ভিডিও EN
  1. Home/
  2. মতামত

মহামারি নিয়ন্ত্রণে তবুও প্রতিরোধ ব্যবস্থা জোরদার করছে চীন

আলিমুল হক | প্রকাশিত: ১০:১৪ এএম, ২৪ মে ২০২১

আমরা, মানে যেসব বিদেশি, চায়না মিডিয়া গ্রুপে (সিএমজি) কাজ করি, তাদের প্রতি বছর একবার থরো মেডিকেল চেকআপ করাতে হয়। ব্যয় অফিসই বহন করে, তবে কর্মস্থল থেকে পাতালরেলে পৌনে এক ঘণ্টার পথ পাড়ি দিয়ে চিকিৎসা কেন্দ্রে যেতে হয় নিজেকেই। কেউ চাইলে সড়কপথেও যেতে পারেন। পাতালরেলে যেমন বেইজিংয়ের প্রায় সব জায়গায় যাওয়া যায়, তেমনি যাওয়া যায় সড়কপথেও। বেইজিংয়ের মাটির নিচে যেমন জালের মতো ছড়িয়ে আছে পাতালরেলের লাইন, তেমনি মাটির উপরে আছে অসংখ্য বাস-রুট; এসব রুটে প্রতিনিয়ত চলছে শত শত বাস। কোনো কোনো জায়গায় যেতে পাতালরেল ও সড়কপথ—দুটিই ব্যবহার করা যেতে পারে, অনেকে করেনও। গত ২০ মে ছিল আমার চেকআপের পালা এবং আমার পছন্দ পাতালরেল।

বেইজিংয়ের পাতালরেলের এক নম্বর লাইনটি সবচেয়ে পুরাতন, প্রায় ৬৫ বছরের। আমাদের কর্মস্থলের বা বাসস্থানের সবচেয়ে কাছাকাছি সাবওয়ে স্টেশনটির নাম পাপাওশান। স্টেশনে ঢুকলেই এক নম্বর লাইন। মেডিকেল সেন্টার হচ্ছে হ্যফিংলি পেইচিয়ে স্টেশনের একদম কাছে। এক নম্বর লাইন থেকে ৫ নম্বর লাইন হয়ে সেখানে যেতে হয়। সকাল সাড়ে ১১টার দিকে পাপাওশান স্টেশন থেকে ট্রেনে উঠলাম। আসনও পেলাম। এ সময় পাতালরেলে স্বাভাবিকভাবেই ভিড় কম থাকে।

মহামারি শুরুর পর থেকে আমার একটা অভ্যাস হচ্ছে, ঘর থেকে বের হলেই বাইরে চলাচলকারী মানুষকে পর্যবেক্ষণ করা। আমি দেখি, কেউ মাস্ক পরা নেই কি না। চীনে এখন আর উন্মুক্ত স্থানে মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক নয়। তথাপি অধিকাংশ চীনা উন্মুক্ত স্থানেও (যেমন- ফুটপাত, পার্ক, ইত্যাদি স্থানে) মাস্ক পরেন। মাস্ক ছাড়া খুব কম মানুষই চোখে পড়ে। কিন্তু যানবাহন, শপিংমল ইত্যাদি জনসমাগমের স্থানে এখনও মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক। পাতালরেলও এর ব্যতিক্রম নয়।

বেইজিংয়ের পাতালরেলের যাত্রীদের অধিকাংশই ব্যস্ত থাকেন স্মার্টফোনে। কেউ চ্যাট করেন, কেউ ই-বুক পড়েন, কেউ গেমস্ খেলেন, কেউ মুভি দেখেন, কেউবা ব্যস্ত থাকেন টিকটকের মতো সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। যাত্রাপথে আমার স্মার্টফোনটি সাধারণত পকেটেই থাকে। আমি বরং মানুষ দেখি, এদিক-ওদিক তাকাই, দেখি কেউ মাস্ক ছাড়া আছেন কি না! ততক্ষণে ভিড় বেড়েছে। আসনগুলো আর খালি নেই। কেউ কেউ দাঁড়িয়ে যাচ্ছেন। সবার মুখে মাস্ক। হঠাৎ লক্ষ্য করলাম, আমার সামনের সারির আসনে বসা এক মাঝ সয়সী নারীর মুখের মাস্কটি নাকের নিচে নেমে এসেছে। উনি সামনের দিকে ঝুঁকে মোবাইলে কিছু একটা করছিলেন। সম্ভবত এ কারণেই মাস্কটি স্থানচ্যুত হয়।

স্বাভাবিকভাবেই ট্রেনের অন্য যাত্রীদের কেউ তাকে কিছু বলছেন না। কিন্তু ট্রেনের একজন গার্ড ঠিকই একসময় অকুস্থলে হাজির হলেন, ভদ্রমহিলাকে মাস্ক নাকের উপর টেনে দিতে অনুরোধ করলেন। শুরুর দিকে ভদ্রমহিলা বিষয়টা বুঝতে পারলেন বলে মনে হলো না। তিনি জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে গার্ডের দিকে তাকালেন। গার্ড তখন তাকে তার ওয়াকিটকি দেখিয়ে কিছু্ একটা বললেন। ভদ্রমহিলা তখন মাস্ক নাকের উপর ওঠালেন। আমি বুঝলাম, ট্রেনের বগিগুলোতে বিভিন্ন অ্যাঙ্গেলে লাগানো পর্যাপ্ত সিসি ক্যামেরা থেকে পাওয়া লাইভ ছবি যিনি বা যারা মনিটর করছেন, তিনি বা তারা গার্ডকে ওয়াকিটকির মাধ্যমে ওই ভদ্রমহিলার অবস্থান জানিয়েছেন! গার্ড সে-নির্দেশনা অনুসারেই আমাদের বগিতে এসে হাজির হয়েছেন!

jagonews24

মজার ব্যাপার হচ্ছে, চেকআপশেষে ফেরার পথেও একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটলো। এবার ‘কালপ্রিট’ হচ্ছেন এক যুবক। তারও মাস্কটি নাকের নিচে মেনে এসেছে কোনো এক বেখেয়াল মুহূর্তে। আমি আগ্রহ নিয়ে এদিক-ওদিক তাকাচ্ছি। মনে মনে খুঁজছি গার্ডকে। ট্রেনের সব বগিতে গার্ড থাকেন না। তারা ঘুরে বেড়ান এক বগি থেকে আরেক বগিতে। একসময় আমার প্রতিক্ষার অবসান ঘটিয়ে একজন গার্ড এলেন এবং সরাসরি ওই যুবকের সামনে গিয়ে দাঁড়ালেন। সকালের ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটলো। যুবক বিনাবাক্যব্যয়ে মাস্ক নাকের উপর তুললেন, গার্ডও সন্তুষ্টচিত্তে অন্য বগির উদ্দেশ্যে রওয়ানা হলেন।

বাংলাদেশে আমার পরিচিতজনদের কেউ কেউ আমাকে জিজ্ঞেস করেন: চীন কীভাবে মহামারি নিয়ন্ত্রণ করেছে? আমি তাদের প্রশ্নের উত্তরে যে চারটি কারণ (আমার বিবেচনায়) উল্লেখ করি, তার চতুর্থ কারণটি হচ্ছে: চীনে আইনের যথাযথ প্রয়োগ ও চীনাদের আইন মেনে চলার প্রবণতা। আসলে আইন মেনে চলা একটা অভ্যাসের বিষয়। আইনের যথাযথ ও সুষম প্রয়োগ হলে একটি দেশ বা অঞ্চলের মানুষের আইন মেনে চলা একসময় অভ্যাসে পরিণত হয়। চীন ও চীনাদের ক্ষেত্রেও এটিই ঘটেছে। প্রতিদিন লক্ষ লক্ষ মানুষ বেইজিংয়ের পাবলিক যানবাহনগুলো ব্যবহার করেন। কোথাও আপনি মাস্ক ছাড়া কাউকে দেখবেন না। কালেভদ্রে দু’একজনকে দেখা গেলেও, আইনের হাত ঠিকই তার পর্যন্ত পৌঁছে যাবে! মহামারি নিয়ন্ত্রণ করতে সরকার যখন যে-নিয়ম চালু করেছে, চীনারা সে-নিয়ম অক্ষরে অক্ষরে পালন করেছে ও করছে। কোথাও অন্যথা হবার জো নেই। আমি মনে করি, চীনে মহামারি নিয়ন্ত্রণে আসার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ কারণ হচ্ছে এটি।

আর প্রথম কারণটি হচ্ছে, মানুষের জীবন বাঁচানোর ওপর সরকারের সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়ার নীতি। উহানে যখন মহামারি প্রথম দেখা গেল, তখন চীনা প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং স্পষ্টভাবেই বলেছিলেন: আগে জীবন বাঁচাতে হবে। জীবন বাঁচাতে সম্ভাব্য সবকিছু করাই সরকারের লক্ষ্য। অর্থনীতির চাকা থেমে থাকুক, আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে ধস নামুক, পড়াশুনার সাময়িক ক্ষতি হোক—কোনো পরওয়া নেই। মানুষ বাঁচলে সব আবার ঠিক হবে। আগে মানুষ বাঁচাও!

jagonews24

মানুষের জীবন কীভাবে বাঁচানো যাবে? যেহেতু মহামারি একটি চিকিৎসাবিজ্ঞানসংশ্লিষ্ট বিষয়, তাই সরকার পুরোপুরি নির্ভর করলো সংশ্লিষ্ট বিজ্ঞানী ও বিশেষজ্ঞদের ওপর। এটি হচ্ছে মহামারী নিয়ন্ত্রণে চীনের সাফল্যের দ্বিতীয় কারণ। বিজ্ঞানীরা বললেন, লকডাউন দিতে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করতে, কলকারখানার চাকা সাময়িকভাবে অচল করে দিতে। সরকার তাই করলো। বিদেশিদের কেউ কেউ হা হা করে উঠলেন; বললেন, এবার চীনের পতন অনিবার্য। কিন্তু চীনের সরকার অনঢ়। মানুষের জীবন বাঁচাতে হবে; আর এর জন্য বিশেষজ্ঞদের কথা শুনতে হবে। বিশেষজ্ঞদের পরামর্শে দশ দিনে উহানে হাজার শয্যার হাসপাতাল হলো। বিশেষজ্ঞরা চাইলেন, হালকা উপসর্গের রোগীদের আলাদা রেখে চিকিৎসা করতে। তাই করা হলো। মোদ্দাকথা, মহামারির বিস্তার রোধে, আক্রান্তদের সুচিকিৎসা নিশ্চিত করতে, সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞদের বলতে গেলে সব পরামর্শই শুনেছে চীনের সরকার। আর এর ফল বিশ্ব দেখছে!

উহানের লকডাউন নিয়ে পাশ্চাত্যে অনেক সমালোচনা হয়েছে। কিন্তু পরে প্রায় সব দেশই উহানের লকডাউনের দৃষ্টান্ত অনুসরণ করার চেষ্টা করেছে। আমার ধারণা, উহান ও এর আশেপাশের শহরে যে কঠোর লকডাউন কার্যকর করতে পেরেছিল চীনের স্থানীয় ও কেন্দ্রীয় সরকার, তার কাছাকাছি মানের লকডাউন পৃথিবীর অন্য কোনো দেশে বা অঞ্চলে কার্যকর করা সম্ভব হয়নি। লকডাউন দিয়ে উহানকে (এবং এর মতো অন্যান্য শহরকে) গোটা দেশ থেকে বিচ্ছিন্ন করার প্রতিক্রিয়াও সামলাতে হয়েছে চীনের সরকারকে। এটা করতে সারা দেশ থেকে রশদ সরবরাহ করা হয়েছে লকডাউন করা শহরগুলোতে; হাজার হাজার চিকিৎসক ও নার্স মানুষের জীবন বাঁচাতে সেসব শহরে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সেবা দিয়ে গেছেন দিনের পর দিন। এটি হচ্ছে মহামারী মোকাবিলায় চীনের সাফল্যের তৃতীয় গুরুত্বপূর্ণ কারণ। লকডাউনের কবলে পড়া মানুষের দৈনন্দিন মৌলিক চাহিদা মেটাতে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে রশদের সরবরাহ এক মুহূর্তের জন্যও বন্ধ হয়নি। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই বিনামূল্যে প্রয়োজনীয় সামগ্রী সরবরাহ করা হয়েছে। চিকিৎসা ও ওষুধতো বিনামূল্যের ছিলই।

কিন্তু একটা দেশে এমন একটা মহামারি মোকাবিলায় সরকারকে সবার আগে যেটা করতে হবে, সেটা হচ্ছে জনগণকে আস্থায় নেওয়া। বলা বাহুল্য, চীনের সরকার এটা সাফল্যের সঙ্গে করতে পেরেছে। সবাই জানেন, চীনে ১৪১ কোটির বেশি মানুষ। তাদের মধ্যে মাত্র ১০ কোটি চীনা কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিসি)-র সদস্য। কিন্তু সিপিসি’র নেতৃত্বাধীন সরকারের কাজে সংখ্যাগরিষ্ট চীনা সন্তুষ্ট ছিল আগে থেকেই। সিপিসি’র নেতৃত্বে চীনে দারিদ্র্যবিমোচন কার্যক্রমে অভূতপূর্ব সাফল্য, বিশ্বে চীনের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতি হিসেবে আবির্ভাব, চিকিৎসা ও শিক্ষার মতো খাতগুলোতে অভাবনীয় সাফল্য এর কারণ। মহামারী যখন চীনে আঘাত হানে, তখন সরকারের প্রতি চীনাদের আস্থা ছিল দৃঢ়। ফলে মহামারি মোকাবিলায় চীনের সরকার জনগণকে পাশে পেয়েছে, আস্থায় নিতে পেরেছে। সরকারের কঠিন কঠিন সিদ্ধান্ত তারা হাসিমুখে মেনে নিয়েছে এবং এখনও মানছে। কারণ তারা জানে যে, এসব সিদ্ধান্ত তাদের কল্যাণেই নেওয়া হয়েছে ও হচ্ছে। এতে জনগণ উপকৃত হয়েছে এবং সরকারের গ্রহণযোগ্যতা ও জনপ্রিয়তা আরও বেড়েছে।

jagonews24

পৃথিবীতে কোভিডে আক্রান্ত শনাক্তের সংখ্যার দিক দিয়ে বর্তমানে চীনের অবস্থান ৯৮। যখন এই লেখাটি লিখছি, তখন চীনে কোভিডে সর্বমোট আক্রান্তের সংখ্যা ৯০,৯৫৪ জন এবং মৃতের সংখ্যা ৪৬৩৬ জন। বলা বাহুল্য, মৃতদের অধিকাংশই মহামারির শুরুর দিকে মারা গেছেন এবং অধিকাংশই উহান ও এর আশপাশের শহরগুলোর বাসিন্দা। চীনের সরকার মহামারির বিস্তার ঠেকাতে ও মানুষের জীবন বাঁচাতে দেশের প্রায় সকল সম্পদ একাট্টা করেছিল। এ হচ্ছে তার ফল। কোভিড মহামারিতে চীনে সর্বশেষ কবে মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছিল, তা অনেকের পক্ষেই স্মরণ করা মুশকিল। অনুমান করি, বছরখানেক আগে চীনে সর্বশেষ মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছিল। এখন স্থানীয়ভাবে আক্রান্তের ঘটনাও ঘটছে কালেভদ্রে। যেসব রোগী পাওয়া যাচ্ছে, তাদের প্রায় সবাই বিদেশফেরত স্বদেশি অথবা বিদেশি।

মহামারি সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে থাকলেও, প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা শিথিল করার পরিবর্তে বরং দিন দিন জোরদার করছে চীন। এক্ষেত্রে স্বাভাবিকভাবেই কড়া নজর রাখা হচ্ছে বিদেশফেরত দেশি-বিদেশি নাগরিকদের ওপর। তাদের কোয়ারিন্টিন ও টেস্টিংয়ের ওপর আগের চেয়ে বেশি কড়াকড়ি আরোপ করা হয়েছে সম্প্রতি। এর কারণ, ভাইরাসের নতুন নতুন ভ্যারিয়েন্টের আবির্ভাব। নতুন নিয়মে ভারতসহ মারাত্মকভাবে আক্রান্ত দেশগুলো থেকে যারা চীনে বিশেষ অনুমতি নিয়ে প্রবেশ করবেন, তাদেরকে বাধ্যতামূলকভাবে সরকারি ব্যবস্থাপনায় ১৪ দিনের কোয়ারিন্টিনে থাকতে হবে। কোয়ারিন্টিনের শেষ দিনে তাদের নাক থেকে দুটি নমুনা সংগ্রহ করা হবে এবং দুটি আলাদা টেস্টিং এজেন্সি তা পরীক্ষা করবে। পরীক্ষা দুটিও করা হবে দুটি ভিন্ন নিউক্লিক এসিড রিএজেটের মাধ্যমে। এর লক্ষ্য টেস্টের উচ্চমান নিশ্চিত করা। শুধু তাই নয়, এসব বাধা অতিক্রম করার পরও তেমন একজন বিদেশফেরতকে নিজের বাড়িতে আরও ৭ দিনের চিকিৎসা-পর্যবেক্ষণে থাকতে হবে।

কোভিড-১৯ ভাইরাস ক্ষণে ক্ষণে নিজেকে বদলে ফেলছে। এই বদলে যাওয়া ভাইরাসগুলোর ওপর কড়া নজর রাখছেন চীনা বিজ্ঞানীরা। চীনের জাতীয় স্বাস্থ্য কমিশনের রোগ-প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণ ব্যুরোর কর্মকর্তা হ্য ছিংহুয়া সম্প্রতি বলেছেন, বদলে যাওয়া এসব ভাইরাস শনাক্ত করার সক্ষমতা চীনের আছে। এই সক্ষমতা আরও বাড়ানোর জন্য কাজ করে যাচ্ছে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলো। আর চীনের কোভিড-১৯ টিকা উন্নয়ন টাস্ক ফোর্সের বিশেষজ্ঞ শাও ইমিং বলেছেন, ভাইরাসের নতুন নতুন ভ্যারিয়েন্টের বিরুদ্ধে চীনের তৈরি টিকাগুলোর কার্যকারিতা পরীক্ষা করে দেখা হচ্ছে। ইতোমধ্যেই চীনা টিকা দক্ষিণ আফ্রিকান, ব্রিটিশ ও ব্রাজিলীয় ভ্যারিয়েন্টগুলোর বিরুদ্ধে কার্যকর প্রমাণিত হয়েছে।

jagonews24

এদিকে, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতো চীনও টিকাকে মহামারির বিরুদ্ধে প্রধান অস্ত্র হিসেবে গণ্য করছে। ইতোমধ্যেই চীনে টিকার ৪০ কোটিরও বেশি ডোজ দেশি-বিদেশি নাগরিককে (এদের মধ্যে আমিও আছি) দেওয়া হয়েছে। চীনের লক্ষ্য চলতি বছরের মধ্যে দেশের ৭০ শতাংশ নাগরিককে টিকার আওতায় আনা। চীনে টিকা নেওয়া বাধ্যতামূলক নয়। কিন্তু দৃশ্যত টিকা নিতে আগ্রহী চীনাদের সংখ্যা ক্রমবর্ধমান হারে বাড়ছে। শেষ দশ কোটি ডোজ টিকা দিতে চীন সময় নিয়েছে মাত্র ৯ দিন। সরকারও টিকাদান কর্মসূচিতে গতি আনতে নানান উদ্যোগ নিয়েছে ও নিচ্ছে। এমনই একটি উদ্যোগ মোবাইল টিকাদানকেন্দ্র। দেশের বিভিন্ন স্থানে এমন কেন্দ্র চালু হয়েছে ইতোমধ্যেই। চলতি মাসে বেইজিংয়ে আসছে একটি উন্নতমানের মোবাইল টিকাদানকেন্দ্র। বাসের মতো দেখতে এই কেন্দ্র তৈরি করেছে ফোটন মোটর গ্রুপ। প্রতি ঘন্টায় এমন একটি কেন্দ্র ৮০ ডোজ টিকা দিতে পারবে। খুব শিগগিরি এসব কেন্দ্র রাজধানীর বিভিন্ন রাস্তায় ও পার্কে জনগণকে টিকা দেওয়ার কাজে ব্যবহৃত হবে।

‘চীনের ফাউচি’ নামে খ্যাত প্রফেসর ডাক্তার চুং নানশান। শ্বাসযন্ত্রের রোগের দেশসেরা বিশেষজ্ঞ। কোভিড মহামারীর বিরুদ্ধে লড়াইয়ে চীনা চিকিৎকদের তিনিই নেতৃত্ব দিয়েছেন ও দিচ্ছেন সামনে থেকে। ইতোমধ্যেই রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতিও পেয়েছেন। সম্প্রতি তিনি কুয়াংচৌ শহরে স্বদেশে তৈরি টিকা নিয়েছেন। টিকা নিয়ে তিনি বলেছেন: ‘হার্ড ইমিউনিটি অর্জনের জন্য টিকা সর্বোত্তম উপায়। জনগণকে টিকাদানের ক্ষেত্রে চীন এখনও অনেক দেশের চেয়ে পিছিয়ে আছে। আমাদেরকে অতিদ্রুত টিকাদানের হার ৭০ থেকে ৮০ শতাংশ বাড়াতে হবে। আশা করি, আমরা এটা করতে পারব।’ আগেই বলেছি, মহামারি নিয়ন্ত্রণ করতে এবং মানুষের জীবন বাঁচাতে শুরু থেকেই বিশেষজ্ঞদের পরামর্শমতো কাজ করে এসেছে চীনের সরকার। টিকাদানের প্রশ্নে এর ব্যতিক্রম হবার কোনো কারণ দেখি না।

লেখক : চায়না মিডিয়া গ্রুপ (সিএমজি)-র বার্তা সম্পাদক।
[email protected]

এইচআর/জেআইএম