বিশ্বময় মহামারি করোনায় যেখানে লাখ লাখ মানুষ মৃত্যুবরণ করছে আর সবাই যেখানে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় দিনাতিপাত করছে সেখানে যত ধরনের খারাপ কাজ আছে তা যেন পাল্লা দিয়ে বাড়ছে।
একই সাথে সারা দেশে কিশোর গ্যাং কালচার ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। এলাকায় আধিপত্য বিস্তার, চাঁদাবাজি, চুরি-ছিনতাই থেকে শুরু করে খুনাখুনিসহ নানা অপরাধে কিশোর-তরুণরা জড়িয়ে পড়ছে। আজ দড়িবেঁধে নারীর নির্যাতনের খবর পেলে আগামীকাল পাচ্ছি নারীকে বিবস্ত্র করে নির্যাতনের খবর, পরের দিন পাচ্ছি নারীকে চার টুকরো করে নৃশংসভাবে হত্যার খবর। এককথায় বলা যায় আজ আমরা চরম অস্থিরতার মধ্য দিয়ে সময় অতিবাহিত করছি।
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
যুবকরা যেখানে আদর্শ নাগরিক হিসেবে সুন্দর পৃথিবী গড়ার লক্ষ্য নিয়ে পড়ালেখা শেষ করে দেশের উন্নয়নে কাজ করার কথা সেখানে তারা জড়িয়ে পড়ছে নানা অন্যায় কাজে। আজকের তরুন সমাজ আগামীর দেশ ও জাতির কাণ্ডারি।
একটি দেশ ও জাতির জন্য যৌবন হচ্ছে একটি আদর্শ স্বপ্ন। যে জাতির যুব সমাজ যত দক্ষ এবং উন্নত চরিত্রের অধিকারী সে জাতি তত বেশি দ্রুত উন্নতির উচ্চ শিখরে পৌঁছতে পারে। কিন্তু আজ আমরা কি দেখছি? বর্তমান সময়ে অধিকাংশ যুব সমাজ মাদক-আক্রান্ত হয়ে ধ্বংসের অবলীলায় নিপতিত হতে দেখা যায়। বিভিন্ন ধরনের মাদকের সয়লাব যুবকদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়াতে তারা কোনো না কোনো উপায়ে নেশাগ্রস্ত হয়ে পড়ছে। মাদক বর্তমানে এত বেশি ব্যাপক আকার ধারণ করছে, যার ভয়ানক প্রভাব ও বিস্তার লক্ষ্য করা যায় আমাদের মানুষ গড়ার আঙ্গিনা-শিক্ষাঙ্গনগুলোতেও। এটি বর্তমান সময়ে যুব সমাজের জন্য একটি ভয়ানক পরিণতি ও অশনি সংকেত।
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
সম্প্রতি যুবসমাজের কর্মকাণ্ডের প্রতি তাকালে জাতিকে অবাক হতে হয়। কারণ দেশ ও জাতির কর্ণধার সেই যুবসমাজ নৈতিক অবক্ষয়ের সাগরে আকণ্ঠ নিমজ্জিত। তাদের অনেকেরই নৈতিক কিংবা সামাজিক মূল্যবোধ নেই। এই যুবকদের মধ্যে কেউ মাদকাসক্ত, কেউ অসামাজিক, কেউ চাঁদাবাজি, কেউ অস্ত্রবাজি, কেউ চুরি-ডাকাতি-ছিনতাই, প্রভৃতি অন্যায় অপকর্মে লিপ্ত। দেশে একেরপর এক নারী-শিশু ধর্ষণের শিকার হচ্ছে, এর বেশিরভাগ অপরাধ যুবকদের দ্বারাই সংঘঠিত হচ্ছে।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে এসব কেন ঘটছে? এর জন্য দায়ী কে? আমরাই বা এর জন্য কি করতে পারি? একটু গভীরভাবে চিন্তা করলে বুঝা যায় যে, মানব শিশু বেড়ে উঠে সামাজিকীকরণের মাধ্যমে। এর প্রথম ধাপ হচ্ছে পরিবার। পরিবার, খেলার সাথী, বিদ্যালয়, গণমাধ্যম ইত্যাদির প্রভাব শিশুদের ওপর পর্যায়ক্রমে পড়তে থাকে। পরিবার হচ্ছে সন্তানের সুশিক্ষার প্রধান স্থান। আমরা কি কখনও ভেবে দেখেছি আমাদের সন্তানরা কেন এতটা জঘন্য হয়েছে যে পিতার পরিচয় দিতে ঘৃণা হয়।
বিজ্ঞাপন
আজ যে সন্তানের জন্য নিজের পরিচয় দিতে ঘৃণাবোধ করি তা কিন্তু একদিনে হয় নি। সন্তান জন্ম দিলেই যে ভালো হবে তা কিন্তু নয়। সন্তানকে উত্তম আদর্শ দিয়ে গড়ে তুলতে হয়। মানুষকে মানুষ হয়ে উঠতে গেলে পেরোতে হয় অনেক বাধা-বিপত্তি। শেখ সাদীর ভাষায় বলতে হয় ‘মনুষ্যত্ব দয়া এবং বীরত্বের ওপর নির্ভর করে। শুধু মানবরূপ গঠনকে কখনো মানুষ বলে ধরে নেয়া উচিত নয়। মানুষ বলে পরিচিত হতে হলে জ্ঞানের দরকার। শুধু আকৃতি দিয়ে মানুষ হতে পারে না।’
সন্তান জন্মের পর থেকেই তাকে উত্তম নৈতিক আদর্শ দিয়ে বড় করতে হবে। আমাদের সন্তান কোথায় যায়, কার সাথে মিশে, বাহিরে কি করছে তা কি কখনও খোঁজ করেছি? ছোট ছোট অন্যায়গুলোকে আমরা দিনের পর দিন প্রশ্রয় দিয়েছি। সন্তানের অন্যায়কে আমরা দিনের পর দিন মেনে নিয়েছি আর যখন সে বড় ধরনের অন্যায় করে বসেছে তখনও তাকে বাচাঁনোর শত চেষ্টা করছি। এই যদি হয় আমার অবস্থা তাহলে আমার সন্তান ধর্ষণ বলুন আর অন্যান্য মন্দকাজ কেন করবে না। সে তো এসব অন্যায়কে অন্যায় মনে করছে না, কেননা সে জানে যে এসব কাজে পরিবারের পক্ষ থেকে কোন বাধা নেই। আমি যাই করি না কেন আমার পরিবার আমার পক্ষেই থাকবে। আমাকে উদ্ধার করে আমাকে আদর যত্নই করবে।
আসলে বর্তমান সময়ে যুবসমাজের সার্বিক অবক্ষয়ের বড় কারণ হলো সন্তানদের প্রতি পরিবারের দায়িত্বশীলদের যথাযথ তদারকির অভাব। সমাজের অনেক পিতা-মাতা, নিজ সন্তানের চলাফেরা ও গতিবিধির প্রতি লক্ষ্যই রাখেন না। স্কুলে পড়ার সময় আমরা ভাবতেই পারতাম না যে সন্ধ্যার পর ঘরের বাইরে থাকা যায়। সমাজে যে ছেলেটি কিছুটা বোখাটে তার সাথে কথা বলতেও ভয় পেতাম এই ভেবে যে নাজানি পরিবারের কেউ দেখে ফেলে। কিন্তু আজ অধিকাংশ পরিবারে সন্তানদের প্রতি কোন খেয়ালই রাখা হয় না।
বিজ্ঞাপন
যুবকদেরকে ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষায় এবং সমাজকে অবক্ষয়মুক্ত করতে হলে প্রতিটি পরিবারকে এগিয়ে আসার কোন বিকল্প নেই। অপরাধ দমনে যতই আইন করা হোক না কেন প্রতিটি পরিবার যদি সোচ্চার না হয় সেক্ষেত্রে অপরাধ দমন করা সম্ভব নয়। যুবকদের প্রেমময় রূপের কারণে দরিদ্র, নি:সহায়, প্রবঞ্চিত ও নি:গৃহীত জনতা লাভ করে নতুন জীবন-প্রদীপ্ত হয় অভিনব উদ্দীপনায়। যুবকদের এই সুন্দর জীবনকে ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা করা প্রতিটি পরিবারের দায়িত্ব। আমরা যদি আমাদের সন্তানদের উত্তম আদর্শে গড়ে তুলি তাহলে একজন যুবক হতে পারে দেশ, জাতি ও সমাজের আদর্শ। পথহারা যুবকদের সংশোধনের জন্য হতে পারে আলোক বর্তিকা।
পরিশেষে এটাই বলব-হে যুবক! উশৃঙ্খল জীবন পরিহার করে সমাজ ও দেশের উন্নয়নের অংশীদার হও। ভবিষ্যতের জন্য তুমি কি রেখে যাচ্ছ সেই চিন্তা কর। সুন্দর এ জীবনকে ধ্বংসের মুখে ঠেলে দিও না। তুমি কি কখনও ভেবে দেখেছো, তোমার অপরাধের কারণে তোমার পিতা-মাতা সহ পুরো পরিবারে কতটা কষ্ট এবং সামাজিকভাবে হেয় প্রতিপন্ন হবে? তোমার অপরাধে শুধু তুমি নিজেই শেষ হচ্ছো না বরং পুরো পরিবারকে তুমি শেষ করে দিচ্ছ।
আমি যুবক, আমি সমাজকে আলোর পথ দেখাব। আমার পথ চলা হবে সমাজ সংস্কারের লক্ষ্যে। তাইতো আমাকে নিয়ে দেশ ও জাতি অনেক স্বপ্ন দেখে। সেই আদর্শ স্বপ্নকে আমি কোনভাবেই ধ্বংস করে দিতে পারি না।
বিজ্ঞাপন
এইচআর/জেআইএম
বিজ্ঞাপন